ঢাকা ১১:৩৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ মার্চ ২০২৫

বাল্যবিবাহ ঠেকিয়ে জান্নাতুল আজ চিকিৎসক

  • আপডেট সময় : ১১:০৫:৩৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২১
  • ৭৯ বার পড়া হয়েছে

নারী ও শিশু ডেস্ক : বাল্যবিবাহ সাংবিধানিকভাবেই একটি অপরাধ। সামাজিকভাবেও এটা একটা অপরাধ। কিন্তু তারপরও দেশে এটি পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব হয়নি। বাল্যবিবাহের মূল কারণ আর্থিক। আবার কখনো কখনো সামাজিক কারণেও অনভিপ্রেত এ ঘটনা ঘটে থাকে। পরিবারের আর্থিক অসচ্ছলতার কারণেই অষ্টম শ্রেণীতে পড়ার সময় বিয়ে ঠিক হয়েছিল জান্নাতুল ফেরদৌসের। তিনি সেটা ঠেকাতে পেরেছিলেন। পরবর্তী জীবনে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন তিনি। পরিবারে গরিবি ছিল। বড় মেয়ে হওয়ায় বাল্যবিবাহ রোধ করতে হয়েছে চট্টগ্রামের বাঁশখালির মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌসকে। ছাত্রী হিসেবে ভালো ছিলেন। সব সময়ই স্বপ্ন দেখতেন বড় কিছু হওয়ার। এসএসসি, এইচসিতে ভালো রেজাল্ট করেন। তার লক্ষ্য হয়ে ওঠে ডাক্তার হওয়ার। প্রথমবার মেডিক্যালে ভর্তি পরীক্ষায় টিকতে পারেননি। তবে সব কিছু পিছনে ফেলতে পেরেছেন অদম্য মনোবল দিয়ে। বাঁশখালির পুকুরিয়া ইউনিয়নের হাজিগাঁও এলাকার জান্নাতুল ফেরদৌস আজ চিকিৎসক।
জান্নাতুল বগুড়ার সরকারি শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন ২০১৭ সালে। ৩০তম বিসিএসে উত্তীর্ণ হয়ে গত বছর ডিসেম্বরে নিজ এলাকা লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক হিসেবে নিয়োগ পান। চার ভাই, দুই বোনের মধ্যে সবার বড় জান্নাতুল। বাবা ফরিদুল ইসলাম চট্টগ্রামে একটি মাদ্রাসার শিক্ষক ছিলেন। মা হাছিনা বেগম গৃহিণী। চার মেয়ে নিয়ে এ দম্পতির দুশ্চিন্তার শেষ ছিল না।
জান্নাতুল বলেন,‘আমি যে ঘরে পড়তাম তার পাশের ঘরেই আমার বিয়ের কথাবার্তা চলত। সবই আমার কানে আসতো। সেজন্যে মানসিক চাপের মধ্যে থাকতাম সব সময়।’
বিয়ে ঠেকানোর জন্য অনেকটা জেদ করেই অষ্টম শ্রেণীতে বৃত্তি পেলেন জান্নাতুল। তারপরও বিয়ের কানাঘুষা চলতেই থাকে। পাড়াপড়শিরা তারা বাবা-মাকে বলতে থাকেন, মেয়েকে কেন বিয়ে দিচ্ছেন না? পড়াশোনা করে কি হবে? মাধ্যমিকে জিপিএ ৫ পেয়ে জান্নাতুল খানিকটা নিশ্চিত হলেন। শহরের কলেজে ভর্তি, চিকিৎসক হতে চাওয়ার বিষয়গুলো শুনে জান্নাতুলের বাবা বলতেন, এসব বড়লোকদের বিষয়। শহরের কলেজে পড়তে না পারলেও তিনি উচ্চ মাধ্যমিকেও জিপি এ ৫ পেলেন।
জান্নাতুল জানালেন, বাবা তখন বললেন, তুমি তো সব একবারেই করেছ। তাই এইবার না হয় আরেকবার সুযোগ নাও। আমার যুদ্ধ শুরু হলো। তারপর যেদিন এমবিবিএস পাস করলাম, তখন মনে হলো. এখন আর বিয়ে নিয়ে ভয়ের কিছু নেই। অবশেষে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের চিকিৎসক মোমিনুল হকের সঙ্গে বিয়ে হয় জান্নাতুলের।
জন্নাতুল ফেরদৌসের বাবা ফরিদুল ইসলাম বললেন,‘নিজের কোনো জায়গা জমি ছিল না। রোজগারও তেমন ছিল না। চারটা মেয়ে। তাই চিন্তায় থাকতাম। তবে মেয়ের বিয়ের প্রস্তাব এলে বিয়ে করবে না বলে ফিরিয়ে দিত। আজ সেই মেয়ে ডাক্তার।’
জান্নাতুল ফেরদৌস তার শিক্ষকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। শিক্ষকদের কাছ থেকে তিনি সহায়তা পেয়েছেন বলেই এতদূর আসতে পেরেছেন। তার মায়ের কথা বলতেও ভুললেন না। পরিবারে কঠোর পরিশ্রম করেও তিনি তার সন্তানদের পড়তে বসাতেন। তিনি হাল ছেড়ে দিলে হয়তো চিকিৎসক হওয়া সম্ভব হতো না।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

ছিনতাইয়ের শিকার বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের বাসায় আসামির ছেলে

বাল্যবিবাহ ঠেকিয়ে জান্নাতুল আজ চিকিৎসক

আপডেট সময় : ১১:০৫:৩৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২১

নারী ও শিশু ডেস্ক : বাল্যবিবাহ সাংবিধানিকভাবেই একটি অপরাধ। সামাজিকভাবেও এটা একটা অপরাধ। কিন্তু তারপরও দেশে এটি পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব হয়নি। বাল্যবিবাহের মূল কারণ আর্থিক। আবার কখনো কখনো সামাজিক কারণেও অনভিপ্রেত এ ঘটনা ঘটে থাকে। পরিবারের আর্থিক অসচ্ছলতার কারণেই অষ্টম শ্রেণীতে পড়ার সময় বিয়ে ঠিক হয়েছিল জান্নাতুল ফেরদৌসের। তিনি সেটা ঠেকাতে পেরেছিলেন। পরবর্তী জীবনে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন তিনি। পরিবারে গরিবি ছিল। বড় মেয়ে হওয়ায় বাল্যবিবাহ রোধ করতে হয়েছে চট্টগ্রামের বাঁশখালির মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌসকে। ছাত্রী হিসেবে ভালো ছিলেন। সব সময়ই স্বপ্ন দেখতেন বড় কিছু হওয়ার। এসএসসি, এইচসিতে ভালো রেজাল্ট করেন। তার লক্ষ্য হয়ে ওঠে ডাক্তার হওয়ার। প্রথমবার মেডিক্যালে ভর্তি পরীক্ষায় টিকতে পারেননি। তবে সব কিছু পিছনে ফেলতে পেরেছেন অদম্য মনোবল দিয়ে। বাঁশখালির পুকুরিয়া ইউনিয়নের হাজিগাঁও এলাকার জান্নাতুল ফেরদৌস আজ চিকিৎসক।
জান্নাতুল বগুড়ার সরকারি শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন ২০১৭ সালে। ৩০তম বিসিএসে উত্তীর্ণ হয়ে গত বছর ডিসেম্বরে নিজ এলাকা লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক হিসেবে নিয়োগ পান। চার ভাই, দুই বোনের মধ্যে সবার বড় জান্নাতুল। বাবা ফরিদুল ইসলাম চট্টগ্রামে একটি মাদ্রাসার শিক্ষক ছিলেন। মা হাছিনা বেগম গৃহিণী। চার মেয়ে নিয়ে এ দম্পতির দুশ্চিন্তার শেষ ছিল না।
জান্নাতুল বলেন,‘আমি যে ঘরে পড়তাম তার পাশের ঘরেই আমার বিয়ের কথাবার্তা চলত। সবই আমার কানে আসতো। সেজন্যে মানসিক চাপের মধ্যে থাকতাম সব সময়।’
বিয়ে ঠেকানোর জন্য অনেকটা জেদ করেই অষ্টম শ্রেণীতে বৃত্তি পেলেন জান্নাতুল। তারপরও বিয়ের কানাঘুষা চলতেই থাকে। পাড়াপড়শিরা তারা বাবা-মাকে বলতে থাকেন, মেয়েকে কেন বিয়ে দিচ্ছেন না? পড়াশোনা করে কি হবে? মাধ্যমিকে জিপিএ ৫ পেয়ে জান্নাতুল খানিকটা নিশ্চিত হলেন। শহরের কলেজে ভর্তি, চিকিৎসক হতে চাওয়ার বিষয়গুলো শুনে জান্নাতুলের বাবা বলতেন, এসব বড়লোকদের বিষয়। শহরের কলেজে পড়তে না পারলেও তিনি উচ্চ মাধ্যমিকেও জিপি এ ৫ পেলেন।
জান্নাতুল জানালেন, বাবা তখন বললেন, তুমি তো সব একবারেই করেছ। তাই এইবার না হয় আরেকবার সুযোগ নাও। আমার যুদ্ধ শুরু হলো। তারপর যেদিন এমবিবিএস পাস করলাম, তখন মনে হলো. এখন আর বিয়ে নিয়ে ভয়ের কিছু নেই। অবশেষে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের চিকিৎসক মোমিনুল হকের সঙ্গে বিয়ে হয় জান্নাতুলের।
জন্নাতুল ফেরদৌসের বাবা ফরিদুল ইসলাম বললেন,‘নিজের কোনো জায়গা জমি ছিল না। রোজগারও তেমন ছিল না। চারটা মেয়ে। তাই চিন্তায় থাকতাম। তবে মেয়ের বিয়ের প্রস্তাব এলে বিয়ে করবে না বলে ফিরিয়ে দিত। আজ সেই মেয়ে ডাক্তার।’
জান্নাতুল ফেরদৌস তার শিক্ষকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। শিক্ষকদের কাছ থেকে তিনি সহায়তা পেয়েছেন বলেই এতদূর আসতে পেরেছেন। তার মায়ের কথা বলতেও ভুললেন না। পরিবারে কঠোর পরিশ্রম করেও তিনি তার সন্তানদের পড়তে বসাতেন। তিনি হাল ছেড়ে দিলে হয়তো চিকিৎসক হওয়া সম্ভব হতো না।