ঢাকা ০১:৪৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

৫ প্রতিষ্ঠানে এনআইডির তথ্য ফাঁস, প্রমাণ ইসির হাতে

  • আপডেট সময় : ০৮:০৮:৫৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • ২০ বার পড়া হয়েছে

ছবি সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক: স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের আইবাসসহ জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) সেবা গ্রহণকারী পাঁচটি প্রতিষ্ঠান তৃতীয় পক্ষের কাছে তথ্য ফাঁস করেছে বলে প্রমাণ পেয়েছে নির্বাচন কমিশন।

নির্বাচন কমিশন সচিব আখতার আহমেদ জানিয়েছেন, প্রথামিক তদন্তে এই প্রমাণ মেলার পর সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে কারণ দর্শনানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে।

সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) সকালে আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে এনআইডি যাচাই সেবা গ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে তিনদিনের মতবিনিময় সভার প্রথমদিন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন নির্বাচন কমিশন সচিব আখতার আহমেদ।

তিনি বলেছেন, অভিযুক্ত পাঁচ প্রতিষ্ঠান হল- স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, ইউসিবি ব্যাংকের উপায়, চট্টগ্রাম পোর্ট অথোরিটি, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আইবাস।

সচিব আখতার আহমেদ বলেন, এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে শোকজ করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর অসতর্কতায় না ইচ্ছেকৃত এটা হয়েছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যদি কেউ স্বপ্রণোদিতভাবে এটা করে থাকে তাহলে শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

এনআইডি অনুবিভাগ থেকে ১৮২টি প্রতিষ্ঠান এই সেবা নেয় বলে জানিয়েছেন এই ইসি সচিব।

ডেটা ইউজের ক্ষেত্রে একটা সীমা রাখা উচিৎ। ওপেন রেখে চোরকে দোষ দেওয়া যাবে না।

বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান থেকে আবার অন্য প্রতিষ্ঠানে সেবা নিচ্ছে, যা চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করে। কোন প্রতিষ্ঠানের কতোটুকু তথ্য প্রয়োজন, যতোটুকু নিচ্ছে তা বেশি নিচ্ছে কিনা তা পর্যালোচনা করা হবে অংশীজনদের সাথে।

১৮২টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এইতিন সরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ইসি মতবিনিময় করবে; মঙ্গলবার ব্যাংক ও বুধবার ইন্সুরেন্সসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মতবিনিময় করা হবে।

পর্যালোচনা চলবে: আখতার আহমেদ বলেন, দেখা যাচ্ছে আমাদের অগোচরেই যাদের তথ্য যাচাইয়ের সুযোগ দিয়েছি তারা অন্য অনাকাঙ্খিত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে তথ্য দিচ্ছে। যেটা কাম্য নয়। এটিকে নিয়ন্ত্রণে আনা ও ব্যবস্থাপনাটাকে উন্নত করার জন্য আমাদের যে সকল গ্রাহকেরা আছে তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছি।

যে তথ্য যার জন্য যতটুকু প্রয়োজন ওই প্রতিষ্ঠান ততটুকু তথ্য নেবেন এবং তার গ্রাহকদের সন্তুষ্ট করবেন বলে জানিয়েছেন এই ইসি সচিব।

কোন প্রতিষ্ঠানের কতটুকু তথ্য প্রয়োজন, যতটুকু নিচ্ছে তা বেশি নিচ্ছে কিনা তা পর্যালোচনা করা হবে। কি করে এই তথ্য লিক বা পাচার হয়েছে এগুলো টেকনিক্যাল বিষয়। এগুলো যাচাই বাছাই করা হবে।

সচিব বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বলেছেন, একেক জনের চাহিদা একেক রকম। বাংলাদেশ পুলিশের যে ধরনের তথ্য দরকার, হয়তো পাসপোর্টের সে ধরণের নয়, আবার ভূমি মন্ত্রণালয়ের অন্যরকম তথ্য প্রয়োজন।

আখতার আহমেদ বলেন, কাজেই ভেরিফিকেশনের একটি স্বাভাবিক প্লাটফর্ম হচ্ছে যে আমাদের জানাবেন এই তথ্যগুলো সঠিক আছে কী না, আমরা বলবো হ্যাঁ বা না। এর বাইরেও যদি তথ্য প্রয়োজন হয় সেগুলো নিয়ে আরও আলোচনা হবে। আজকে আলোচনাটা শুরু হল।

বাংলাদেশে সরকারি একটি ওয়েবসাইট থেকে নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁসের খবর প্রকাশ করেছিল আমেরিকান ওয়েবসাইট টেকক্রাঞ্চ ২০২৩ সালের ৬ জুলাই।

