ঢাকা ০২:১০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

শিবলী রুবাইয়াত ও আলমগীর কারাগারে

  • আপডেট সময় : ০৯:০৪:৪৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • ৯ বার পড়া হয়েছে

শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম ও গোলাম মোহাম্মদ আলমগীর। ছবি সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলামকে ঘুসের মামলায় এবং ম্যাক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোহাম্মদ আলমগীরকে অবৈধ সম্পদের মামলায় ১০ দিন করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চায় দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক।

শিবলী ও আলমগীরকে বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতে হাজির করে দুদকের পক্ষ থেকে রিমান্ডের এই আবেদন করা হয়। অন্যদিকে দুই আসামির পক্ষে জামিন চেয়ে আবেদন করেন তাদের আইনজীবীরা।

শুনানি শেষে শিবলী ও আলমগীরকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়ে বিচারক জাকির হোসেন গালিব রিমান্ড শুনানির জন্য বৃহস্পতিবার দিন রাখেন।

দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর বলেন, আসামিপক্ষের আইনজীবীর কাছে রিমান্ড বাতিল আবেদন ও জামিন আবেদনের যথাযথ নথি না থাকায় বৃহস্পতিবার শুনানির দিন ঠিক করেছে আদালত। দুজনকেই কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

মঙ্গলবার রাতে ঢাকার ধানমন্ডি থেকে শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলামকে আটক করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। পরে দুর্নীতি দমন কমিশনের উপ-পরিচালক মো. মাসুদুর রহমান বাদী হয়ে বুধবার একটি মামলা দায়ের করেন।

মোনার্ক হোল্ডিংস লিমিটেডকে ব্রোকার হাউজের লাইসেন্স পাইয়ে দেওয়ার বিনিময়ে ৩ কোটি ৭৬ লাখ ২৯ হাজার টাকা ঘুস নেওয়ার অভিযোগ আনা হয় সেখানে।

মামলার অন্য আসামিরা হলেনÑ মোনার্ক হোল্ডিং ইনকর্পোরেশনের চেয়ারম্যান জাবেদ এ মতিন, ঝিন বাংলা ফেব্রিক্সের প্রোপাইটর আরিফুল ইসলাম, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের দিলকুশা শাখার ফরেন এক্সচেঞ্জ বিভাগের সাবেক ইনচার্জ এবং বর্তমান এফএভিপি ইসরাত জাহন, ব্যাংকটির ভাইস চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের দিলকুশা শাখার সাবেক ব্যবস্থাপক সৈয়দ মাহবুব মোরশেদ।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, আসামি শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম ২০২০ সালের ১৭ মে থেকে ২০২৪ সালের ১০ আগস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশ সিকিউরিটি এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ওই সময় মোনার্ক হোল্ডিংস লিমিটেড নামে ব্রেকারেজ হাউজের পরিচালক আসামি জাভেদ এ মতিনের ‘নামসর্বস্ব’ আমেরিকান কোম্পানি মোনার্ক হোল্ডিং ইনকরপোরেশনের ব্যাংক হিসাব থেকে শিবলীর ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাবে ১ কোটি ৯২ লক্ষ টাকা পাঠানো হয়।
শিবলী ওই অ্যাকাইন্টের মাধ্যমে নেওয়া ‘ঘুসকে’ বৈধতা দেওয়ার জন্য জাভেদ এ মতিনকে অ্যাকর্ড অ্যাপারেল ইনকর্পোরেশন, ইউএসএ-এর চেয়ারম্যান দেখিয়ে একটি ভুয়া বাড়িভাড়া চুক্তি করেন।

একইভাবে শিবলী পরিচালিত ‘নামসর্বস্ব’ কোম্পানি ঝিন বাংলা ফেব্রিক্স ও মোনার্ক হোল্ডিংস ইনকের মধ্যে ভুয়া পণ্যবিক্রয় চুক্তি দেখিয়ে ৩ লাখ ৬১ হাজার ডলার দেশে এনে নিজের ঋন পরিশোধ বাবদ ৮৯ লাখ ২৬ হাজার ২৯৬ টাকা ও বিভিন্ন তারিখে নগদ উত্তোলন করে ৯৫ লাখ ২ হাজার ৫২৪ টাকাসহ মোট ১ কোটি ৮৪ লাখ ২৮ হাজার ৮২০ টাকা ‘ঘুস’ নেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে।

দুদক বলছে, দুটি ঘটনায় শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলাম ৩ কোটি ৭৬ লাখ ২৮ হাজার ৮২০ টাকা ‘ঘুস’ নিয়ে এবং তার সহযোগীদের তার অবৈধ অর্থ ব্যাংকিং চ্যানেলে দেশে আনার ব্যবস্থা করার মাধ্যমে মানিলন্ডারিংয়ের অপরাধ করেছেন।

এদিকে ম্যাক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোহাম্মদ আলমগীরকে মঙ্গলবার রাতে বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বিরুদ্ধে গত ৪ ফেব্রুয়ারি মামলা দায়ের করে দুদক।

এজাহারে দুদক বলেছে, আলমগীরের নামে এবং পারিবারিক ব্যয়সহ ৮১ কোটি ৩৯ লাখ ৫৭ হাজার ৯৭৫ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য রয়েছে। বিপরীতে তার গ্রহণযোগ্য আয় পাওয়া গেছে ৫৩ কোটি ৫৩ লাখ ৩৭ হাজার ৬৭ টাকা। সেই হিসেবে আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন প্রায় ২৭ কোটি ৮৬ লাখ ২০ হাজার ৯০৮ টাকার সম্পদ অর্জন করেছেন তিনি।

গোলাম মোহাম্মদ আলমগীরের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে বিদেশে টাকা পাচারের একটি অভিযোগ ২০২৩ সালে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক।

হাসিনা-রেহানাকে শেয়ারবাজারের ৩ লাখ কোটি টাকা দেন শিবলী রুবাইয়াত: ডিবিপ্রধান: শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বাংলাদেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দিয়েছেন। তিনি শেয়ারবাজার থেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ছোট বোন শেখ রেহানাকে অবৈধভাবে ৩ লাখ কোটি টাকা দিয়েছেন।

বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) এ তথ্য জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান রেজাউল করিম মল্লিক। এর আগে, মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) রাতে রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকায় অভিযান চালিয়ে বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।

ডিবিপ্রধান রেজাউল করিম মল্লিক বলেন, শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দিয়েছেন। তিনি অবৈধভাবে ৩ লাখ কোটি টাকা শেখ হাসিনা ও তার ছোট বোন শেখ রেহানাকে দিয়েছেন।

আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর গত ২৪ আগস্ট শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম ও তার ছেলে জুহায়ের সারার ইসলামসহ আট ব্যক্তির ব্যাংক হিসাব স্থগিত করা হয়। সরকারি আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) ব্যাংকগুলোকে এ নির্দেশ দেয়।
গত মাসে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের পাসপোর্ট বাতিল করে বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেয়। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়।

গত বছরের ১১ সেপ্টেম্বর বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম এবং তার সহযোগী ৮ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে জালিয়াতি ও প্রতারণার অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। প্রাথমিক তথ্যে উল্লেখ করা হয়, ওই ব্যক্তিরা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থেকে দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন।

আয়বহির্ভূত এক হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ স্থাবর ও অস্থাবর অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন তারা। এ ছাড়া এই ব্যক্তিরা আইন ও বিধিমালা লঙ্ঘন করে নিজ নামে ও তাদের পরিবার-পরিজনের নামে-বেনামে বিদেশে অর্থপাচার করেছেন।

যেসব দেশে অর্থ পাচার করা হয় সেগুলো হলো- সংযুক্ত আরব আমিরাত, কানাডা, সিঙ্গাপুর, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য।

বিএসইসির চেয়ারম্যান হিসেবে শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের দ্বিতীয় দফা নিয়োগ নিয়ে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের বিরোধিতা ছিল। কিন্তু ওই সময়ে ব্যাপক ক্ষমতাধর ব্যবসায়ী সালমান এফ রহমানের তদবিরে নিয়োগ পান শিবলী। এক্ষেত্রে সালমান এফ রহমানকে শেয়ারবাজার থেকে ৬ হাজার ৬০০ কোটি টাকার সুবিধা দেওয়া হয়। শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার শীর্ষ পদে বসে বেআইনিভাবে শেয়ার ব্যবসা করেছেন শিবলী রুবাইয়াত।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স বিভাগের অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম ২০২০ সালের ১৭ মে প্রথম দফায় বিএসইসির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন। পুনর্নিয়োগ পেয়ে গত বছরের ১৬ মে তিনি আবার বিএসইসি চেয়ারম্যানের দায়িত্বে বসেন।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত বছরের ১০ আগস্ট বিএসইসির চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করেন শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। এরপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজ বিভাগে ফিরে যান।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স বিভাগ সূত্রে জানা যায়, শিবলী রুবাইয়াত সশরীর না গিয়ে এক ব্যক্তিকে পাঠিয়ে বিভাগে যোগদানপত্র জমা দেন। তবে তিনি ক্লাস নেন না।

 

 

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

শিবলী রুবাইয়াত ও আলমগীর কারাগারে

আপডেট সময় : ০৯:০৪:৪৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলামকে ঘুসের মামলায় এবং ম্যাক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোহাম্মদ আলমগীরকে অবৈধ সম্পদের মামলায় ১০ দিন করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চায় দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক।

শিবলী ও আলমগীরকে বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতে হাজির করে দুদকের পক্ষ থেকে রিমান্ডের এই আবেদন করা হয়। অন্যদিকে দুই আসামির পক্ষে জামিন চেয়ে আবেদন করেন তাদের আইনজীবীরা।

শুনানি শেষে শিবলী ও আলমগীরকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়ে বিচারক জাকির হোসেন গালিব রিমান্ড শুনানির জন্য বৃহস্পতিবার দিন রাখেন।

দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর বলেন, আসামিপক্ষের আইনজীবীর কাছে রিমান্ড বাতিল আবেদন ও জামিন আবেদনের যথাযথ নথি না থাকায় বৃহস্পতিবার শুনানির দিন ঠিক করেছে আদালত। দুজনকেই কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

মঙ্গলবার রাতে ঢাকার ধানমন্ডি থেকে শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলামকে আটক করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। পরে দুর্নীতি দমন কমিশনের উপ-পরিচালক মো. মাসুদুর রহমান বাদী হয়ে বুধবার একটি মামলা দায়ের করেন।

মোনার্ক হোল্ডিংস লিমিটেডকে ব্রোকার হাউজের লাইসেন্স পাইয়ে দেওয়ার বিনিময়ে ৩ কোটি ৭৬ লাখ ২৯ হাজার টাকা ঘুস নেওয়ার অভিযোগ আনা হয় সেখানে।

মামলার অন্য আসামিরা হলেনÑ মোনার্ক হোল্ডিং ইনকর্পোরেশনের চেয়ারম্যান জাবেদ এ মতিন, ঝিন বাংলা ফেব্রিক্সের প্রোপাইটর আরিফুল ইসলাম, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের দিলকুশা শাখার ফরেন এক্সচেঞ্জ বিভাগের সাবেক ইনচার্জ এবং বর্তমান এফএভিপি ইসরাত জাহন, ব্যাংকটির ভাইস চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের দিলকুশা শাখার সাবেক ব্যবস্থাপক সৈয়দ মাহবুব মোরশেদ।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, আসামি শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম ২০২০ সালের ১৭ মে থেকে ২০২৪ সালের ১০ আগস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশ সিকিউরিটি এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ওই সময় মোনার্ক হোল্ডিংস লিমিটেড নামে ব্রেকারেজ হাউজের পরিচালক আসামি জাভেদ এ মতিনের ‘নামসর্বস্ব’ আমেরিকান কোম্পানি মোনার্ক হোল্ডিং ইনকরপোরেশনের ব্যাংক হিসাব থেকে শিবলীর ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাবে ১ কোটি ৯২ লক্ষ টাকা পাঠানো হয়।
শিবলী ওই অ্যাকাইন্টের মাধ্যমে নেওয়া ‘ঘুসকে’ বৈধতা দেওয়ার জন্য জাভেদ এ মতিনকে অ্যাকর্ড অ্যাপারেল ইনকর্পোরেশন, ইউএসএ-এর চেয়ারম্যান দেখিয়ে একটি ভুয়া বাড়িভাড়া চুক্তি করেন।

একইভাবে শিবলী পরিচালিত ‘নামসর্বস্ব’ কোম্পানি ঝিন বাংলা ফেব্রিক্স ও মোনার্ক হোল্ডিংস ইনকের মধ্যে ভুয়া পণ্যবিক্রয় চুক্তি দেখিয়ে ৩ লাখ ৬১ হাজার ডলার দেশে এনে নিজের ঋন পরিশোধ বাবদ ৮৯ লাখ ২৬ হাজার ২৯৬ টাকা ও বিভিন্ন তারিখে নগদ উত্তোলন করে ৯৫ লাখ ২ হাজার ৫২৪ টাকাসহ মোট ১ কোটি ৮৪ লাখ ২৮ হাজার ৮২০ টাকা ‘ঘুস’ নেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে।

দুদক বলছে, দুটি ঘটনায় শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলাম ৩ কোটি ৭৬ লাখ ২৮ হাজার ৮২০ টাকা ‘ঘুস’ নিয়ে এবং তার সহযোগীদের তার অবৈধ অর্থ ব্যাংকিং চ্যানেলে দেশে আনার ব্যবস্থা করার মাধ্যমে মানিলন্ডারিংয়ের অপরাধ করেছেন।

