ঢাকা ১০:৫৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
চার সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন জমার পর জানালেন ড. ইউনূস

গণঅভ্যুত্থানের সনদের ভিত্তিতেই নির্বাচন

  • আপডেট সময় : ০৫:৪৩:২৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫
  • ২২ বার পড়া হয়েছে

বুধবার কমিশনের সদস্যদের উদ্দেশে কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক: চার সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, এখন সব দলের সঙ্গে আলোচনা করে গণঅভ্যুত্থানের সনদ তৈরি করা হবে, যার ভিত্তিতে হবে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন।

বুধবার (১৫ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ১১টায় তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে নির্বাচন ব্যবস্থা, পুলিশ, সংবিধান এবং দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশন প্রতিবেদন জমা দেয়। এরপর সেখানে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ তুলে ধরা হয়।

প্রতিবেদন জমা হওয়ার মধ্য দিয়ে নতুন অধ্যায় শুরু হলো মন্তব্য করে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, এটার মাধ্যমে আমরা আলোচনা শুরু করব সবার সঙ্গে যে- সবার মন এর মধ্যে সায় দিচ্ছে কি না; অঙ্গীকারগুলো পূরণ হচ্ছে কি না, সেটার আলোচনা।

আলোচনার রসদ আপনারা (সংস্কার কমিশন) তৈরি করে দিয়েছেন। সে আলোচনার পরবর্তী অধ্যায়টা কী হবে- সেটাও আমরা জেনে রাখি- একটা মতৈক্য প্রতিষ্ঠা হবে। সবাই একমত হবে না। কিছু অংশে একদম একমত হবেন।

তিনি বলেন, আমরা কী স্বপ্ন দেখলাম যে- একা একা স্বপ্ন দেখলাম? মানুষের স্বপ্নের অংশ নেই, সেটা তো হতে পারে না। আমরা কতটুকু সে (গণঅভ্যুত্থানের) স্বপ্ন নিয়ে আসছি সেটার জন্যই এই আলোচনা। এটা বাইরে থেকে চাপানো জিনিস না; ভেতর থেকে উদ্ভূত একটা জিনিস।

যে আলোচনা হবে, সে আলোচনার নেতৃত্ব দেবেন আপনারা (সংস্কার কমিশন) মতৈক্য প্রতিষ্ঠার জন্য। যেহেতু আপনারাই তাদের পক্ষ থেকে স্বপ্ন দেখেছেন, কীভাবে তাদের স্বপ্ন আপনাদের স্বপ্ন একাকার হয়ে যাবে, তার মাধ্যমে গণঅভ্যুত্থানের একটা চার্টার তৈরি হবে। এই সনদের ভিত্তিতেই ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন হবে বলে মন্তব্য করেন সরকারপ্রধান ইউনূস।

তিনি বলেন, ওই যে নতুন বাংলাদেশের চার্টার, সেই হবে চার্টারটা; সেই চার্টার মতৈক্যের ভিত্তিতে হবে। নির্বাচন হবে, সবকিছু হবে; কিন্তু চার্টার হারিয়ে যাবে না। এ চার্টার থেকে যাবে ইতিহাসের অংশ হয়ে। এটা আমাদের জাতীয় কমিটমেন্ট। এটা কোনো দলীয় কমিটমেন্ট না। আমরা চাচ্ছি সব দল এই চার্টারে সাইন অন করবে।

ওই যে বললাম ঐকমত্য। আমাদের বাংলাদেশি, বাঙালি জাতির সনদ বুকে নিয়ে অগ্রসর হতে হবে। এবং যতো তাড়াতাড়ি পারি, যত বেশি অংক পরিমাণে বাস্তবায়ন করতে পারি, বাস্তবায়ন করতে থাকব। ভবিষ্যতে যে নির্বাচন হবে, এটার ভিত্তিতে, এই চার্টারের ভিত্তিতে।

বিজয় দিবসে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিতে এসে আগামী নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়সূচি নিয়ে ধারণা দিয়েছিলেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

তিনি বলেছিলেন, ভোট কবে হবে তা নির্ভর করবে রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে কতটা সংস্কার করে নির্বাচনে যাওয়া হবে, তার ওপর। মোটাদাগে এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে হতে পারে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন।

এর মধ্যে মঙ্গলবার বিএনপির তরফে বলা হয়েছে, আগামী নির্বাচন যেন চলতি বছরের জুলাই-অগাস্টের মধ্যে আয়োজন করা হয়।

