ঢাকা ১২:০৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

দেশে আওয়ামী লীগ নামে কেউ রাজনীতি করতে পারবে না: সালাহউদ্দিন আহমেদ

  • আপডেট সময় : ০৬:১৮:২৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • ১৬ বার পড়া হয়েছে

বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘জাতীয় ঐক্য ও বর্তমান বাস্তবতা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। ছবি সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘আমরা পরিষ্কার করে বলতে চাই, বাংলাদেশ মানুষ গণঅভ্যুত্থানের মধ্যে দিয়ে আওয়ামী লীগকে প্রত্যাখ্যান করেছে, তাদের বিতাড়ন করেছে। বাংলাদেশে সেই আওয়ামী লীগের নামে কেউ রাজনীতি করতে পারবে না। দলটির গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে বিচার দাবি জানাচ্ছি। বিচার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে নির্ধারণ হোক আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের রাজনীতি ও নির্বাচন করতে পারবে কিনা। সংবিধানের বিধান মোতাবেক আপনারা আইন প্রস্তুত করুন।

বুধবার (৫ ফ্রেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে আঞ্চলিক সম্পাদক পরিষদ আয়োজিত ‘জাতীয় ঐক্য ও বর্তমান বাস্তবতা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আওয়ামী লীগকে রাজপথে কতদিন পুলিশ দিয়ে ঠেকিয়ে রাখবেন? আপনারা বলছেন, আওয়ামী লীগকে রাজনীতি করতে দেবেন না কিন্তু কী পদক্ষেপ নিচ্ছেন? আমরা বলেছিলাম, সংবিধানের ৪৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হোক। কিন্তু কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। আন্তর্জাতিক আদালতের আইন সংশোধন করার দাবি জানিয়েছিল জনগণ। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার অধ্যাদেশ জারি করার সিদ্ধান্ত নিয়ে পরবর্তী সময়ে কেবিনেটে তা বাতিল করা হয়। একদিকে বলবেন আওয়ামী লীগ রাজনীতি নিষিদ্ধ হোক, আবার বিচার করবেন না। রাজপথে পুলিশ দিয়ে বাধা দেবেন, এতো স্ববিরোধিতা ঠিক নয়।

‘সর্ষের মধ্যে ভূত’ রেখে কখনও প্রধান উপদেষ্টা সফল হতে পারবেন না বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘সুতরাং প্রশাসন হোক, বিচার বিভাগ হোক বা নির্বাচন ব্যবস্থার মধ্য থেকে ফ্যাসিবাদদের পরিষ্কার করতে হবে। গণতান্ত্রিক সংস্কারের মধ্যে দিয়ে সাংবিধানিক রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চাই। এজন্য নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারে অগ্রাধিকার দিতে হবে। নির্বাচনমুখী সংস্কারের জন্য স্বল্পমেয়াদি সংস্কার চিহ্নিত করতে হবে। মধ্যম ও দীর্ঘ মেয়াদি সংস্কারের জন্য বিএনপি ৩১ দফা অনেক আগেই দিয়েছে। ২০১১ সালে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিল করেছিল সেই বিধান আবারও সংযুক্ত হয়েছে। স্বীকৃত দিতে হলেও নির্বাচিত সরকার দরকার।

বেশি সময়ক্ষেপণের জন্য কোনো কৌশল অবলম্বন করলে জনগণ মেনে নেবে না বলে হুশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, ভোটার তালিকা তৈরি হয়ে যাবে। এরপর ডেলিমিটাশনসহ (সীমানা নির্ধারণ) অন্যান্য আইন প্রক্রিয়ার কাজ চলবে। সেগুলো কাজ শেষ করতে খুব বেশি সময় লাগবে না। এসব কাজ একই সঙ্গে চলতে পারে। সুতরাং জনগণের নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠাতা করুন।

অন্তর্বর্তী সরকারকে সবার সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত একটি নির্বাচন রোডম্যাপ প্রদান করার আহ্বান জানিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, আমরা বলছি জুলাই আগস্টে নির্বাচন সম্ভব। তার আগে নির্বাচনের জন্য আইনি ও প্রতিষ্ঠানিক কিছু সংস্কার করে আমরা নির্বাচনমুখী হতে চাই। কেউ কেউ বলছেন নির্বাচন আগে, আবার কেউ কেউ বলছেন সংস্কার আগে। নির্বাচন ও সংস্কার দুটিকে গুলিয়ে ফেলা ঠিক হবে না। সংস্কার চলমান প্রক্রিয়া। যতদিন দেশ থাকবে ততদিন আমাদের সংস্কারের মধ্যে দিয়ে যেতে হবে।

