ড. মিল্টন বিশ্বাস :২০২৪ সালের ৫ আগস্ট-পরবর্তী ‘নতুন বাংলাদেশ’ নিরাপত্তা ইস্যুতে নতুন পথের অন্বেষী হয়ে ওঠে। দেশজুড়ে সেনাবাহিনীর ইতিবাচক তৎপরতা অভিনন্দিত হয়। কিন্তু ওই সময় থেকে দেশের কোনো কোনো স্থানে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান তথা অমুসলিম জনগোষ্ঠীর ওপর যে চাপ তৈরি হয় তাতে ধর্মীয় সম্প্রীতির প্রসঙ্গটি সামনে আসে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেল লরিয়েট অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে এক ধর্ম সম্প্রদায়ের সঙ্গে অন্য সম্প্রদায়ের সৌহার্দ্য অক্ষুণ্ন রাখার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
অন্যদিকে রাজনীতির মাঠে নতুন ক্ষমতায়নের তর্ক-বিতর্কে দেশের স্বার্থকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে জাতীয় ঐক্যের কথা আলোচনায় শীর্ষ স্থান দখল করে। সেখানেও সেনাবাহিনীর প্রত্যাশিত সহযোগিতা অনিবার্য হয়ে ওঠে। কারণ সেনাবাহিনী সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় ঐক্যের প্রতীক আর ‘সংস্কার ও নির্বাচন’ ফলপ্রসূ করার জন্য তাদের ভূমিকা ‘নতুন বাংলাদেশ’ গড়ে তোলার অন্যতম সহায়ক শক্তি বা স্তম্ভ। ইতোমধ্যে, জাতীয় সমস্যা মোকাবিলায় সেনাবাহিনী আপামর জনসাধারণের আস্থা ও নির্ভরতার প্রতীক হিসেবে সুপরিচিতি পেয়েছে। তারা জনগণের বন্ধু, দুর্যোগে জনগণের পাশে থাকাই তাদের বড় দায়িত্ব। তাদের সেøাগানÑ ‘সমরে আমরা, শান্তিতে আমরা, সর্বত্র আমরা দেশের তরে ।’
দুই.
প্রকৃতপক্ষে বর্তমানে দেশ দাঁড়িয়ে আছে ৩টি পিলারের ওপরÑ জনগণ, সরকার ও সশস্ত্র বাহিনী। জনগণের ভেতর আবার যুবসমাজকে আলাদা করে দেখতে চাই আমরা। কারণ ২০২৪ সালে বিশ্ব অবাক হলো বাংলাদেশে তারুণ্যের ঐক্যবদ্ধ শক্তি দেখে। এর আগে পুরানো পৃথিবী ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের অভ্যুদয় দেখেছে। কিন্তু সেটি ছিল রক্তগঙ্গা মাড়িয়ে স্বাধীনতার সুফল ঘরে তোলার কাল।
ষাট ও সত্তর দশকের প্রজন্ম তাদের যৌবন দান করেছিল দেশমাতৃকার জন্য। একইভাবে জেনারেশন জেড দেখিয়ে দিল ঐক্যবদ্ধ শক্তি দমন-পীড়ন রুখে দিতে পারে, পারে দেশের অপরাজনৈতিক ক্ষমতা চর্চাকে হটিয়ে দিতে। মনে রাখতে হবে বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশই তরুণ। আর এদেশের স্মরণীয় ইতিহাস সৃষ্টিতে তাদের আত্মদান ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে চলেছে।
গত ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ক্ষমতা ত্যাগ করে ভারতে আশ্রয় নেওয়া এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বিজয়ী রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয় সংস্কারের দ্বার উন্মোচন করে দেয়। অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ায় মানুষের প্রত্যাশা এখন আকাশচুম্বী।
অন্যদিকে উপদেষ্টাম-লীতে তরুণ সদস্যদের অন্তর্ভুক্তি একটি বৈপ্ল¬বিক ও প্রসংশিত সিদ্ধান্ত। একদিকে বিগত সরকারের পর্বতসমান লুটপাট আর দুর্নীতির বিস্তারিত খবর আর অন্যদিকে দেশের নতুন প্রেক্ষাপটে অস্থিতিশীলতা, নৈরাজ্য, সুবিধাবাদী শ্রেণির আবির্ভাব নিরাপত্তা নিয়ে নতুনভাবে ভাবিয়ে তুলে জনগণকে। রাষ্ট্রের নিরাপত্তা নিয়ে নানা মহলের চিন্তা-ভাবনা চলছে।
