নিজস্ব প্রতিবেদক: সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে প্রতিবারের মতো এবারও রাজধানীজুড়ে আতশবাজি আর ফানুসে রঙিন করা হয় থার্টি ফার্স্ট নাইটে ঢাকার আকাশ।
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) অনুরোধ কানে তোলেনি ঢাকাবাসী; বর্ষবরণের রাতে ঢাকার মেট্রোরেলের লাইনে এসে পড়েছে নয়টি ফানুস, যা দুর্ঘটনার কারণ হতে পারত। এই আনন্দ উদযাপনে পটকা ও আতশবাজি পোড়ানোর সময় ঢাকায় দগ্ধ হয়েছে পাঁচ জন; তাদের মধ্যে তিনজন শিশু।
মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) রাতে মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ ছিল। বুধবার (০১ জানুয়ারি) মেট্রোরেল চলাচল শুরুর আগেই এসব ফানুস লাইন থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়। তাই সকাল থেকে চলাচলে কোনো সমস্যা হয়নি বলে জানিয়েছে ডিএমটিসিএল।
কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবদুর রউফ বুধবার সকালে সংবাদমাধ্যম বলেন, ফানুস এসে যে পড়তে পারে, সেজন্য আমরা আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলাম। আমাদের চারটি টিম এমআরটি লাইন এলাকায় ভোর থেকে কাজ করেছে। লাইনে নয়টি ফানুস পাওয়া গেছে। এগুলো তারা সরিয়ে দিয়েছে। ফলে সকাল থেকে ট্রেন চলাচলে কোনো সমস্যা হয়নি।
এর আগে সোমবার মেট্রোরেল লাইন ও আশপাশের এলাকায় ফানুস না ওড়ানোর অনুরোধ জানিয়েছিল ডিএমটিসিএল।
কোম্পানির উপ-মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) নাজমুল ইসলাম ভূইয়া সেদিন এক বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, উত্তরা উত্তর থেকে মতিঝিল পর্যন্ত উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বৈদ্যুতিক লাইন ব্যবহার করে মেট্রো ট্রেন চলাচল করে।
থার্টি ফার্স্ট নাইট উপলক্ষে ফানুস বা অনুরূপ কোনো বস্তু ওড়ানো হলে সেগুলো বৈদ্যুতিক লাইনে জড়িয়ে যেকোনো মুহূর্তে মারাত্মক দুর্ঘটনা, প্রাণ ও সম্পদহানির আশঙ্কা রয়েছে।
নির্দেশনা না মেনে ফানুস ওড়ানোর ফলে দুর্ঘটনা হলে জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও সেখানে সতর্ক করা হয়।
গত বছরও বর্ষবরণের রাতে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে ওড়ানো ফানুস গিয়ে পড়ে মেট্রোরেলের তারের ওপর। এতে বিপত্তিতে পড়ে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ। তারা সেসময় ৩৮টি ফানুস অপসারণ করে মেট্রোরেলের তার থেকে।
পটকা ও আতশবাজির আগুনে দগ্ধ পাঁচ জন: বর্ষবরণের আনন্দ উদযাপনে পটকা ও আতশবাজি পোড়ানোর সময় দগ্ধ হয়েছে পাঁচ জন; তাদের মধ্যে তিনজন শিশু।
মঙ্গলবার মধ্যরাতের পর বিভিন্ন সময়ে তারা ঢাকার জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসা নিতে যায়। একটি শিশুর অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের জরুরি বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক ডা. শাওন বিন রহমান বুধবার সকালে বলেন, আগুনে ফারহান নামে ৮ বছর বয়সী একটি শিশুর শরীরের ১৫ শতাংশ পুড়ে গেছে।
