প্রত্যাশা ডেস্ক: গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ তীরে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের প্রথম ধাপে শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) অনুষ্ঠিত হয়েছে দেশের বৃহত্তম জুমার জামাত।
পরিপূর্ণ ময়দান ছাপিয়ে আশপাশের সড়ক, মহাসড়ক, ফুটপাত ও অলিগলি লাখো মানুষ কাতারে কাতারে দাঁড়িয়ে জুমার নামাজে অংশ নেন।
জুমার খুতবা দুপুর ১টা ৪৩ মিনিটে শুরু হয়। ১টা ৫১ মিনিটে জামাত শুরু হয়ে শেষ হয় ১টা ৫৬ মিনিটে।
তাবলিগ জামাতের শুরায়ী নেজামের মিডিয়া সমন্বয়ক হাবিবুল্লাহ রায়হান এসব তথ্য জানিয়ে বলেন, জামাতে ইমামতি করেন বাংলাদেশের মাওলানা জুবায়ের সাহেব।
এদিকে, শুক্রবার ভোরে ফজরের নামাজের পর আমবয়ান করেন পাকিস্তানের মাওলানা জিয়াউল হক। তাৎক্ষণিকভাবে তা বাংলায় অনুবাদ করছেন মাওলানা নুরুর রহমান।
সকাল পৌনে ১০টায় খিত্তায় খিত্তায় তালিমের আমল করা হয়েছে। তালিমের আগে আলোচনা করেন ভারতের মাওলানা জামাল সাহেব।
এ ছাড়া বিশেষ কিছু অনুষ্ঠান হয়েছে। যেমন- সকাল ১০টায় শিক্ষকদের বয়ানের মিম্বারে বয়ান করেছেন ভারতের মাওলানা ফারাহিম সাহেব। ছাত্রদের সঙ্গে নামাজের মিম্বারে বয়ান করেছেন আব্দুল মান্নান সাহেব, খাওয়াছদের (গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ) মাঝে টিনশেড মসজিদে বয়ান করেছেন ভারতের মাওলানা আকবর শরিফ সাহেব।
জুমার নামাজে অংশ নিতে সকালে থেকেই ইজতেমা ময়দানের ধর্মপ্রাণ মানুষের ঢল নামে। ইজতেমায় অংশ নিতে না পারলেও জুমার নামাজে অংশ নিতে ময়দানমুখী হয়েছেন ঢাকা ও গাজীপুরের আশপাশের কয়েকটি জেলার মানুষ।
ফজরের পরপরই টাঙ্গাইল মির্জাপুর থেকে ময়দানে এসেছেন আলম হাসান। তিনি বলেন, খুব কাছে দেশের বৃহত্তম জুমার নামাজ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এত কাছে থেকেও যদি লাখো মানুষের সঙ্গে জুমার নামাজ আদায় করতে না পারি তাহলে আক্ষেপ থেকে যাবে। আক্ষেপ ঘুচাতে আমরা দুই বন্ধু মোটরসাইকেলে করে জুমার নামাজে অংশ নিতে এসেছি।
ইজতেমার আয়োজকরা জানান, এবারের বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব অনুষ্ঠিত হবে দুই ধাপে। এর মধ্যে ৩১ জানুয়ারি থেকে ২ ফেব্রুয়ারি আখেরি মোনাজাত পর্যন্ত হবে প্রথম ধাপের ইজতেমা। এ ধাপে অংশগ্রহণ করছেন ৪১ জেলা ও ঢাকার একাংশের মানুষ।
এরপর ৩ ফেব্রুয়ারি থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি আখেরি মোনাজাত পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে দ্বিতীয় ধাপের ইজতেমা। এ ধাপে অংশ নেবেন ২২ জেলা ও ঢাকার বাকি অংশের মানুষ।
প্রথম দিনে ৩ মুসল্লির মৃত্যু: গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপির) গোয়েন্দা বিভাগের তথ্যে জানা গেছে, ৪৬টি দেশের বিদেশি মুসল্লি এবারের প্রথম পর্বের ইজতেমায় অংশ নিয়েছেন। এর মধ্যে উর্দুভাষী ৭৬০, আরবের ৮৯ ও ইংরেজ ৩০৫ জন। আগে থেকেই বাংলাদেশে থেকে অবস্থানরত বিদেশি মেহমান ৪২৬ জনসহ মোট ১৫৮০ জন চারটি বিদেশি টেন্টে অবস্থান করছেন। এ পর্যন্ত তিন জন মুসল্লির মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তারা হলেন- আমিরুল ইসলাম (৪০), আব্দুল কুদ্দুস গাজী (৬০) ও সাবেদ আলী (৭০)। এর মধ্যে আব্দুল কুদ্দুস গাজী ইজতেমা ময়দানে ও বাকি দুই জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। আব্দুল কুদ্দুস খুলনা জেলার ডুমুরিয়া বাজার এলাকার লোকমান হোসেন গাজীর ছেলে।
শ্বাসকষ্টসহ অন্য রোগে এখন পর্যন্ত ৩৮ মুসল্লি টঙ্গী শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে যার যার খিত্তায় চলে যান। এর মধ্যে একজন বিদেশি, পাঁচ জন পুলিশ সদস্য রয়েছেন। মুসাব্বির নামে এক পুলিশ সদস্য শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
