ঢাকা ০৭:৪০ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

পানামা খালের নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধারের হুমকি দিলেন ট্রাম্প

  • আপডেট সময় : ০৬:৫৭:৫৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
  • ২৩ বার পড়া হয়েছে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: পানামা খালের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ ফের নিশ্চিত করার হুমকি দিয়েছেন নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। মধ্য আমেরিকার এই জলপথটি ব্যবহারের জন্য পানামা অতিরিক্ত ভাড়া রাখছে বলে অভিযোগ ট্রাম্পের। রোববার অ্যারিজোনায় সমর্থকদের এক সমাবেশে ট্রাম্প আরও বলেন, খালটিকে তিনি ‘ভুল হাতে’ পড়তে দেবেন না। জলপথটির ওপর চীনের সম্ভাব্য প্রভাবের বিষয়ে সতর্ক করেন তিনি। এই সমাবেশের পর তিনি তার নিজের সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে একটি খালের উপর যুক্তরাষ্ট্রের পতাকা উড়ছে, এমন একটি ছবি পোস্ট করেন। সঙ্গে মন্তব্যে লেখেন, “যুক্তরাষ্ট্রের খালে স্বাগতম!” সমাবেশে ট্রাম্প বলেন, “কেউ কি কখনো পানামা খালের নাম শুনেছেন? পানামা খালে অতিরিক্ত অর্থ রেখে আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করা হচ্ছে যেমন প্রতারণা আমাদের সঙ্গে অন্য সব জায়গায় করা হচ্ছে।

” রয়টার্স লিখেছে, ট্রাম্পের এসব মন্তব্য একটি অত্যন্ত বিরল উদাহরণ যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের একজন নেতা বলছেন তিনি একটি সার্বভৌম দেশকে ভূখণ্ড হস্তান্তর করার জন্য চাপ দিতে পারেন। তার এসব মন্তব্যে ট্রাম্পের অধীনে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতির একটি প্রত্যাশিত পরিবর্তন হবে, এ সম্ভাবনা আরও জোরদার হয়েছে। ইতিহাস বলে, ট্রাম্প মিত্রদের হুমকি দিতে এবং প্রতিপক্ষের সঙ্গে লেনদেন করার সময় আক্রমণাত্মক উক্তি ব্যবহার করতে দ্বিধাবোধ করেননি। খালটির বিষয়ে ট্রাম্প বলেন, “এটি পানামাকে ও পানামার জনগণকে দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু কিছু বিধান ছিল। যদি নৈতিক ও আইনি, উভয় দিক থেকে নীতিগতভাবে এই উদার দানের বিষয়টিকে অনুসরণ করা না হয়, তাহলে পানামা খাল আমাদের ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি করবো আমরা, পুরোপুরি, দ্রুত এবং কোনো প্রশ্ন ছাড়াই,” বলেন তিনি। পানামা খাল একসময় যুক্তরাষ্ট্রের অধীন ছিল কিন্তু দুই দশকেরও বেশি সময় আগে এটি পানামার কাছে হস্তান্তর করা হয়। ট্রাম্পের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় স্থানীয় সময় রোববার বিকালে প্রকাশ করা রেকর্ডকৃত এক বার্তায় পানামার প্রেসিডেন্ট হোসে রাউল মুলিনো বলেন, পানামার স্বাধীনতা আলোচনার অযোগ্য এবং খালের প্রশাসনে চীনের কোনো প্রভাব নেই। পানামা খাল ব্যবহারের জন্য যে ভাড়া নেয় তার পক্ষেও যুক্তি দেন তিনি, বলেন তা ‘আকস্মিকভাবে নির্ধারণ করা হয়নি’। চীন খালটি নিয়ন্ত্রণ বা পরিচালনা করে না, কিন্তু হংকংভিত্তিক সিকে হাচিসন হোল্ডিংসের অধীনস্ত একটি কোম্পানি দীর্ঘদিন ধরে পানামা খালের আটলান্টিক ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় প্রবেশমুখে থাকা দুই বন্দর পরিচালনা করে আসছে।
খালটি মূলত যুক্তরাষ্ট্রই নির্মাণ করেছিল এবং কয়েক দশক ধরে জলপথটির সংলগ্ন অঞ্চল শাসন করেছিল। কিন্তু ১৯৭৭ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও পানামা দু’টি সমঝোতা চুক্তি করে আর তাতে খালটির পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ পানামার হাতে ফিরিয়ে দেওয়ার পথ প্রশস্ত হয়। এরপর যৌথ প্রশাসনের একটি সময়কালের পর যুক্তরাষ্ট্র সরকার ১৯৯৯ সালে খালটির নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরিভাবে পানামার কাছে হস্তান্তর করে। সামাজিক মাধ্যম এক্স এ প্রকাশিত বিবৃতিতে মুলিনো বলেন, “পানামা খালের এবং এর আশপাশের প্রতি বর্গমিটার পানামার অন্তর্গত এবং পানামারই থাকবে।” এই বিবৃতিতের প্রতিক্রিয়ায় করা মন্তব্যে ট্রাম্প লিখেছেন, “আমরা এটি দেখবো!” ট্রাম্প কীভাবে খালটির উপর নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেতে চাইবেন তা পরিষ্কার নয়। তিনি যদি জলপথটির জন্য কোনো কিছু করার সিদ্ধান্ত নেন আন্তর্জাতিক আইন থেকে কোনো সহায়তা পাবেন না তিনি। ট্রাম্পের প্রকাশ্যে ভৌগলিক সীমা বিস্তৃত করার বিবেচনা এটিই প্রথম নয়। সম্প্রতি তিনি কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম অঙ্গরাজ্য বানানোর ভাবনার কথা বারবার প্রকাশ করেছেন। তবে এ বিষয়টি তিনি কতোটা গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করছেন তা পরিষ্কার হয়নি। ক্ষমতার আগের মেয়াদে ট্রাম্প ডেনমার্কের মালিকানাধীন স্বায়ত্তশাসিত দ্বীপ গ্রিনল্যান্ড কেনার বাসনা প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু এ বিষয়ে কোনো আলোচনা শুরু হওয়ার আগেই ডেনমার্কের কর্তৃপক্ষ তার প্রস্তাব প্রকাশ্যে প্রত্যাখ্যান করে। রোববার গ্রিনল্যান্ডের বিষয়ে তার পুরনো মনোভাব আবার প্রকাশ করেছেন ট্রাম্প।

