নিজস্ব প্রতিবেদক: ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিচার ও ক্ষমা চাওয়ার আগ পর্যন্ত আওয়ামী লীগকে দেশে কোনো প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করতে দেওয়া হবে না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে তিনি বলেছেন, এতবড় একটা হত্যাকাণ্ড হলো বাংলাদেশের ইতিহাসে। আপনার আমার চোখের সামনে বাচ্চাবাচ্চা ছেলেমেয়েদের খুন করা হলো। শত শত ছেলে অন্ধ হয়ে গেছে। অনেকে সারা জীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে গেছে। তারা (আওয়ামী লীগ) আবার বলছে, ৩ হাজার পুলিশ মারা গেছে। কতবড় জালিয়াতি, মিথ্যা কথা।
বাংলাদেশে যতদিন না তারা ক্ষমা চাচ্ছে, যতদিন না তাদের লিডারশিপকে ট্রায়ালের মধ্যে আনা হচ্ছে, যতদিন না তারা সাবমিটেড টু জাস্টিস, যতদিন না তারা অ্যাকাউন্টেবিলিটির মধ্যে আসছে। ততদিন তাদের প্রটেস্ট করতে দেওয়া হবে না। তাদের আগে বিচারের সম্মুখীন হতে হবে।
বুধবার (২৯ জানুয়ারি) বিকালে ঢাকার ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নে কথা বলছিলেন শফিকুল আলম। সেখানে আওয়ামী লীগের ফেসবুক পেজে ঘোষিত হরতালসহ বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণার বিষয়টি দৃষ্টি আকর্ষণ করে সরকারের অবস্থান জানতে চান এক সাংবাদিক।
জবাবে প্রেস সচিব বলেন, সরকারের অবস্থান খুবই স্পষ্ট। আওয়ামী লীগের টপ লিডারশিপ জুলাই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (এইচআরডব্লিউ) রিপোর্টের ১৭তম পাতায় আছে, শেখ হাসিনা নিজেই ডাইরেক্টলি অর্ডার দিয়েছে গুম ও কিলিংয়ের। তারা (এইচআরডব্লিউ) অফিসারদের সঙ্গে কথা বলেছে এবং অফিসাররা হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে জানিয়েছে।
তুমুল গণআন্দোলনে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রিত্ব ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে সেখানেই থাকছেন।
জুলাই-আগস্টের আন্দোলন দমাতে ‘গণহত্যার’ একটি অভিযোগে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। তাকে ফেরত পাঠানোর জন্য ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সরকারের তরফ থেকে ভারতকে আনুষ্ঠানিক অনুরোধ জানানো হয়েছে।
ট্রাইব্যুনালে এ পর্যন্ত অর্ধশতাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে শেখ হাসিনা এবং তার সরকারের মন্ত্রী, এমপি ও আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের বিরুদ্ধে। এর মধ্যে অন্তত দুটি গুমের অভিযোগ রয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত গুম-সংক্রান্ত তদন্ত কমিশন গত ১৫ ডিসেম্বর যে প্রতিবেদন দিয়েছে, সেখানে গত ১৫ বছরে সংঘটিত বিভিন্ন গুমের ঘটনায় ‘নির্দেশদাতা’ হিসেবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়ার কথা বলা হয়েছে।
জুলাই-আগস্টের গণআন্দোলন নিয়ে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা এইচআরডব্লিউ এক প্রতিবেদনে শেখ হাসিনাকে ‘গুম-খুনের সরাসরি নির্দেশদাতা বলা হয়েছে’ বলে প্রধান উপদেষ্টার দফতর মঙ্গলবার জানিয়েছে।
এদিন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে এইচআরডব্লিউর একটি প্রতিনিধি দল সাক্ষাৎ করে প্রতিবেদনটি হস্তান্তর করেছে বলে তার দফতরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়।
এইচআরডব্লিউর সে প্রতিবেদন অনুযায়ী, গুমের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তারা সংস্থাটিকে বলেছেন- শেখ হাসিনা ও তার সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা নির্জন বন্দিত্বের বিষয়ে জানতেন। কিছু ক্ষেত্রে হাসিনা সরাসরি গুম ও হত্যার নির্দেশ দিয়েছেন।
সাত কলেজ নিয়ে ফলাফল দ্রুতই: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি থেকে সরকারি সাত কলেজ বের হওয়ার ঘোষণার পর বিষয়টি নিয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা কাজ করছেন বলেও জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
ব্রিফিংয়ে সংবাদিকদের এক প্রশ্নে তিনি বলেন, খুব দ্রুতই আপনারা রেজাল্ট পাবেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে আট বছরের পথচলা শেষে সরকারি সাত কলেজের বের হয়ে যাওয়ার ঘোষণা আসে সোমবার। শিক্ষার্থীরা অধিভুক্তি থেকে বের হয়ে যাওয়ারই দাবি তুলে ধরে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কথা বলে আসছিলেন। অবশেষে সংঘাত আর সংঘর্ষের রাত পেরিয়ে সেই ঘোষণা আসে।
নতুন সংকটের আশঙ্কা সামনে রেখে মঙ্গলবার রাতে জরুরি বৈঠক ডাকেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। তবে বৈঠকের বিষয়বস্তু জানতে দুই দিন অপেক্ষা করতে বলেন ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজ।