ঢাকা ০৩:৪৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২০ জানুয়ারী ২০২৫, ৬ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দেখা মিলল বিশ্বের দ্রুততম পাখি পেরিগ্রিন ফ্যালকনের

  • আপডেট সময় : ০৭:১৯:১৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৫
  • ৮ বার পড়া হয়েছে

প্রত্যাশা ডেস্ক: মৌলভীবাজারের বাইক্কা বিলে জলজ পাখি শুমারি-২০২৫ শেষ হয়েছে। এ শুমারিতে প্রথমবারের বাইক্কা বিলে দেখা মিলেছে পৃথিবীর দ্রুততম পাখি পেরিগ্রিন ফ্যালকনের। যাকে অনেকে ‘রকেট বার্ড’ও বলেন।

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের হাইল হাওরের মাছের অভয়াশ্রম বাইক্কা বিলে বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের আয়োজনে এই পাখি শুমারি শেষ হয় শনিবার (১৮ জানুয়ারি) বিকালে।

পরে বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের সদস্য ও বিশিষ্ট পাখি বিশেষজ্ঞ ড. পল থমসন বলেন, এ বছর বাইক্কা বিলে শীতকালীন জলচর পাখি গণনা করে তারা ৩৮ প্রজাতির ৭ হাজার ৮৭০টি পাখির দেখা পেয়েছেন। এ সংখ্যা বিগত দুই বছরের চেয়ে বেশি।

২০২৪ সালে ৩৩ প্রজাতির ৪ হাজার ৬১৫ জলচর পাখি দেখা গিয়েছেল এবং ২০২৩ সালে দেখা মিলেছিল ৪০ প্রজাতির ৬ হাজার ১৪১ জলচর পাখির।

পাখি বিশেষজ্ঞ থমসন আরও বলেন, সংখ্যা পরিবর্তিত হয়, কোনো কোনো বছর ডিসেম্বর বা ফেব্রুয়ারিতে বেশি দেখা যায়। তবে পরিযায়ী পাখির সংখ্যা নির্ভর করে জলস্তর, আগের মৌসুমের পরিস্থিতি এবং পরিযায়ন পথের উপর।

এর মধ্যে এবছর বাইক্কা বিলে দেখা মিলেছে পৃথিবীর দ্রুত গতির পাখি পেরিগ্রিন ফ্যালকন।

দেখা মিলল বিশ্বের দ্রুততম পাখি পেরিগ্রিন ফ্যালকনের

এ ব্যাপারে বাইক্কা বিলের মনিটরিংয়ের দায়িত্বে থাকা সিএনআরএস’র সাইট অফিসার মনিরুজ্জামান বলেন, পাখি গণনাকারিরা তাদের জানিয়েছেন একটি মাত্র পেরিগ্রিন ফ্যালকনের দেখা মিলেছে। পাখিটি উড়ে এসে একটি ঝোপের মধ্যে ঢুকে পড়েছে।

পেরিগ্রিন ফ্যালকন একটি বিরল প্রজাতির পাখি। পাখিটি ঘণ্টায় ৩৯০ কিলোমিটার পর্যন্ত গতিতে উড়তে পারে। এমন দ্রুতগতির কারণে একে রকেট বার্ডও বলা হয়।

তবে এই পাখি মাছের সঙ্গে অন্য পাখি ধরেও খেয়ে থাকে। বিশেষ করে হাঁস জাতীয় পাখি তাদের প্রিয়। আর বাইক্কাবিলে হাঁস জাতীয় প্রচুর পাখি রয়েছে।

পাখি গণনায় অংশ নেওয়া বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের অপর সদস্য সামিউল মহসিন জানান, এই বছর পাখি গণনায় উল্লেখযোগ্য ৭৫০ মেটে মাথা টিটি (গ্রে-হেডেড ল্যাপউইং) এবং সর্বোচ্চ সংখ্যক কাস্তেচরা- ৬৩৯ এবং ১০০ কালা মাথা কাস্তেচরা (ব্ল্যাক-হেডেড আইবিস) দেখা গিয়েছে।

তবে এবার বাইক্কা বিলের পাখির সংখ্যা অতীতের গড় গণনার সংখ্যার চেয়ে কম দাবি করে তিনি বলেন, ২০০৮-১০ এবং ২০১৪-১৯ সালে শীতকালে গড়ে ৯ হাজার জলচর পাখি দেখা মিলত।

