ঢাকা ০৯:১৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৫, ৬ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গাজায় যুদ্ধবিরতি শুরু, জানাল ইসরায়েল

  • আপডেট সময় : ০৭:৫১:০৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২৫
  • ১০ বার পড়া হয়েছে

বিদেশের খবর ডেস্ক : গাজায় আজ রোববার সকাল থেকে যুদ্ধবিরতি শুরু হচ্ছে। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এমনটি জানিয়েছে। যদিও যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে মধ্যস্থতাকারী কাতার আগেই এই সময় জানিয়ে দিয়েছে। ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনী জানায়, রোববার স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৮টা থেকে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হচ্ছে। এক বিবৃতিতে আইডিএফ বলেছে, বন্দিদের মুক্তি দেওয়ার পর তারা জিম্মিদের নেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। জিম্মিদের শারীরিক ও মানসিক সহযোগিতা দেওয়ার প্রস্তুতিও চলছে। তারা বলছে, তাদের সশস্ত্র বাহিনী গাজা উপত্যকার কাছাকাছি এলাকায় ইসরায়েলিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অভিযান চালিয়ে যাবে।

বুধবার গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি ঘোষণার পরও ইসরায়েল হামলা চালিয়ে যায়। চুক্তি ঘোষণার পর থেকে এ পর্যন্ত ইসরায়েলের হামলায় গাজায় নিহত বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২২ জনে। হামাস শাসিত সরকারের বেসামরিক প্রতিরক্ষা সংস্থা এমনটি জানায়। সংস্থাটির মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল বলেন, নিহতদের মধ্যে ৩৩ জনই শিশু। আহত হয়েছেন ২৭০ জন।

ইসরায়েলের বিমান হামলাও গত কয়েকদিন ধরে অব্যাহত রয়েছে। ইউনিসেফের একজন কর্মী বিবিসিকে বলেন, তিনি গাজার আকাশে ড্রোনের পরিচিত আওয়াজ শুনে ঘুম থেকে জেগে ওঠেন। ফিলিস্তিনি বার্তা সংস্থা ওয়াফা শনিবার সকালে জানায়, শুক্রবার শেষরাতে দক্ষিণ গাজার আল-কারারায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় পাঁচজন নিহত হয়েছেন। যুদ্ধবিরতি চুক্তি ঘোষণার পরও ইসরায়েলের বিমান হামলা চালানোর ঘটনা নতুন নয়। সবশেষ এটি লেবাননে ঘটেছে, যেখানে নভেম্বর মাসে যুদ্ধবিরতির কয়েক ঘণ্টা আগে রাজধানী বৈরুতে ভারী বোমাবর্ষণ করা হয়। গাজায় ত্রাণকর্মীরা যুদ্ধবিরতি চুক্তিকে স্বাগত জানালেও তারা বলেছেন যে গাজায় বাস্তুচ্যুত মানুষের পরিস্থিতি এখনও অত্যন্ত সংকটাপন্ন। ইউনিসেফের রোসালিয়া বোলেন বিবিসিকে বলেন, হাজার হাজার মানুষ নিদারুণ অভাবের মধ্যে বসবাস করছেন।

অস্থায়ী তাঁবু এবং জনবহুল আশ্রয়কেন্দ্রগুলোর অস্বাস্থ্যকর পরিস্থিতি বর্ণনা করে তিনি বলেন, সেখানে রোগব্যাধি প্রবলভাবে ছড়িয়ে পড়ছে। এটি শুধুমাত্র বোমা ও গুলির কথা নয়, মানুষের বেঁচে থাকার পরিবেশই আসল সমস্যা। তিনি বলেন, যুদ্ধবিরতি ত্রাণ সরবরাহের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, তবে গাজায় একটি বাজার অর্থনীতি পুনরায় প্রতিষ্ঠিত হওয়া দরকার, যাতে মানুষ তাদের জীবন নতুন করে শুরু করতে পারে।

এর আগে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা গাজায় যুদ্ধবিরতির চুক্তির অনুমোদন দিয়েছে। গতকাল শনিবার ভোরে দেশটির প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর এক বিবৃতিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। বিবৃতিতে জানানো হয়, ইসরায়েলের সরকার জিম্মি ফেরত পরিকল্পনার অনুমোদন দিয়েছে। আজ রোববার (১৯ জানুয়ারি) থেকে এই পরিকল্পনা কার্যকর হতে যাচ্ছে। যুদ্ধবিরতির চুক্তির অংশ হিসেবে ইসরায়েলের বিচার বিষয়ক মন্ত্রণালয় ৯৫ জন ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেওয়া প্রস্তুতি নিচ্ছে।

