ক্রীড়া ডেস্ক: বছরের প্রথম দিন ঢকা ক্যাপিটালসের অনুশীলন ছিল সকাল ৯টায়। মিরপুর একাডেমি মাঠে গিয়ে ঢাকা ক্যাপিটালসের কোচ খালেদ মাহমুদ দেখলেন, অনুশীলনে নেই সাব্বির রহমান। দলীয় ম্যানেজার বা দলের অন্য কেউ কিছু জানেন না। যেটির মানে, কাউকে কিছু না জানিয়েই অনুশীলনে আসেননি অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান। ব্যস নেমে এলো শাস্তির খড়গ। এবারের বিপিএলে ঢাকা ক্যাপিটালসের প্রথম তিন ম্যাচের একটিও দেখা যায়নি সাব্বির রহমানকে। দল হেরেছে তিনটিতেই। মিডল অর্ডারে ঘাটতিও দেখা গেছে। তার পরও সাব্বিরকে একাদশে না রাখা নিয়ে কৌতূহল-প্রশ্ন জাগছিল অনেক। বিশেষ করে, সামাজিক মাধ্যমে তুমুল সমালোচনা হচ্ছিল এটি নিয়ে। সিলেটে সোমবার দুপুরে ঢাকার অনুশীলন শেষে খালেদ মাহমুদ জানালেন, শুরুতে দলীয় সমন্বয়ের কারণে একাদশে রাখা হয়নি সাব্বিরকে। তবে পরে এই ব্যাটসম্যান দলে জায়গা পাননি শাস্তি পাওয়ার।
“সাব্বিরকে আমরা খেলাতে পারিনি কম্বিনেশনের কারণে। এছাড়াও কিছু অন্য ইস্যু ছিল, অনেকেই হয়তো বলেছেন ফেইসবুক বা সামাজিম মাধ্যমে। ভেতরের অনেক কিছু অনেকে জানে না বলে হয়তো মন্তব্য করে দেওয়াটা অনেক সহজ। এখানে আমার হাত ছিল না। অধিনায়কও ছিল দলে, তারও বলার থাকে অনেক কিছু। ট্রেনিংয়ের ব্যাপারগুলো থাকে, যেগুলো আমরা বলতে পারি না অনেক কিছু।” “হ্যাঁ, ট্রেনিংয়ে সাব্বির অনুপস্থিত ছিল।
দ্বিতীয় ও তৃতীয় ম্যাচের মাঝে যে অনুশীলনে আসেনি। টিম ডিসিপ্লিনের ব্যাপারও ছিল, এই কারণেই তাকে খেলানো হয়নিৃ১ তারিখে অনুশীলনে না আসার জন্য। এটা পুরোপুরি ডিসিপ্লিনারি ইস্যু। এছাড়া সাব্বির ভালো ক্রিকেটার। আশা করি, কালকের ম্যাচ থেকে ওকে খেলাতে পারব এবং আশা করি সেরাটা দিয়ে খেলবে।” খালেদ মাহমুদ বললেন, মিডল অর্ডারে সাব্বিরের অভাব তিনি অনুভব করছিলেন। তার পরও শৃঙ্খলাভঙ্গের ঘটনার সঙ্গে আপোস করেননি।
“অভিজ্ঞ ক্রিকেটার সে, একজন অভিজ্ঞ ক্রিকেটারর অভাব আছে আমাদের মিডল অর্ডারে। সাব্বিরের অন্তর্ভুক্তি আমাদের জন্য খুব ভালো হবে। এটা খুব সহজ পাবলিকলি বললাম, কারণ একটা দূরত্ব থেকে যেত, এজন্য বলে দিলাম। ওর ভক্তরাও বুঝতে পারবে যে ও কেন খেলেনি।
এই একটা কারণই ছিল। আশা করি ওকে কালকের ম্যাচ থেকে খেলাতে পারব ও ওর সার্ভিসটা পাব।” পরে খালেদ মাহমুদের কাছে সাব্বির বলেছেন, নিজের ভুল তিনি বুঝতে পেরেছেন এবং পুনরাবৃত্তি করবেন না। সিনিয়র একজন ক্রিকেটার হিসেবে ৩৩ বছর বয়সী এই ব্যাটসম্যানের কাছ থেকে আরও দায়িত্বশীলতা আশা করছেন ঢাকার কোচ। “এটা আমি ওকে বলেছি যে, না-ই আসতে পারে অনুশীলনে। অনেক ক্রিকেটারই ম্যাচের আগের দিন অনুশীলন করে না। কিন্তু আমি চাই, আমার প্রত্যেকটি ক্রিকেটার ম্যাচের আগের দিন ট্রেনিং করকি বা না করুক, ড্রেসিং রুমে যেন থাকে। সাব্বিরকে এটিই বুঝিয়েছি। ১ তারিখের অনুশীলনে সে আসবে না, এটা আমরা কেউ জানতাম না যে কেন সে আসেনি। ডিসিপ্লিনারি ইস্যু এজন্যই বললাম, যদি বলে নিত, তাহলে সেটা ডিসিপ্লিনারি ইস্যু নয়।
কিন্তু আমি বা ম্যানেজার ব কেউই জানত না। মাঠে গিয়ে যখন তাকে খুঁজি, জানি না যে সে কেন নেই, তাহলে তো সত্যিই শকিং ব্যাপার।” “আমি ওর সঙ্গে কথা বলেছি। সে অনুধাবন করতে পেরেছে। সে বলেছে যে, “সুজন ভাই ভুল হয়েছে, আপনি রাগ করবেন না’। আমার বিশ্বাস, ঢাকা ক্যাপিটালসের বাকি পুরো পথচলায় সিনিয়র ক্রিকেটার হিসেবে সে আমাকে সাপোর্ট করবে এবং সিনিয়র ক্রিকেটারের মতো আচরণ করবে। যেন ওর কাছ থেকে আমর ভালো সার্ভিস পাই। আমি মনে করি, এই ব্যাপারগুলো সে মেনে নেবে এবং কালকে নতুনভাবে নিজের সেরাটা দেবে দলের জন্য।” এটিই প্রথম নয়। ক্যারিয়ারজুড়ে অনেকবারই মাঠের ভেতরে-বাইরে শৃঙ্খলাভঙ্গের নানা ঘটনায় তার নাম এসেছে নানা সময়। ঘরোয়া ক্রিকেটের ম্যাচে এক কিশোর দর্শককে পেটানোয় ২০২০ সালের জানুয়ারিতে ৬ মাসের জন্য ঘরোয়া ক্রিকেটে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল তাকে।
সঙ্গে ২০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছিল এবং বোর্ডের কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল। ২০১৮ সালে ফেইসবুকে এক ব্যক্তিকে গালাগাল ও মারধরের হুমকি দিয়ে ঘরোয়া ক্রিকেটে বিসিবির ছয় মাসের নিষেধাজ্ঞা ভোগ করেন। এর আগে ২০১৬ সালে বিপিএলে বড় অঙ্কের আর্থিক জরিমানা করা হয়েছিল তাকে। বিসিবি তখন অপরাধ সুনির্দিষ্ট করে না জানালেও বলেছিল, “গুরুতর শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে শাস্তি।” ওই বছরেরই জুনে আফগানিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজের সময় দেরাদুনে ড্রেসিং রুমে বিতÐার এক পর্যায়ে সতীর্থ মেহেদী হাসান মিরাজের গায়ে সাব্বির হাত তুলেছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছিল। এছাড়াও নানা সময়ে তার বিরুদ্ধে ছোটখাটো অভিযোগ উঠেছে। প্রতিভাবান ক্রিকেটার হলেও সম্ভাবনাকে পূর্ণতা দিতে না পারার পেছনে এসবকেও বড় কারণ মনে করেন অনেকে।