বৈঠকে শান্তিতে নোবেলজয়ী ইউনূস বলেন, যে চার্টার আমরা ধরে রেখেছি, তার যতকিছুই হোক, এটা যেন আমাদের হাত থেকে ছেড়ে না যায়। তাহলে এ স্বপ্নের যে কন্টিনিউটি, সেটা থাকবে কী করে? আমরা সে স্বপ্নের কন্টিনিউটি চাই, বাস্তবায়ন চাই।

নির্বাচন তারই একটা অংশ হবে। চার্টারের একটা অংশ হবে। ঐক্যমতের নির্বাচন হবে। তা না হলে চার্টার তো হারিয়ে যাবে- ঐক্যমত্য না হলে। সেভাবেই আমরা অগ্রসর হতে চাই। কাজেই এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জিনিস। আমাদেরকে সে গুরুত্ব অনুধাবন করতে হবে এবং তার জন্য পরবর্তী অধ্যায় শুরু।

এই সনদ অনুসরণ করে পরবর্তী সরকার অগ্রসর হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনকে ‘ঐতিহাসিক নোট’ বর্ণনা করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এটা শুধু আনুষ্ঠানিকতা না, এটা একটা ঐতিহাসিক নোট। ৃএ ঘটনাটা, আজকের ঘটনাটা ইতিহাসের, ইতিহাসের অংশ হয়ে থাকবে।

এর কারণটা সবাই আমরা বুঝি, কারণ ইতিহাসের প্রবাহ থেকেই কমিশনগুলোর সৃষ্টি হয়েছে। এতো ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতি, এ ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতির হঠাৎ পুনরূত্থান হয়েছে। মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। শিরদাঁড়া খাড়া করে দাঁড়িয়েছে। সেখানে থেকে ইতিহাসের সৃষ্টি। আজকের এ অনুষ্ঠান, সে ইতিহাসের অংশ। এটা কোনো বিচ্ছিন্ন রিপোর্ট দেওয়ার বিষয় না।

ইউনূস বলেন, আমরা সেই ইতিহাসকে ধারণ করতে পারছি কি না, সেটা সামনে নিয়ে যেতে পারছি কি না, সেই ইতিহাসের যে অঙ্গীকার ছিল, সে অঙ্গীকারটা আমরা পূরণ করতে পারছি কি না- সেটিই আমাদের প্রশ্ন এবং আত্মবিশ্বাস যে আমরা পারব।

আজকের যে রিপোর্টগুলো আমরা হাতে নিলাম, ডেফিনেটলি এটা ইন্টেলেকচুয়াল- একটা বড় এক্সারসাইজ দেশের জন্য। কেউ এটা অস্বীকার করতে পারবে না।

কিন্তু আজকের গুরুত্বটা ইন্টেলেকচুয়াল এক্সারসাইজের জন্য না। আমরা মানুষের মনোভাবকে, মানুষের স্বপ্নকে এর মধ্যে ধারণ করতে পেরেছি কি না, সেটাই প্রশ্ন। কাজেই আমাদের বিচার (মানদণ্ড) হবে, আমরা সেই স্বপ্নকে ধারণ করতে পেরেছি কি না। আজকে তার (সেই স্বপ্নের) যাত্রা শুরু হল।

গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। এর দুই দিন বাদে মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার যাত্রা করে।

সেই দায়িত্ব গ্রহণ প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস বলেন, এই ঐতিহাসিক ঘটনা প্রবাহের একটা উচ্চাংশে আমরা এসেছিলাম একটা নতুন দেশ, নতুন বাংলাদেশ তৈরি করার স্বপ্ন নিয়ে। এটার কাঠামো রচনা করার কাজ, দায়িত্ব- আপনাদের কাছে দিয়েছিলাম কমিশনের মাধ্যমে। স্বপ্ন আছে, এখন সে স্বপ্নগুলোর রূপরেখাগুলো তুলে ধরার জন্য।

কাজেই এই ক্লাসরুমে পড়া হবে, অনেক শিক্ষণীয় বিষয় থাকবে, এরকম ব্যাপারটা না। জাতির পুনরুত্থান হল, যে স্বপ্ন নিয়ে জাতির পুনরুত্থান হল, সে পুনরুত্থানকে আমরা ধারণ করতে পেরেছি কিনা, সেটিই আমাদের বিবেচ্য বিষয় হবে।

সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রিয়াজ, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার, পুলিশ প্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেন, দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশনের প্রধান ইফতেখারুজ্জামানসহ কমিশনগুলোর সদস্যরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