সামিউল মহসিন আরও জানান, বাইনোকুলার, টেলিস্কোপের সাহায্যে ও তাদের পাখি গণনার সূত্র এবং থিয়োরির মাধ্যমে বাইক্কা বিলের এ পাখি গননা করেন তারা।

দ্রুততম পাখি পেরিগ্রিন ফ্যালকন

তিনি বলেন, বাইক্কা বিলের এরিয়া ১৭০ হেক্টর। এখানে মাছের অভয়াশ্রম করা হয়েছে তাই সারা বছরই এখানে পানি ধরে রাখা হয়। হাইল হাওরের মধ্যে আরও ৬০-৭০টা বিল থাকলেও এ বিলেই বেশি পাখির দেখা মেলে। যে কারণে পাখি গণনার জন্য তারা এই বিলটিকে বাছাই করে নেওয়া হয়েছে।

বাইক্কা বিল পরিচালনায় নিয়োজিত বড়গাঙ্গিনা সম্পদ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মিন্নত আলী জানান, পুরো হাইল হাওরেরই পাখি থাকে। তবে বাইক্কা বিলে মাছ আহরণ নিষিদ্ধ থাকায় এখানে পাখির সংখ্যা বেশি থাকে।

তিনি বলেন, বাইক্কা বিলের জন্য পাঁচজন পাহারাদার আছে, পালাক্রমে এটি দেখাশোনা করেন তারা। তবে বিশাল এলাকা তাদের পক্ষে সামাল দেওয়া কষ্টকর হয়। বাইক্কা বিল পরিচালনা ও বিলে অবাধ লোক সমাগম বন্ধ করতে এখানে পুণঃপ্রবেশ ফি চালু করা জরুরি। তিনি আরও বলেন, টিকেটিং সিস্টেম চালু করলে এখান থেকে সরকারও রাজস্ব পাবেন এবং এর একটা অংশ দিয়ে লোকবল বাড়ানো যাবে। পাশাপাশি উন্নয়ন কাজও করা যাবে। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো দর্শনার্থী নিয়ন্ত্রিত হলে পাখিদের জন্যও নিরাপদ স্থান হিসেবে থাকবে এটি।

 

 

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

দেখা মিলল বিশ্বের দ্রুততম পাখি পেরিগ্রিন ফ্যালকনের

আপডেট সময় : ০৭:১৯:১৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৫

প্রত্যাশা ডেস্ক: মৌলভীবাজারের বাইক্কা বিলে জলজ পাখি শুমারি-২০২৫ শেষ হয়েছে। এ শুমারিতে প্রথমবারের বাইক্কা বিলে দেখা মিলেছে পৃথিবীর দ্রুততম পাখি পেরিগ্রিন ফ্যালকনের। যাকে অনেকে ‘রকেট বার্ড’ও বলেন।

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের হাইল হাওরের মাছের অভয়াশ্রম বাইক্কা বিলে বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের আয়োজনে এই পাখি শুমারি শেষ হয় শনিবার (১৮ জানুয়ারি) বিকালে।

পরে বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের সদস্য ও বিশিষ্ট পাখি বিশেষজ্ঞ ড. পল থমসন বলেন, এ বছর বাইক্কা বিলে শীতকালীন জলচর পাখি গণনা করে তারা ৩৮ প্রজাতির ৭ হাজার ৮৭০টি পাখির দেখা পেয়েছেন। এ সংখ্যা বিগত দুই বছরের চেয়ে বেশি।

২০২৪ সালে ৩৩ প্রজাতির ৪ হাজার ৬১৫ জলচর পাখি দেখা গিয়েছেল এবং ২০২৩ সালে দেখা মিলেছিল ৪০ প্রজাতির ৬ হাজার ১৪১ জলচর পাখির।

পাখি বিশেষজ্ঞ থমসন আরও বলেন, সংখ্যা পরিবর্তিত হয়, কোনো কোনো বছর ডিসেম্বর বা ফেব্রুয়ারিতে বেশি দেখা যায়। তবে পরিযায়ী পাখির সংখ্যা নির্ভর করে জলস্তর, আগের মৌসুমের পরিস্থিতি এবং পরিযায়ন পথের উপর।

