ঢাকা ০২:৪২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

আলাদা নির্বাচন চায় হিন্দু মহাজোট

  • আপডেট সময় : ০৮:৪৭:৫৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারী ২০২৫
  • ৬ বার পড়া হয়েছে

শুক্রবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি হলে বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা। ছবি সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক: জাতীয় সংসদ, স্থানীয় সরকারসহ সব ক্ষেত্রে আসন সংরক্ষণ ও পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থা চালুর দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট। দাবি আদায় না হলে ভোট বর্জনেরও হুঁশিয়ারি দেন তারা।

শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন এ দাবি জানান মহাজোটের সভাপতি অ্যাডভোকেট দীনবন্ধু রায়।

লিখিত বক্তব্যে মহাজোটের নির্বাহী সভাপতি অ্যাড. প্রদীপ কুমার পাল বলেন, স্বাধীনতার আগে থেকেই বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায় দেশীয় ও বৈদেশিক রাজনীতির গ্যাঁড়াকলে পিষ্ট। মাইনোরিটি কার্ড এখন রাজনৈতিক দলগুলোর ট্রাম কার্ড হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। পার্শ্ববর্তী ভারতীয় রাজনীতিবিদ এমনকি আমেরিকার নির্বাচনেও বাংলাদেশের মাইনোরিটি ইস্যু তাদের ভোট বাড়ানোর কাজে ব্যবহার করছে। অথচ স্থায়ী সমাধানের কথা কেউ বলছে না। অথচ মাইনোরিটি ইস্যু নিয়ে দেশে বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট হচ্ছে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায় এক ভীতিময় পরিবেশে বসবাস করছে। প্রতিনিধিত্বহীনতায় হিন্দু জনসংখ্যা দ্রুত কমে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, মাইনোরিটি সমস্যার স্থায়ী সমাধান চাই। সংখ্যালঘু সমস্যার স্থায়ী সমাধানে, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সত্যিকারের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি উজ্জ্বল করতে এবং বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের সুনাম ও মর্যাদা সমুন্নত রাখতে জাতীয় সংসদসহ সর্বক্ষেত্রে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য সংরক্ষিত আসন ও পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থা বাস্তবায়নের জোড় দাবি জানায় বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়।

নির্বাহী সভাপতি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো কখনোই এ দেশের জনসংখ্যা অনুপাতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে মনোনয়ন দেয় নাই। সরকারি হিসাব মতে ১২ শতাংশ সংখ্যালঘু হলেও সংখ্যালঘুদের ৪২টি আসন পাওয়ার কথা। কিন্তু যৌথ নির্বাচনের কারণে স্বাধীনতার ৫৫ বছরে কোনো সংসদেই হিন্দু সম্প্রদায় তাদের সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধি পাঠাতে পারে নাই। বিএনপি থেকে মাত্র ১ জন, জাতীয় পার্টি থেকে ২-৩ জন, আওয়ামী লীগ থেকে ৬-১৫ জন এমপি হতে পেরেছে। অর্থাৎ আগামীর পার্লামেন্ট হিন্দু শূন্য বা নামে মাত্র ২/১ জন থাকার সমূহ সম্ভবনা।