ছয় মাস যথেষ্ট সময় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আজ প্রশাসন ও বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন রিপোর্ট জমা দিয়েছে। এর আগে আরও চারটি সংস্কার জমা দিয়েছে। আমাদের সংস্কার কমিশনের কাছে আমরা আমাদের পরামর্শ জমা দিয়েছি। জানুয়ারিতে আলোচনার করার কথা ছিল। আর এখন বলছেন ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি আলোচনা করবেন। এরপর আলোচনার নামে কতোদিন পার করবেন?

শেখ হাসিনা দেশের বাইরে থেকে বিশৃঙ্খলা করার জন্য অর্থ বিনিয়োগ করেছেন, প্রধান উপদেষ্টা এমন বক্তব্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শেখ হাসিনার দোসররা উপদেষ্টা পরিষদে অন্তর্ভুক্ত আছেন। আমরা পরামর্শ দিয়েছিলাম বাদ দেওয়ার জন্য, কিন্তু আপনারা শোনেন নাই। শেখ হাসিনার দোসররা প্রশাসনের সর্বোচ্চ পর্যায়ে বহাল রয়েছে। এদের বহাল রেখে আপনি বেশি দূর এগোতে পারবেন না। শেখ হাসিনার নিয়োজিত মন্ত্রিপরিষদ সচিব ২ মাস ৫ দিন চাকরি করে অবসরে গেছেন। কিন্তু তিনি আপনার হয়ে কাজ করছেন নাকি শেখ হাসিনার পারপাস সার্ভ করেছেন। এভাবে সচিবালয়সহ গুরুত্বপূর্ণ সব জায়গায় ফ্যাসিবাদের দোসররা বসে আছে, আপনি কীভাবে সফল হবেন?

আয়োজক সংগঠনের সভাপতি খালেদ সাইফুল্লাহ সোহেল খানের সভাপতিত্বে ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সেলিম পারভেজের সঞ্চালনায় এসময় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ফজলুর রহমান প্রমুখ।

 

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

দেশে আওয়ামী লীগ নামে কেউ রাজনীতি করতে পারবে না: সালাহউদ্দিন আহমেদ

আপডেট সময় : ০৬:১৮:২৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘আমরা পরিষ্কার করে বলতে চাই, বাংলাদেশ মানুষ গণঅভ্যুত্থানের মধ্যে দিয়ে আওয়ামী লীগকে প্রত্যাখ্যান করেছে, তাদের বিতাড়ন করেছে। বাংলাদেশে সেই আওয়ামী লীগের নামে কেউ রাজনীতি করতে পারবে না। দলটির গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে বিচার দাবি জানাচ্ছি। বিচার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে নির্ধারণ হোক আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের রাজনীতি ও নির্বাচন করতে পারবে কিনা। সংবিধানের বিধান মোতাবেক আপনারা আইন প্রস্তুত করুন।

বুধবার (৫ ফ্রেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে আঞ্চলিক সম্পাদক পরিষদ আয়োজিত ‘জাতীয় ঐক্য ও বর্তমান বাস্তবতা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আওয়ামী লীগকে রাজপথে কতদিন পুলিশ দিয়ে ঠেকিয়ে রাখবেন? আপনারা বলছেন, আওয়ামী লীগকে রাজনীতি করতে দেবেন না কিন্তু কী পদক্ষেপ নিচ্ছেন? আমরা বলেছিলাম, সংবিধানের ৪৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হোক। কিন্তু কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। আন্তর্জাতিক আদালতের আইন সংশোধন করার দাবি জানিয়েছিল জনগণ। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার অধ্যাদেশ জারি করার সিদ্ধান্ত নিয়ে পরবর্তী সময়ে কেবিনেটে তা বাতিল করা হয়। একদিকে বলবেন আওয়ামী লীগ রাজনীতি নিষিদ্ধ হোক, আবার বিচার করবেন না। রাজপথে পুলিশ দিয়ে বাধা দেবেন, এতো স্ববিরোধিতা ঠিক নয়।

