বিদেশের খবর ডেস্ক : ঘানার কেন্দ্রীয় আশান্তি অঞ্চলে সেনাবাহিনী ও খনি শ্রমিকদের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত সাতজন নিহত হয়েছেন।
গতকাল সোমবার (২০ জানুয়ারি) ঘানা আর্মড ফোর্সেস জানিয়েছে, আনুমানিক ৬০ জন অবৈধ খনি শ্রমিক অ্যাঙ্গেগ্লা গোল্ড আশান্তি পরিচালিত একটি খনিতে প্রবেশের চেষ্টা করে এবং তাদের বাধা দিতে গেলে সৈন্যদের ওপর গুলি চালায়।
সেনাবাহিনীর বিবৃতিতে বলা হয়, আত্মরক্ষার্থে সৈন্যরা পাল্টা গুলি চালালে হতাহতের ঘটনা ঘটে। তবে খনি শ্রমিকদের একজন প্রতিনিধি দাবি করেছেন, শ্রমিকরা সশস্ত্র ছিলেন না।
এই ঘটনার পর আশান্তির ওবুয়াসি শহরে বিক্ষোভ শুরু হয়, যেখানে বেশ কয়েকটি বাসে আগুন দেওয়া হয়। বিক্ষুব্ধ স্থানীয় বাসিন্দারা কোম্পানির স্থাপনায় হামলা চালিয়ে অন্তত তিনটি গাড়ি ও অন্যান্য সরঞ্জামে আগুন ধরিয়ে দেন। ঘানার প্রেসিডেন্ট জন মহামা ঘটনাটির তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, যারা বেআইনিভাবে কাজ করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রেসিডেন্টের কার্যালয় থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে জানানো হয়, সংঘর্ষে আটজন মারা গেছেন। সরকার জানিয়েছে, আহতদের চিকিৎসা ও নিহতদের দাফনের খরচ বহন করবে অ্যাঙ্গ্লো গোল্ড আশান্তি।
একই সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীকে এলাকাটিতে শান্তি বজায় রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অ্যাঙ্গেগ্লা গোল্ড আশান্তি বলেছে, পরিস্থিতি বর্তমানে নিয়ন্ত্রণে আছে এবং তারা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে। কোম্পানির প্রধান উদ্বেগ হলো তাদের কর্মী এবং স্থানীয় সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য। ঘানা ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব স্মল স্কেল মাইনার্সের স্থানীয় চেয়ারম্যান কোফি অ্যাডামস বলেন, এই সহিংসতা অভূতপূর্ব।
তিনি জানান, সংঘর্ষে নয়জন নিহত এবং ১৪ জন গুরুতর আহত হয়েছেন। তিনি আরও বলেন, ‘এর আগে অনুপ্রবেশকারীদের সতর্ক করতে ফাঁকা গুলি ছোড়া হতো। এই ঘটনার কারণ বোঝা কঠিন।’ সেনাবাহিনী দাবি করেছে, অবৈধ খনি শ্রমিকরা স্থানীয়ভাবে তৈরি রাইফেল, পাম্প অ্যাকশন গানসহ অন্যান্য অস্ত্র নিয়ে সশস্ত্র ছিল।
তারা বলেছে, সৈন্যদের নিজেদের, নিরীহ নাগরিকদের এবং সম্পত্তি রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি প্রয়োগ করতে হয়েছে। অ্যাঙ্গেগ্লা গোল্ড আশান্তি ও স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে উত্তেজনা বিরাজ করছে। স্থানীয়রা অভিযোগ করে আসছে, কোম্পানিটি অঞ্চলটির খনিজ সম্পদ শোষণ করলেও উন্নয়ন বা কর্মসংস্থানের জন্য খুব কমই করছে। কিছু ক্ষুদ্র খনি শ্রমিক সংগঠন কোম্পানির খনির কিছু অংশ তাদের জন্য বরাদ্দ করার দাবি জানিয়ে আসছে।
তবে কোম্পানি দাবি করেছে, তারা স্থানীয় সম্প্রদায়ের উন্নয়নে যথেষ্ট কাজ করেছে। ঘটনার পর এলাকাটিতে কোম্পানির পরিচালিত কয়েকটি স্কুল দুই দিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে।
ঘানায় অর্থনৈতিক সংকটের কারণে সাম্প্রতিক সময়ে ছোট ও অনিয়ন্ত্রিত খনি কার্যক্রম বেড়েছে, যা পরিবেশের ওপর ধ্বংসাত্মক প্রভাব ফেলছে বলে অভিযোগ উঠেছে।