এদিকে ম্যাক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোহাম্মদ আলমগীরকে মঙ্গলবার রাতে বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বিরুদ্ধে গত ৪ ফেব্রুয়ারি মামলা দায়ের করে দুদক।

এজাহারে দুদক বলেছে, আলমগীরের নামে এবং পারিবারিক ব্যয়সহ ৮১ কোটি ৩৯ লাখ ৫৭ হাজার ৯৭৫ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য রয়েছে। বিপরীতে তার গ্রহণযোগ্য আয় পাওয়া গেছে ৫৩ কোটি ৫৩ লাখ ৩৭ হাজার ৬৭ টাকা। সেই হিসেবে আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন প্রায় ২৭ কোটি ৮৬ লাখ ২০ হাজার ৯০৮ টাকার সম্পদ অর্জন করেছেন তিনি।

গোলাম মোহাম্মদ আলমগীরের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে বিদেশে টাকা পাচারের একটি অভিযোগ ২০২৩ সালে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক।

হাসিনা-রেহানাকে শেয়ারবাজারের ৩ লাখ কোটি টাকা দেন শিবলী রুবাইয়াত: ডিবিপ্রধান: শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বাংলাদেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দিয়েছেন। তিনি শেয়ারবাজার থেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ছোট বোন শেখ রেহানাকে অবৈধভাবে ৩ লাখ কোটি টাকা দিয়েছেন।

বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) এ তথ্য জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান রেজাউল করিম মল্লিক। এর আগে, মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) রাতে রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকায় অভিযান চালিয়ে বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।

ডিবিপ্রধান রেজাউল করিম মল্লিক বলেন, শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দিয়েছেন। তিনি অবৈধভাবে ৩ লাখ কোটি টাকা শেখ হাসিনা ও তার ছোট বোন শেখ রেহানাকে দিয়েছেন।

আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর গত ২৪ আগস্ট শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম ও তার ছেলে জুহায়ের সারার ইসলামসহ আট ব্যক্তির ব্যাংক হিসাব স্থগিত করা হয়। সরকারি আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) ব্যাংকগুলোকে এ নির্দেশ দেয়।
গত মাসে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের পাসপোর্ট বাতিল করে বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেয়। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়।

গত বছরের ১১ সেপ্টেম্বর বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম এবং তার সহযোগী ৮ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে জালিয়াতি ও প্রতারণার অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। প্রাথমিক তথ্যে উল্লেখ করা হয়, ওই ব্যক্তিরা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থেকে দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন।

আয়বহির্ভূত এক হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ স্থাবর ও অস্থাবর অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন তারা। এ ছাড়া এই ব্যক্তিরা আইন ও বিধিমালা লঙ্ঘন করে নিজ নামে ও তাদের পরিবার-পরিজনের নামে-বেনামে বিদেশে অর্থপাচার করেছেন।

যেসব দেশে অর্থ পাচার করা হয় সেগুলো হলো- সংযুক্ত আরব আমিরাত, কানাডা, সিঙ্গাপুর, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য।

বিএসইসির চেয়ারম্যান হিসেবে শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের দ্বিতীয় দফা নিয়োগ নিয়ে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের বিরোধিতা ছিল। কিন্তু ওই সময়ে ব্যাপক ক্ষমতাধর ব্যবসায়ী সালমান এফ রহমানের তদবিরে নিয়োগ পান শিবলী। এক্ষেত্রে সালমান এফ রহমানকে শেয়ারবাজার থেকে ৬ হাজার ৬০০ কোটি টাকার সুবিধা দেওয়া হয়। শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার শীর্ষ পদে বসে বেআইনিভাবে শেয়ার ব্যবসা করেছেন শিবলী রুবাইয়াত।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স বিভাগের অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম ২০২০ সালের ১৭ মে প্রথম দফায় বিএসইসির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন। পুনর্নিয়োগ পেয়ে গত বছরের ১৬ মে তিনি আবার বিএসইসি চেয়ারম্যানের দায়িত্বে বসেন।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত বছরের ১০ আগস্ট বিএসইসির চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করেন শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। এরপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজ বিভাগে ফিরে যান।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স বিভাগ সূত্রে জানা যায়, শিবলী রুবাইয়াত সশরীর না গিয়ে এক ব্যক্তিকে পাঠিয়ে বিভাগে যোগদানপত্র জমা দেন। তবে তিনি ক্লাস নেন না।