ইজতেমা মাঠের সার্বিক নিরাপত্তায় পুলিশ ও র্যাবের কন্ট্রোল রুম এবং ওয়াচ টাওয়ার স্থাপন করা হয়েছে। মনিটরিং করা হচ্ছে সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে। খিত্তায় খিত্তায় সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান নিয়েছেন। ইজতেমা আয়োজক কমিটির নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় প্রায় ১০ হাজার স্বেচ্ছাসেবক রয়েছে।
ইজতেমার মুরুব্বিদের দেওয়া তথ্যমতে, ১৯৪৬ সালে কাকরাইল মসজিদে প্রথম ইজতেমার আয়োজন করা হয়। তারপর ১৯৪৮ সালে চট্টগ্রামের হাজি ক্যাম্পে এবং ১৯৫৮ সালে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়। পরে লোকসংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ১৯৬৬ সালে গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে স্থানান্তর করা হয় ইজতেমা। পরে ১৯৭২ সালে সরকারিভাবে তুরাগ তীরের ১৬০ একর জমি স্থায়ীভাবে ইজতেমার জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়।
প্রতিদিন মেট্রোরেলের অতিরিক্ত ৬ ট্রিপ: ইজতেমায় অংশগ্রহণকারীদের চলাচলের সুবিধার্থে মেট্রোরেলের নিয়মিত কোচগুলোর পাশাপাশি প্রতিদিন ছয়টি বিশেষ কোচ চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
ইজতেমার প্রথম দিন শুক্রবার থেকেই কোচগুলো চালু হয়েছে বলে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুর রউফ জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ইজতেমা উপলক্ষে ট্রেন চলাচলের সময় বাড়ানো হচ্ছে না। আগের নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই বিভিন্ন সময়ে ছয়টি বাড়তি কোচ পরিচালনা করা হবে। ইজতেমায় ভিড় বিবেচনায় বাড়তি কোচগুলো চলবে, যাতে করে ইজতেমার মাঠে যাওয়া কিংবা আসার ক্ষেত্রে ভোগান্তি কিছুটা কমে। টঙ্গীর তুরাগ তীরে শুক্রবার থেকে ভোর থেকে শুরু হয়েছে ইজতেমার প্রথম পর্ব, চলবে রোববার পর্যন্ত। এরপর ৩ থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি হবে ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব। বিশ্ব ইজতেমার এই দুই পর্বের তারিখ নির্ধারণ করেছেন তাবলিগ জামাতের শুরায়ে নেজাম বা মাওলানা জুবায়েরপন্থিরা। আর দিল্লির মাওলানা সাদ কান্ধলভীপন্থিদের ইজতেমা ১৪, ১৫ ও ১৬ ফেব্রুয়ারি হওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু তাদের অনুমতি না দেওয়ার জোর দাবি জানিয়ে আসছেন জুবায়েরপন্থিরা।
তাবলীগ জামাতের জুবায়ের অনুসারীদের অংশের মিডিয়া সমন্বয়ক হাবিবুল্লাহ রায়হান এর আগে বলেন, প্রথম ধাপের ইজতেমায় অংশ নেবেন ঢাকার একাংশসহ ৪১ জেলার মানুষ। এলাকাগুলো হল-গাজীপুর, গাইবান্ধা, নাটোর, মৌলভীবাজার, রাজশাহী, নড়াইল, ঠাকুরগাঁও, লালমনিরহাট, নীলফামারি, দিনাজপুর, রংপুর, বগুড়া, নারায়ণগঞ্জ, বরিশাল, ভোলা, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, যশোর, মাগুরা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, নেত্রকোণা, শেরপুর, ফরিদপুর, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, খুলনা, পটুয়াখালী, কুমিল্লা, ঝিনাইদহ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, পিরোজপুর, কুড়িগ্রাম, পঞ্চগড়, রাজবাড়ী এবং ঢাকার একাংশ।
এরপর দ্বিতীয় ধাপে ৩ থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকার একাংশসহ ২২ জেলার মুসলমানরা ইজতেমায় অংশগ্রহণ করবেন। এলাকাগুলো হল-যাত্রাবাড়ী, কেরানীগঞ্জ, মোহাম্মাদপুর, মুন্সিগঞ্জ, জামালপুর, মানিকগঞ্জ, জয়পুরহাট, সিলেট, সিরাজগঞ্জ, মেহেরপুর, টাঙ্গাইল, পাবনা, নরসিংদী, সাভার, কিশোরগঞ্জ, কক্সবাজার, নোয়াখালী, গোপালগঞ্জ, ঝালকাঠি, বরগুনা, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, নওগাঁ, বান্দরবন ও ঢাকার একাংশ।