ঢাকা ০৩:০২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫
আখেরি মোনাজাতে ইজতেমার প্রথম পর্ব সম্পন্ন

‘আমিন আমিন’ ধ্বনিতে মুখরিত তুরাগ তীর

  • আপডেট সময় : ০৫:৫৯:২৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • ৭৮ বার পড়া হয়েছে

মোনাজাত শেষে আমিন আমিন ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে টঙ্গীর তুরাগ তীর ও ইজতেমা ময়দানের আশপাশ। ছবি সংগৃহীত

প্রত্যাশা ডেস্ক: গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ তীরে বৃহস্পতিবার শুরু হওয়া মুসলিম উম্মাহর দ্বিতীয় বৃহত্তম জমায়েত বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের প্রথম ধাপ আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে।

রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৯টা ১১ মিনিটে আখেরি মোনাজাত শুরু হয় এবং ৯টা ৩৫টা মিনিটে শেষ হয়।

মোনাজাত পরিচালনা করেন মাওলানা জুবায়ের সাহেব। মোনাজাত শেষে আমিন আমিন ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে টঙ্গীর তুরাগ তীর ও ইজতেমা ময়দানের আশপাশ।

মোনাজাতে বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর হেদায়েত, ঐক্য, শান্তি, সমৃদ্ধি, ইহকাল ও পরকালের নাজাত এবং দ্বীনের দাওয়াত সর্বত্র পৌঁছে দেওয়ার জন্য দোয়া করা হয়। এছাড়া সব ধরনের গুনাহ থেকে মুক্তির জন্য আল্লাহর কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করা হয়।

আখেরি মোনাজাতে নিজের আত্মশুদ্ধি ও নিজ নিজ গুনাহ মাফের পাশাপাশি দুনিয়ার সব বালা-মুসিবত থেকে হেফাজত করার জন্য দুই হাত তুলে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের দরবারে সন্তুষ্টি অর্জনের আশায় উপস্থিত লাখ লাখ মুসল্লি প্রার্থনা করেন। ২৪ মিনিট স্থায়ী এই মোনাজাতে দুই হাত ওপরে তুলে লাখ মুসল্লি বারবার বলছিলেন, ‘আমিন, আমিন’। মোনাজাতের সময় এই ধ্বনিতে পুরো টঙ্গী এলাকা ‘আমিন, আমিন’ ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে। তারা সবাই ইহলোকের মঙ্গল ও পরলোকের ক্ষমা প্রার্থনা করে চাইলেন সুখ ও সমৃদ্ধি।

প্রথম পর্বের শুরায়ী নেজামের ইজতেমা আয়োজক কমিটির মিডিয়া সমন্বয়কারী হাবিবুল্লাহ রায়হান বলেন, রোববার বাদ ফজর ভারতের মাওলানা আব্দুর রহমানের হেদায়েতি বয়ানে ইজতেমার কার্যক্রম শুরু হয়। যারা এখান থেকে চিল্লা, ৩ চিল্লার জন্য জামাতে বের হবেন, তারা জামাতে গিয়ে কি আমল করবে এবং মহল্লায় যারা এখান থেকে ফিরে যাচ্ছেন তারা নিজ এলাকায় গিয়ে কি আমল করবে তার দিকনির্দেশনামূলক বয়ান করা হচ্ছে। মাওলাসা আব্দুল মতিন তাৎক্ষণিকভাবে তা বাংলায় অনুবাদ করেছেন।

তিনি আরো জানান, এই বয়ানের পরেই ভারতের মাওলানা ইব্রাহিম দেওলা সাহেব নসিহতমূলক কিছু কথা বলবেন। তা বাংলায় অনুবাদ করেন মাওলানা জুবায়ের।

ইজতেমা ময়দানে আছড়ে পড়ে ড্রোন, হুড়োহুড়িতে আহত ৪১: বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাত চলাকালে একটি ড্রোন বিকট শব্দে ময়দানে আছড়ে পড়লে আতঙ্কে হুড়োহুড়িতে আহত হয়েছে প্রায় অর্ধশত মানুষ।

রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) সকালে এ ঘটনায় আহত অন্তত ৪১ জন টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।

হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, যতটুকু জানতে পেরেছি, ইজতেমা ময়দানের মোনাজাতের চিত্র ধারণ করার কাজে কোনো এক সাংবাদিকের ব্যবহার করা একটি ড্রোন ময়দানে আছড়ে পড়ে। তাতে আতঙ্কিত হয়ে ছোটাছুটি করতে গিয়ে অনেকে আহত হন।

আখেরি মোনাজাত চলাকালে সকাল ৯টা ২৫ মিনিটের দিকে ইজতেমা ময়দানের বিদেশি নিবাসের পূর্বপাশে টিনের ছাউনিতে ড্রোনটি আছড়ে পড়লে বিকট শব্দ হয়। মূলত ওই শব্দের কারণেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

সেখানে অবস্থানরত মো. হাসান নামের একজন বলেন, মাওলানা মোহাম্মদ জুবায়ের তখন আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করছিলেন। মোনাজাতের শেষ দিকে কয়েক মিনিট আগে উপর থেকে কিছু একটা এসে পড়ল।

হঠাৎ বিকট শব্দ। কিছু বুঝে উঠতে না পেরে সেখানে থাকা লোকজন আতঙ্কিত হয়ে ছুটোছুটি শুরু করে দেয়। পরে শব্দের উৎস খুঁজতে গিয়ে দেখা গেল টিনের চালে একটা ড্রোন এসেছে পড়েছে।

গাজীপুর মহানগর পুলিশের টঙ্গী জোনের সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ মেহেদী হাসান জানান, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়েছিল। কিন্তু তার আগেই কেউ ড্রোনটি নিয়ে গেছে।

সেটা কীভাবে সেখানে পড়েছে, আর কারাইবা নিয়ে গেল তা জানার চেষ্টা করছি। তবে ড্রোনটি পুলিশ কিংবা কোন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নয় বলে জানতে পেরেছি। আমরা ঘটনাটি অনুসন্ধান করছি।

টঙ্গী পূর্ব থানার ওসি মো. ফরিদুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, একটি ড্রোন আকাশে উড়ছিল সম্ভবত ড্রোনটির চার্জ শেষ হয়ে যাওয়ায় সেটি ইজতেমা ময়দানের একটি কামরার টিনের ছাউনিতে আছড়ে পড়ে। তাতে মুসল্লিরা অনেকেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।

হুড়োহুড়িতে আহত যারা হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন, তাদের একটি তালিকা দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

তারা হলেন– আবুল কালাম (৫৫), আলামিন (৩২), আজাদ (৩০), ওবায়দুল্লাহ (৩২), রাতুল (১৮), আব্দুল করিম (২৮) সাইফুল ইসলাম (৩৮), জাফর উদ্দিন (৩১) জয়নাল (২৪), মকবুল হোসেন (৬৪) সোহাগ (৬০), মোশারফ (৩০), কোরবান আলী (২৫), সাইফুল ইসলাম (৩৫), সালামত (১৮), মুস্তাকিন (৩৩), কবির হোসেন (৩০), মুবিন (১৮), আয়নাল হক (২২), মামুন হোসেন (২১), মো. বাসেদ (১৩), খোকন (৪৩), জুয়েল (২৫)।

এছাড়া কবির হোসেন (৪৬), নাজিম উদ্দিন (৪১), জবরুল (৩১), জয়নাল (৫৪), কাওছারুল আলম (২৮), রায়হান (২৭), জহরুল (২৮), আলি নেওয়াজ (৩৮), আফতাব উদ্দিন (৪৭) মো. আমান (২৮), আনোয়ার (৪৫), সোহেল (৩৫), ফজল হক (৪৫) ও মুজাফফর আলীর (৪৪) নাম আছে তালিকায়।

ট্রেনে ঝুঁকি নিয়ে বাড়ি ফিরলেন মুসল্লিরা: আখেরি মোনাজাতের পর বাড়ি ফিরতে শুরু করেন বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নেওয়া মুসল্লিরা। বাস, ট্রেনসহ বিভিন্ন যানবাহনে গন্তব্যে পাড়ি দেন তারা। মুসল্লিদের সুবিধার্থে বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করেছে প্রশাসন। তবে লাখো মুসল্লির তুলনায় অপ্রতুল যানবাহন থাকায় অনেকে ঝুঁকি নিয়ে ট্রেনসহ বিভিন্ন যানবাহনে রওনা দিয়েছেন।

