নিজস্ব প্রতিবেদক : চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধে নীতি সুদহার ১০ শতাংশ রাখার পাশাপাশি সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি বজায় রাখায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্তে কিছুটা উদ্বেগ প্রকাশ করছে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)। বিদ্যমান উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে এই কঠোর অবস্থানের উদ্যোগ বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবাহের পাশাপাশি সামগ্রিক অর্থনৈতিক সম্প্রসারণকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে বলে মনে করে ব্যাবসায়িক সংগঠনটি। বিনিয়োগের জন্য দেশের বেসরকারি খাত ব্যাংকগুলোর ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভর করে থাকে। তবে উচ্চ সুদের হার পণ্য উৎপাদন খরচ বাড়িয়ে মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে ১০.৮৯ শতাংশ থেকে ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে মুদ্রাস্ফীতি ৯.৯৪ শতাংশে নেমে আসা সত্ত্বেও এটি কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় নামেনি। ডিসিসিসিআই, জানুয়ারী-জুন ২০২৫ সালের জন্য বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৯.৮ শতাংশে অপরিবর্তিত রাখার সিদ্ধান্ত বেসরকারি খাতকে কিছুটা আশাহত করেছে। যদিও ২০২৫ অর্থবছরের প্রথমার্ধ পর্যন্ত প্রকৃত প্রবৃদ্ধি ছিল ৭.৩ শতাংশ, যা বিগত ১২ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। অন্যদিকে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে সরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ১৪.২ শতাংশ হলেও তা বেড়ে ১৮.১ শতাংশে পৌঁছেছে। এটি মোকাবিলায় সরকারকে কৃচ্ছ্র সাধনের দিকে আরও মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন। অন্যথায় বেসরকারিখাতে ঋণ প্রবাহ আরও হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেবে। বেসরকারি খাতের আস্থা ও ব্যবসায়িক কার্যকলাপ পুনরুদ্ধারের জন্য এ খাতে ঋণ প্রবাহের লক্ষ্যমাত্রা অবশ্যই দ্বি-অঙ্কের ঘরে থাকা প্রয়োজন। যদিও কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজারভিত্তিক বিনিময় হার প্রয়োগ করেছিল, তথাপি আমদানি-রপ্তানিকারকরা বিভিন্ন দরে উচ্চ মূল্যে ডলার ক্রয় করতে হচ্ছে। এ অসংগতি অবশ্যই সমাধান করতে হবে। যার মাধ্যমে ব্যবসায়ী, রেমিট্যান্স প্রেরণকারীসহ সব স্টেকহোল্ডাররা উপকৃত হবেন। ঢাকা চেম্বার তারল্য সংকট এবং ক্রমবর্ধমান মন্দ ঋণ মোকাবিলায় আর্থিক খাতের প্রশাসনিক কার্যক্রম আরও শক্তিশালী করতে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে। যদিও ২০২৭ সাল থেকে আইএফআরএস ৯-এর অধীনে ইসিএল পদ্ধতি গ্রহণ একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ, সুশাসন বাস্তবায়নে মনোনিবেশের অভাব রয়েছে বলে মনে করে ঢাকা চেম্বার। দেশের আর্থিক খাতে শক্তিশালী প্রশাসনিক কাঠামোর অনুপস্থিতি ও আইনি সমাধানের দীর্ঘসূত্রতা আমাদের ব্যাংক খাতকে আরও দুর্বল করে তুলবে, যা বেসরকারি ক্ষেত্রের প্রবৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাকে বাধাগ্রস্ত করবে। ডিসিসিসিআই আরও নমনীয় মুদ্রানীতি গ্রহণ, ভারসাম্যপূর্ণ আর্থিক নীতি গ্রহণ, মুদ্রাস্ফীতি ও প্রবৃদ্ধির ওপর এর প্রভাব নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে। যার মাধ্যমে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবাহ বৃদ্ধি পাবে। এছাড়াও বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ গড়ে তোলা এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার মাধ্যমে বাংলাদেশ আগামী দিনে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জন করতে পারবে বলে মনে করে ডিসিসিআই।