ঢাকা ০৪:০৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫

ঝিনাইদহের ঐতিহ্য খেজুর গুড়ের সুনাম এখনো অটুট

  • আপডেট সময় : ০৮:৪০:৫৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ৫ জানুয়ারী ২০২৫
  • ৫১ বার পড়া হয়েছে

সুলতান আল এনাম, ঝিনাইদহ: ঐতিহ্যের কথা ভুলে ঝিনাইদহে ব্যাঙের ছাতার মতো শত শত কারখানায় অপরিশোধিত চিনি-গুড়ে তৈরি হচ্ছে স্বাস্থ্যহানিকর খেজুরগুড়। এই খেজুর গুড়ে নেই খেজুরের রস। এ গুড়ের উপাদান ঝোলা গুড়, অপরিশোধিত ভারতীয় চিনি-গুড়, রঙ, আটা, রাসায়নিক ও ভেষজ নির্যাস। এ কারণে প্রতি বছর খেজুর গাছের সংখ্যা কমলেও বাড়ছে গুড় উৎপাদন। জেলা সদরসহ ৬টি উপজেলার আনাচে-কানাচে গড়ে উঠেছে এসব ভেজাল গুড় তৈরির কারখানা। এসব ভেজাল গুড়ে ঝিনাইদহের ঐতিহ্যের সুনাম নষ্ট হচ্ছে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি।

জানা গেছে, জেলার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ৮০ শতাংশ খেজুর গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। কৃষি বিভাগের খেজুর গাছ রক্ষায় কোনো ভ‚মিকা না থাকায় খেজুর গাছের ক্ষেত উজাড় করা হয়েছে। একই জমিতে একাধিক ফসল উৎপাদনের জন্য খেজুরের ক্ষেত নষ্ট করে অন্য আবাদের দিকে ঝুঁকছেন চাষিরা। দু’বছর ধরে জেলার কৃষি বিভাগ খেজুর গাছ ও ঐতিহ্যবাহী গুড়ের দিকে নজর দিয়েছে। কৃষকদের খেজুর গাছের চারা রোপণে উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি প্রশিক্ষণও দেয়া হচ্ছে।
প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ঝিনাইদহ শহরতলীর নগরবাথান বাজারে রাসেল গেøাবাল লিমিটেড বাণিজ্যিকভাবে খেজুরের গুড় তৈরি করার উদ্যোগ নিয়েছে। ইতোমধ্যে তারা অফলাইন ও অনলাইনে গুড় এবং গুড়জাত পণ্য বিক্রি করা শুরু করেছেন। তাদের লক্ষ্য দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পাশাপাশি বিদেশেও গুড় ও গুড়জাত পণ্য রপ্তানি করা। রাসেল গেøাবাল লিমিটেডের মাধ্যমে প্রশিক্ষিত হয়ে এলাকার প্রায় আড়াইশত চাষি নিরাপদ ও নির্ভেজাল গুড় তৈরি করছে। তাদের নিজস্ব কারখানায় ১৬ শ্রমিকের মাধ্যমে প্রতিদিন ১০০ থেকে ১৫০ কেজি গুড় তৈরি করা হচ্ছে। তাদের উৎপাদিত গুড়ের ৮০ ভাগ কারখানা থেকেই বিক্রি হয়ে যায়। শীত বাড়লে তাদের উৎপাদন আরও বাড়বে বলে জানান উদ্যোক্তা রাসেল আহমেদ।
