ঢাকা ০৯:৪৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

হুন্ডির প্রভাবে কমছে রেমিট্যান্স

  • আপডেট সময় : ১১:৩০:১৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২১
  • ৫৪ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : করোনা মহামারির মধ্যে গত দেড় বছর ধরে রেমিট্যান্স প্রবাহ ভালোই ছিল। সংকটের সময়েও প্রবাসীরা রেকর্ড পরিমাণ অর্থ পাঠিয়েছেন। কিন্তু হঠাৎ ছন্দপতন ঘটেছে। পরপর দুই মাস কমছে রেমিট্যান্স প্রবাহ। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত অর্থবছরের পুরোটা সময়জুড়েই আগের বছরের চেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে। কিন্তু চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে হঠাৎ করে রেমিট্যান্স কমে গেছে। এই ধারাবাহিকতা আগস্টেও দেখা গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, জুলাই ও আগস্ট- এই দুই মাসে প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন ৩৬৮ কোটি ১৬ লাখ ডলার। আগের বছরের একই সময়ে পাঠিয়েছিলেন ৪৫৬ কোটি ২১ লাখ ডলার। তুলনা করলে চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে রেমিট্যান্স কমেছে ১৯ দশমিক ৩০ শতাংশ। তথ্যমতে, চলতি জুলাইয়ে দেশে ১৮৭ কোটি ১৪ লাখ ৯০ হাজার মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। যা জুনের চেয়ে ৬ কোটি ৯৩ লাখ ডলার কম এবং আগের বছরের (২০২০ সালের জুলাই) একই সময়ের তুলনায় ২৭ দশমিক ৯৭ শতাংশ কম। গত বছর জুলাইয়ে এসেছিল ২৫৯ কোটি ৮২ লাখ ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব বলছে, সদ্যবিদায়ী আগস্টে এসেছে ১৮১ কোটি ডলার। যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৫ কোটি ডলার কম। ২০২০ সালের আগস্টে এসেছিল ১৯৬ কোটি মার্কিন ডলার। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষক ড. জায়েদ বখত বলেন, ‘লকডাউন চলাকালে উড়োজাহাজ চলাচল বন্ধ ছিল। তখন হুন্ডিও বন্ধ হয়ে যায়। প্রবাসীরা বাধ্য হয়ে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। কিন্তু গত কয়েকমাস ধরে উড়োজাহাজ চলতে শুরু হওয়ায় আবার হুন্ডি বেড়েছে। তবে করোনার তৃতীয় ঢেউয়ে অনেক দেশে এখনও লকডাউন চলছে। এতেও প্রবাসীদের আয় কমেছে।’ এর আগে এক সংলাপে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য্য বলেছিলেন- ‘ রেমিট্যান্সের যে জাদু সেটি সম্ভবত শেষ হতে চলেছে। কারণ মানুষ বিদেশে গেছে কম, এসেছে বেশি। সরকারি প্রণোদনার কারণে হুন্ডি ছেড়ে মানুষ ব্যাংকিং খাতে টাকা পাঠিয়েছিল। এ অবস্থায় জাদু শেষ হয়ে যাচ্ছে কিনা সেটিই বোঝার বিষয়।’ পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর মনে করেন, ‘হুন্ডি বেড়ে যাওয়াতেই ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স কমেছে। আবার করোনার কারণে দেশে ফেরা প্রবাসীদের অনেকেই বিদেশে যাননি। এভাবে রেমিট্যান্স কমতে থাকলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে হোঁচট খাওয়ার আশঙ্কা আছে।’
অর্থনীতিবিদদের অনেকে বলছেন, গত দেড় বছরে অস্বাভাবিক রেমিট্যান্স বৃদ্ধির কারণ ছিল সরকারের ২ শতাংশ প্রণোদনা। এ ছাড়া করোনার কারণে অনেকে চাকরি হারিয়ে যাবতীয় সঞ্চয় নিয়ে দেশে ফিরে এসেছিলেন বলেও রেমিট্যান্স বেড়েছিল। এদিকে ২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৪৮ বিলিয়ন ডলারে। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের তথ্যানুযায়ী, ২০২০ সালের মার্চ থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৪ লাখ ৮ হাজার ৪০৮ কর্মী দেশে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছেন। সৌদি আরব থেকেই ফিরেছেন ১ লাখ ১৯ হাজার জন। এ ছাড়া সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ১ লাখ ১৩ হাজার, কাতার থেকে ৪৯ হাজার, ওমান থেকে ২৪ হাজার ৪৫৭, মালয়েশিয়া থেকে ১৭ হাজার ১০৬, মালদ্বীপ থেকে ১৬ হাজার, কুয়েত থেকে ১৫ হাজার ২২৭, ইরাক থেকে ১০ হাজার, লেবানন থেকে আট হাজার ৭৬২, সিঙ্গাপুর থেকে আট হাজার ৪২৪ ও বাহরাইন থেকে সাড়ে চার হাজার কর্মী ফিরে এসেছেন।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

