নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকার বিমানবন্দর এলাকায় গত বছর একটি আলোচিত ডাকাতির ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে সিআইডির বরখাস্তকৃত এসআই আকসাদুর জামানকে গ্রেপ্তার করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।
গত বুধবার রংপুরের মিঠাপুকুর থানা এলাকার শঠিবাড়ি বাজার এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে জানান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার হাফিজ আকতার। ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত ওই সংবাদ সম্মলনে তিনি বলেন, গত ১৯ অক্টোবর অপহরণের পর ডাকাতির ঘটনায় বিমানবন্দর থানায় একটি মামলা হয়। সেই মামলায় ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের মধ্যে হাসান রাজা, গাড়ি চালক হারুণ অর রশিদ ওরফে সজীব, অটোরিকশা চালক জোনাব আলী এবং কায়ছার মাহমুদ ওরফে জাকির হোসেন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
“সেই জবানবন্দি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সিআইডির এসআই আকসাদুরের নেতৃত্বে এই ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আকসাদুদ জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে।”
গত বছরের ২০ অক্টোবর ঢাকার বিমানবন্দর সড়কে এক প্রবাসীর অর্থ লুট থেকে ঘটনার শুরু। দুবাই প্রবাসী রোমান মিয়া এই লুটের শিকার হয়ে মামলা করেন। সেখানে বলা হয়, তিনি ফুফাতো ভাই মনির হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে একটি অটোরিকশায় করে শাহজালাল বিমানবন্দরে যাচ্ছিলেন। কাওলা ওভারব্রিজের নিচে একটি মাইক্রোবাস তাদের আটকায়। গাড়ি থেকে দুজন নেমে এসে নিজেদের ‘ডিবির লোক’ পরিচয় দিয়ে রোমানকে লাগেজসহ মাইক্রোবাসে তুলে নেয় তারা।
রোমানের অভিযোগ, গাড়ির ভেতরে তার হাতে হাতকড়া পড়িয়ে, চোখে কালো কাপড় বেঁধে মারধর করা হয়। এরপর তার কাছ থেকে ৫ হাজার মার্কিন ডলার, দুই হাজার দিরহাম, দুই হাজার টাকাসহ লাগেজটি ছিনিয়ে নেয়। এরপর তার হাতের হাতকড়া খুলে রশি বেঁধে রামপুরা-স্টাফ কোয়ার্টার সড়কের পাশে ফেলে দিয়ে গাড়িটি চলে যায়।
বিমানবন্দর থানায় করা সেই মামলার তদন্তভার পায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। পরে ছয়জনকে তারা গ্রেপ্তার করে। তাদের মধ্যে হাসান রাজা ছাড়া পাঁচজনই ইতোমধ্যে জামিনে বেরিয়ে গেছেন। ডিবির তদন্ত তদারককারী কর্মকর্তা এডিসি কায়সার কোরায়শি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, প্রথমে মাইক্রোবাসটি শনাক্ত করার পর তারা পুরো চক্রটির বিষয়ে জানতে পারেন। তখনই সিআইডি কর্মকর্তার সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি বেরিয়ে আসে। পরে আসামিরাও জবানবন্দিতে এসআই আকসাদুরের কথা বলেন। তদন্তে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ডিবি পুলিশ সদর দপ্তর ও সিআইডিতে প্রতিবেদন পাঠায়। এরপর আকসাদুরকে বরখাস্ত করা হয়।
সম্প্রতি একটি ফোনালাপের অডিও ছড়িয়ে পড়ার পর এ ঘটনায় সিআইডির সঙ্গে গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তাদের জড়িয়ে পড়ার বিষয়টি সামনে আসে, যা নিয়ে বুধবার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে একটি সংবাদসংস্থা। ওই অডিওতে এক নারী ও এক পুরুষের কথোপকথনে কোটি টাকার বেশি লেনদেনের কথা এসেছে। সিআইডির উপপরিদর্শক আকসাদুর জামানের দাবি, এটা তার স্ত্রীর সঙ্গে মামলার তদন্ত দেখভালকারী ডিবি কর্মকর্তা কায়সার রিজভী কোরায়শির কথোপকথন। তবে এডিসি কোরায়শি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, লুটের মামলা থেকে বাঁচতে এই ‘সাজানো অডিও টেপ তৈরি করেছেন’ সিআইডি কর্মকর্তা আকসাদুর।
গতকাল বৃহস্পতিবার ডিবির সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে হাফিজ আকতার বলেন, “একটি অডিও ফাঁস হয়েছে। সেখানে বড় অংকের টাকা লেনদেনের কথা বলা হয়েছে। মামলার তদন্তের পাশাপাশি সেই টাকা কোথা থেকে এল, আমাদের কোনো কর্মকর্তা জড়িত আছে কিনা- সব বিষয় আমরা খতিয়ে দেখব।”
সিআইডির বরখাস্ত এসআই আকসাদুর ডাকাতির মামলায় গ্রেপ্তার
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