এছাড়া শিফান মল্লিকের (১২) শরীরের ১ শতাংশ, সম্রাটের (২০) শরীরের ১ শতাংশ, শান্তর (৪৩) শরীরের ২ শতাংশ এবং তাফসির (৩) নামে এক শিশুর শরীরের ২ শতাংশ পুড়ে গেছে।
ডা. শাওন বলেন, দগ্ধরা ঢাকার বিভিন্ন জায়গা থেকে হাসপাতালে আসেন। থার্টি ফার্স্ট নাইটে আতশবাজি ও পটকা পোড়ানোর সময় তারা আগুনে দগ্ধ হয়েছে। তাদের একজন শরীরের ১৫ শতাংশ বার্ন নিয়ে এসেছে। বয়স্ক হলে তেমন আশঙ্কা ছিল না, শিশু তাই তার অবস্থা কিছুটা আশঙ্কাজনক। বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
বছরের শেষ রাতে উদযাপনের এমন বিপত্তি এখন নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পটকা-আতশবাজির বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশ কয়েকদিন আগেই নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। পরিবেশ মন্ত্রণালয় থেকেও বারবার অনুরোধ করা হয়েছে, পটকা ফাটিয়ে যেন শব্দ ও বায়ুদূষণ করা না হয়।
তবে ঢাকাবাসী তা কানে তোলেনি। মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর থেকেই পাড়া মহল্লার চারপাশে শুরু হয়ে যায় হৈ চৈ, থেমে থেমে ভেসে আসতে থাকে পটকার শব্দ। ঘড়ির কাঁটা ১২টা ছুঁলে তা চরমে ওঠে। রাতের আকাশ আলোকিত হয়ে ওঠে আতশবাজির রঙিন আলোয়।
গত কয়েক বছরে এরকম উদযাপনের রাতে জ্বলন্ত ফানুস থেকে অগ্নিকাণ্ডও ঘটেছে অনেক জায়গায়।
২০২২ সালে পটকা ও আতশবাজির বিকট শব্দে অসুস্থ হয়ে পড়ে তানজীম উমায়ের নামের ৪ মাস বয়সী এক শিশু। পরে হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।
শুধু শব্দদূষণেই ৯৯৯ এ হাজারের বেশি ফোন: নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বিকট শব্দে আতশবাজি-পটকা ফাটিয়ে উদযাপিত হয়েছে নতুন বছর ২০২৫। রাত ১২টা বাজার সঙ্গে সঙ্গে আতশবাজি ও ফানুস উড়িয়ে ২০২৫ সালকে স্বাগত জানায় দেশবাসী।
থার্টি ফার্স্ট নাইটে উচ্চশব্দে গান-বাজনা, হৈ-হুল্লোড় ও আতশবাজির উচ্চশব্দে সারাদেশে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে শব্দদূষণের প্রতিকার চেয়ে ফোন আসে সহস্রাধীকের বেশি।
বুধবার (১ জানুয়ারি) দুপুরে ৯৯৯ এর পুলিশ পরিদর্শক (গণমাধ্যম ও জনসংযোগ) আনোয়ার সাত্তার জাগো নিউজকে এসব তথ্য জানান।
তিনি জানান, ৩১ ডিসেম্বর খিষ্টীয় বর্ষবরণের প্রাক্কালে উচ্চশব্দে গান-বাজনা, হৈ-হুল্লোড় ও আতশবাজি ইত্যাদি শব্দদূষণ প্রতিকারে ৯৯৯ নম্বরে মোট ১ হাজার ১৮৫টি কল করেন ভুক্তভোগীরা।
এর মধ্যে ঢাকা মহানগর থেকে ৩৮৭টি কল এবং দেশের অন্যান্য স্থান থেকে ৭৯৮টি কল গৃহীত হয়। এসব ক্ষেত্রে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এর পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট থানা-পুলিশকে বিষয়টি জানিয়ে প্রতিকারের চেষ্টা করা হয়।
অপরদিকে, রাজধানীর ধানমন্ডির ল্যাবএইড হাসপাতালের পাশে স্বপ্ন শপিং-মলের সামনে ফানুস থেকে আগুন ধরে যায়।
তবে ৯৯৯ থেকে সংবাদ পেয়ে মোহাম্মদপুর ফায়ার স্টেশন থেকে একটি অগ্নি-নির্বাপক দল রওনা দিলেও তারা পৌঁছার আগেই স্থানীয়রা আগুন নিভিয়ে ফেলে। এ ঘটনায় কোনো ক্ষয়ক্ষতির সংবাদ পাওয়া যায়নি বলেও জানান ৯৯৯ এর পরিদর্শক আনোয়ার সাত্তার।