বিদেশের খবর ডেস্ক : ২০২৪ সালের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত হওয়া যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে জয় পেয়ে আরেকবার হোয়াইট হাউসে ফিরছেন নানা তর্ক-বিতর্কের জন্ম দেওয়া রিপাবলিকান পার্টির নেতা ডোনাল্ড জন ট্রাম্প। গতকাল সোমবার (২০ জানুয়ারি) শপথ পাঠের মাধ্যমে আমেরিকার নির্বাহী ক্ষমতার অধিকারী হন তিনি।
মসনদে বসার আগে থেকেই নানা হুমকি ধমকি দিয়ে আসছেন তিনি। অতীত বলে, হুমকি দিয়ে যেসব কথা ট্রাম্প নিজের ক্ষমতায় আসার আগে বলেছেন, তা তিনি পরবর্তীতে করেছেন। এমন অনেক উদাহরণ রয়েছে। সিএনএন, বিবিসিসহ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো বলেছে, ট্রাম্প এবারে যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসনব্যবস্থার ওপর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করবেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার প্রথম দিনই তিনি সেটি করে ফেলবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। এর আগেও নিজ রাষ্ট্রের অভিবাসনব্যবস্থার ওপর বিধিনিষেধ নিয়ে নানা পরিকল্পনার কথা উন্মুক্তভাবেই বলেছেন ট্রাম্প।
২০২৪ সালের নির্বাচনী প্রচারণায় মার্কিন অভিবাসনব্যবস্থার বিষয়টি নিজের মূল প্রতিশ্রুতি হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। জয়ী হলে তার এই প্রতিশ্রুতি যত দ্রুত সম্ভব পূরণ করবেন বলেও ঘোষণা তিনি দিয়েছেন। রোববার (১৯ জানুয়ারি) ওয়াশিংটনের ক্যাপিটাল ওয়ান এরিনায় আয়োজিত ‘মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন’ বিজয় সমাবেশে অংশ নিয়ে হাজার হাজার সমর্থকদের সামনেও এসব কথা বলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। ট্রাম্প ওই সমাবেশে বলেন, আগামীকাল, হ্যাঁ আগামীকাল সূর্যাস্তের সময় থেকে আমাদের দেশে অনুপ্রবেশ থামবে। রিপাবলিকান এই নেতা প্রতিশ্রুতি দেন, তিনি প্রেসিডেন্সিয়াল ক্ষমতা ব্যবহার করে একতরফাভাবে বিভিন্ন বিষয়ে পদক্ষেপ নেবেন, যার মধ্যে রয়েছে ব্যাপক হারে অবৈধ অভিবাসীদের তাড়ানোর অভিযান শুরু করা, পরিবেশবিষয়ক নিয়মকানুন শিথিল করা এবং ডাইভারসিটি প্রোগ্রাম বন্ধ করা। তিনি বলেন, আমরা আমেরিকাকে প্রথমে রাখব, আর কাল থেকেই এর কাজ শুরু হবে।
আপনারা আগামীকাল টেলিভিশন দেখে অনেক মজা পাবেন। ট্রাম্প সোমবার দুই শতাধিক নির্বাহী পদক্ষেপে সই করার কথা। এর মধ্যে রয়েছে নির্বাহী আদেশ, যা আইনিভাবে বাধ্যতামূলক হবে। সেইসঙ্গে রয়েছে প্রেসিডেন্টের অন্যান্য নির্দেশনা, যা সাধারণত বাধ্যতামূলক হয় না। অভিবাসীদের বিতাড়িত করার বিষয়ে ট্রাম্প বলেন, এটা যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ রাজনৈতিক আন্দোলন। ৭৫ দিন আগে আমরা ঐতিহাসিক রাজনৈতিক বিজয় পেয়েছি। আগামীকাল থেকে আমি ঐতিহাসিক শক্তি প্রয়োগ করে ব্যবস্থা নেব। আমি আমার দেশের সব সংকটের সমাধান করব।
ট্রাম্প কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা উন্নত করা, সরকারের দক্ষতা বাড়ানোর জন্য একটি বিভাগ গঠন (ডোজ), জন এফ কেনেডির হত্যা সম্পর্কিত রেকর্ড প্রকাশ, সামরিক বাহিনীকে আয়রন ডোম ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তৈরি করার নির্দেশনা দেওয়া ও সেনাবাহিনী থেকে বৈচিত্র্য, সমতা এবং অন্তর্ভুক্তি নীতি বাতিল করার প্রতিশ্রুতি দেন। এ ছাড়া ট্রান্সজেন্ডার নারীদের, ‘নারী’ ক্রীড়া বিভাগে প্রতিযোগিতা বন্ধ করা এবং আমেরিকার রাজ্যগুলোয় শিক্ষার নিয়ন্ত্রণ ফিরিয়ে আনার কথাও জানিয়েছেন তিনি। প্রেসিডেন্টরা সাধারণত দায়িত্ব নেওয়ার পর নির্বাহী আদেশ জারি করেন।
তবে ট্রাম্পের প্রথম দিনের আদেশের সংখ্যা তার পূর্বসূরিদের তুলনায় অনেক বেশি হতে পারে এবং এর অনেকগুলো আদালতে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তিনি প্রতিশ্রুতি দেন, তার নির্বাহী পদক্ষেপগুলো অবৈধ অভিবাসন মোকাবিলাকেন্দ্রিক হবে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লাখ লাখ অবৈধ অভিবাসীকে বহিষ্কার করার প্রতিশ্রুতি বিশাল লজিস্টিক বাধার সম্মুখীন হবে এবং সম্ভবত কয়েক বিলিয়ন ডলার খরচও হতে পারে। ২০২১ সালের ছয়ই জানুয়ারি ক্যাপিটলে দাঙ্গার ঘটনায় দোষী সাব্যস্তদের জন্য ট্রাম্প ক্ষমা ঘোষণা করবেন বলে মনে করা হচ্ছে। ওই হামলার নেতৃত্বে তার সমর্থকরাই ছিলেন।


