তিনি বলেন, সরকার সংবিধান সংস্কার কমিশন ও নির্বাচন সংস্কার কমিশন গঠন করেছে। বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট হিন্দু সম্প্রদায়ের রাজনৈতিক দল নিরপেক্ষ সংগঠন একমাত্র হিসেবে কমিশনে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে জাতীয় সংসদ স্থানীয় সরকারসহ সব ক্ষেত্রে পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থার যৌক্তিক কারণসহ প্রস্তাব পেশ করেছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় দুটি কমিশনই হিন্দু সম্প্রদায়ের দাবি ও প্রস্তাবকে অগ্রাহ্য করেছে। কমিশন দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ গঠনের যে প্রস্তাব দিয়েছে সেখানে উচ্চ কক্ষ বা নিম্ন কক্ষ কোনো জায়গাতেই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার কোনো ব্যবস্থা রাখে নাই। আমরা খুব উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছি ১৯৪৭ সাল থেকেই দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায়ের রাজনৈতিক নেতারা হিন্দু সম্প্রদায়কে ব্লাকমেইল করেছে এবং এখনো করছে। আমরা আশা করেছিলাম ড. ইউনূসের মতো সজ্জন ব্যক্তি এবং তার নিয়োগ করা কমিশন সদস্যদের হাত দিয়ে বিলুপ্তির পথে যাওয়া হিন্দু সম্প্রদায় রক্ষা পাবে। কিন্তু আমাদের সে আশা ভুল ছিল। আমরা আশাভঙ্গ হয়েছি।

মহাজোটের সভাপতি অ্যাডভোকেট দীনবন্ধু রায় বলেন, এখনও সময় আছে। সরকার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্বের বিষয়টি যেন আমলে নিতে পারেন। হিন্দু সর্বশেষ সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করবে। বর্তমান সরকার যদি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রাণের দাবি জাতীয় সংসদ, স্থানীয় সরকারসহ সবক্ষেত্রে আসন সংরক্ষণ ও পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থা মেনে না নেন তাহলে হিন্দু সম্প্রদায় কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না এবং ভোট কেন্দ্রে যাবে না। অন্যকে ক্ষমতায় বসানোর হাতিয়ার হওয়ার জন্য এবং শুধু শুধু মারধর খাওয়া আর বাড়িঘর ছেড়ে পালানোর জন্য হিন্দু সম্প্রদায় আগামী কোন নির্বাচনে ভোট কেন্দ্রে যাবে না।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধান সমন্বয়কারী বিজয়কৃষ্ণ ভট্টাচার্য সহ-সভাপতি দুলাল কুমার মন্ডল, তরুণ কুমার ঘোষ, নিতাই দে প্রমুখ।

সংখ্যালঘুদের জন্য ৬০টি আসন চায় হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ: জাতীয় সংসদে ৬০টি সংসদীয় আসন নির্ধারণ করে সংখ্যালঘুদের সরাসরি ভোটের ব্যবস্থাসহ আট দফা দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ।

গত বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে ‘বিরাজমান সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে’ শিরোনামে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা। ছবি সংগৃহীত

গত বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে ‘বিরাজমান সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে’ শিরোনামে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এমন দাবি জানান সংগঠনটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথ।

দাবির মধ্যে রয়েছে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন ও সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় গঠন, অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যাবর্তন আইনের যথাযথ প্রয়োগে যাবতীয় আমলাতান্ত্রিক বাধা অপসারণ করে ট্রাইব্যুনালের রায়ের আলোকে জমির মালিকানা ও দখল ভুক্তভোগীদের বরাবরে প্রত্যর্পণ করা।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, বিগত সাত দশকের অব্যাহত নির্যাতন, নিপীড়ন, বৈষম্যের কারণে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায় অগ্রসরমাণ জনগোষ্ঠী থেকে অনগ্রসর জনগোষ্ঠীতে পরিণত হয়েছে। বিদ্যমান সংবিধানের ২৮ এর ৪ অনুচ্ছেদের আলোকে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর যথাযথ প্রতিনিধিত্ব সাংবিধানিকভাবে নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশের ৬০টি সংসদীয় আসন নির্ধারণ করে সংখ্যালঘুদের সরাসরি ভোটে সংখ্যালঘুদের জন্য ৬০টি আসন সংরক্ষণ করা প্রয়োজন।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপিত দাবির মধ্যে আরও রয়েছে দেবোত্তর সম্পত্তি সংরক্ষণে আইন প্রণয়ন, বৈষম্য বিলোপ আইন প্রণয়ন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির যথাযথ বাস্তবায়ন এবং তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ আইন ও পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের আইনের যথাযথভাবে কার্যকর করা এবং সব সংখ্যালঘু ধর্ম সম্প্রদায়ের ধর্ম পালনে অধিকতর উৎসাহিত করার লক্ষ্যে বিদ্যমান সরকারি ছুটিসমূহের অতিরিক্ত হিন্দু সম্প্রদায়ের শারদীয় দুর্গাপূজায় অষ্টমী থেকে দশমী-তিন দিন, বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের প্রবারণা পূর্ণিমায় এক দিন ও খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের ইস্টার সানডেতে এক দিন সরকারি ছুটির ঘোষণা করা।