জনৈক গবেষক বলেছেন, ‘দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে সব রাজনৈতিক দলের একটা ঐকমত্য গড়ে তুলতে হবে। নিরাপত্তা কাঠামো বলতে শুধু সীমান্ত পাহারা দেওয়া নয়। একই সঙ্গে আমাদের আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, যোগাযোগ ব্যবস্থা, খাদ্য নিরাপত্তা, খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থাÑ সবকিছুকে এখানে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।’
গত ৫ আগস্টের পর এখন পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সব রাজনৈতিক দলকে যুক্ত করে জাতীয় মতৈক্যের ভিত্তিতে নিরাপত্তা কাঠামো প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি পররাষ্ট্রনীতি প্রণয়ন করা প্রয়োজন বলে মনে করেন অনেকেই। পাঁচ মাস পার হওয়ায় এই মুহূর্তে জনগণের নিরাপত্তা, ধর্মীয় সম্প্রীতি এবং জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে মূল্যায়নের সময় এসেছে।
বলা বাহুল্য, পাঁচ মাস অতিক্রান্ত হওয়ার পরও সেনাবাহিনীকে মাঠ পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশ এখনো অস্থিরতামুক্ত হয়নি, স্থিতিশীলতা অর্জন করেনি। নানা ফ্রন্ট থেকে দাবি-দাওয়া নিয়ে মানুষ সোচ্চার হচ্ছে রাজপথে, প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে। অস্থির অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে দেশ। এটি অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। স্বার্থান্বেষী মহল নানা অঘটন ঘটানোর চেষ্টা করছে। এরই অংশ হিসেবে দেশের ভেতরে ও সীমান্তের ওপারে চলছে অপপ্রচার ও উসকানি। শান্তি, স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা রক্ষায় সেনাবাহিনীর সদস্যরা কর্তব্যনিষ্ঠা ও পেশাদারিত্বের মাধ্যমে বাংলাদেশের মহিমাকে উজ্জ্বল করে চলেছেন। এ জন্য সেনাশাসিত বাংলাদেশ নয়, বরং গণতন্ত্র রক্ষায় সেনাবাহিনীÑ এই চেতনা জনগণের মধ্যে সঞ্চারিত হচ্ছে।
প্রধান উপদেষ্টা, ছাত্র নেতা, রাজনৈতিক দল (ফ্যাসিস্ট দল ছাড়া) ও সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানÑ সবারই মানসিকতায় ইতিবাচক বাংলাদেশের ছবি ভাস্বর। আমাদের সবাইকে মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশ একটি কঠিন সময় অতিক্রম করছে। প্রতিবেশী দেশ কিংবা পৃথিবীর যে কোনো প্রান্ত থেকেই অপপ্রচার আসুক না কেন, আমাদের সঠিক তথ্য দিয়ে তা খণ্ডন করতে হবে। তাদের তাদের ভুল ধরিয়ে দিতে হবে। তবে কোনো পক্ষের উসকানিতে পা দেওয়া যাবে না কিছুতেই।
দেশের অভ্যন্তরে যাতে কোনো রকম বিশৃঙ্খল অবস্থা তৈরি না হয়, এ বিষয়েও সংশ্লিষ্ট সবাইকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে। দেশের এই ক্রান্তিকালে এমন কিছু করা যাবে নাÑ যাতে কোনো সম্প্রদায়ের একজন নাগরিকও নিজেকে অনিরাপদ ভাবেন। প্রধান উপদেষ্টার একাধিক ভাষণে সেটাই প্রতিধ্বনিত হয়েছে। একটি সমতাভিত্তিক, মানবিক ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই আমরা সব ধরনের অপপ্রচারের সমুচিত জবাব দেব। সেনাবাহিনী নিয়ে সুযোগসন্ধানী মহল যে অপপ্রচার চালাচ্ছে তারও জবাব দেওয়া আমাদের অন্যতম দায় ও দায়িত্ব।
তিন.