আখেরি মোনাজাত শেষে ঝুঁকি নিয়ে ট্রেনসহ বিভিন্ন যানবাহনে রওনা দিয়েছেন বহু মানুষ। ছবি: সংগৃহীত

ইজতেমায় অংশ নিতে আসা মুসল্লিদের যাতায়াতের সুবিধার্থে সাত জোড়া বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। ইজতেমা চলাকালে জয়দেবপুর কমিউটার ট্রেনের সাপ্তাহিক ছুটির দিন শনিবার বাতিল করে শুক্রবার করা হয়েছে। বর্ধিত যাত্রী পরিবহনের জন্য বিশেষ ট্রেন পরিচালনার পাশাপাশি এক্সপ্রেস, কমিউটার এবং লোকাল ট্রেনগুলোতে অতিরিক্ত বগি সংযোজন করা হয়েছে। এ ছাড়া বেশ কয়েকটি আন্তনগর ট্রেন টঙ্গী রেলওয়ে স্টেশনে যাত্রাবিরতি করছে।

আখেরি মোনাজাত শেষে সবােই একযোগে বাগি ফিরতে শুরু করায় নির্ধারিত ট্রেনে দেখা যায় উপচেপড়া ভিড়। নিষেধাজ্ঞার পরেও অনেকে ট্রেনের ছাদ, ইঞ্জিনের সামনের অংশে চড়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাড়ি ফিরছেন।

সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটে মোনাজাত শেষে টঙ্গী স্টেশন রোড, টঙ্গী বাজার, চেরাগ আলী, কলেজ গেট, মিলগেট, কামারপাড়া, আব্দুল্লাহপুর, বিমানবন্দর, উত্তরা, দৌড় ব্রিজসহ ইজতেমা ময়দান থেকে বের হওয়ার সব সড়কে ছিল মুসল্লিদের ঢল।

টঙ্গী রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার মোহাম্মদ রকিব বলেন, ‘স্বাভাবিক সিডিউলে সাত জোড়া বিশেষ ট্রেনসহ অন্যান্য ট্রেন চলাচল করছে।’

এ ছাড়া সড়কপথে ট্রাক, পিকআপ ও অটোরিকশায় গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে মুসল্লিদের। মুসল্লিরা বলছেন, সার্বিক ব্যবস্থাপনা ভালো থাকায় আখেরি মোনাজাতে তেমন ভোগান্তি হয়নি।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

আখেরি মোনাজাতে ইজতেমার প্রথম পর্ব সম্পন্ন

‘আমিন আমিন’ ধ্বনিতে মুখরিত তুরাগ তীর

আপডেট সময় : ০৫:৫৯:২৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

প্রত্যাশা ডেস্ক: গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ তীরে বৃহস্পতিবার শুরু হওয়া মুসলিম উম্মাহর দ্বিতীয় বৃহত্তম জমায়েত বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের প্রথম ধাপ আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে।

রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৯টা ১১ মিনিটে আখেরি মোনাজাত শুরু হয় এবং ৯টা ৩৫টা মিনিটে শেষ হয়।

মোনাজাত পরিচালনা করেন মাওলানা জুবায়ের সাহেব। মোনাজাত শেষে আমিন আমিন ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে টঙ্গীর তুরাগ তীর ও ইজতেমা ময়দানের আশপাশ।

মোনাজাতে বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর হেদায়েত, ঐক্য, শান্তি, সমৃদ্ধি, ইহকাল ও পরকালের নাজাত এবং দ্বীনের দাওয়াত সর্বত্র পৌঁছে দেওয়ার জন্য দোয়া করা হয়। এছাড়া সব ধরনের গুনাহ থেকে মুক্তির জন্য আল্লাহর কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করা হয়।

আখেরি মোনাজাতে নিজের আত্মশুদ্ধি ও নিজ নিজ গুনাহ মাফের পাশাপাশি দুনিয়ার সব বালা-মুসিবত থেকে হেফাজত করার জন্য দুই হাত তুলে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের দরবারে সন্তুষ্টি অর্জনের আশায় উপস্থিত লাখ লাখ মুসল্লি প্রার্থনা করেন। ২৪ মিনিট স্থায়ী এই মোনাজাতে দুই হাত ওপরে তুলে লাখ মুসল্লি বারবার বলছিলেন, ‘আমিন, আমিন’। মোনাজাতের সময় এই ধ্বনিতে পুরো টঙ্গী এলাকা ‘আমিন, আমিন’ ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে। তারা সবাই ইহলোকের মঙ্গল ও পরলোকের ক্ষমা প্রার্থনা করে চাইলেন সুখ ও সমৃদ্ধি।