প্রথম পর্যায়ে মুক্তি দেওয়ার জন্য ৭৩৭ ফিলিস্তিনির একটি তালিকা তৈরি করেছে ইসরায়েল। পৃথক এক বিবৃতিতে মন্ত্রণালয়টি জানায়, যুদ্ধবিরতির প্রথম দিন রোববার (১৯ জানুয়ারি) ইসরায়েলের বিভিন্ন কারাগারে বন্দি ৯৫ জন ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেওয়া হবে। এদের মধ্যে ৬৯ জন নারী, ১৬ জন পুরুষ এবং ১০ জন অপ্রাপ্তবয়স্ক। যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হলে ছয় সপ্তাহে তিন ধাপে বন্দী বিনিময় হবে। প্রথম ধাপে হামাস ৩৩ জন বন্দীকে মুক্তি দেবে। তাদের মধ্যে নারী, শিশু এবং ৫০ বছরের বেশি বয়সী পুরুষ রয়েছেন।

ইসরায়েলও চুক্তির আওতায় সমস্ত ফিলিস্তিনি নারী এবং ১৯ বছরের কম বয়সী শিশু বন্দীদের মুক্তি দেবে। প্রথম ধাপে মুক্তিপ্রাপ্ত ফিলিস্তিনির সংখ্যা ৯৯০ থেকে ১ হাজার ৬৫০ এর মধ্যে হতে পারে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় শুরু হওয়া ভয়াবহ সংঘাতের ফলে অন্তত ৪৬,৮৭৬ জন ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন এবং ১১০,৬৪২ জন আহত হয়েছেন। এ যুদ্ধের ফলে গাজার পরিস্থিতি অত্যন্ত নাজুক হয়ে পড়েছে, যেখানে লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং মানবিক সহায়তার অভাবে ভুগছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই সংঘাতের অবসানের জন্য শান্তি আলোচনা এবং যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে আসছিল।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

বায়ুদূষণের কারণে দেশে প্রতি বছর এক লাখেরও বেশি মৃত্যু

গাজায় যুদ্ধবিরতি শুরু, জানাল ইসরায়েল

আপডেট সময় : ০৭:৫১:০৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২৫

বিদেশের খবর ডেস্ক : গাজায় আজ রোববার সকাল থেকে যুদ্ধবিরতি শুরু হচ্ছে। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এমনটি জানিয়েছে। যদিও যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে মধ্যস্থতাকারী কাতার আগেই এই সময় জানিয়ে দিয়েছে। ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনী জানায়, রোববার স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৮টা থেকে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হচ্ছে। এক বিবৃতিতে আইডিএফ বলেছে, বন্দিদের মুক্তি দেওয়ার পর তারা জিম্মিদের নেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। জিম্মিদের শারীরিক ও মানসিক সহযোগিতা দেওয়ার প্রস্তুতিও চলছে। তারা বলছে, তাদের সশস্ত্র বাহিনী গাজা উপত্যকার কাছাকাছি এলাকায় ইসরায়েলিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অভিযান চালিয়ে যাবে।

বুধবার গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি ঘোষণার পরও ইসরায়েল হামলা চালিয়ে যায়। চুক্তি ঘোষণার পর থেকে এ পর্যন্ত ইসরায়েলের হামলায় গাজায় নিহত বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২২ জনে। হামাস শাসিত সরকারের বেসামরিক প্রতিরক্ষা সংস্থা এমনটি জানায়। সংস্থাটির মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল বলেন, নিহতদের মধ্যে ৩৩ জনই শিশু। আহত হয়েছেন ২৭০ জন।