টেকক্রাঞ্চের ওই খবরে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশি নাগরিকদের সম্পূর্ণ নাম, ফোন নম্বর, ইমেইল ঠিকানা এবং জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বরসহ ব্যক্তিগত তথ্য উন্মুক্ত হয়ে আছে ইন্টারনেটে।

ওই ঘটনার তিনদিন পর জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের জানিয়েছিল নির্বাচন কমিশনের এনআইডি সার্ভার ‘সুরক্ষিত আছে’। বিভাগটি দাবি করেছিল, তাদের সার্ভার থেকে কোনো রকম তথ্য কোথায় যায়নি। তারপরেও এই বিষয়ে কোনো ত্রুটি বিচ্যুতি পেলে, চুক্তিপত্র বরখেলাপ হলে তা বাতিল করা হবে।

সরকার পতনের পর এনআইডির তথ্য ‘বিক্রির’ অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় এবং সাবেক তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলকের বিরুদ্ধে কাফরুল থানায় মামলা হয়।

সাইবার নিরাপত্তা আইনে দায়ের করা এ মামলায় জয় ও পলকসহ মোট ১৯ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় আরো ১৫ থেকে ২০ জনকে আসামি করা হয়েছে বলে কাফরুল থানার ওসি কাজী গোলাম মোস্তফা জানান।

এনামুল হক নামের এক ব্যক্তির দায়ের করা মামলার এজাহারে বলা হয়, জাতীয় নিরাপত্তা ও ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে’ ডিজিকন গ্লোবাল সার্ভিসেস লিমিটেডকে এনআইডির তথ্য ব্যবহার করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ব্যবসার অনুমতি দেন আসামিরা। সেসব তথ্য দেশ ও দেশের বাইরের প্রায় ১৮২টি প্রতিষ্ঠানের কাছে ‘বিক্রি’ করা হয়। তথ্য বিক্রির প্রায় বিশ হাজার কোটি টাকা ‘আত্মসাৎ’ করা হয়েছে। তৃতীয়পক্ষের কাছে তথ্য পাচার হওয়ায় জনগণের মধ্যে ‘নিরাপত্তাহীনতা’ দেখা দিয়েছে।

 

 

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

মব বন্ধ না করলে ডেভিল হিসেবে ট্রিট করবো: উপদেষ্টা মাহফুজ

৫ প্রতিষ্ঠানে এনআইডির তথ্য ফাঁস, প্রমাণ ইসির হাতে

আপডেট সময় : ০৮:০৮:৫৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক: স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের আইবাসসহ জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) সেবা গ্রহণকারী পাঁচটি প্রতিষ্ঠান তৃতীয় পক্ষের কাছে তথ্য ফাঁস করেছে বলে প্রমাণ পেয়েছে নির্বাচন কমিশন।

নির্বাচন কমিশন সচিব আখতার আহমেদ জানিয়েছেন, প্রথামিক তদন্তে এই প্রমাণ মেলার পর সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে কারণ দর্শনানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে।

সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) সকালে আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে এনআইডি যাচাই সেবা গ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে তিনদিনের মতবিনিময় সভার প্রথমদিন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন নির্বাচন কমিশন সচিব আখতার আহমেদ।

তিনি বলেছেন, অভিযুক্ত পাঁচ প্রতিষ্ঠান হল- স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, ইউসিবি ব্যাংকের উপায়, চট্টগ্রাম পোর্ট অথোরিটি, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আইবাস।

সচিব আখতার আহমেদ বলেন, এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে শোকজ করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর অসতর্কতায় না ইচ্ছেকৃত এটা হয়েছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যদি কেউ স্বপ্রণোদিতভাবে এটা করে থাকে তাহলে শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

এনআইডি অনুবিভাগ থেকে ১৮২টি প্রতিষ্ঠান এই সেবা নেয় বলে জানিয়েছেন এই ইসি সচিব।

ডেটা ইউজের ক্ষেত্রে একটা সীমা রাখা উচিৎ। ওপেন রেখে চোরকে দোষ দেওয়া যাবে না।

বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান থেকে আবার অন্য প্রতিষ্ঠানে সেবা নিচ্ছে, যা চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করে। কোন প্রতিষ্ঠানের কতোটুকু তথ্য প্রয়োজন, যতোটুকু নিচ্ছে তা বেশি নিচ্ছে কিনা তা পর্যালোচনা করা হবে অংশীজনদের সাথে।

