প্রত্যাশা ডেস্ক: কুমিল্লায় যৌথ বাহিনীর হাতে আটক যুবদল নেতার মৃত্যুর ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও মানবাধিকার সংগঠন। তারা বলেছে, এ ধরনের ঘটনা মানবাধিকার ও আইনের শাসনের পরিপন্থী। এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্তদের চিহ্নিত করে যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে বিচার ও শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) গণমাধ্যমে পৃথক বিবৃতি পাঠিয়ে এই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিচার দাবি করা হয়েছে।
আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) এক বিবৃতিতে বলেছে, এ ধরনের ঘটনা মানবাধিকার ও আইনের শাসনের পরিপন্থী। রাষ্ট্র কর্তৃক আটক ব্যক্তির সুরক্ষা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। এ ধরনের মৃত্যুর ঘটনা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আসক এ ঘটনার স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও দ্রুত বিচারিক তদন্ত দাবি করছে এবং দায়ীদের যথাযথ আইনানুগ শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছে। একই সঙ্গে নিহত ব্যক্তির পরিবারকে ন্যায়বিচার ও ক্ষতিপূরণ প্রদানের জন্য যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণের অনুরোধ জানাচ্ছে। আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) সব ধরনের বিচারবহির্ভূত হত্যার ঘটনায় সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছে।
পৃথক বিবৃতিতে মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ) বলেছে, নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে আনা নির্যাতনে মৃত্যুর অভিযোগের বিষয়টি অনাকাঙিক্ষত ও অনভিপ্রেত, যা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আটকের পর নির্যাতনে মৃত্যুর ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জবাবদিহি নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের মানবাধিকার ও সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা। এমএসএফ এ ক্ষেত্রে মো. তৌহিদুল ইসলামের নির্যাতনে মৃত্যুর বিষয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে অনতিবিলম্বে নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছে।
এদিকে গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশে এ ধরনের অমানবিক নির্যাতন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড দেশবাসীর জন্য গভীর উদ্বেগের বিষয় বলে উল্লেখ করেছেন বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ। গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে তিনি বলেন, বিগত দিনে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের আমলে এ ধরনের গুম, খুন, নির্যাতন, আয়নাঘর, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড জাতি দেখেছে। দেশবাসী আশা করেছিল অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ওই পরিস্থিতির অবসান হয়ে একটা ন্যায় ও বিচারভিত্তিক সমাজ গড়ে উঠবে। অথচ যৌথ বাহিনীর হাতে এই বর্বর নির্যাতন ও মৃত্যুর ঘটনা আমাদের হতবাক করল। বাসদের পক্ষ থেকে অবিলম্বে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দায়ীদের চিহ্নিত করে যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে বিচার ও শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়।
সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিবৃতিতে আরও বলা হয়, মানুষের জানমাল, বিচার পাওয়ার অধিকার ও জীবনের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হলে গণ-অভ্যুত্থানের চেতনাই বিনষ্ট হবে। তাই এ ধরনের কর্মকাণ্ড বন্ধে জরুরি ভিত্তিতে উদ্যোগ নেওয়া এবং সামাজিক নিরাপত্তা ও বিচারের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
যুবদল নেতা হত্যাকারীদের আইনের আওতায় আনতে হবে: ছাত্রদল: যৌথবাহিনীর হেফাজতে যুবদল নেতা তৌহিদুল ইসলামের হত্যাকাণ্ডের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির বলেছেন, কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার পাঁচথুবী ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক তৌহিদুল ইসলাম নিজ বাড়ি থেকে যৌথ বাহিনীর হাতে আটকের পর নির্যাতনের কারণে তার মৃত্যু হয়। তৌহিদুলের শরীরে নির্যাতনের অসংখ্য ক্ষতচিহ্ন রয়েছে। বিষয়টি চিকিৎসক ও তার পরিবারের সদস্যরাও নিশ্চিত করেছেন।
ছাত্রদলের শীর্ষ দুই নেতা বলেন, হত্যাকারীদের অবিলম্বে চাকরি থেকে অব্যাহতি এবং গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে হবে। কোনো খুনি রাষ্ট্রীয় বাহিনীর সদস্য হিসেবে থাকতে পারে না।
শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় দপ্তর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা বলেন তারা।
তারা বলেন, খুনি হাসিনার আমলে বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীসহ অসংখ্য বিরোধী দলীয় নেতাকর্মী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে নিষ্ঠুর নির্যাতনে মর্মান্তিকভাবে মৃত্যুবরণ করেছেন। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্টের পতনের পরও বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদলের নেতাকর্মীদের ওপর বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড চলমান রয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার বিএনপির নেতাকর্মীদের মৌলিক মানবাধিকারের সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। তারা আরও বলেন, নিহত তৌহিদুল ইসলামের হত্যাকাণ্ডের যথাযথ বিচার এবং তার পিতাহারা চার কন্যা সন্তানের আর্থিক ও নিরাপত্তাসহ সব সুরক্ষার দায়িত্বও রাষ্ট্রকে বহন করতে হবে।