ইসরায়েলের বিমান হামলাও গত কয়েকদিন ধরে অব্যাহত রয়েছে। ইউনিসেফের একজন কর্মী বিবিসিকে বলেন, তিনি গাজার আকাশে ড্রোনের পরিচিত আওয়াজ শুনে ঘুম থেকে জেগে ওঠেন। ফিলিস্তিনি বার্তা সংস্থা ওয়াফা শনিবার সকালে জানায়, শুক্রবার শেষরাতে দক্ষিণ গাজার আল-কারারায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় পাঁচজন নিহত হয়েছেন। যুদ্ধবিরতি চুক্তি ঘোষণার পরও ইসরায়েলের বিমান হামলা চালানোর ঘটনা নতুন নয়। সবশেষ এটি লেবাননে ঘটেছে, যেখানে নভেম্বর মাসে যুদ্ধবিরতির কয়েক ঘণ্টা আগে রাজধানী বৈরুতে ভারী বোমাবর্ষণ করা হয়। গাজায় ত্রাণকর্মীরা যুদ্ধবিরতি চুক্তিকে স্বাগত জানালেও তারা বলেছেন যে গাজায় বাস্তুচ্যুত মানুষের পরিস্থিতি এখনও অত্যন্ত সংকটাপন্ন। ইউনিসেফের রোসালিয়া বোলেন বিবিসিকে বলেন, হাজার হাজার মানুষ নিদারুণ অভাবের মধ্যে বসবাস করছেন।

অস্থায়ী তাঁবু এবং জনবহুল আশ্রয়কেন্দ্রগুলোর অস্বাস্থ্যকর পরিস্থিতি বর্ণনা করে তিনি বলেন, সেখানে রোগব্যাধি প্রবলভাবে ছড়িয়ে পড়ছে। এটি শুধুমাত্র বোমা ও গুলির কথা নয়, মানুষের বেঁচে থাকার পরিবেশই আসল সমস্যা। তিনি বলেন, যুদ্ধবিরতি ত্রাণ সরবরাহের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, তবে গাজায় একটি বাজার অর্থনীতি পুনরায় প্রতিষ্ঠিত হওয়া দরকার, যাতে মানুষ তাদের জীবন নতুন করে শুরু করতে পারে।

এর আগে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা গাজায় যুদ্ধবিরতির চুক্তির অনুমোদন দিয়েছে। গতকাল শনিবার ভোরে দেশটির প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর এক বিবৃতিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। বিবৃতিতে জানানো হয়, ইসরায়েলের সরকার জিম্মি ফেরত পরিকল্পনার অনুমোদন দিয়েছে। আজ রোববার (১৯ জানুয়ারি) থেকে এই পরিকল্পনা কার্যকর হতে যাচ্ছে। যুদ্ধবিরতির চুক্তির অংশ হিসেবে ইসরায়েলের বিচার বিষয়ক মন্ত্রণালয় ৯৫ জন ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেওয়া প্রস্তুতি নিচ্ছে।

প্রথম পর্যায়ে মুক্তি দেওয়ার জন্য ৭৩৭ ফিলিস্তিনির একটি তালিকা তৈরি করেছে ইসরায়েল। পৃথক এক বিবৃতিতে মন্ত্রণালয়টি জানায়, যুদ্ধবিরতির প্রথম দিন রোববার (১৯ জানুয়ারি) ইসরায়েলের বিভিন্ন কারাগারে বন্দি ৯৫ জন ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেওয়া হবে। এদের মধ্যে ৬৯ জন নারী, ১৬ জন পুরুষ এবং ১০ জন অপ্রাপ্তবয়স্ক। যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হলে ছয় সপ্তাহে তিন ধাপে বন্দী বিনিময় হবে। প্রথম ধাপে হামাস ৩৩ জন বন্দীকে মুক্তি দেবে। তাদের মধ্যে নারী, শিশু এবং ৫০ বছরের বেশি বয়সী পুরুষ রয়েছেন।

ইসরায়েলও চুক্তির আওতায় সমস্ত ফিলিস্তিনি নারী এবং ১৯ বছরের কম বয়সী শিশু বন্দীদের মুক্তি দেবে। প্রথম ধাপে মুক্তিপ্রাপ্ত ফিলিস্তিনির সংখ্যা ৯৯০ থেকে ১ হাজার ৬৫০ এর মধ্যে হতে পারে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় শুরু হওয়া ভয়াবহ সংঘাতের ফলে অন্তত ৪৬,৮৭৬ জন ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন এবং ১১০,৬৪২ জন আহত হয়েছেন। এ যুদ্ধের ফলে গাজার পরিস্থিতি অত্যন্ত নাজুক হয়ে পড়েছে, যেখানে লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং মানবিক সহায়তার অভাবে ভুগছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই সংঘাতের অবসানের জন্য শান্তি আলোচনা এবং যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে আসছিল।