ঢাকা ০৭:১২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০৭ মার্চ ২০২৫
স্তন, মুখ, পাকস্থলী, শ্বাসনালী ও জরায়ুমুখ ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা বেশি

দেশে প্রতি লাখে ক্যান্সার আক্রান্ত ১০৬ জন

  • আপডেট সময় : ০৮:২৪:০৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • ৩৬ বার পড়া হয়েছে

শনিবার বিএসএমএমইউর সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের সম্মেলন কক্ষে ‘বাংলাদেশে ক্যান্সারের বোঝা: জনসংখ্যাভিত্তিক ক্যান্সার রেজিস্ট্রি’ শীর্ষক এক গবেষণার ফল প্রকাশ অনুষ্ঠান। ছবি সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশে প্রতি এক লাখ মানুষের মধ্যে ১০৬ জনের ক্যান্সার আক্রান্ত হওয়ার তথ্য উঠে এসেছে এক গবেষণায়।

এতে বলা হচ্ছে, বছরে প্রতি লাখে নতুন করে ক্যান্সার আক্রান্ত হচ্ছেন ৫৩ জন, আর মোট মৃত্যুর ১২ শতাংশের জন্য দায়ী এই রোগ।

শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) বিএসএমএমইউর সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের সম্মেলন কক্ষে ‘বাংলাদেশে ক্যান্সারের বোঝা: জনসংখ্যাভিত্তিক ক্যান্সার রেজিস্ট্রি’ শীর্ষক এক গবেষণার ফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানানো হয়।

দেশে ৩৮ ধরনের ক্যান্সারে মানুষ আক্রান্ত হয় জানিয়ে গবেষণায় বলা হয়, এর মধ্যে স্তন, মুখ, পাকস্থলী, শ্বাসনালী ও জরায়ুমুখ ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা বেশি।

প্রধান গবেষক বিএসএমএমইউর পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক খালেকুজ্জামান বলেন, কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলায় ২০২৩ সালের জুলাই মাস থেকে এ গবেষণাটি পরিচালিত হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ৪৬ হাজার ৬৩১টি পরিবারের দুই লক্ষাধিক অংশগ্রহণকারীকে এই গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ৪৮ দশমিক ৪ শতাংশ পুরুষ এবং ৫১ দশমিক ৬ শতাংশ নারী।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে মোট ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা ২১৪ জন। ক্যান্সারের প্রাদুর্ভাব বিবেচনায় প্রতি লাখে আক্রান্তের সংখ্যা ১০৬ জন (পুরুষের ক্ষেত্রে প্রতি লাখে ১১৮ জন এবং নারীর ক্ষেত্রে প্রতি লাখে ৯৬ জন)।

ক্যান্সার রোগীদের ৯২ দশমিক ৫ শতাংশ ১৮ থেকে ৭৫ বছর বয়সী। ১৮ বছরের কম বয়সী ক্যান্সার রোগী আছেন ২ দশমিক ৪ শতাংশ এবং ৭৫ বছরের বেশি বয়সী ক্যান্সার রোগী আছেন ৫ দশমিক ১ শতাংশ।

গবেষণায় দেখা গেছে, আক্রান্তদের মধ্যে ১৬ দশমিক ৮ শতাংশই স্তন ক্যান্সার রোগী। ঠোঁট ও মুখগহ্বর ক্যান্সার আক্রান্তের হার ৮ দশমিক ৪ শতাংশ, পাকস্থলী ক্যান্সার আক্রান্তের হার ৭ শতাংশ, স্বরযন্ত্র ক্যান্সার আক্রান্তের হার ৭ শতাংশ এবং জরায়ুমুখ আক্রান্তের হার ৫ দশমিক ১শতাংশ।

ফুসফুস, শ্বাসনালী ও পাকস্থলীর ক্যান্সারে সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু ঘটে বরে অনুষ্ঠানে জানানো হয়।

গবেষক খালেকুজ্জামান বলেন, ক্যান্সার বিশ্বে মৃত্যুর প্রধান কারণগুলোর একটি। বাংলাদেশে জনসংখ্যাভিত্তিক ক্যান্সার রেজিস্ট্রি বা নিবন্ধন (পিবিসিআর) না থাকায় প্রতিবেশী দেশগুলোর তথ্য ব্যবহার করে ক্যান্সারের পরিস্থিতি অনুমান করতে হয়।

ফলে বাংলাদেশে ক্যান্সারের সঠিক পরিস্থিতি জানার ব্যাপারে সীমাবদ্ধতা আছে। তাই জনসংখ্যাভিত্তিক ক্যান্সার রেজিস্ট্রি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বা বাংলাদেশি জনগোষ্ঠীর মধ্যে একটি জনসংখ্যাভিত্তিক ক্যান্সার নিবন্ধন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ক্যান্সারের পরিস্থিতি নির্ণয় করা জরুরি হয়ে পড়েছিল, এজন্যই এ গবেষণা পরিচালনা করা হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক সায়েদুর রহমান বলেন, নিত্যনতুন জ্ঞান তৈরিতে গবেষণার বিকল্প নাই।

বিএসএমএমইউ থেকে সেই গবেষণায় পরিচালনা করা উচিত- যা রোগীদের কল্যাণে কাজে আসে। যেসব গবেষণা দেশের মানুষের, দেশের রোগীদের উপকার হবে, সেক্ষেত্রে সরকারের সহায়তা অব্যাহত থাকবে।

বিএসএমএমইউর উপাচার্য শাহিনুল আলম বলেন, গণআকাঙ্ক্ষা পূরণ করে- এমন গবেষণার জন্য অর্থের কোনো সমস্যা হবে না।

বিএসএমএমইউর উদ্যোগে পরিচালিত বাংলাদেশে জনসংখ্যাভিত্তিক ক্যান্সার রেজিস্ট্রি থেকে যে পরিসংখ্যান পাওয়া গেছে তা দেশের মানুষের ক্যান্সার প্রতিরোধ, প্রতিকার ও ক্যান্সার রোগীদের চিকিৎসায় বিরাট ভূমিকা রাখবে। একই সাথে এই পরিসংখ্যান বাংলাদেশে ক্যান্সার নিয়ে গবেষণার বহুমুখী দ্বার উন্মোচন করেছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা এবং বিএসএমএমইউ এই গবেষণায় অর্থায়ন করেছে।

বিএসএমএমইউর উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ, উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক মুজিবুর রহমান হাওলাদার, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক নাহরীন আখতার, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক সৈয়দ জাকির হোসেন এ সময় উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকস বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আতিকুল হক।

 

 

 

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

স্তন, মুখ, পাকস্থলী, শ্বাসনালী ও জরায়ুমুখ ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা বেশি

দেশে প্রতি লাখে ক্যান্সার আক্রান্ত ১০৬ জন

আপডেট সময় : ০৮:২৪:০৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশে প্রতি এক লাখ মানুষের মধ্যে ১০৬ জনের ক্যান্সার আক্রান্ত হওয়ার তথ্য উঠে এসেছে এক গবেষণায়।

এতে বলা হচ্ছে, বছরে প্রতি লাখে নতুন করে ক্যান্সার আক্রান্ত হচ্ছেন ৫৩ জন, আর মোট মৃত্যুর ১২ শতাংশের জন্য দায়ী এই রোগ।

শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) বিএসএমএমইউর সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের সম্মেলন কক্ষে ‘বাংলাদেশে ক্যান্সারের বোঝা: জনসংখ্যাভিত্তিক ক্যান্সার রেজিস্ট্রি’ শীর্ষক এক গবেষণার ফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানানো হয়।

দেশে ৩৮ ধরনের ক্যান্সারে মানুষ আক্রান্ত হয় জানিয়ে গবেষণায় বলা হয়, এর মধ্যে স্তন, মুখ, পাকস্থলী, শ্বাসনালী ও জরায়ুমুখ ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা বেশি।

প্রধান গবেষক বিএসএমএমইউর পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক খালেকুজ্জামান বলেন, কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলায় ২০২৩ সালের জুলাই মাস থেকে এ গবেষণাটি পরিচালিত হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ৪৬ হাজার ৬৩১টি পরিবারের দুই লক্ষাধিক অংশগ্রহণকারীকে এই গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ৪৮ দশমিক ৪ শতাংশ পুরুষ এবং ৫১ দশমিক ৬ শতাংশ নারী।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে মোট ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা ২১৪ জন। ক্যান্সারের প্রাদুর্ভাব বিবেচনায় প্রতি লাখে আক্রান্তের সংখ্যা ১০৬ জন (পুরুষের ক্ষেত্রে প্রতি লাখে ১১৮ জন এবং নারীর ক্ষেত্রে প্রতি লাখে ৯৬ জন)।

ক্যান্সার রোগীদের ৯২ দশমিক ৫ শতাংশ ১৮ থেকে ৭৫ বছর বয়সী। ১৮ বছরের কম বয়সী ক্যান্সার রোগী আছেন ২ দশমিক ৪ শতাংশ এবং ৭৫ বছরের বেশি বয়সী ক্যান্সার রোগী আছেন ৫ দশমিক ১ শতাংশ।

গবেষণায় দেখা গেছে, আক্রান্তদের মধ্যে ১৬ দশমিক ৮ শতাংশই স্তন ক্যান্সার রোগী। ঠোঁট ও মুখগহ্বর ক্যান্সার আক্রান্তের হার ৮ দশমিক ৪ শতাংশ, পাকস্থলী ক্যান্সার আক্রান্তের হার ৭ শতাংশ, স্বরযন্ত্র ক্যান্সার আক্রান্তের হার ৭ শতাংশ এবং জরায়ুমুখ আক্রান্তের হার ৫ দশমিক ১শতাংশ।

ফুসফুস, শ্বাসনালী ও পাকস্থলীর ক্যান্সারে সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু ঘটে বরে অনুষ্ঠানে জানানো হয়।

গবেষক খালেকুজ্জামান বলেন, ক্যান্সার বিশ্বে মৃত্যুর প্রধান কারণগুলোর একটি। বাংলাদেশে জনসংখ্যাভিত্তিক ক্যান্সার রেজিস্ট্রি বা নিবন্ধন (পিবিসিআর) না থাকায় প্রতিবেশী দেশগুলোর তথ্য ব্যবহার করে ক্যান্সারের পরিস্থিতি অনুমান করতে হয়।

ফলে বাংলাদেশে ক্যান্সারের সঠিক পরিস্থিতি জানার ব্যাপারে সীমাবদ্ধতা আছে। তাই জনসংখ্যাভিত্তিক ক্যান্সার রেজিস্ট্রি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বা বাংলাদেশি জনগোষ্ঠীর মধ্যে একটি জনসংখ্যাভিত্তিক ক্যান্সার নিবন্ধন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ক্যান্সারের পরিস্থিতি নির্ণয় করা জরুরি হয়ে পড়েছিল, এজন্যই এ গবেষণা পরিচালনা করা হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক সায়েদুর রহমান বলেন, নিত্যনতুন জ্ঞান তৈরিতে গবেষণার বিকল্প নাই।

বিএসএমএমইউ থেকে সেই গবেষণায় পরিচালনা করা উচিত- যা রোগীদের কল্যাণে কাজে আসে। যেসব গবেষণা দেশের মানুষের, দেশের রোগীদের উপকার হবে, সেক্ষেত্রে সরকারের সহায়তা অব্যাহত থাকবে।

বিএসএমএমইউর উপাচার্য শাহিনুল আলম বলেন, গণআকাঙ্ক্ষা পূরণ করে- এমন গবেষণার জন্য অর্থের কোনো সমস্যা হবে না।

বিএসএমএমইউর উদ্যোগে পরিচালিত বাংলাদেশে জনসংখ্যাভিত্তিক ক্যান্সার রেজিস্ট্রি থেকে যে পরিসংখ্যান পাওয়া গেছে তা দেশের মানুষের ক্যান্সার প্রতিরোধ, প্রতিকার ও ক্যান্সার রোগীদের চিকিৎসায় বিরাট ভূমিকা রাখবে। একই সাথে এই পরিসংখ্যান বাংলাদেশে ক্যান্সার নিয়ে গবেষণার বহুমুখী দ্বার উন্মোচন করেছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা এবং বিএসএমএমইউ এই গবেষণায় অর্থায়ন করেছে।

বিএসএমএমইউর উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ, উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক মুজিবুর রহমান হাওলাদার, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক নাহরীন আখতার, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক সৈয়দ জাকির হোসেন এ সময় উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকস বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আতিকুল হক।