লিখিত বক্তব্যে জানানো হয়, গত বছর ২১ আগস্ট থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সাড়ে চার মাসে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে দেশে মোট ১৭৪টি সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ২৩ জন হত্যার শিকার হয়েছেন। এ ছাড়া ৯টি নারী নির্যাতন ও ধর্ষণ, ৬৪টি উপাসনালয়ে হামলা, ১৫টি কথিত ধর্ম অবমাননার অভিযোগে গ্রেফতার ও নির্যাতন, ৩৮টি বাড়িঘর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ এবং ২৫টি জোরপূর্বক বাড়িঘর, জমি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান দখলের ঘটনা ঘটেছে।

লিখিত বক্তব্যে আরও জানানো হয়, গত বছর ১৫ অক্টোবর ৪৩তম বিসিএসে উত্তীর্ণ ২ হাজার ৬৪ জনের তালিকা প্রকাশ করা হয়। এর মধ্যে ২৬৭ জনকে বাদ দেওয়া হয়েছে। বাদ পড়াদের মধ্যে ৮২ জন ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ঐক্য পরিষদের তিন সভাপতি ড. নিম চন্দ্র ভৌমিক, উষাতন তালুকদার, নির্মল রোজারিও; প্রেসিডিয়াম সদস্য ভিক্ষু সুনন্দ প্রিয়, অধ্যাপক নিরঞ্জন কর্মকার, সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট দীপংকর ঘোষ প্রমুখ।

 

 

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

আলাদা নির্বাচন চায় হিন্দু মহাজোট

আপডেট সময় : ০৮:৪৭:৫৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারী ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক: জাতীয় সংসদ, স্থানীয় সরকারসহ সব ক্ষেত্রে আসন সংরক্ষণ ও পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থা চালুর দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট। দাবি আদায় না হলে ভোট বর্জনেরও হুঁশিয়ারি দেন তারা।

শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন এ দাবি জানান মহাজোটের সভাপতি অ্যাডভোকেট দীনবন্ধু রায়।

লিখিত বক্তব্যে মহাজোটের নির্বাহী সভাপতি অ্যাড. প্রদীপ কুমার পাল বলেন, স্বাধীনতার আগে থেকেই বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায় দেশীয় ও বৈদেশিক রাজনীতির গ্যাঁড়াকলে পিষ্ট। মাইনোরিটি কার্ড এখন রাজনৈতিক দলগুলোর ট্রাম কার্ড হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। পার্শ্ববর্তী ভারতীয় রাজনীতিবিদ এমনকি আমেরিকার নির্বাচনেও বাংলাদেশের মাইনোরিটি ইস্যু তাদের ভোট বাড়ানোর কাজে ব্যবহার করছে। অথচ স্থায়ী সমাধানের কথা কেউ বলছে না। অথচ মাইনোরিটি ইস্যু নিয়ে দেশে বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট হচ্ছে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায় এক ভীতিময় পরিবেশে বসবাস করছে। প্রতিনিধিত্বহীনতায় হিন্দু জনসংখ্যা দ্রুত কমে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, মাইনোরিটি সমস্যার স্থায়ী সমাধান চাই। সংখ্যালঘু সমস্যার স্থায়ী সমাধানে, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সত্যিকারের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি উজ্জ্বল করতে এবং বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের সুনাম ও মর্যাদা সমুন্নত রাখতে জাতীয় সংসদসহ সর্বক্ষেত্রে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য সংরক্ষিত আসন ও পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থা বাস্তবায়নের জোড় দাবি জানায় বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়।