রাসেল আহমেদ জানান, বিদেশে রপ্তানির লক্ষ্য থাকায় গুড় তৈরিতে শতভাগ মান রক্ষার চেষ্টা করছেন। রসের হাড়ি বা ভাড় ধোয়া থেকে শুরু করে রস জ্বালিয়ে গুড় উৎপাদন পর্যন্ত সব কিছুতেই মান নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
রাসেল আহমেদ ২০২১ সালে নিরাপদ কৃষি পণ্য উৎপাদন ও বিদেশে রপ্তানির লক্ষ্যে রাসেল গেøাবাল লিমিটেডের কার্যক্রম শুরু করেন। বিভিন্ন ফল-ফলাদির সাথে কাজ শুরু করা হয় খেজুরের খাঁটি গুড় প্রস্তুত ও বাজারজাতকরণ। তার এই উদ্যোগের সাথে যোগ হয়েছেন আরও ৬ তরুণ। এখন প্রতিদিন ৮০০ থেকে এক হাজার লিটার রস জ্বালিয়ে গুড় তৈরি করা হয়। প্রতি ৬ লিটার রস থেকে এক কেজি গুড় তৈরি হয় বলে জানান রাসেল। তিনি বলেন, প্রতিদিন সকালে আমাদের নিজেদের গাড়ি দিয়ে রস সংগ্রহ করা হয়। কারখানায় প্রতিদিন ৬ নারীসহ ১৬ শ্রমিক গুড় প্রস্তুত করতে কাজ করেন। এসব তৈরি গুড়ে কোনো কেমিকেল ব্যবহার করা হয় না। রস সংগ্রহের জন্য ভালোভাবে হাঁড়ি ধুয়ে আগুনে পোড়ানো হয়। গাছ কেটে নেট দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয় যাতে পাখি বা বাদুড় বসতে না পারে। একটি গাছ একদিন কাটার ৪-৫ দিন পরে আবার কাটার উপযোগী হয়। প্রতি কেজি গুড় উৎপাদনে প্রায় সাড়ে ৩০০ টাকা খরচ হয়। প্রতি কেজি ঝোল ও দানাগুড় ৪০০ টাকা ও পাটালি এবং ক্রিম পাটালি ৫০০ টাকা করে বিক্রি করা হয়। অনলাইনে নিলে ৬০০ ও ৭০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হয়। বিদেশে রপ্তানি করার জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করছি।
জেলা কৃষি বিভাগ খেজুর গাছ সংরক্ষণ ও নিরাপদ গুড় উৎপাদনে কৃষকদের পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ প্রদান করছে। গত ২৭ ডিসেম্বর ঝিনাইদহ সদর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে সুগার ক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে ১০০ গাছিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
ঝিনাইদহ জেলা কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ষষ্টি চন্দ্র রায় বলেন, ঝিনাইদহে বর্তমানে ১ লাখ ৪০ হাজারের মতো খেজুর গাছ রয়েছে। খেজুর গাছের চারা রোপণকারী ও নিরাপদ গুড় উৎপাদনকারীদের পুরস্কারের মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের স¤প্রসারণ অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব জাকির হোসেন বলেন, খেজুরের গুড় ও রসের জন্য ঝিনাইদহ জেলার সুনাম সারা দেশে।