 

 

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

চার সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন জমার পর জানালেন ড. ইউনূস

গণঅভ্যুত্থানের সনদের ভিত্তিতেই নির্বাচন

আপডেট সময় : ০৫:৪৩:২৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক: চার সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, এখন সব দলের সঙ্গে আলোচনা করে গণঅভ্যুত্থানের সনদ তৈরি করা হবে, যার ভিত্তিতে হবে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন।

বুধবার (১৫ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ১১টায় তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে নির্বাচন ব্যবস্থা, পুলিশ, সংবিধান এবং দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশন প্রতিবেদন জমা দেয়। এরপর সেখানে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ তুলে ধরা হয়।

প্রতিবেদন জমা হওয়ার মধ্য দিয়ে নতুন অধ্যায় শুরু হলো মন্তব্য করে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, এটার মাধ্যমে আমরা আলোচনা শুরু করব সবার সঙ্গে যে- সবার মন এর মধ্যে সায় দিচ্ছে কি না; অঙ্গীকারগুলো পূরণ হচ্ছে কি না, সেটার আলোচনা।

আলোচনার রসদ আপনারা (সংস্কার কমিশন) তৈরি করে দিয়েছেন। সে আলোচনার পরবর্তী অধ্যায়টা কী হবে- সেটাও আমরা জেনে রাখি- একটা মতৈক্য প্রতিষ্ঠা হবে। সবাই একমত হবে না। কিছু অংশে একদম একমত হবেন।

তিনি বলেন, আমরা কী স্বপ্ন দেখলাম যে- একা একা স্বপ্ন দেখলাম? মানুষের স্বপ্নের অংশ নেই, সেটা তো হতে পারে না। আমরা কতটুকু সে (গণঅভ্যুত্থানের) স্বপ্ন নিয়ে আসছি সেটার জন্যই এই আলোচনা। এটা বাইরে থেকে চাপানো জিনিস না; ভেতর থেকে উদ্ভূত একটা জিনিস।

যে আলোচনা হবে, সে আলোচনার নেতৃত্ব দেবেন আপনারা (সংস্কার কমিশন) মতৈক্য প্রতিষ্ঠার জন্য। যেহেতু আপনারাই তাদের পক্ষ থেকে স্বপ্ন দেখেছেন, কীভাবে তাদের স্বপ্ন আপনাদের স্বপ্ন একাকার হয়ে যাবে, তার মাধ্যমে গণঅভ্যুত্থানের একটা চার্টার তৈরি হবে। এই সনদের ভিত্তিতেই ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন হবে বলে মন্তব্য করেন সরকারপ্রধান ইউনূস।

তিনি বলেন, ওই যে নতুন বাংলাদেশের চার্টার, সেই হবে চার্টারটা; সেই চার্টার মতৈক্যের ভিত্তিতে হবে। নির্বাচন হবে, সবকিছু হবে; কিন্তু চার্টার হারিয়ে যাবে না। এ চার্টার থেকে যাবে ইতিহাসের অংশ হয়ে। এটা আমাদের জাতীয় কমিটমেন্ট। এটা কোনো দলীয় কমিটমেন্ট না। আমরা চাচ্ছি সব দল এই চার্টারে সাইন অন করবে।

ওই যে বললাম ঐকমত্য। আমাদের বাংলাদেশি, বাঙালি জাতির সনদ বুকে নিয়ে অগ্রসর হতে হবে। এবং যতো তাড়াতাড়ি পারি, যত বেশি অংক পরিমাণে বাস্তবায়ন করতে পারি, বাস্তবায়ন করতে থাকব। ভবিষ্যতে যে নির্বাচন হবে, এটার ভিত্তিতে, এই চার্টারের ভিত্তিতে।

বিজয় দিবসে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিতে এসে আগামী নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়সূচি নিয়ে ধারণা দিয়েছিলেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

তিনি বলেছিলেন, ভোট কবে হবে তা নির্ভর করবে রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে কতটা সংস্কার করে নির্বাচনে যাওয়া হবে, তার ওপর। মোটাদাগে এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে হতে পারে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন।

এর মধ্যে মঙ্গলবার বিএনপির তরফে বলা হয়েছে, আগামী নির্বাচন যেন চলতি বছরের জুলাই-অগাস্টের মধ্যে আয়োজন করা হয়।

