ঢাকা ০৫:১৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

সেন্টমার্টিনে নয় মাসের পর্যটক নিষেধাজ্ঞা

  • আপডেট সময় : ০৭:২৩:১৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • ২০ বার পড়া হয়েছে

কক্সবাজার সংবাদদাতা : প্রতি বছর অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে পর্যটক ভ্রমণের সুযোগ থাকলেও এই মৌসুমে থাকছে না। গতকাল শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) থেকে বন্ধ হয়েছে পর্যটকদের সেন্টমার্টিন ভ্রমণ। দ্বীপের পরিবেশ ও প্রতিবেশ রক্ষায় সরকারের এ সিদ্ধান্তে আগামী ৯ মাস পর্যন্ত দ্বীপটিতে পর্যটক যাতায়ত সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ থাকবে বলে জানিয়েছেন প্রশাসনের সংশ্লিষ্টরা। তবে ভর পর্যটন মৌসুমের আরও দুই মাস বাকি থাকতেই পর্যটক যাতায়ত বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অসন্তুষ্ট দ্বীপবাসীর পাশাপাশি পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীরা।

তাদের দাবি অন্তত আরও এক মাস (ফেব্রুয়ারি) উন্মুক্ত রাখা হোক সেন্টমার্টিন। বঙ্গোপসাগরের বুক চিরে জেগে উঠা দেশের প্রবাল ঐশ্বর্যশালী একমাত্র দ্বীপ সেন্টমার্টিন আর দ্বীপটিতে প্রকৃতির নান্দনিক অপার সৌন্দর্য্য উপভোগে প্রতিবছর পর্যটন মৌসুমে প্রতিদিন ভ্রমণে আসেন হাজারো পর্যটক। যেখানে স্বচ্ছ সুনীল জলরাশি, সারি সারি নারিকেল গাছ, কেয়া-নিশিন্দার প্রাকৃতিক ঝোপ এবং পাথুরে সৈকতে মোহনীয় সৌন্দর্য্য অবগাহনে মেতে উঠেন ভ্রমণপিপাসু মানুষেরা।

একটা সময় পর্যন্ত সাগরে মাছ আহরণ, শামুক-ঝিনুক কিংবা প্রবাল পাথর বিক্রির পাশাপাশি কৃষিকাজই ছিল দ্বীপবাসীর জীবন-জীবিকার প্রধান অবলম্বন। কিন্তু গত দুই দশকের বেশি সময় ধরে দ্বীপের বাসিন্দারা নির্ভর পর্যটন ব্যবসায়। পর্যটক যাতায়তকে কেন্দ্র করে দ্বীপে গড়ে উঠেছে তিন শতাধিক হোটেল-মোটেল ও কটেজ, আড়াই শতাধিক রেস্টুরেন্ট এবং পর্যটন সংশ্লিষ্ট আরও কয়েক শত নানান ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। মূলত পর্যটক সমাগমকে কেন্দ্র করে চার মাসের আয় দিয়ে বছরে বাকি দিনগুলো নির্বাহ করে দ্বীপের বাসিন্দারা।

তবে পরিবেশ-প্রতিবেশ রক্ষায় সরকারি নানা বিধি-নিষেধের কারণে চলতি মৌসুমের গত ১ ডিসেম্বর থেকে দ্বীপে প্রতিদিন যাতায়তের সুযোগ পায় মাত্র দুই হাজার করে পর্যটক। কিন্তু সেই সুযোগও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) থেকে। এতে পরিবার ও বিনিয়োগ নিয়ে চরম উদ্বিগ্ন দ্বীপবাসীর পাশাপাশি পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) সেন্টমার্টিন স্টেশনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচী পালন করে দ্বীপের বাসিন্দারাসহ পর্যটন ব্যবসায়ীরা।

এসময় সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে অন্তত ফেব্রুয়ারি মাসটা যেন পর্যটকদের যাতায়তের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয় এমন দাবি জানান তারা। সেন্টমার্টিন দ্বীপের বাসিন্দা ও ব্যবসায়ী আব্দুল মালেক বলেন, ‘সরকারের এই সিন্ধান্তে সেন্টমার্টিনবাসী ভীষণ ক্ষতিগ্রস্থ হবে। সেন্টমার্টিনে পর্যটন মৌসুম হচ্ছে নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত। কিন্তু এই সরকার নির্ধারণ করে দিয়েছে নভেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত। এই সিদ্ধান্তে দ্বীপবাসীকে অনাহারে থাকতে হবে।