 

 

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

ঝিনাইদহের ঐতিহ্য খেজুর গুড়ের সুনাম এখনো অটুট

আপডেট সময় : ০৮:৪০:৫৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ৫ জানুয়ারী ২০২৫

সুলতান আল এনাম, ঝিনাইদহ: ঐতিহ্যের কথা ভুলে ঝিনাইদহে ব্যাঙের ছাতার মতো শত শত কারখানায় অপরিশোধিত চিনি-গুড়ে তৈরি হচ্ছে স্বাস্থ্যহানিকর খেজুরগুড়। এই খেজুর গুড়ে নেই খেজুরের রস। এ গুড়ের উপাদান ঝোলা গুড়, অপরিশোধিত ভারতীয় চিনি-গুড়, রঙ, আটা, রাসায়নিক ও ভেষজ নির্যাস। এ কারণে প্রতি বছর খেজুর গাছের সংখ্যা কমলেও বাড়ছে গুড় উৎপাদন। জেলা সদরসহ ৬টি উপজেলার আনাচে-কানাচে গড়ে উঠেছে এসব ভেজাল গুড় তৈরির কারখানা। এসব ভেজাল গুড়ে ঝিনাইদহের ঐতিহ্যের সুনাম নষ্ট হচ্ছে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি।

জানা গেছে, জেলার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ৮০ শতাংশ খেজুর গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। কৃষি বিভাগের খেজুর গাছ রক্ষায় কোনো ভ‚মিকা না থাকায় খেজুর গাছের ক্ষেত উজাড় করা হয়েছে। একই জমিতে একাধিক ফসল উৎপাদনের জন্য খেজুরের ক্ষেত নষ্ট করে অন্য আবাদের দিকে ঝুঁকছেন চাষিরা। দু’বছর ধরে জেলার কৃষি বিভাগ খেজুর গাছ ও ঐতিহ্যবাহী গুড়ের দিকে নজর দিয়েছে। কৃষকদের খেজুর গাছের চারা রোপণে উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি প্রশিক্ষণও দেয়া হচ্ছে।
প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ঝিনাইদহ শহরতলীর নগরবাথান বাজারে রাসেল গেøাবাল লিমিটেড বাণিজ্যিকভাবে খেজুরের গুড় তৈরি করার উদ্যোগ নিয়েছে। ইতোমধ্যে তারা অফলাইন ও অনলাইনে গুড় এবং গুড়জাত পণ্য বিক্রি করা শুরু করেছেন। তাদের লক্ষ্য দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পাশাপাশি বিদেশেও গুড় ও গুড়জাত পণ্য রপ্তানি করা। রাসেল গেøাবাল লিমিটেডের মাধ্যমে প্রশিক্ষিত হয়ে এলাকার প্রায় আড়াইশত চাষি নিরাপদ ও নির্ভেজাল গুড় তৈরি করছে। তাদের নিজস্ব কারখানায় ১৬ শ্রমিকের মাধ্যমে প্রতিদিন ১০০ থেকে ১৫০ কেজি গুড় তৈরি করা হচ্ছে। তাদের উৎপাদিত গুড়ের ৮০ ভাগ কারখানা থেকেই বিক্রি হয়ে যায়। শীত বাড়লে তাদের উৎপাদন আরও বাড়বে বলে জানান উদ্যোক্তা রাসেল আহমেদ।
রাসেল আহমেদ জানান, বিদেশে রপ্তানির লক্ষ্য থাকায় গুড় তৈরিতে শতভাগ মান রক্ষার চেষ্টা করছেন। রসের হাড়ি বা ভাড় ধোয়া থেকে শুরু করে রস জ্বালিয়ে গুড় উৎপাদন পর্যন্ত সব কিছুতেই মান নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
রাসেল আহমেদ ২০২১ সালে নিরাপদ কৃষি পণ্য উৎপাদন ও বিদেশে রপ্তানির লক্ষ্যে রাসেল গেøাবাল লিমিটেডের কার্যক্রম শুরু করেন। বিভিন্ন ফল-ফলাদির সাথে কাজ শুরু করা হয় খেজুরের খাঁটি গুড় প্রস্তুত ও বাজারজাতকরণ। তার এই উদ্যোগের সাথে যোগ হয়েছেন আরও ৬ তরুণ। এখন প্রতিদিন ৮০০ থেকে এক হাজার লিটার রস জ্বালিয়ে গুড় তৈরি করা হয়। প্রতি ৬ লিটার রস থেকে এক কেজি গুড় তৈরি হয় বলে জানান রাসেল। তিনি বলেন, প্রতিদিন সকালে আমাদের নিজেদের গাড়ি দিয়ে রস সংগ্রহ করা হয়। কারখানায় প্রতিদিন ৬ নারীসহ ১৬ শ্রমিক গুড় প্রস্তুত করতে কাজ করেন। এসব তৈরি গুড়ে কোনো কেমিকেল ব্যবহার করা হয় না। রস সংগ্রহের জন্য ভালোভাবে হাঁড়ি ধুয়ে আগুনে পোড়ানো হয়। গাছ কেটে নেট দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয় যাতে পাখি বা বাদুড় বসতে না পারে। একটি গাছ একদিন কাটার ৪-৫ দিন পরে আবার কাটার উপযোগী হয়। প্রতি কেজি গুড় উৎপাদনে প্রায় সাড়ে ৩০০ টাকা খরচ হয়। প্রতি কেজি ঝোল ও দানাগুড় ৪০০ টাকা ও পাটালি এবং ক্রিম পাটালি ৫০০ টাকা করে বিক্রি করা হয়। অনলাইনে নিলে ৬০০ ও ৭০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হয়। বিদেশে রপ্তানি করার জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করছি।
জেলা কৃষি বিভাগ খেজুর গাছ সংরক্ষণ ও নিরাপদ গুড় উৎপাদনে কৃষকদের পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ প্রদান করছে। গত ২৭ ডিসেম্বর ঝিনাইদহ সদর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে সুগার ক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে ১০০ গাছিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
ঝিনাইদহ জেলা কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ষষ্টি চন্দ্র রায় বলেন, ঝিনাইদহে বর্তমানে ১ লাখ ৪০ হাজারের মতো খেজুর গাছ রয়েছে। খেজুর গাছের চারা রোপণকারী ও নিরাপদ গুড় উৎপাদনকারীদের পুরস্কারের মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের স¤প্রসারণ অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব জাকির হোসেন বলেন, খেজুরের গুড় ও রসের জন্য ঝিনাইদহ জেলার সুনাম সারা দেশে।