 

 

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

পানামা খালের নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধারের হুমকি দিলেন ট্রাম্প

আপডেট সময় : ০৬:৫৭:৫৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: পানামা খালের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ ফের নিশ্চিত করার হুমকি দিয়েছেন নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। মধ্য আমেরিকার এই জলপথটি ব্যবহারের জন্য পানামা অতিরিক্ত ভাড়া রাখছে বলে অভিযোগ ট্রাম্পের। রোববার অ্যারিজোনায় সমর্থকদের এক সমাবেশে ট্রাম্প আরও বলেন, খালটিকে তিনি ‘ভুল হাতে’ পড়তে দেবেন না। জলপথটির ওপর চীনের সম্ভাব্য প্রভাবের বিষয়ে সতর্ক করেন তিনি। এই সমাবেশের পর তিনি তার নিজের সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে একটি খালের উপর যুক্তরাষ্ট্রের পতাকা উড়ছে, এমন একটি ছবি পোস্ট করেন। সঙ্গে মন্তব্যে লেখেন, “যুক্তরাষ্ট্রের খালে স্বাগতম!” সমাবেশে ট্রাম্প বলেন, “কেউ কি কখনো পানামা খালের নাম শুনেছেন? পানামা খালে অতিরিক্ত অর্থ রেখে আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করা হচ্ছে যেমন প্রতারণা আমাদের সঙ্গে অন্য সব জায়গায় করা হচ্ছে।

