প্রত্যাশা ডেস্ক: ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের নতুন সদর দপ্তর উদ্বোধনের দিন রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘের (আরএসএস) প্রধান মোহন ভাগবতকে তুলাধোনা করলেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। বললেন, দেশের স্বাধীনতা নিয়ে যে মন্তব্য সংঘ প্রধান করেছেন, অন্য দেশ হলে তাঁকে গ্রেফতার করা হতো। বিচারের মুখোমুখি করা হতো।
রাহুল বলেন, ‘মোহন ভাগবত প্রত্যেক দেশবাসীকে অপমান করেছেন। অসম্মান করেছেন। সংবিধানের অমর্যাদা করেছেন এই মন্তব্য করে যে সংবিধান আমাদের স্বাধীনতার প্রতীক নয়।’
গত মঙ্গলবার ইন্দোরে এক অনুষ্ঠানে মোহন ভাগবত বলেছিলেন, ১৯৪৭ সালে নয়, ভারত প্রকৃত স্বাধীনতা পেয়েছে যেদিন অযোধ্যায় রামমন্দিরে প্রাণ প্রতিষ্ঠা হয়েছে। ওই দিনেই দেশের সার্বভৌমত্ব নতুন করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
ভাগবতের ওই মন্তব্য ঘিরে বিরোধীরা মঙ্গলবারই সরব হয়েছিলেন। বুধবার সকালে ৯/এ, কোটলা রোডে কংগ্রেসের নতুন কার্যালয় উদ্বোধনের পর রাহুল ওই মন্তব্য নিয়ে সরব হন।
রাহুল বলেন, দুই-তিন দিন অন্তর মোহন ভাগবত ভারতের স্বাধীনতা ও স্বাধীনতা আন্দোলন নিয়ে ঔদ্ধত্যের সঙ্গে নিজের ভাবনার কথা শোনাচ্ছেন। মঙ্গলবার তিনি যা বলেছেন, তা দেশদ্রোহ। কারণ, তিনি দেশের সংবিধানকেই প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছেন। অস্বীকার করেছেন। ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতাসংগ্রামকে অস্বীকার করেছেন। এতটাই তাঁর ঔদ্ধত্য যে সেসব কথা বলেছেন প্রকাশ্যে। এটা দেশদ্রোহ। অন্য কোনো দেশ হলে এ জন্য তাঁকে গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখি করা হতো।
রাহুল বলেন, ১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীন হয়নি, এ কথা বলার মানে প্রতিটি দেশবাসীকে অসম্মান করা। সময় এসেছে, এই সব অবান্তর কথা শোনা ও বলা বন্ধ করা। দেশের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে কংগ্রেস এই দেশ গড়ে তুলেছে। দেশকে সফল করেছে এবং সেসব করেছে সংবিধানকে ভিত্তি করেই।
আরএসএস অবশ্য বলেছে, সংঘপ্রধানের মন্তব্যের বিকৃত ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। তাদের ব্যাখ্যা, রামমন্দিরে প্রাণ প্রতিষ্ঠার দিনটিকে সংঘপ্রধান দেশবাসীর আত্মজাগরণের দিন হিসেবে তুলে ধরার কথা বলেছিলেন।
বুধবার বেলা ১১টায় নতুন কংগ্রেস ভবনের উদ্বোধন করেন কংগ্রেস সংসদীয় দলের চেয়ারপারসন সোনিয়া গান্ধী। তাঁর সঙ্গে ছিলেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে, রাহুলগান্ধী, প্রিয়াঙ্কা গান্ধীসহ দলের শীর্ষ নেতারা। ২০০৯ সালে ক্ষমতাসীন কংগ্রেসের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং নতুন কার্যালয়ের শিলান্যাস করেছিলেন। কার্যালয়ের নাম রাখা হয়েছে ‘ইন্দিরা গান্ধী ভবন’। এ নিয়ে বিজেপি বুধবার বলেছে, কংগ্রেসের কার্যালয়ের নাম মনমোহন সিংয়ের স্মৃতি ও সম্মানে রাখা উচিত। নতুন ভবনের সদর ও দেয়ালে ‘সরদার মনমোহন সিং ভবন’ নামে কয়েকটি ব্যানারও দেখা যায়।
৪৭ বছর ধরে কংগ্রেসের প্রধান কার্যালয়ের ঠিকানা ছিল লুটেন্স দিল্লির ২৪ আকবর রোড। ১৯৭৮ সালে দলে ভাঙন ও কেন্দ্রে প্রথমবারের মতো ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ইন্দিরা গান্ধী এই ঠিকানাতেই গড়ে তুলেছিলেন তাঁর নেতৃত্বাধীন নতুন কংগ্রেস। সে সময় এই বাংলো ছিল অন্ধ্র প্রদেশ থেকে নির্বাচিত দলীয় সংসদ সদস্য গদ্দাম বেঙ্কটস্বামীর সরকারি আবাসস্থল।