ঢাকা ০৮:৫৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

মৌমাছিকে ভালোবেসে হিরামণির আয় দুই লাখ টাকা

  • আপডেট সময় : ০৫:১০:৩৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৯ জানুয়ারী ২০২৫
  • ২১ বার পড়া হয়েছে

নারী ও শিশু ডেস্ক: পিচের রাস্তা পার হয়ে কাঁচা রাস্তা দিয়ে কিছুক্ষণ চলতে চলতে বাঁ পাশে তাকাতেই নজরে পড়ল মৌমাছির আনাগোনা। চোখ স্থির করতেই বাড়িটির মূল ফটকের ওপরে সাঁটা টুকরা সাদা কাগজের লেখাটিতে আটকে গেল। এতে লেখা রয়েছে ‘আল্লাহর দান মৌমাছির বাড়ি’।

ফটকের সঙ্গে বাড়ির ভেতরের পাশে মৌমাছির চাকও দেখা যাচ্ছিল। মন কৌতূহলী। তাই ভয়ে ভয়ে পা রাখলাম বাড়ির ভেতরে। ঢুকতেই দেখি ফটকের মুখে বড় দুটি মৌমাছির চাক। যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার সদর ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর গ্রামের মাঠপাড়ায় হিরামণি আক্তারের বাড়ি এটি। হিরামণি সাবেক ইউপি সদস্য।

হাজার হাজার মৌমাছি ভোঁ ভোঁ করে উড়ছে, চাকে বসছে আবার মধু আহরণের জন্য বেরিয়ে পড়ছে। আটটি বড় বড় চাক ডাইনিং টেবিলের ওপরে, বারান্দায়, সিঁড়ির ওপরে এবং বাড়িতে প্রবেশের মূল দরজায়। আর এসব মৌচাকের নিচ দিয়েই চলাচল করছে সাধারণ মানুষ। বাড়ির সবাই যার যার মতো কাজ করছেন, হুঁল ফোটানোর কোনো ভয় নেই!
হিরামণি চাকে হাত বোলালেন। কিন্তু মৌমাছিরা রেগে গিয়ে তাকে হুল ফোটাল না। মনে মনে বললাম, পোষা প্রাণী, হয়তো তাই কামড়ে দিচ্ছে না। তবে হিরামণি জানান ভিন্ন কথা। তার দাবি, মৌমাছির দল তাদের ভালোবেসে ফেলেছে। আর সেই ভালোবাসায় ১৮ বছর ধরে মৌমাছির সঙ্গে বসবাস করছেন হিরামণি ও তার পরিবার। এতে তার কোনো ক্ষতি হচ্ছে না; বরং মধু বিক্রির টাকায় হিরামণির সংসারে এসেছে সচ্ছলতা।

আটটি চাক বেঁধে হাজার হাজার মৌমাছি বাস করছে হিরামণির বাড়িতে। চাকগুলো বড় এবং অনেকটাই ঝুলে পড়েছে। পরিবারের সদস্যদের বারান্দায় মাথা নিচু করে চলাচল করতে হয়। অনেক সময় মৌচাকে হাত লাগলেও মৌমাছিগুলো কামড় বা হুঁল ফোটায় না।

হিরামণি আক্তার জানান, বাড়ির মানুষকে মৌমাছিরা কামড় দেয় না। নতুন লোকজন হুড়াহুড়ি করে বলে কখনো কখনো কামড়ায়। বছরে ৭ থেকে ৮ মাস মৌমাছিরা এ বাড়িতে থাকে। বর্ষায় যখন খাদ্য থাকে না, তখন চলে যায়। আবার অক্টোবর-নভেম্বর মাসে চলে আসে। হিরামণি নিজে চাক থেকে মধু সংগ্রহ করেন। বছরে দেড় থেকে দুই লাখ টাকার মধু বিক্রি করেন।
হিরামণির বাবা মো. আবু বাক্কার জানান, হিরামণির জন্মের পর থেকে বাড়িতে মৌমাছির আনাগোনা শুরু হয়। তবে বর্তমান বাড়িটি নতুন করে তৈরি করার পর থেকে মৌমাছিরা এসে ঘরের বাইরে ১৮ বছর ধরে চাক বাঁধছে। বাড়িতে তাদের কোনো সমস্যা হয় না; বরং মৌমাছির ভালোবাসায় সচ্ছলতা ফিরেছে।
বাড়িটির নাম যেমন মৌমাছির বাড়ি, তেমনই এলাকাবাসীও হিরামণিকে মৌমাছির বন্ধু বলে ডাকে।