বৈঠকে শান্তিতে নোবেলজয়ী ইউনূস বলেন, যে চার্টার আমরা ধরে রেখেছি, তার যতকিছুই হোক, এটা যেন আমাদের হাত থেকে ছেড়ে না যায়। তাহলে এ স্বপ্নের যে কন্টিনিউটি, সেটা থাকবে কী করে? আমরা সে স্বপ্নের কন্টিনিউটি চাই, বাস্তবায়ন চাই।

নির্বাচন তারই একটা অংশ হবে। চার্টারের একটা অংশ হবে। ঐক্যমতের নির্বাচন হবে। তা না হলে চার্টার তো হারিয়ে যাবে- ঐক্যমত্য না হলে। সেভাবেই আমরা অগ্রসর হতে চাই। কাজেই এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জিনিস। আমাদেরকে সে গুরুত্ব অনুধাবন করতে হবে এবং তার জন্য পরবর্তী অধ্যায় শুরু।

এই সনদ অনুসরণ করে পরবর্তী সরকার অগ্রসর হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনকে ‘ঐতিহাসিক নোট’ বর্ণনা করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এটা শুধু আনুষ্ঠানিকতা না, এটা একটা ঐতিহাসিক নোট। ৃএ ঘটনাটা, আজকের ঘটনাটা ইতিহাসের, ইতিহাসের অংশ হয়ে থাকবে।

এর কারণটা সবাই আমরা বুঝি, কারণ ইতিহাসের প্রবাহ থেকেই কমিশনগুলোর সৃষ্টি হয়েছে। এতো ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতি, এ ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতির হঠাৎ পুনরূত্থান হয়েছে। মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। শিরদাঁড়া খাড়া করে দাঁড়িয়েছে। সেখানে থেকে ইতিহাসের সৃষ্টি। আজকের এ অনুষ্ঠান, সে ইতিহাসের অংশ। এটা কোনো বিচ্ছিন্ন রিপোর্ট দেওয়ার বিষয় না।

ইউনূস বলেন, আমরা সেই ইতিহাসকে ধারণ করতে পারছি কি না, সেটা সামনে নিয়ে যেতে পারছি কি না, সেই ইতিহাসের যে অঙ্গীকার ছিল, সে অঙ্গীকারটা আমরা পূরণ করতে পারছি কি না- সেটিই আমাদের প্রশ্ন এবং আত্মবিশ্বাস যে আমরা পারব।

আজকের যে রিপোর্টগুলো আমরা হাতে নিলাম, ডেফিনেটলি এটা ইন্টেলেকচুয়াল- একটা বড় এক্সারসাইজ দেশের জন্য। কেউ এটা অস্বীকার করতে পারবে না।

কিন্তু আজকের গুরুত্বটা ইন্টেলেকচুয়াল এক্সারসাইজের জন্য না। আমরা মানুষের মনোভাবকে, মানুষের স্বপ্নকে এর মধ্যে ধারণ করতে পেরেছি কি না, সেটাই প্রশ্ন। কাজেই আমাদের বিচার (মানদণ্ড) হবে, আমরা সেই স্বপ্নকে ধারণ করতে পেরেছি কি না। আজকে তার (সেই স্বপ্নের) যাত্রা শুরু হল।

গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। এর দুই দিন বাদে মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার যাত্রা করে।

সেই দায়িত্ব গ্রহণ প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস বলেন, এই ঐতিহাসিক ঘটনা প্রবাহের একটা উচ্চাংশে আমরা এসেছিলাম একটা নতুন দেশ, নতুন বাংলাদেশ তৈরি করার স্বপ্ন নিয়ে। এটার কাঠামো রচনা করার কাজ, দায়িত্ব- আপনাদের কাছে দিয়েছিলাম কমিশনের মাধ্যমে। স্বপ্ন আছে, এখন সে স্বপ্নগুলোর রূপরেখাগুলো তুলে ধরার জন্য।

কাজেই এই ক্লাসরুমে পড়া হবে, অনেক শিক্ষণীয় বিষয় থাকবে, এরকম ব্যাপারটা না। জাতির পুনরুত্থান হল, যে স্বপ্ন নিয়ে জাতির পুনরুত্থান হল, সে পুনরুত্থানকে আমরা ধারণ করতে পেরেছি কিনা, সেটিই আমাদের বিবেচ্য বিষয় হবে।

সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রিয়াজ, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার, পুলিশ প্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেন, দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশনের প্রধান ইফতেখারুজ্জামানসহ কমিশনগুলোর সদস্যরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।