ধর্মীয় সম্প্রীতির কথা উচ্চারণ করলেই বলতে শোনা যায়, হিন্দু-খ্রিস্টান-বৌদ্ধরা কি আগের চেয়ে ভালো আছে? সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান ২০২৪ সালের দুর্গাপূজা উৎসব পরিদর্শনে গিয়ে বলেছেন, ‘সম্প্রীতি বজায় রাখব দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করব ।’ তিনি বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টানদের উৎসবে উপস্থিত হয়ে (৮ নভেম্বর ও ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪)- সম্প্রীতির দেশ গঠনে সবাইকে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে থেকে একে অপরের সহযোগিতায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রেখে প্রতিটি ধর্মের নিজ নিজ উৎসব শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপনের লক্ষ্যে সেনাবাহিনী প্রয়োজনীয় সব কার্যক্রম গ্রহণে সদা প্রস্তুত।’
অন্যদিকে উপদেষ্টামণ্ডলীর তরফ থেকে বলা হচ্ছে, গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী অন্তর্বর্তী সরকার সব ধর্মের মানুষের সমান অধিকার নিশ্চিত করেছে, যে যার ধর্ম শান্তিপূর্ণভাবে পালন করতে পারছে। এ সরকার অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী। এ জন্য সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট হয় এমন কোনো কাজ না করার জন্য সকল সম্প্রদায়কে সতর্ক থাকতে হবে। এদিকে বলা হচ্ছে, ‘ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার’। বেশ কয়েক মাস যাবৎ দেশের ভেতরে ও বাইরে সংখ্যালঘু নির্যাতনের আজগুবি অভিযোগ এনে সংশ্লিষ্ট মহলের অপপ্রচার অব্যাহত ছিল; যা জনগণকে উদ্বিগ্ন না করে পারেনি।
ওই প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক নেতৃত্ব, ছাত্র নেতৃত্ব ও ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ধারাবাহিক আলোচনা পর্বটি ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় তাঁরা নির্দ্বিধায় মনের কথা প্রকাশ করেছেন। অতীতে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে সব ধর্মের মানুষকে এক বৈঠকে বসানোর দৃষ্টান্ত বিরল। এদিক দিয়ে এটি দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে সমুজ্জ্বল হয়ে থাকবে।
বৈঠকে ড. ইউনূস ক্রোধ ও ভয় থেকে মুক্ত হয়ে একটি সহনশীল বাংলাদেশ গড়ে তোলার পরামর্শ দেন, যেখানে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটবে না বা এমন কোনো ঘটনা ঘটলেও তা সমাধান করা যাবে। এর আগে তিনি বাংলাদেশকে একটি পরিবার হিসেবেও অভিহিত করেছেন। জনগণের বিভিন্ন অংশের মধ্যে যদি পারস্পরিক ভুল বোঝাবুঝি থেকে থাকে, তার অবসান হবে আশা করেছিলেন তিনি।
বৈঠকে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের শঙ্কা ও উদ্বেগ প্রশমনে সেনাবাহিনী ও পুলিশ দিয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিতের ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হয়। বিশিষ্টজনদের মতামত হলোÑ বাংলাদেশের মানুষ যে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতান্ত্রিক সমাজের স্বপ্ন দেখে, সেটি তখনই সম্ভব হবে যখন রাষ্ট্রীয় নীতি পরিকল্পনা গ্রহণ ও এর বাস্তবায়নে ধর্ম ও জাতি-বর্ণ নির্বিশেষে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা যাবে। কাউকে পেছনে ফেলে কিংবা অগ্রাহ্য করে গণতান্ত্রিক ও সমতাভিত্তিক বাংলাদেশ গড়ে তোলা অসম্ভব।
চার.
দেশের স্থিতিশীলতার স্বার্থে জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছেন অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। ১৬ জানুয়ারি(২০২৫) তিনি বলেছেন, ‘৫ আগস্টের পুরো অনুভূতিটাই ছিল একতার অনুভূতি। একতাতেই আমাদের জন্ম, একতাতে আমাদের শক্তি। ঐক্যের মাঝে এ সরকারের জন্ম।’ ইতোমধ্যে দেশের চলমান পরিস্থিতিতে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করতে অন্তর্বর্তী সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য হয়েছে।
‘বাংলাদেশ’-এর স্বার্থ নিয়ে জাতীয় ঐক্য গড়ে উঠতে পারে। ফ্যাসিবাদের দোসররা যে দেশবিরোধী তৎপরতা চালাচ্ছে তাকে প্রতিরোধের পথ বাতলে দিতেও ঐক্য হতে পারে। প্রধান উপদেষ্টার কথার সূত্র ধরে বলা যায়, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে একটা রক্তস্নাত ঐক্য গড়ে উঠেছে। হাজার হাজার তরুণের রক্ত, বৃথা যেতে না দেওয়ার প্রত্যয়ে ঐক্য স্থাপিত হতে পারে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে চলার পথে ভিন্নমত আছে কিন্তু অনৈক্য নেই। বলা হচ্ছে, দেশবিরোধীদের ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় জাতীয় ঐক্য প্রয়োজন।
ছাত্রদের নেতৃত্বেই জাতীয় ঐক্যটা হতে পারে বলে মনে করেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক বাকের মজুমদার। তিনি একটি মিডিয়ায় বলেছেন, ‘আমরা কিন্তু ৩ আগস্ট এক দফার ডাক দিয়েছিলাম। সেই ডাকে সবাই সাড়া দিয়েছিলেন। তখন আমাদের মধ্যে একটা ঐক্য ছিল বলেই আমরা ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট সরকার প্রধানকে পালাতে বাধ্য করতে পেরেছি। এরপর আমরা দেখেছি, অনেকেই নিজের স্বার্থ নিয়ে নানা ধরনের কাজ করছেন। এখন আমাদের জাতীয় ঐক্যের মূল ভিত্তি হতে পারে জাতীয় স্বাথ। কিছু ক্ষেত্রে ঐক্য পরিলক্ষিত হচ্ছে না।’ এর অন্যতম হলো ‘দ্রুত সংস্কার, দ্রুত নির্বাচন’ নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন মত, মতান্তর, মনান্তর।
উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেছেন, ‘রাজনৈতিক দল, জনগণ বা সরকার এখানে আলাদা কিছু নয়। বাংলাদেশের অখ-তা রক্ষা এবং জনগণকে ঐক্যবদ্ধ রাখার কাজ সবার। এই ঐক্য ধরে রাখলে আশা করি, আর কখনোই ফ্যাসিজম ফিরে আসবে না। বিএনপি ও জামায়াত নেতারাও অখণ্ডতা ও ঐক্যের কথা বলেছেন। স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সবাই ঐক্যবদ্ধ থেকে কীভাবে কাজ করা যায়, তা বলেছেন।’
সম্প্রতি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এক বিবৃতিতে চলমান পরিস্থিতিতে দেশের পক্ষের শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। জনগণের উদ্দেশে তিনি বলেছেন, ‘সরকারকে আরেকটু সময় দিন। আরেকটু ধৈর্যের পরিচয় দিন। শান্ত থাকুন। পরিস্থিতির ওপর সতর্ক ও সজাগ দৃষ্টি রাখুন। দল-মত-ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে আমাদের প্রত্যেক মনে রাখতে হবে, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার যাত্রাপথে ষড়যন্ত্রকারীদের বাধা বিচক্ষণতার সঙ্গে অতিক্রম করতে ব্যর্থ হলে স্বাধীনতাপ্রিয় জনগণকে চরম মূল্য দিতে হবে। আমরা যে কোন ষড়যন্ত্র মোকাবিলা এবং দেশে একটা গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থায় যাওয়ার কাজটাও যথাসম্ভব ঐক্যের মধ্য দিয়ে করতে পারি ।’ অর্থাৎ দেশ নিয়ে ইতোবাচক ভাবনাই জাতীয় ঐক্যের মূল কথা। ‘যারা লড়াই করেছেন তাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’
সব বাংলাদেশিকে, ধর্ম, রাজনৈতিক মতাদর্শ, আদর্শ, বয়স বা যে কোনো বৈশিষ্ট্যের পার্থক্যের ঊর্ধ্বে উঠে দেশবিরোধী শক্তির হুমকির মুখে জাতীয় ঐক্য বজায় রাখতে হবে। বস্তুত ঐক্যের মূল কথা দেশের জাতীয় স্বার্থে সব রাজনৈতিক দলের মধ্যে একতার বোধ, আলোচনার ভিত্তিতে সব কিছু নির্ধারণ, একতরফা বা চাপিয়ে দেওয়া মতামত বাতিল করা। কারণ ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়। রাষ্ট্রের চেয়ে একটা গ্রুপ বা অলিগার্কদের স্বার্থকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে না, যিনি সরকার প্রধান, তার স্বার্থকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া যাবে নাÑ রাষ্ট্র মূলনীতি থেকে কখনো সরে যাওয়া যাবে না।
পাঁচ.
দেশের মানুষ বিগত আওয়ামী লীগ শাসনামলের তুলনায় ভালো থাকতে চায়। বৈষম্যহীন, শোষণহীন রাষ্ট্রে নিরাপদ সমাজের স্বপ্ন ও সম্প্রীতির আলিঙ্গনে বাঁচতে চায় ।আর জাতীয় স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ থাকা একান্ত জরুরি বলে মনে করে তারা। অন্যদিকে গণ-অভ্যুত্থানে বিজয়ী যুবসমাজকে নিয়ে আমাদের স্বপ্ন রয়েছে বিশাল। কারণ ৫ আগস্টের আগে-পরের ওই দিনগুলোতে তারা সারা দেশকে জাগিয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিল। এখন দেশ গড়ার সময়। দেশ গড়ার জন্যও সকলকে জাগিয়ে তুলতে হবে। তরুণ প্রজন্ম দেশ গড়ার কাজে জনতার সঙ্গে নিজেদের নিয়োজিত করে কল্যাণরাষ্ট্র তৈরিতে প্রধান উপদেষ্টা এবং সেনাবাহিনীকে সহযোগিতা করুক-এ প্রত্যাশা সকলের।
লেখক: বিশিষ্ট লেখক, কবি ও কলামিস্ট এবং সেক্রেটারি, ইসিটি
ৎিরঃবৎসরষঃড়হনরংধিং@মসধরষ.পড়স