 

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

মৌমাছিকে ভালোবেসে হিরামণির আয় দুই লাখ টাকা

আপডেট সময় : ০৫:১০:৩৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৯ জানুয়ারী ২০২৫

নারী ও শিশু ডেস্ক: পিচের রাস্তা পার হয়ে কাঁচা রাস্তা দিয়ে কিছুক্ষণ চলতে চলতে বাঁ পাশে তাকাতেই নজরে পড়ল মৌমাছির আনাগোনা। চোখ স্থির করতেই বাড়িটির মূল ফটকের ওপরে সাঁটা টুকরা সাদা কাগজের লেখাটিতে আটকে গেল। এতে লেখা রয়েছে ‘আল্লাহর দান মৌমাছির বাড়ি’।

ফটকের সঙ্গে বাড়ির ভেতরের পাশে মৌমাছির চাকও দেখা যাচ্ছিল। মন কৌতূহলী। তাই ভয়ে ভয়ে পা রাখলাম বাড়ির ভেতরে। ঢুকতেই দেখি ফটকের মুখে বড় দুটি মৌমাছির চাক। যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার সদর ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর গ্রামের মাঠপাড়ায় হিরামণি আক্তারের বাড়ি এটি। হিরামণি সাবেক ইউপি সদস্য।

হাজার হাজার মৌমাছি ভোঁ ভোঁ করে উড়ছে, চাকে বসছে আবার মধু আহরণের জন্য বেরিয়ে পড়ছে। আটটি বড় বড় চাক ডাইনিং টেবিলের ওপরে, বারান্দায়, সিঁড়ির ওপরে এবং বাড়িতে প্রবেশের মূল দরজায়। আর এসব মৌচাকের নিচ দিয়েই চলাচল করছে সাধারণ মানুষ। বাড়ির সবাই যার যার মতো কাজ করছেন, হুঁল ফোটানোর কোনো ভয় নেই!
হিরামণি চাকে হাত বোলালেন। কিন্তু মৌমাছিরা রেগে গিয়ে তাকে হুল ফোটাল না। মনে মনে বললাম, পোষা প্রাণী, হয়তো তাই কামড়ে দিচ্ছে না। তবে হিরামণি জানান ভিন্ন কথা। তার দাবি, মৌমাছির দল তাদের ভালোবেসে ফেলেছে। আর সেই ভালোবাসায় ১৮ বছর ধরে মৌমাছির সঙ্গে বসবাস করছেন হিরামণি ও তার পরিবার। এতে তার কোনো ক্ষতি হচ্ছে না; বরং মধু বিক্রির টাকায় হিরামণির সংসারে এসেছে সচ্ছলতা।

আটটি চাক বেঁধে হাজার হাজার মৌমাছি বাস করছে হিরামণির বাড়িতে। চাকগুলো বড় এবং অনেকটাই ঝুলে পড়েছে। পরিবারের সদস্যদের বারান্দায় মাথা নিচু করে চলাচল করতে হয়। অনেক সময় মৌচাকে হাত লাগলেও মৌমাছিগুলো কামড় বা হুঁল ফোটায় না।

হিরামণি আক্তার জানান, বাড়ির মানুষকে মৌমাছিরা কামড় দেয় না। নতুন লোকজন হুড়াহুড়ি করে বলে কখনো কখনো কামড়ায়। বছরে ৭ থেকে ৮ মাস মৌমাছিরা এ বাড়িতে থাকে। বর্ষায় যখন খাদ্য থাকে না, তখন চলে যায়। আবার অক্টোবর-নভেম্বর মাসে চলে আসে। হিরামণি নিজে চাক থেকে মধু সংগ্রহ করেন। বছরে দেড় থেকে দুই লাখ টাকার মধু বিক্রি করেন।
হিরামণির বাবা মো. আবু বাক্কার জানান, হিরামণির জন্মের পর থেকে বাড়িতে মৌমাছির আনাগোনা শুরু হয়। তবে বর্তমান বাড়িটি নতুন করে তৈরি করার পর থেকে মৌমাছিরা এসে ঘরের বাইরে ১৮ বছর ধরে চাক বাঁধছে। বাড়িতে তাদের কোনো সমস্যা হয় না; বরং মৌমাছির ভালোবাসায় সচ্ছলতা ফিরেছে।
বাড়িটির নাম যেমন মৌমাছির বাড়ি, তেমনই এলাকাবাসীও হিরামণিকে মৌমাছির বন্ধু বলে ডাকে।