নির্বাহী সভাপতি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো কখনোই এ দেশের জনসংখ্যা অনুপাতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে মনোনয়ন দেয় নাই। সরকারি হিসাব মতে ১২ শতাংশ সংখ্যালঘু হলেও সংখ্যালঘুদের ৪২টি আসন পাওয়ার কথা। কিন্তু যৌথ নির্বাচনের কারণে স্বাধীনতার ৫৫ বছরে কোনো সংসদেই হিন্দু সম্প্রদায় তাদের সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধি পাঠাতে পারে নাই। বিএনপি থেকে মাত্র ১ জন, জাতীয় পার্টি থেকে ২-৩ জন, আওয়ামী লীগ থেকে ৬-১৫ জন এমপি হতে পেরেছে। অর্থাৎ আগামীর পার্লামেন্ট হিন্দু শূন্য বা নামে মাত্র ২/১ জন থাকার সমূহ সম্ভবনা।

তিনি বলেন, সরকার সংবিধান সংস্কার কমিশন ও নির্বাচন সংস্কার কমিশন গঠন করেছে। বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট হিন্দু সম্প্রদায়ের রাজনৈতিক দল নিরপেক্ষ সংগঠন একমাত্র হিসেবে কমিশনে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে জাতীয় সংসদ স্থানীয় সরকারসহ সব ক্ষেত্রে পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থার যৌক্তিক কারণসহ প্রস্তাব পেশ করেছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় দুটি কমিশনই হিন্দু সম্প্রদায়ের দাবি ও প্রস্তাবকে অগ্রাহ্য করেছে। কমিশন দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ গঠনের যে প্রস্তাব দিয়েছে সেখানে উচ্চ কক্ষ বা নিম্ন কক্ষ কোনো জায়গাতেই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার কোনো ব্যবস্থা রাখে নাই। আমরা খুব উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছি ১৯৪৭ সাল থেকেই দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায়ের রাজনৈতিক নেতারা হিন্দু সম্প্রদায়কে ব্লাকমেইল করেছে এবং এখনো করছে। আমরা আশা করেছিলাম ড. ইউনূসের মতো সজ্জন ব্যক্তি এবং তার নিয়োগ করা কমিশন সদস্যদের হাত দিয়ে বিলুপ্তির পথে যাওয়া হিন্দু সম্প্রদায় রক্ষা পাবে। কিন্তু আমাদের সে আশা ভুল ছিল। আমরা আশাভঙ্গ হয়েছি।

মহাজোটের সভাপতি অ্যাডভোকেট দীনবন্ধু রায় বলেন, এখনও সময় আছে। সরকার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্বের বিষয়টি যেন আমলে নিতে পারেন। হিন্দু সর্বশেষ সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করবে। বর্তমান সরকার যদি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রাণের দাবি জাতীয় সংসদ, স্থানীয় সরকারসহ সবক্ষেত্রে আসন সংরক্ষণ ও পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থা মেনে না নেন তাহলে হিন্দু সম্প্রদায় কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না এবং ভোট কেন্দ্রে যাবে না। অন্যকে ক্ষমতায় বসানোর হাতিয়ার হওয়ার জন্য এবং শুধু শুধু মারধর খাওয়া আর বাড়িঘর ছেড়ে পালানোর জন্য হিন্দু সম্প্রদায় আগামী কোন নির্বাচনে ভোট কেন্দ্রে যাবে না।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধান সমন্বয়কারী বিজয়কৃষ্ণ ভট্টাচার্য সহ-সভাপতি দুলাল কুমার মন্ডল, তরুণ কুমার ঘোষ, নিতাই দে প্রমুখ।