‘সর্ষের মধ্যে ভূত’ রেখে কখনও প্রধান উপদেষ্টা সফল হতে পারবেন না বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘সুতরাং প্রশাসন হোক, বিচার বিভাগ হোক বা নির্বাচন ব্যবস্থার মধ্য থেকে ফ্যাসিবাদদের পরিষ্কার করতে হবে। গণতান্ত্রিক সংস্কারের মধ্যে দিয়ে সাংবিধানিক রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চাই। এজন্য নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারে অগ্রাধিকার দিতে হবে। নির্বাচনমুখী সংস্কারের জন্য স্বল্পমেয়াদি সংস্কার চিহ্নিত করতে হবে। মধ্যম ও দীর্ঘ মেয়াদি সংস্কারের জন্য বিএনপি ৩১ দফা অনেক আগেই দিয়েছে। ২০১১ সালে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিল করেছিল সেই বিধান আবারও সংযুক্ত হয়েছে। স্বীকৃত দিতে হলেও নির্বাচিত সরকার দরকার।

বেশি সময়ক্ষেপণের জন্য কোনো কৌশল অবলম্বন করলে জনগণ মেনে নেবে না বলে হুশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, ভোটার তালিকা তৈরি হয়ে যাবে। এরপর ডেলিমিটাশনসহ (সীমানা নির্ধারণ) অন্যান্য আইন প্রক্রিয়ার কাজ চলবে। সেগুলো কাজ শেষ করতে খুব বেশি সময় লাগবে না। এসব কাজ একই সঙ্গে চলতে পারে। সুতরাং জনগণের নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠাতা করুন।

অন্তর্বর্তী সরকারকে সবার সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত একটি নির্বাচন রোডম্যাপ প্রদান করার আহ্বান জানিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, আমরা বলছি জুলাই আগস্টে নির্বাচন সম্ভব। তার আগে নির্বাচনের জন্য আইনি ও প্রতিষ্ঠানিক কিছু সংস্কার করে আমরা নির্বাচনমুখী হতে চাই। কেউ কেউ বলছেন নির্বাচন আগে, আবার কেউ কেউ বলছেন সংস্কার আগে। নির্বাচন ও সংস্কার দুটিকে গুলিয়ে ফেলা ঠিক হবে না। সংস্কার চলমান প্রক্রিয়া। যতদিন দেশ থাকবে ততদিন আমাদের সংস্কারের মধ্যে দিয়ে যেতে হবে।

ছয় মাস যথেষ্ট সময় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আজ প্রশাসন ও বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন রিপোর্ট জমা দিয়েছে। এর আগে আরও চারটি সংস্কার জমা দিয়েছে। আমাদের সংস্কার কমিশনের কাছে আমরা আমাদের পরামর্শ জমা দিয়েছি। জানুয়ারিতে আলোচনার করার কথা ছিল। আর এখন বলছেন ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি আলোচনা করবেন। এরপর আলোচনার নামে কতোদিন পার করবেন?

শেখ হাসিনা দেশের বাইরে থেকে বিশৃঙ্খলা করার জন্য অর্থ বিনিয়োগ করেছেন, প্রধান উপদেষ্টা এমন বক্তব্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শেখ হাসিনার দোসররা উপদেষ্টা পরিষদে অন্তর্ভুক্ত আছেন। আমরা পরামর্শ দিয়েছিলাম বাদ দেওয়ার জন্য, কিন্তু আপনারা শোনেন নাই। শেখ হাসিনার দোসররা প্রশাসনের সর্বোচ্চ পর্যায়ে বহাল রয়েছে। এদের বহাল রেখে আপনি বেশি দূর এগোতে পারবেন না। শেখ হাসিনার নিয়োজিত মন্ত্রিপরিষদ সচিব ২ মাস ৫ দিন চাকরি করে অবসরে গেছেন। কিন্তু তিনি আপনার হয়ে কাজ করছেন নাকি শেখ হাসিনার পারপাস সার্ভ করেছেন। এভাবে সচিবালয়সহ গুরুত্বপূর্ণ সব জায়গায় ফ্যাসিবাদের দোসররা বসে আছে, আপনি কীভাবে সফল হবেন?

আয়োজক সংগঠনের সভাপতি খালেদ সাইফুল্লাহ সোহেল খানের সভাপতিত্বে ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সেলিম পারভেজের সঞ্চালনায় এসময় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ফজলুর রহমান প্রমুখ।