এর মধ্যে এবছর বাইক্কা বিলে দেখা মিলেছে পৃথিবীর দ্রুত গতির পাখি পেরিগ্রিন ফ্যালকন।

দেখা মিলল বিশ্বের দ্রুততম পাখি পেরিগ্রিন ফ্যালকনের

এ ব্যাপারে বাইক্কা বিলের মনিটরিংয়ের দায়িত্বে থাকা সিএনআরএস’র সাইট অফিসার মনিরুজ্জামান বলেন, পাখি গণনাকারিরা তাদের জানিয়েছেন একটি মাত্র পেরিগ্রিন ফ্যালকনের দেখা মিলেছে। পাখিটি উড়ে এসে একটি ঝোপের মধ্যে ঢুকে পড়েছে।

পেরিগ্রিন ফ্যালকন একটি বিরল প্রজাতির পাখি। পাখিটি ঘণ্টায় ৩৯০ কিলোমিটার পর্যন্ত গতিতে উড়তে পারে। এমন দ্রুতগতির কারণে একে রকেট বার্ডও বলা হয়।

তবে এই পাখি মাছের সঙ্গে অন্য পাখি ধরেও খেয়ে থাকে। বিশেষ করে হাঁস জাতীয় পাখি তাদের প্রিয়। আর বাইক্কাবিলে হাঁস জাতীয় প্রচুর পাখি রয়েছে।

পাখি গণনায় অংশ নেওয়া বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের অপর সদস্য সামিউল মহসিন জানান, এই বছর পাখি গণনায় উল্লেখযোগ্য ৭৫০ মেটে মাথা টিটি (গ্রে-হেডেড ল্যাপউইং) এবং সর্বোচ্চ সংখ্যক কাস্তেচরা- ৬৩৯ এবং ১০০ কালা মাথা কাস্তেচরা (ব্ল্যাক-হেডেড আইবিস) দেখা গিয়েছে।

তবে এবার বাইক্কা বিলের পাখির সংখ্যা অতীতের গড় গণনার সংখ্যার চেয়ে কম দাবি করে তিনি বলেন, ২০০৮-১০ এবং ২০১৪-১৯ সালে শীতকালে গড়ে ৯ হাজার জলচর পাখি দেখা মিলত।

সামিউল মহসিন আরও জানান, বাইনোকুলার, টেলিস্কোপের সাহায্যে ও তাদের পাখি গণনার সূত্র এবং থিয়োরির মাধ্যমে বাইক্কা বিলের এ পাখি গননা করেন তারা।

দ্রুততম পাখি পেরিগ্রিন ফ্যালকন

তিনি বলেন, বাইক্কা বিলের এরিয়া ১৭০ হেক্টর। এখানে মাছের অভয়াশ্রম করা হয়েছে তাই সারা বছরই এখানে পানি ধরে রাখা হয়। হাইল হাওরের মধ্যে আরও ৬০-৭০টা বিল থাকলেও এ বিলেই বেশি পাখির দেখা মেলে। যে কারণে পাখি গণনার জন্য তারা এই বিলটিকে বাছাই করে নেওয়া হয়েছে।

বাইক্কা বিল পরিচালনায় নিয়োজিত বড়গাঙ্গিনা সম্পদ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মিন্নত আলী জানান, পুরো হাইল হাওরেরই পাখি থাকে। তবে বাইক্কা বিলে মাছ আহরণ নিষিদ্ধ থাকায় এখানে পাখির সংখ্যা বেশি থাকে।

তিনি বলেন, বাইক্কা বিলের জন্য পাঁচজন পাহারাদার আছে, পালাক্রমে এটি দেখাশোনা করেন তারা। তবে বিশাল এলাকা তাদের পক্ষে সামাল দেওয়া কষ্টকর হয়। বাইক্কা বিল পরিচালনা ও বিলে অবাধ লোক সমাগম বন্ধ করতে এখানে পুণঃপ্রবেশ ফি চালু করা জরুরি। তিনি আরও বলেন, টিকেটিং সিস্টেম চালু করলে এখান থেকে সরকারও রাজস্ব পাবেন এবং এর একটা অংশ দিয়ে লোকবল বাড়ানো যাবে। পাশাপাশি উন্নয়ন কাজও করা যাবে। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো দর্শনার্থী নিয়ন্ত্রিত হলে পাখিদের জন্যও নিরাপদ স্থান হিসেবে থাকবে এটি।