সংখ্যালঘুদের জন্য ৬০টি আসন চায় হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ: জাতীয় সংসদে ৬০টি সংসদীয় আসন নির্ধারণ করে সংখ্যালঘুদের সরাসরি ভোটের ব্যবস্থাসহ আট দফা দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ।

গত বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে ‘বিরাজমান সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে’ শিরোনামে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা। ছবি সংগৃহীত

গত বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে ‘বিরাজমান সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে’ শিরোনামে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এমন দাবি জানান সংগঠনটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথ।

দাবির মধ্যে রয়েছে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন ও সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় গঠন, অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যাবর্তন আইনের যথাযথ প্রয়োগে যাবতীয় আমলাতান্ত্রিক বাধা অপসারণ করে ট্রাইব্যুনালের রায়ের আলোকে জমির মালিকানা ও দখল ভুক্তভোগীদের বরাবরে প্রত্যর্পণ করা।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, বিগত সাত দশকের অব্যাহত নির্যাতন, নিপীড়ন, বৈষম্যের কারণে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায় অগ্রসরমাণ জনগোষ্ঠী থেকে অনগ্রসর জনগোষ্ঠীতে পরিণত হয়েছে। বিদ্যমান সংবিধানের ২৮ এর ৪ অনুচ্ছেদের আলোকে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর যথাযথ প্রতিনিধিত্ব সাংবিধানিকভাবে নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশের ৬০টি সংসদীয় আসন নির্ধারণ করে সংখ্যালঘুদের সরাসরি ভোটে সংখ্যালঘুদের জন্য ৬০টি আসন সংরক্ষণ করা প্রয়োজন।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপিত দাবির মধ্যে আরও রয়েছে দেবোত্তর সম্পত্তি সংরক্ষণে আইন প্রণয়ন, বৈষম্য বিলোপ আইন প্রণয়ন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির যথাযথ বাস্তবায়ন এবং তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ আইন ও পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের আইনের যথাযথভাবে কার্যকর করা এবং সব সংখ্যালঘু ধর্ম সম্প্রদায়ের ধর্ম পালনে অধিকতর উৎসাহিত করার লক্ষ্যে বিদ্যমান সরকারি ছুটিসমূহের অতিরিক্ত হিন্দু সম্প্রদায়ের শারদীয় দুর্গাপূজায় অষ্টমী থেকে দশমী-তিন দিন, বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের প্রবারণা পূর্ণিমায় এক দিন ও খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের ইস্টার সানডেতে এক দিন সরকারি ছুটির ঘোষণা করা।

লিখিত বক্তব্যে জানানো হয়, গত বছর ২১ আগস্ট থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সাড়ে চার মাসে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে দেশে মোট ১৭৪টি সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ২৩ জন হত্যার শিকার হয়েছেন। এ ছাড়া ৯টি নারী নির্যাতন ও ধর্ষণ, ৬৪টি উপাসনালয়ে হামলা, ১৫টি কথিত ধর্ম অবমাননার অভিযোগে গ্রেফতার ও নির্যাতন, ৩৮টি বাড়িঘর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ এবং ২৫টি জোরপূর্বক বাড়িঘর, জমি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান দখলের ঘটনা ঘটেছে।

লিখিত বক্তব্যে আরও জানানো হয়, গত বছর ১৫ অক্টোবর ৪৩তম বিসিএসে উত্তীর্ণ ২ হাজার ৬৪ জনের তালিকা প্রকাশ করা হয়। এর মধ্যে ২৬৭ জনকে বাদ দেওয়া হয়েছে। বাদ পড়াদের মধ্যে ৮২ জন ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ঐক্য পরিষদের তিন সভাপতি ড. নিম চন্দ্র ভৌমিক, উষাতন তালুকদার, নির্মল রোজারিও; প্রেসিডিয়াম সদস্য ভিক্ষু সুনন্দ প্রিয়, অধ্যাপক নিরঞ্জন কর্মকার, সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট দীপংকর ঘোষ প্রমুখ।