মাছ ধরে জীবিকা উপার্জন করা মানুষজন বর্তমানে পর্যটকদের সেবার মধ্য দিয়ে জীবন চালাচ্ছে। দুই মাসের আয় দিয়ে এই মানুষগুলো ১০ মাস চলতে পারবে না। সেন্টমার্টিনবাসী লিয়াকত মিয়া জানান, শান্তিপ্রিয় সেন্টমার্টিনবাসী পর্যটকদের সেবার মধ্য দিয়ে জীবন-যাপন করছে। এই অবস্থায় সরকারের এমন সিদ্ধান্তে সীমান্ত সংলগ্ন এই মানুষগুলো অর্থের অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়া কিছুদিন বন্ধ রেখে আবার কিছুদিন উন্মুক্ত রেখে কীভাবে কী পরিবেশ রক্ষা করছে- মাথায় ধরে না। তার চেয়ে বরং ওই দ্বীপ থেকে অবৈধ দখলমুক্ত করে পরিবেশ রক্ষা করে পর্যটক বান্ধব করা হোক। কক্সবাজার নাগরিক ফোরামের সভাপতি আ ন ম হেলাল উদ্দিন জানান, প্রতিবছর নভেম্বর থেকে দ্বীপে পর্যটক যাতায়াত শুরু হতো।

কিন্তু চলতি মৌসুমে সরকারি বিধি-নিষেধের কারণে এক মাস দেরিতে গত ১ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়েছে। মৌসুমের আরও দুই মাস বাকি থাকতেই শনিবার (১ জানুয়ারি) থেকে দ্বীপটিতে পর্যটক যাতায়ত বন্ধ হয়ে হয়েছে। এতে দ্বীপবাসীর ক্ষতির পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগ চরম হুমকিতে পড়েছে। এ নিয়ে কক্সবাজার নাগরিক ফোরামের উদ্যোগে ফেব্রুয়ারি মাসে পর্যটক যাতায়ত উন্মুক্ত রাখার দাবিতে উচ্চ আদালত রিট আবেদন করা হলেও আদালতে শুনানির অপেক্ষায় ঝুলে আছে। আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি আদালতের আদেশের উপর নির্ভর করছে দ্বীপবাসী ও পর্যটন ব্যবসায়ীদের ভাগ্য। এ প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ সালাহউদ্দিন জানান, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত মতে, নভেম্বরে পর্যটকদের সেন্টমার্টিনে রাত্রিযাপন নিষিদ্ধ করা হয়। তবে ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে ২ হাজার করে পর্যটক যাতায়াত এবং রাত্রিযাপনের সুযোগ রাখা হয়। আর ওই নির্দেশনার আলোকে পহেলা ফেব্রুয়ারি থেকে দ্বীপটিতে ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকছে।

 

 

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

সেন্টমার্টিনে নয় মাসের পর্যটক নিষেধাজ্ঞা

আপডেট সময় : ০৭:২৩:১৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

কক্সবাজার সংবাদদাতা : প্রতি বছর অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে পর্যটক ভ্রমণের সুযোগ থাকলেও এই মৌসুমে থাকছে না। গতকাল শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) থেকে বন্ধ হয়েছে পর্যটকদের সেন্টমার্টিন ভ্রমণ। দ্বীপের পরিবেশ ও প্রতিবেশ রক্ষায় সরকারের এ সিদ্ধান্তে আগামী ৯ মাস পর্যন্ত দ্বীপটিতে পর্যটক যাতায়ত সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ থাকবে বলে জানিয়েছেন প্রশাসনের সংশ্লিষ্টরা। তবে ভর পর্যটন মৌসুমের আরও দুই মাস বাকি থাকতেই পর্যটক যাতায়ত বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অসন্তুষ্ট দ্বীপবাসীর পাশাপাশি পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীরা।

তাদের দাবি অন্তত আরও এক মাস (ফেব্রুয়ারি) উন্মুক্ত রাখা হোক সেন্টমার্টিন। বঙ্গোপসাগরের বুক চিরে জেগে উঠা দেশের প্রবাল ঐশ্বর্যশালী একমাত্র দ্বীপ সেন্টমার্টিন আর দ্বীপটিতে প্রকৃতির নান্দনিক অপার সৌন্দর্য্য উপভোগে প্রতিবছর পর্যটন মৌসুমে প্রতিদিন ভ্রমণে আসেন হাজারো পর্যটক। যেখানে স্বচ্ছ সুনীল জলরাশি, সারি সারি নারিকেল গাছ, কেয়া-নিশিন্দার প্রাকৃতিক ঝোপ এবং পাথুরে সৈকতে মোহনীয় সৌন্দর্য্য অবগাহনে মেতে উঠেন ভ্রমণপিপাসু মানুষেরা।

