ঢাকা ০৩:৪৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫

উত্তেজনায় নিউজিল্যান্ডে জাতীয় দিবস উদযাপন

  • আপডেট সময় : ০৭:৫৮:১৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • ৯৮ বার পড়া হয়েছে

প্রত্যাশা ডেস্ক : নিউজিল্যান্ডের উত্তরাঞ্চলের ওয়াইটাঙ্গিতে হাজারো মানুষ দেশটির জাতীয় দিবস ওয়াইটাঙ্গি দিবস উদযাপনে অংশ নিয়েছে। এই দিনটি ওয়াইটাঙ্গি চুক্তি সইয়ের বার্ষিকী হিসেবে পালন করা হয়, যা নিউজিল্যান্ড প্রতিষ্ঠার মূল দলিল।

তবে এবারের উদযাপন অনেকাংশে রাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়েছে। বর্তমান সরকার এমন কিছু নীতি বাস্তবায়ন করছে যা অনেকের কাছে মাওরি-বিরোধী বলে মনে হচ্ছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো ট্রিটি প্রিন্সিপলস বিল, যা ১৮৫ বছর পুরনো চুক্তির ব্যাখ্যা পরিবর্তনের প্রস্তাব দেয়। নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ক্রিস্টোফার লাকসন এবার ঐতিহ্য ভেঙে ওয়াইটাঙ্গিতে না গিয়ে দক্ষিণ দ্বীপে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন। তিনি নিউজিল্যান্ডের বৃহত্তম মাওরি উপজাতির সঙ্গে দিবসটি উদযাপন করেন।

তিনি এক ভিডিও বার্তায় বলেন, “ওয়াইটাঙ্গি চুক্তি আমাদের অতীতের কেন্দ্রবিন্দু এবং এটি ভবিষ্যতের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। মাওরি সম্প্রদায় সফল হলে, পুরো নিউজিল্যান্ড উপকৃত হবে। আমরা পারস্পরিক সম্মান বজায় রেখে একসঙ্গে এগিয়ে যাব।” তবে তার এই সিদ্ধান্তের মিশ্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে। মাওরি অধিকার রক্ষাকারী নেতারা মনে করছেন, তিনি উত্তেজনা এড়াতেই ওয়াইটাঙ্গি যাননি। গ্রিন পার্টির কো-লিডার মারামা ডেভিডসন বলেছেন, “যে প্রধানমন্ত্রী ওয়াইটাঙ্গিতেই আসতে চান না, তিনি পুরো জাতির জন্য কাজ করতে পারবেন না।

” বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) ওয়াইটাঙ্গিতে সরকারি মন্ত্রীদের প্রতি অসন্তোষ জানিয়ে শত শত মাওরি বিক্ষোভকারী নীরব প্রতিবাদ করেন এবং মন্ত্রীরা যখন বক্তৃতা দিচ্ছিলেন সে সময় তারা তাদের পিছন ফিরে দাঁড়িয়েছিলেন। বিতর্কিত ট্রিটি প্রিন্সিপলস বিল-এর প্রধান প্রবক্তা অ্যাক্ট পার্টির নেতা ডেভিড সেমুর অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গেলে দুইবার তার মাইক্রোফোন কেড়ে নেওয়া হয়। উল্লেখ্য, ১৮৪০ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি ব্রিটিশ ক্রাউন ও বিভিন্ন মাওরি উপজাতির মধ্যে ওয়াইটাঙ্গি চুক্তি সই হয়। এই চুক্তিতে মাওরিদের তাদের ভূমি ও সম্পদের উপর নেতৃত্ব বজায় রাখার অধিকার দেওয়া হয়। তবে ইংরেজি ও মাওরি ভাষার পার্থক্যের কারণে চুক্তির ব্যাখ্যায় বিভ্রান্তি তৈরি হয়।

পরবর্তী সময়ে ব্রিটিশ সরকার মাওরিদের ভূমি দখল করতে শুরু করে, যা অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বৈষম্য তৈরি করে। এই বৈষম্যের প্রভাব আজও রয়ে গেছে এবং তা নিয়ে বিতর্ক চলছেই। ট্রিটি প্রিন্সিপলস বিলের সমর্থকরা বলছেন, এটি সমতা নিশ্চিত করবে। তবে সমালোচকদের মতে, এটি মাওরিদের আরও পিছিয়ে দেবে এবং তাদের ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী লাকসনের দল ন্যাশনাল পার্টি ঘোষণা করেছে যে তারা বিলের দ্বিতীয় পাঠে সমর্থন দেবে না। তাই এটি আইনে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা কম। তবে এটি প্রস্তাব আকারে আসায় অনেক মাওরি ক্ষুব্ধ।

সাবেক বিচারমন্ত্রী কিরিতাপু অ্যালান বলেছেন, “এই বিলটি মাওরিদের ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার প্রচেষ্টা। এটি একটি নিন্দনীয় পদক্ষেপ।” অন্যদিকে, অর্থনীতিবিদ অনানিশ চৌধুরী মনে করেন, “নিউজিল্যান্ড যদি বহুজাতিক ও বহুসাংস্কৃতিক রাষ্ট্র হিসেবে থাকতে চায়, তাহলে এই আলোচনা জরুরি।” ওয়াইটাঙ্গি দিবস বরাবরই মাওরি ও নিউজিল্যান্ড সরকারের মধ্যে সম্পর্কের প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠেছে। এই বছর বিতর্কিত আইন ও প্রধানমন্ত্রীর অনুপস্থিতি সেই সম্পর্কের নতুন বাস্তবতা তুলে ধরেছে। বিশ্লেষকদের মতে, সরকারের নীতির ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে জনগণের প্রতিক্রিয়া এবং আইনি লড়াই।

 

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : prottashasmf@yahoo.com
আপলোডকারীর তথ্য

উত্তেজনায় নিউজিল্যান্ডে জাতীয় দিবস উদযাপন

আপডেট সময় : ০৭:৫৮:১৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

প্রত্যাশা ডেস্ক : নিউজিল্যান্ডের উত্তরাঞ্চলের ওয়াইটাঙ্গিতে হাজারো মানুষ দেশটির জাতীয় দিবস ওয়াইটাঙ্গি দিবস উদযাপনে অংশ নিয়েছে। এই দিনটি ওয়াইটাঙ্গি চুক্তি সইয়ের বার্ষিকী হিসেবে পালন করা হয়, যা নিউজিল্যান্ড প্রতিষ্ঠার মূল দলিল।

তবে এবারের উদযাপন অনেকাংশে রাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়েছে। বর্তমান সরকার এমন কিছু নীতি বাস্তবায়ন করছে যা অনেকের কাছে মাওরি-বিরোধী বলে মনে হচ্ছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো ট্রিটি প্রিন্সিপলস বিল, যা ১৮৫ বছর পুরনো চুক্তির ব্যাখ্যা পরিবর্তনের প্রস্তাব দেয়। নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ক্রিস্টোফার লাকসন এবার ঐতিহ্য ভেঙে ওয়াইটাঙ্গিতে না গিয়ে দক্ষিণ দ্বীপে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন। তিনি নিউজিল্যান্ডের বৃহত্তম মাওরি উপজাতির সঙ্গে দিবসটি উদযাপন করেন।

তিনি এক ভিডিও বার্তায় বলেন, “ওয়াইটাঙ্গি চুক্তি আমাদের অতীতের কেন্দ্রবিন্দু এবং এটি ভবিষ্যতের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। মাওরি সম্প্রদায় সফল হলে, পুরো নিউজিল্যান্ড উপকৃত হবে। আমরা পারস্পরিক সম্মান বজায় রেখে একসঙ্গে এগিয়ে যাব।” তবে তার এই সিদ্ধান্তের মিশ্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে। মাওরি অধিকার রক্ষাকারী নেতারা মনে করছেন, তিনি উত্তেজনা এড়াতেই ওয়াইটাঙ্গি যাননি। গ্রিন পার্টির কো-লিডার মারামা ডেভিডসন বলেছেন, “যে প্রধানমন্ত্রী ওয়াইটাঙ্গিতেই আসতে চান না, তিনি পুরো জাতির জন্য কাজ করতে পারবেন না।

” বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) ওয়াইটাঙ্গিতে সরকারি মন্ত্রীদের প্রতি অসন্তোষ জানিয়ে শত শত মাওরি বিক্ষোভকারী নীরব প্রতিবাদ করেন এবং মন্ত্রীরা যখন বক্তৃতা দিচ্ছিলেন সে সময় তারা তাদের পিছন ফিরে দাঁড়িয়েছিলেন। বিতর্কিত ট্রিটি প্রিন্সিপলস বিল-এর প্রধান প্রবক্তা অ্যাক্ট পার্টির নেতা ডেভিড সেমুর অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গেলে দুইবার তার মাইক্রোফোন কেড়ে নেওয়া হয়। উল্লেখ্য, ১৮৪০ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি ব্রিটিশ ক্রাউন ও বিভিন্ন মাওরি উপজাতির মধ্যে ওয়াইটাঙ্গি চুক্তি সই হয়। এই চুক্তিতে মাওরিদের তাদের ভূমি ও সম্পদের উপর নেতৃত্ব বজায় রাখার অধিকার দেওয়া হয়। তবে ইংরেজি ও মাওরি ভাষার পার্থক্যের কারণে চুক্তির ব্যাখ্যায় বিভ্রান্তি তৈরি হয়।

পরবর্তী সময়ে ব্রিটিশ সরকার মাওরিদের ভূমি দখল করতে শুরু করে, যা অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বৈষম্য তৈরি করে। এই বৈষম্যের প্রভাব আজও রয়ে গেছে এবং তা নিয়ে বিতর্ক চলছেই। ট্রিটি প্রিন্সিপলস বিলের সমর্থকরা বলছেন, এটি সমতা নিশ্চিত করবে। তবে সমালোচকদের মতে, এটি মাওরিদের আরও পিছিয়ে দেবে এবং তাদের ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী লাকসনের দল ন্যাশনাল পার্টি ঘোষণা করেছে যে তারা বিলের দ্বিতীয় পাঠে সমর্থন দেবে না। তাই এটি আইনে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা কম। তবে এটি প্রস্তাব আকারে আসায় অনেক মাওরি ক্ষুব্ধ।

সাবেক বিচারমন্ত্রী কিরিতাপু অ্যালান বলেছেন, “এই বিলটি মাওরিদের ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার প্রচেষ্টা। এটি একটি নিন্দনীয় পদক্ষেপ।” অন্যদিকে, অর্থনীতিবিদ অনানিশ চৌধুরী মনে করেন, “নিউজিল্যান্ড যদি বহুজাতিক ও বহুসাংস্কৃতিক রাষ্ট্র হিসেবে থাকতে চায়, তাহলে এই আলোচনা জরুরি।” ওয়াইটাঙ্গি দিবস বরাবরই মাওরি ও নিউজিল্যান্ড সরকারের মধ্যে সম্পর্কের প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠেছে। এই বছর বিতর্কিত আইন ও প্রধানমন্ত্রীর অনুপস্থিতি সেই সম্পর্কের নতুন বাস্তবতা তুলে ধরেছে। বিশ্লেষকদের মতে, সরকারের নীতির ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে জনগণের প্রতিক্রিয়া এবং আইনি লড়াই।