১৮২টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এইতিন সরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ইসি মতবিনিময় করবে; মঙ্গলবার ব্যাংক ও বুধবার ইন্সুরেন্সসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মতবিনিময় করা হবে।

পর্যালোচনা চলবে: আখতার আহমেদ বলেন, দেখা যাচ্ছে আমাদের অগোচরেই যাদের তথ্য যাচাইয়ের সুযোগ দিয়েছি তারা অন্য অনাকাঙ্খিত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে তথ্য দিচ্ছে। যেটা কাম্য নয়। এটিকে নিয়ন্ত্রণে আনা ও ব্যবস্থাপনাটাকে উন্নত করার জন্য আমাদের যে সকল গ্রাহকেরা আছে তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছি।

যে তথ্য যার জন্য যতটুকু প্রয়োজন ওই প্রতিষ্ঠান ততটুকু তথ্য নেবেন এবং তার গ্রাহকদের সন্তুষ্ট করবেন বলে জানিয়েছেন এই ইসি সচিব।

কোন প্রতিষ্ঠানের কতটুকু তথ্য প্রয়োজন, যতটুকু নিচ্ছে তা বেশি নিচ্ছে কিনা তা পর্যালোচনা করা হবে। কি করে এই তথ্য লিক বা পাচার হয়েছে এগুলো টেকনিক্যাল বিষয়। এগুলো যাচাই বাছাই করা হবে।

সচিব বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বলেছেন, একেক জনের চাহিদা একেক রকম। বাংলাদেশ পুলিশের যে ধরনের তথ্য দরকার, হয়তো পাসপোর্টের সে ধরণের নয়, আবার ভূমি মন্ত্রণালয়ের অন্যরকম তথ্য প্রয়োজন।

আখতার আহমেদ বলেন, কাজেই ভেরিফিকেশনের একটি স্বাভাবিক প্লাটফর্ম হচ্ছে যে আমাদের জানাবেন এই তথ্যগুলো সঠিক আছে কী না, আমরা বলবো হ্যাঁ বা না। এর বাইরেও যদি তথ্য প্রয়োজন হয় সেগুলো নিয়ে আরও আলোচনা হবে। আজকে আলোচনাটা শুরু হল।

বাংলাদেশে সরকারি একটি ওয়েবসাইট থেকে নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁসের খবর প্রকাশ করেছিল আমেরিকান ওয়েবসাইট টেকক্রাঞ্চ ২০২৩ সালের ৬ জুলাই।

টেকক্রাঞ্চের ওই খবরে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশি নাগরিকদের সম্পূর্ণ নাম, ফোন নম্বর, ইমেইল ঠিকানা এবং জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বরসহ ব্যক্তিগত তথ্য উন্মুক্ত হয়ে আছে ইন্টারনেটে।

ওই ঘটনার তিনদিন পর জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের জানিয়েছিল নির্বাচন কমিশনের এনআইডি সার্ভার ‘সুরক্ষিত আছে’। বিভাগটি দাবি করেছিল, তাদের সার্ভার থেকে কোনো রকম তথ্য কোথায় যায়নি। তারপরেও এই বিষয়ে কোনো ত্রুটি বিচ্যুতি পেলে, চুক্তিপত্র বরখেলাপ হলে তা বাতিল করা হবে।

সরকার পতনের পর এনআইডির তথ্য ‘বিক্রির’ অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় এবং সাবেক তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলকের বিরুদ্ধে কাফরুল থানায় মামলা হয়।

সাইবার নিরাপত্তা আইনে দায়ের করা এ মামলায় জয় ও পলকসহ মোট ১৯ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় আরো ১৫ থেকে ২০ জনকে আসামি করা হয়েছে বলে কাফরুল থানার ওসি কাজী গোলাম মোস্তফা জানান।

এনামুল হক নামের এক ব্যক্তির দায়ের করা মামলার এজাহারে বলা হয়, জাতীয় নিরাপত্তা ও ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে’ ডিজিকন গ্লোবাল সার্ভিসেস লিমিটেডকে এনআইডির তথ্য ব্যবহার করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ব্যবসার অনুমতি দেন আসামিরা। সেসব তথ্য দেশ ও দেশের বাইরের প্রায় ১৮২টি প্রতিষ্ঠানের কাছে ‘বিক্রি’ করা হয়। তথ্য বিক্রির প্রায় বিশ হাজার কোটি টাকা ‘আত্মসাৎ’ করা হয়েছে। তৃতীয়পক্ষের কাছে তথ্য পাচার হওয়ায় জনগণের মধ্যে ‘নিরাপত্তাহীনতা’ দেখা দিয়েছে।