” রয়টার্স লিখেছে, ট্রাম্পের এসব মন্তব্য একটি অত্যন্ত বিরল উদাহরণ যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের একজন নেতা বলছেন তিনি একটি সার্বভৌম দেশকে ভূখণ্ড হস্তান্তর করার জন্য চাপ দিতে পারেন। তার এসব মন্তব্যে ট্রাম্পের অধীনে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতির একটি প্রত্যাশিত পরিবর্তন হবে, এ সম্ভাবনা আরও জোরদার হয়েছে। ইতিহাস বলে, ট্রাম্প মিত্রদের হুমকি দিতে এবং প্রতিপক্ষের সঙ্গে লেনদেন করার সময় আক্রমণাত্মক উক্তি ব্যবহার করতে দ্বিধাবোধ করেননি। খালটির বিষয়ে ট্রাম্প বলেন, “এটি পানামাকে ও পানামার জনগণকে দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু কিছু বিধান ছিল। যদি নৈতিক ও আইনি, উভয় দিক থেকে নীতিগতভাবে এই উদার দানের বিষয়টিকে অনুসরণ করা না হয়, তাহলে পানামা খাল আমাদের ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি করবো আমরা, পুরোপুরি, দ্রুত এবং কোনো প্রশ্ন ছাড়াই,” বলেন তিনি। পানামা খাল একসময় যুক্তরাষ্ট্রের অধীন ছিল কিন্তু দুই দশকেরও বেশি সময় আগে এটি পানামার কাছে হস্তান্তর করা হয়। ট্রাম্পের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় স্থানীয় সময় রোববার বিকালে প্রকাশ করা রেকর্ডকৃত এক বার্তায় পানামার প্রেসিডেন্ট হোসে রাউল মুলিনো বলেন, পানামার স্বাধীনতা আলোচনার অযোগ্য এবং খালের প্রশাসনে চীনের কোনো প্রভাব নেই। পানামা খাল ব্যবহারের জন্য যে ভাড়া নেয় তার পক্ষেও যুক্তি দেন তিনি, বলেন তা ‘আকস্মিকভাবে নির্ধারণ করা হয়নি’। চীন খালটি নিয়ন্ত্রণ বা পরিচালনা করে না, কিন্তু হংকংভিত্তিক সিকে হাচিসন হোল্ডিংসের অধীনস্ত একটি কোম্পানি দীর্ঘদিন ধরে পানামা খালের আটলান্টিক ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় প্রবেশমুখে থাকা দুই বন্দর পরিচালনা করে আসছে।
খালটি মূলত যুক্তরাষ্ট্রই নির্মাণ করেছিল এবং কয়েক দশক ধরে জলপথটির সংলগ্ন অঞ্চল শাসন করেছিল। কিন্তু ১৯৭৭ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও পানামা দু’টি সমঝোতা চুক্তি করে আর তাতে খালটির পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ পানামার হাতে ফিরিয়ে দেওয়ার পথ প্রশস্ত হয়। এরপর যৌথ প্রশাসনের একটি সময়কালের পর যুক্তরাষ্ট্র সরকার ১৯৯৯ সালে খালটির নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরিভাবে পানামার কাছে হস্তান্তর করে। সামাজিক মাধ্যম এক্স এ প্রকাশিত বিবৃতিতে মুলিনো বলেন, “পানামা খালের এবং এর আশপাশের প্রতি বর্গমিটার পানামার অন্তর্গত এবং পানামারই থাকবে।” এই বিবৃতিতের প্রতিক্রিয়ায় করা মন্তব্যে ট্রাম্প লিখেছেন, “আমরা এটি দেখবো!” ট্রাম্প কীভাবে খালটির উপর নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেতে চাইবেন তা পরিষ্কার নয়। তিনি যদি জলপথটির জন্য কোনো কিছু করার সিদ্ধান্ত নেন আন্তর্জাতিক আইন থেকে কোনো সহায়তা পাবেন না তিনি। ট্রাম্পের প্রকাশ্যে ভৌগলিক সীমা বিস্তৃত করার বিবেচনা এটিই প্রথম নয়। সম্প্রতি তিনি কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম অঙ্গরাজ্য বানানোর ভাবনার কথা বারবার প্রকাশ করেছেন। তবে এ বিষয়টি তিনি কতোটা গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করছেন তা পরিষ্কার হয়নি। ক্ষমতার আগের মেয়াদে ট্রাম্প ডেনমার্কের মালিকানাধীন স্বায়ত্তশাসিত দ্বীপ গ্রিনল্যান্ড কেনার বাসনা প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু এ বিষয়ে কোনো আলোচনা শুরু হওয়ার আগেই ডেনমার্কের কর্তৃপক্ষ তার প্রস্তাব প্রকাশ্যে প্রত্যাখ্যান করে। রোববার গ্রিনল্যান্ডের বিষয়ে তার পুরনো মনোভাব আবার প্রকাশ করেছেন ট্রাম্প।