দেশ নিয়ে নতুন ষড়যন্ত্র করছেন শেখ হাসিনা: ফখরুল

হুন্ডির প্রভাবে কমছে রেমিট্যান্স

আপডেট সময় : ১১:৩০:১৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক : করোনা মহামারির মধ্যে গত দেড় বছর ধরে রেমিট্যান্স প্রবাহ ভালোই ছিল। সংকটের সময়েও প্রবাসীরা রেকর্ড পরিমাণ অর্থ পাঠিয়েছেন। কিন্তু হঠাৎ ছন্দপতন ঘটেছে। পরপর দুই মাস কমছে রেমিট্যান্স প্রবাহ। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত অর্থবছরের পুরোটা সময়জুড়েই আগের বছরের চেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে। কিন্তু চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে হঠাৎ করে রেমিট্যান্স কমে গেছে। এই ধারাবাহিকতা আগস্টেও দেখা গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, জুলাই ও আগস্ট- এই দুই মাসে প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন ৩৬৮ কোটি ১৬ লাখ ডলার। আগের বছরের একই সময়ে পাঠিয়েছিলেন ৪৫৬ কোটি ২১ লাখ ডলার। তুলনা করলে চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে রেমিট্যান্স কমেছে ১৯ দশমিক ৩০ শতাংশ। তথ্যমতে, চলতি জুলাইয়ে দেশে ১৮৭ কোটি ১৪ লাখ ৯০ হাজার মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। যা জুনের চেয়ে ৬ কোটি ৯৩ লাখ ডলার কম এবং আগের বছরের (২০২০ সালের জুলাই) একই সময়ের তুলনায় ২৭ দশমিক ৯৭ শতাংশ কম। গত বছর জুলাইয়ে এসেছিল ২৫৯ কোটি ৮২ লাখ ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব বলছে, সদ্যবিদায়ী আগস্টে এসেছে ১৮১ কোটি ডলার। যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৫ কোটি ডলার কম। ২০২০ সালের আগস্টে এসেছিল ১৯৬ কোটি মার্কিন ডলার। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষক ড. জায়েদ বখত বলেন, ‘লকডাউন চলাকালে উড়োজাহাজ চলাচল বন্ধ ছিল। তখন হুন্ডিও বন্ধ হয়ে যায়। প্রবাসীরা বাধ্য হয়ে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। কিন্তু গত কয়েকমাস ধরে উড়োজাহাজ চলতে শুরু হওয়ায় আবার হুন্ডি বেড়েছে। তবে করোনার তৃতীয় ঢেউয়ে অনেক দেশে এখনও লকডাউন চলছে। এতেও প্রবাসীদের আয় কমেছে।’ এর আগে এক সংলাপে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য্য বলেছিলেন- ‘ রেমিট্যান্সের যে জাদু সেটি সম্ভবত শেষ হতে চলেছে। কারণ মানুষ বিদেশে গেছে কম, এসেছে বেশি। সরকারি প্রণোদনার কারণে হুন্ডি ছেড়ে মানুষ ব্যাংকিং খাতে টাকা পাঠিয়েছিল। এ অবস্থায় জাদু শেষ হয়ে যাচ্ছে কিনা সেটিই বোঝার বিষয়।’ পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর মনে করেন, ‘হুন্ডি বেড়ে যাওয়াতেই ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স কমেছে। আবার করোনার কারণে দেশে ফেরা প্রবাসীদের অনেকেই বিদেশে যাননি। এভাবে রেমিট্যান্স কমতে থাকলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে হোঁচট খাওয়ার আশঙ্কা আছে।’
অর্থনীতিবিদদের অনেকে বলছেন, গত দেড় বছরে অস্বাভাবিক রেমিট্যান্স বৃদ্ধির কারণ ছিল সরকারের ২ শতাংশ প্রণোদনা। এ ছাড়া করোনার কারণে অনেকে চাকরি হারিয়ে যাবতীয় সঞ্চয় নিয়ে দেশে ফিরে এসেছিলেন বলেও রেমিট্যান্স বেড়েছিল। এদিকে ২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৪৮ বিলিয়ন ডলারে। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের তথ্যানুযায়ী, ২০২০ সালের মার্চ থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৪ লাখ ৮ হাজার ৪০৮ কর্মী দেশে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছেন। সৌদি আরব থেকেই ফিরেছেন ১ লাখ ১৯ হাজার জন। এ ছাড়া সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ১ লাখ ১৩ হাজার, কাতার থেকে ৪৯ হাজার, ওমান থেকে ২৪ হাজার ৪৫৭, মালয়েশিয়া থেকে ১৭ হাজার ১০৬, মালদ্বীপ থেকে ১৬ হাজার, কুয়েত থেকে ১৫ হাজার ২২৭, ইরাক থেকে ১০ হাজার, লেবানন থেকে আট হাজার ৭৬২, সিঙ্গাপুর থেকে আট হাজার ৪২৪ ও বাহরাইন থেকে সাড়ে চার হাজার কর্মী ফিরে এসেছেন।