বিদেশের খবর ডেস্ক :যুদ্ধবিরতি চুক্তির অধীনে বন্দি বিনিময়ের দ্বিতীয় দফায় ২০০ ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দিয়েছে ইসরায়েল। অন্যদিকে হামাস মুক্তি দিয়েছে চার ইসরায়েলি নারী সেনাকে। গতকাল শনিবার (২৫ জানুয়ারি) আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুদ্ধবিরতি চুক্তির অংশ হিসেবে গাজা শহরের ফিলিস্তিন স্কয়ারে রেড ক্রস কর্মকর্তাদের কাছে হামাস আটক চার নারী ইসরায়েলি সেনাকে মুক্তি দিয়েছে। প্রতিবেদনে আর বলা হয়, পরে ইসরায়েল জানিয়েছে যে তাদের কারাগার থেকে ২০০ ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। আল জাজিরার জানিয়েছে, তালিকাভুক্তদের মধ্যে ১২১ জন যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত এবং ৭৯ জন দীর্ঘ মেয়াদের সাজাপ্রাপ্ত রয়েছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বয়স্ক বন্দির বয়স ৬৯ এবং সবচেয়ে ছোট বন্দির বয়স ১৫। প্যালেস্টাইন স্কয়ার থেকে আল জাজিরার প্রতিবেদক এই মুক্তিকে ‘ঐতিহাসিক মুহূর্ত’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। এর আগে যুদ্ধবিরতি চুক্তির অংশ হিসেবে প্রথম দিনে (১৯ জানুয়ারি) তিন জিম্মির বিনিময়ে ইসরায়েল ৯০ ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেয়। চুক্তির দ্বিতীয় ধাপে হামাসের হাতে থাকা বাকি ইসরায়েলি জিম্মিরা মুক্তি পাবেন এবং গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনা পুরোপুরিভাবে প্রত্যাহার করা হবে। তৃতীয় ধাপে গাজা পুনর্গঠন হবে, যা কয়েক বছর সময় নিতে পারে। এ ছাড়া, মৃত ইসরায়েলি জিম্মিদের মরদেহ ফেরত দেওয়া হবে।
যুদ্ধ শুরুর পর ‘আরও ১৫ হাজার যোদ্ধা যুক্ত করেছে হামাস’
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস ১০ থেকে ১৫ হাজার যোদ্ধা নিয়োগ দিয়েছে। এই গোয়েন্দা তথ্যের বিষয়ে জ্ঞাত মার্কিন কংগ্রেসের দুই কর্মকর্তা এমনটি জানিয়েছেন বলে খবর বার্তা সংস্থা রয়টার্সের। ওই কর্মকর্তারা জানান, গাজা যুদ্ধে প্রায় সমসংখ্যক হামাস যোদ্ধা নিহত হয়েছেন বলে মার্কিন গোয়েন্দা তথ্যে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ এই সরকারি হিসাব এর আগে প্রকাশ করা হয়নি। ১৫ মাস ধরে যুদ্ধ চলার পর হামাস ও ইসরায়েল গত রোববার থেকে একটি যুদ্ধবিরতি শুরু করেছে। এ যুদ্ধে গাজা ভূখণ্ড প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে আর ৪৭ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এ যুদ্ধের আগুনে মধ্যপ্রাচ্যও উত্তপ্ত হয়েছে। ওই মার্কিন কর্মকর্তারা জানান, হামাস সফলভাবে নতুন সদস্য সংগ্রহ করলেও তাদের অনেকেই অল্প বয়সী ও প্রশিক্ষণহীন। এদের মূলত সাধারণ পাহারার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। এ বিষয়ে রয়টার্সের জানানো মন্তব্যের অনুরোধে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার পরিচালকের দপ্তর সাড়া দিতে রাজি হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের সদ্য সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ১৪ জানুয়ারি বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বাস হামাস ফিলিস্তিনি ছিটমহলটিতে যত যোদ্ধা হারিয়েছে প্রায় ততজন সদস্য সংগ্রহ করেছে। এটি ‘স্থায়ী বিদ্রোহ ও চিরস্থায়ী যুদ্ধের’ পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে বলে সতর্ক করেছেন তিনি। তবে হামাস কতোজন যোদ্ধাকে হারিয়েছে আর কতোজনকে নতুন করে যুক্ত করেছে, এ নিয়ে বিস্তারিত কোনো হিসাব প্রকাশ করেননি তিনি। কিন্তু ইসরায়েলের হিসাব অনুযায়ী, গাজা যুদ্ধে হামাসের প্রায় ২০ হাজার যোদ্ধ নিহত হয়েছেন। ব্লিঙ্কেন বলেছেন, “প্রত্যেকবার ইসরায়েল তাদের সামরিক অভিযান সম্পন্ন করে ফিরে আসার পর হামাসের জঙ্গিরা আবার সংঘবদ্ধ হয়ে আবির্ভূত হয়।” যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল উভয়েই হামাসকে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে কালো তালিকাভুক্ত করে রেখেছে। রয়টার্সের মন্তব্যের অনুরোধে হামাসের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, তিনি তাদের সংগঠনের সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গে ‘পরীক্ষা করছিলেন’। জুলাইয়ে হামাসের সশস্ত্র শাখার মুখপাত্র আবু উবাইদা বলেছিলেন, তাদের সংগঠন কয়েক হাজার নতুন সদস্য নিয়োগ দিয়েছে। ইসরায়েল হামাসকে ধ্বংস করে দেওয়ার প্রত্যয় জানিয়ে ১৫ মাস ধরে গাজায় টানা নির্বিচার হামলা চালিয়ে গেলেও যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পর দেখা যাচ্ছে তারা তেমনটি করতে পারেনি। হামাস দেখিয়েছে, গাজায় তাদের শেকড় অনেক গভীর। যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পর গাজার হামাস পরিচালিত প্রশাসন নিরাপত্তা ব্যবস্থা ফের আরোপ করতে দ্রুত পদক্ষেপ নেয় এবং ছিটমহলটির বিভিন্ন অংশে প্রাথমিক পরিষেবাগুলো পুনরুদ্ধার করতে শুরু করে, যেগুলোর অনেক কিছুই ইসরায়েলি হামলায় ধ্বংস হয়ে গেছে।