নারী ও শিশু ডেস্ক: দিপালী রানী পাল ১৯৯৫ সালে ২০ বছর বয়সে বউ হয়ে আসেন প্রতিমাশিল্পী রামকৃষ্ণ পালের সংসারে। এরপর তিনি স্বামীর কাছে প্রতিমা তৈরির কাজ শেখেন। এখন তিনি নিজেই প্রতিমাশিল্পী। সংসারের দৈনন্দিন কাজের ফাঁকে বছরজুড়েই নানা পূজা উপলক্ষে প্রতিমা তৈরি করেন তিনি। স্বামী-স্ত্রীর আয়ে চলে সংসার।
দিপালীর বাড়ি শরীয়তপুর সদর উপজেলার পূর্ব কোটাপাড়া এলাকায়। শুধু দিপালী নন, শরীয়তপুরে এমন অন্তত ২০ নারী প্রতিমাশিল্পী আছেন। তারা বিভিন্ন পূজা-পার্বণে প্রতিমা তৈরি করেন।
সনাতন ধর্মের শিক্ষার্থীরা সরস্বতীকে বিদ্যার আরাধ্য দেবী হিসেবে জানেন। আগামীকাল সোমবার সরস্বতী পূজা। শরীয়তপুরের বিভিন্ন মন্দিরে চলছে পূজা উদ্যাপনের প্রস্তুতি। প্রতিমা তৈরির কারখানাগুলোতে প্রতিমায় রং দেওয়া ও অলঙ্কার বসানোর কাজ করছেন নারী প্রতিমাশিল্পীরা।
দিপালী রানীদের কারখানায় ৭০টি সরস্বতী প্রতিমা বানানো হয়েছে। গতকাল শনিবার সকালে প্রতিমার সাজসজ্জা ও অলংকার বসানোর কাজ করছিলেন দিপালী। তিনি বলেন, ‘৩০ বছর আগে বউ হয়ে শ্বশুরবাড়িতে এসেছি। সংসার, স্বামী, সন্তান সামলে কারখানায় প্রতিমা বানানোর কাজে সময় দিয়েছি। স্বামীকে এ কাজে সহযোগিতা করতে গিয়ে নিজেই এখন প্রতিমা বানাই।’
শরীয়তপুর পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কোটাপাড়া এলাকার প্রতিমাশিল্পী আন্না পালের স্বামী উত্তম পাল কুয়েতপ্রবাসী। স্বামীর প্রতিমা কারখানায় এখন নিজেই প্রতিমাশিল্পীর কাজ করেন। সরস্বতী পূজা উপলক্ষে কারখানায় ৩৯টি প্রতিমা বানানো হয়েছে। তিনি বলেন, ‘কিশোরী বয়সে বিয়ে হয়েছে। স্বামীর কাছে প্রতিমা বানানো শিখেছি। ১৫ বছর ধরে স্বামী দেশের বাইরে থাকেন। ঘর-সংসারের কাজের ফাঁকে প্রতিমা বানাই। এতে বাড়তি কিছু আয় হয়।’
শরীয়তপুর সদরের পশ্চিম কোটাপাড়া এলাকার কার্তিক পাল ও তার স্ত্রী ঝর্না পাল প্রতিমা নির্মাণের কাজ করেন। বছরজুড়ে তারা দুর্গা, গণেশ, কালী, লক্ষ্মী, সরস্বতীসহ বিভিন্ন দেব-দেবীর প্রতিমা বানান। কার্তিক পাল শরীয়তপুরের পাশাপাশি চট্টগ্রামেও একটি কারখানা চালান। শরীয়তপুরের কারখানায় মাটি দিয়ে প্রতিমা গড়ার পর তার স্ত্রী ঝর্না পাল তাতে রং লাগিয়ে ও সাজসজ্জা করে পূর্ণ প্রতিমার রূপ দেন। সরস্বতী পূজা উপলক্ষে তাদের কারখানায় ৪০টি প্রতিমা বানানো হয়েছে।
ঝর্না পাল বলেন, ২৫ বছর ধরে তিনি এই কাজ করছেন। রঙের আঁচরে যখন দেবীর হাসিমাখা মুখ ফুটে ওঠে, তখন তার ভালো লাগে। তবে পারিশ্রমিক বেশি পান না।
পূজা উদ্যাপন পরিষদের শরীয়তপুর জেলা কমিটির সাবেক সভাপতি মুকুল চন্দ্র রায় বলেন, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, পাড়া–মহল্লায় অস্থায়ী প্যান্ডেল করে সরস্বতী পূজা হবে। তাই প্রতিমার অনেক চাহিদা থাকে। পুরুষ শিল্পীদের পাশাপাশি নারী প্রতিমাশিল্পীরাও ভালো কাজ করছেন।