প্রথম পর্বের শুরায়ী নেজামের ইজতেমা আয়োজক কমিটির মিডিয়া সমন্বয়কারী হাবিবুল্লাহ রায়হান বলেন, রোববার বাদ ফজর ভারতের মাওলানা আব্দুর রহমানের হেদায়েতি বয়ানে ইজতেমার কার্যক্রম শুরু হয়। যারা এখান থেকে চিল্লা, ৩ চিল্লার জন্য জামাতে বের হবেন, তারা জামাতে গিয়ে কি আমল করবে এবং মহল্লায় যারা এখান থেকে ফিরে যাচ্ছেন তারা নিজ এলাকায় গিয়ে কি আমল করবে তার দিকনির্দেশনামূলক বয়ান করা হচ্ছে। মাওলাসা আব্দুল মতিন তাৎক্ষণিকভাবে তা বাংলায় অনুবাদ করেছেন।

তিনি আরো জানান, এই বয়ানের পরেই ভারতের মাওলানা ইব্রাহিম দেওলা সাহেব নসিহতমূলক কিছু কথা বলবেন। তা বাংলায় অনুবাদ করেন মাওলানা জুবায়ের।

ইজতেমা ময়দানে আছড়ে পড়ে ড্রোন, হুড়োহুড়িতে আহত ৪১: বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাত চলাকালে একটি ড্রোন বিকট শব্দে ময়দানে আছড়ে পড়লে আতঙ্কে হুড়োহুড়িতে আহত হয়েছে প্রায় অর্ধশত মানুষ।

রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) সকালে এ ঘটনায় আহত অন্তত ৪১ জন টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।

হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, যতটুকু জানতে পেরেছি, ইজতেমা ময়দানের মোনাজাতের চিত্র ধারণ করার কাজে কোনো এক সাংবাদিকের ব্যবহার করা একটি ড্রোন ময়দানে আছড়ে পড়ে। তাতে আতঙ্কিত হয়ে ছোটাছুটি করতে গিয়ে অনেকে আহত হন।

আখেরি মোনাজাত চলাকালে সকাল ৯টা ২৫ মিনিটের দিকে ইজতেমা ময়দানের বিদেশি নিবাসের পূর্বপাশে টিনের ছাউনিতে ড্রোনটি আছড়ে পড়লে বিকট শব্দ হয়। মূলত ওই শব্দের কারণেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

সেখানে অবস্থানরত মো. হাসান নামের একজন বলেন, মাওলানা মোহাম্মদ জুবায়ের তখন আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করছিলেন। মোনাজাতের শেষ দিকে কয়েক মিনিট আগে উপর থেকে কিছু একটা এসে পড়ল।

হঠাৎ বিকট শব্দ। কিছু বুঝে উঠতে না পেরে সেখানে থাকা লোকজন আতঙ্কিত হয়ে ছুটোছুটি শুরু করে দেয়। পরে শব্দের উৎস খুঁজতে গিয়ে দেখা গেল টিনের চালে একটা ড্রোন এসেছে পড়েছে।

গাজীপুর মহানগর পুলিশের টঙ্গী জোনের সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ মেহেদী হাসান জানান, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়েছিল। কিন্তু তার আগেই কেউ ড্রোনটি নিয়ে গেছে।

সেটা কীভাবে সেখানে পড়েছে, আর কারাইবা নিয়ে গেল তা জানার চেষ্টা করছি। তবে ড্রোনটি পুলিশ কিংবা কোন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নয় বলে জানতে পেরেছি। আমরা ঘটনাটি অনুসন্ধান করছি।

টঙ্গী পূর্ব থানার ওসি মো. ফরিদুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, একটি ড্রোন আকাশে উড়ছিল সম্ভবত ড্রোনটির চার্জ শেষ হয়ে যাওয়ায় সেটি ইজতেমা ময়দানের একটি কামরার টিনের ছাউনিতে আছড়ে পড়ে। তাতে মুসল্লিরা অনেকেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।

হুড়োহুড়িতে আহত যারা হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন, তাদের একটি তালিকা দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

তারা হলেন– আবুল কালাম (৫৫), আলামিন (৩২), আজাদ (৩০), ওবায়দুল্লাহ (৩২), রাতুল (১৮), আব্দুল করিম (২৮) সাইফুল ইসলাম (৩৮), জাফর উদ্দিন (৩১) জয়নাল (২৪), মকবুল হোসেন (৬৪) সোহাগ (৬০), মোশারফ (৩০), কোরবান আলী (২৫), সাইফুল ইসলাম (৩৫), সালামত (১৮), মুস্তাকিন (৩৩), কবির হোসেন (৩০), মুবিন (১৮), আয়নাল হক (২২), মামুন হোসেন (২১), মো. বাসেদ (১৩), খোকন (৪৩), জুয়েল (২৫)।

এছাড়া কবির হোসেন (৪৬), নাজিম উদ্দিন (৪১), জবরুল (৩১), জয়নাল (৫৪), কাওছারুল আলম (২৮), রায়হান (২৭), জহরুল (২৮), আলি নেওয়াজ (৩৮), আফতাব উদ্দিন (৪৭) মো. আমান (২৮), আনোয়ার (৪৫), সোহেল (৩৫), ফজল হক (৪৫) ও মুজাফফর আলীর (৪৪) নাম আছে তালিকায়।

ট্রেনে ঝুঁকি নিয়ে বাড়ি ফিরলেন মুসল্লিরা: আখেরি মোনাজাতের পর বাড়ি ফিরতে শুরু করেন বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নেওয়া মুসল্লিরা। বাস, ট্রেনসহ বিভিন্ন যানবাহনে গন্তব্যে পাড়ি দেন তারা। মুসল্লিদের সুবিধার্থে বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করেছে প্রশাসন। তবে লাখো মুসল্লির তুলনায় অপ্রতুল যানবাহন থাকায় অনেকে ঝুঁকি নিয়ে ট্রেনসহ বিভিন্ন যানবাহনে রওনা দিয়েছেন।

আখেরি মোনাজাত শেষে ঝুঁকি নিয়ে ট্রেনসহ বিভিন্ন যানবাহনে রওনা দিয়েছেন বহু মানুষ। ছবি: সংগৃহীত

ইজতেমায় অংশ নিতে আসা মুসল্লিদের যাতায়াতের সুবিধার্থে সাত জোড়া বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। ইজতেমা চলাকালে জয়দেবপুর কমিউটার ট্রেনের সাপ্তাহিক ছুটির দিন শনিবার বাতিল করে শুক্রবার করা হয়েছে। বর্ধিত যাত্রী পরিবহনের জন্য বিশেষ ট্রেন পরিচালনার পাশাপাশি এক্সপ্রেস, কমিউটার এবং লোকাল ট্রেনগুলোতে অতিরিক্ত বগি সংযোজন করা হয়েছে। এ ছাড়া বেশ কয়েকটি আন্তনগর ট্রেন টঙ্গী রেলওয়ে স্টেশনে যাত্রাবিরতি করছে।

আখেরি মোনাজাত শেষে সবােই একযোগে বাগি ফিরতে শুরু করায় নির্ধারিত ট্রেনে দেখা যায় উপচেপড়া ভিড়। নিষেধাজ্ঞার পরেও অনেকে ট্রেনের ছাদ, ইঞ্জিনের সামনের অংশে চড়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাড়ি ফিরছেন।

সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটে মোনাজাত শেষে টঙ্গী স্টেশন রোড, টঙ্গী বাজার, চেরাগ আলী, কলেজ গেট, মিলগেট, কামারপাড়া, আব্দুল্লাহপুর, বিমানবন্দর, উত্তরা, দৌড় ব্রিজসহ ইজতেমা ময়দান থেকে বের হওয়ার সব সড়কে ছিল মুসল্লিদের ঢল।

টঙ্গী রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার মোহাম্মদ রকিব বলেন, ‘স্বাভাবিক সিডিউলে সাত জোড়া বিশেষ ট্রেনসহ অন্যান্য ট্রেন চলাচল করছে।’

এ ছাড়া সড়কপথে ট্রাক, পিকআপ ও অটোরিকশায় গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে মুসল্লিদের। মুসল্লিরা বলছেন, সার্বিক ব্যবস্থাপনা ভালো থাকায় আখেরি মোনাজাতে তেমন ভোগান্তি হয়নি।