একটা সময় পর্যন্ত সাগরে মাছ আহরণ, শামুক-ঝিনুক কিংবা প্রবাল পাথর বিক্রির পাশাপাশি কৃষিকাজই ছিল দ্বীপবাসীর জীবন-জীবিকার প্রধান অবলম্বন। কিন্তু গত দুই দশকের বেশি সময় ধরে দ্বীপের বাসিন্দারা নির্ভর পর্যটন ব্যবসায়। পর্যটক যাতায়তকে কেন্দ্র করে দ্বীপে গড়ে উঠেছে তিন শতাধিক হোটেল-মোটেল ও কটেজ, আড়াই শতাধিক রেস্টুরেন্ট এবং পর্যটন সংশ্লিষ্ট আরও কয়েক শত নানান ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। মূলত পর্যটক সমাগমকে কেন্দ্র করে চার মাসের আয় দিয়ে বছরে বাকি দিনগুলো নির্বাহ করে দ্বীপের বাসিন্দারা।

তবে পরিবেশ-প্রতিবেশ রক্ষায় সরকারি নানা বিধি-নিষেধের কারণে চলতি মৌসুমের গত ১ ডিসেম্বর থেকে দ্বীপে প্রতিদিন যাতায়তের সুযোগ পায় মাত্র দুই হাজার করে পর্যটক। কিন্তু সেই সুযোগও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) থেকে। এতে পরিবার ও বিনিয়োগ নিয়ে চরম উদ্বিগ্ন দ্বীপবাসীর পাশাপাশি পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) সেন্টমার্টিন স্টেশনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচী পালন করে দ্বীপের বাসিন্দারাসহ পর্যটন ব্যবসায়ীরা।

এসময় সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে অন্তত ফেব্রুয়ারি মাসটা যেন পর্যটকদের যাতায়তের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয় এমন দাবি জানান তারা। সেন্টমার্টিন দ্বীপের বাসিন্দা ও ব্যবসায়ী আব্দুল মালেক বলেন, ‘সরকারের এই সিন্ধান্তে সেন্টমার্টিনবাসী ভীষণ ক্ষতিগ্রস্থ হবে। সেন্টমার্টিনে পর্যটন মৌসুম হচ্ছে নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত। কিন্তু এই সরকার নির্ধারণ করে দিয়েছে নভেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত। এই সিদ্ধান্তে দ্বীপবাসীকে অনাহারে থাকতে হবে।

মাছ ধরে জীবিকা উপার্জন করা মানুষজন বর্তমানে পর্যটকদের সেবার মধ্য দিয়ে জীবন চালাচ্ছে। দুই মাসের আয় দিয়ে এই মানুষগুলো ১০ মাস চলতে পারবে না। সেন্টমার্টিনবাসী লিয়াকত মিয়া জানান, শান্তিপ্রিয় সেন্টমার্টিনবাসী পর্যটকদের সেবার মধ্য দিয়ে জীবন-যাপন করছে। এই অবস্থায় সরকারের এমন সিদ্ধান্তে সীমান্ত সংলগ্ন এই মানুষগুলো অর্থের অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়া কিছুদিন বন্ধ রেখে আবার কিছুদিন উন্মুক্ত রেখে কীভাবে কী পরিবেশ রক্ষা করছে- মাথায় ধরে না। তার চেয়ে বরং ওই দ্বীপ থেকে অবৈধ দখলমুক্ত করে পরিবেশ রক্ষা করে পর্যটক বান্ধব করা হোক। কক্সবাজার নাগরিক ফোরামের সভাপতি আ ন ম হেলাল উদ্দিন জানান, প্রতিবছর নভেম্বর থেকে দ্বীপে পর্যটক যাতায়াত শুরু হতো।

কিন্তু চলতি মৌসুমে সরকারি বিধি-নিষেধের কারণে এক মাস দেরিতে গত ১ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়েছে। মৌসুমের আরও দুই মাস বাকি থাকতেই শনিবার (১ জানুয়ারি) থেকে দ্বীপটিতে পর্যটক যাতায়ত বন্ধ হয়ে হয়েছে। এতে দ্বীপবাসীর ক্ষতির পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগ চরম হুমকিতে পড়েছে। এ নিয়ে কক্সবাজার নাগরিক ফোরামের উদ্যোগে ফেব্রুয়ারি মাসে পর্যটক যাতায়ত উন্মুক্ত রাখার দাবিতে উচ্চ আদালত রিট আবেদন করা হলেও আদালতে শুনানির অপেক্ষায় ঝুলে আছে। আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি আদালতের আদেশের উপর নির্ভর করছে দ্বীপবাসী ও পর্যটন ব্যবসায়ীদের ভাগ্য। এ প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ সালাহউদ্দিন জানান, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত মতে, নভেম্বরে পর্যটকদের সেন্টমার্টিনে রাত্রিযাপন নিষিদ্ধ করা হয়। তবে ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে ২ হাজার করে পর্যটক যাতায়াত এবং রাত্রিযাপনের সুযোগ রাখা হয়। আর ওই নির্দেশনার আলোকে পহেলা ফেব্রুয়ারি থেকে দ্বীপটিতে ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকছে।