ঢাকা ০৩:৫৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫

মধ্যরাতে গায়ক তাসরিফের দেখা মিরপুরে ছিনতাইয়ের গল্প

  • আপডেট সময় : ০৬:৪৯:০৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
  • ৫৩ বার পড়া হয়েছে

বিনোদন ডেস্ক: মাঝরাতে ঢাকার রাস্তায় ছিনতাইকারীর মুখোমুখি হয়েছেন কুঁড়েঘর ব্যান্ডের প্রতিষ্ঠাতা ও সংগীতশিল্পী তাসরিফ খান। পুরো ঘটনাই ফেসবুকে এক দীর্ঘ স্ট্যাটাসে তুলে ধরেছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার সকালে ১৮ ডিসেম্বর মধ্যরাতের ঘটনা উল্লেখ করে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে তাসরিফ লেখেন, ১৮ তারিখ দিবাগত রাত ২ টার ঘটনা। মিরপুর ২ নম্বরে একটি প্র্যাক্টিস প্যাড থেকে জ্যামিং শেষ করে আমরা কুঁড়েঘর ব্যান্ডের প্রায় সবাই খাবার হোটেলের দিকে যাচ্ছিলাম। মিরপুর-২ নাম্বার ওভারব্রিজের পাশে পেট্রল পাম্পের ঠিক সামনে খেয়াল করলাম ৫-৬ জন মিলে এক লোকের সঙ্গে ধস্তাধস্তি করছে। লোকটা খালি গায়ে কোনো রকম ছুটে যাওয়ার চেষ্টায় ‘কেউ বাঁচান ভাই’ বলে চিৎকার করছে।
লোকটার চিৎকার শুনে সামনে এগিয়ে যান তাসরিফ। পরের ঘটনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা ব্যান্ডের তিনজন একসাথে ছিলাম। বাকিরা সামনে পেছনে মিলিয়ে। আমি এগিয়ে গিয়ে গলা মোটা করে কী সমস্যা জিজ্ঞেস করে থামতে বলার সাথে সাথে খালি গায়ের লোকটা কোনো রকম ছুটে দৌড় দেয়। আর ওই ৫-৬ জন আমাদের দিকে এগিয়ে আসতে থাকে। কোনো কিছু অনুমান করার আগেই ওরা আমাদের কাছে এসে বিচারের স্বরে বলে, ‘ভাই ওইডা মাদক ব্যবসায়ী’।
তাসরিফের ভাষায়Ñ আমি এই কথায় কয়েক মুহূর্তের জন্য কনফিউজড হয়ে যাই। আসলেই পালানো লোকটা মাদক ব্যবসায়ী, নাকি এদের নিজেদের কোনো ঝামেলা, নাকি এরা ছিনতাই করছিল ভাবতে ভাবতে আরও কয়েক কদম এগিয়ে যাই ওই খালি গায়ে লোকটা যেদিকে দৌড় দিয়েছে সেদিকে। খেয়াল করলাম, খালি গায়ের লোকটা আসলে পালায়নি। থানা একেবারে পাশে থাকায় লোকটি থানার সামনে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে পুলিশকে জানানোর চেষ্টা করছে।
তাসরিফ বলেন, ঘটনা বুঝতে আর বাকি রইলো না। পেছন ফিরে দেখি ওরা ত্বরিত গতিতে গাড়িতে উঠে গাড়ি স্টার্ট দিয়েছে। সামনে যে বসা তার হাতে টিপ চাকু। মাথায় এলো, এরা যখন কাছে এসেছিল তখন তাদের কয়েকজনের এক হাত গায়ের পেছনে লুকানো ছিল। তার মানে, এদের প্রায় সবার কাছেই ধারালো অস্ত্র কিংবা চাকু ছিল। গাড়িটা টান দেওয়ার সাথে সাথে একটা ছবি তুললাম যেন নাম্বার প্লেটটা পড়া যায়। গাড়ির ছবিটা লাইভ মুড হওয়ায় ছবিটা ঝাপসা হয়েছে। কিন্তু নাম্বার বোঝা যায়। ‘ঢাকা মেট্রো-গ ২৫৪৬৩৩’।
পরের ঘটনা তুলে ধরে এই গায়ক বলেন, ‘লোকটা দৌড়ে আমাদের দিকে এগিয়ে এসে কান্নার স্বরে বলল, ভাই আপনেরা আগায় না আইলে আমারে মাইরা ফেলতো ওরা। তৎক্ষণাৎ থানায় গিয়ে ওয়ারলেস অপারেটরকে এই গাড়ির নাম্বার জানালাম এবং ওসি (তদন্ত) যিনি ছিলেন তাকেও গাড়ির নাম্বার দিলাম। ওনারা বললেন, ধরার চেষ্টা করবেন এবং দুইজন এসআইকেও দেখলাম সিভিল ড্রেসে একটু তৎপরতার সাথে বলছিল এদেরকে তারা ধরবে।’
তাসরিফ বলেন, ‘অদ্ভুত ব্যাপার হলো খাবার খাওয়া শেষ করে যখন আমাদের ড্রামার শান্ত রিকশা করে ওর বাসায় ফিরছিল তখন ওই গাড়িকে মিরপুর-১০ আল হেলালের পাশের সিএনজি পাম্পে স্টার্ট করা অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আবার আমাকে কল দিয়ে জানায়। আমি কল দিয়ে থানার এসআইকে জানাই। এসআই ভাইজান আমাকে কিছুক্ষণ পর কল করে জানান ওনারা লোক পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু গাড়িটা হয়তো ততক্ষণে ওই জায়গা ত্যাগ করেছে।’
এই গায়কের ভাষায়Ñ ‘আমার কথা হচ্ছে ঢাকায় বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে সিসিটিভি আছে, পুলিশের কাছে গাড়ির নাম্বার আছে, এমনকি বিভিন্ন জায়গায় চেকপোস্টও রয়েছে। তারপরও আমি জানি না এই গাড়ি এখনো আটক হয়েছে কি না অথবা কেন এখনো এই গাড়িটা কিংবা ওই সন্ত্রাসীদের ধরা গেল না। এদের হাতে যদি আল্লাহ না করুক, কেউ খুন হয় কিংবা আমার আপনার পরিবার বড় বিপদে পড়ে তবে এই দায়ভারটা নেবে কে।’
সবশেষে তাসরিফ লিখেছেন, ‘কী হবে জানি না। তবে নিজের ও নিজের পরিবারকে সাবধান করুন, সতর্ক করুন। রাতে একা চলাচল থেকে বিরত থাকুন। এই সব আজন্ম সাফারিংসগুলো বোধহয় আমরা কপালে করে লিখিয়ে নিয়েই এসেছিলাম; যেগুলা প্রতিনিয়ত আমাদের মেনে নিতে হয় কিংবা সামনেও আরও মেনে নিতে হবে।’

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

মধ্যরাতে গায়ক তাসরিফের দেখা মিরপুরে ছিনতাইয়ের গল্প

আপডেট সময় : ০৬:৪৯:০৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪

বিনোদন ডেস্ক: মাঝরাতে ঢাকার রাস্তায় ছিনতাইকারীর মুখোমুখি হয়েছেন কুঁড়েঘর ব্যান্ডের প্রতিষ্ঠাতা ও সংগীতশিল্পী তাসরিফ খান। পুরো ঘটনাই ফেসবুকে এক দীর্ঘ স্ট্যাটাসে তুলে ধরেছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার সকালে ১৮ ডিসেম্বর মধ্যরাতের ঘটনা উল্লেখ করে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে তাসরিফ লেখেন, ১৮ তারিখ দিবাগত রাত ২ টার ঘটনা। মিরপুর ২ নম্বরে একটি প্র্যাক্টিস প্যাড থেকে জ্যামিং শেষ করে আমরা কুঁড়েঘর ব্যান্ডের প্রায় সবাই খাবার হোটেলের দিকে যাচ্ছিলাম। মিরপুর-২ নাম্বার ওভারব্রিজের পাশে পেট্রল পাম্পের ঠিক সামনে খেয়াল করলাম ৫-৬ জন মিলে এক লোকের সঙ্গে ধস্তাধস্তি করছে। লোকটা খালি গায়ে কোনো রকম ছুটে যাওয়ার চেষ্টায় ‘কেউ বাঁচান ভাই’ বলে চিৎকার করছে।
লোকটার চিৎকার শুনে সামনে এগিয়ে যান তাসরিফ। পরের ঘটনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা ব্যান্ডের তিনজন একসাথে ছিলাম। বাকিরা সামনে পেছনে মিলিয়ে। আমি এগিয়ে গিয়ে গলা মোটা করে কী সমস্যা জিজ্ঞেস করে থামতে বলার সাথে সাথে খালি গায়ের লোকটা কোনো রকম ছুটে দৌড় দেয়। আর ওই ৫-৬ জন আমাদের দিকে এগিয়ে আসতে থাকে। কোনো কিছু অনুমান করার আগেই ওরা আমাদের কাছে এসে বিচারের স্বরে বলে, ‘ভাই ওইডা মাদক ব্যবসায়ী’।
তাসরিফের ভাষায়Ñ আমি এই কথায় কয়েক মুহূর্তের জন্য কনফিউজড হয়ে যাই। আসলেই পালানো লোকটা মাদক ব্যবসায়ী, নাকি এদের নিজেদের কোনো ঝামেলা, নাকি এরা ছিনতাই করছিল ভাবতে ভাবতে আরও কয়েক কদম এগিয়ে যাই ওই খালি গায়ে লোকটা যেদিকে দৌড় দিয়েছে সেদিকে। খেয়াল করলাম, খালি গায়ের লোকটা আসলে পালায়নি। থানা একেবারে পাশে থাকায় লোকটি থানার সামনে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে পুলিশকে জানানোর চেষ্টা করছে।
তাসরিফ বলেন, ঘটনা বুঝতে আর বাকি রইলো না। পেছন ফিরে দেখি ওরা ত্বরিত গতিতে গাড়িতে উঠে গাড়ি স্টার্ট দিয়েছে। সামনে যে বসা তার হাতে টিপ চাকু। মাথায় এলো, এরা যখন কাছে এসেছিল তখন তাদের কয়েকজনের এক হাত গায়ের পেছনে লুকানো ছিল। তার মানে, এদের প্রায় সবার কাছেই ধারালো অস্ত্র কিংবা চাকু ছিল। গাড়িটা টান দেওয়ার সাথে সাথে একটা ছবি তুললাম যেন নাম্বার প্লেটটা পড়া যায়। গাড়ির ছবিটা লাইভ মুড হওয়ায় ছবিটা ঝাপসা হয়েছে। কিন্তু নাম্বার বোঝা যায়। ‘ঢাকা মেট্রো-গ ২৫৪৬৩৩’।
পরের ঘটনা তুলে ধরে এই গায়ক বলেন, ‘লোকটা দৌড়ে আমাদের দিকে এগিয়ে এসে কান্নার স্বরে বলল, ভাই আপনেরা আগায় না আইলে আমারে মাইরা ফেলতো ওরা। তৎক্ষণাৎ থানায় গিয়ে ওয়ারলেস অপারেটরকে এই গাড়ির নাম্বার জানালাম এবং ওসি (তদন্ত) যিনি ছিলেন তাকেও গাড়ির নাম্বার দিলাম। ওনারা বললেন, ধরার চেষ্টা করবেন এবং দুইজন এসআইকেও দেখলাম সিভিল ড্রেসে একটু তৎপরতার সাথে বলছিল এদেরকে তারা ধরবে।’
তাসরিফ বলেন, ‘অদ্ভুত ব্যাপার হলো খাবার খাওয়া শেষ করে যখন আমাদের ড্রামার শান্ত রিকশা করে ওর বাসায় ফিরছিল তখন ওই গাড়িকে মিরপুর-১০ আল হেলালের পাশের সিএনজি পাম্পে স্টার্ট করা অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আবার আমাকে কল দিয়ে জানায়। আমি কল দিয়ে থানার এসআইকে জানাই। এসআই ভাইজান আমাকে কিছুক্ষণ পর কল করে জানান ওনারা লোক পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু গাড়িটা হয়তো ততক্ষণে ওই জায়গা ত্যাগ করেছে।’
এই গায়কের ভাষায়Ñ ‘আমার কথা হচ্ছে ঢাকায় বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে সিসিটিভি আছে, পুলিশের কাছে গাড়ির নাম্বার আছে, এমনকি বিভিন্ন জায়গায় চেকপোস্টও রয়েছে। তারপরও আমি জানি না এই গাড়ি এখনো আটক হয়েছে কি না অথবা কেন এখনো এই গাড়িটা কিংবা ওই সন্ত্রাসীদের ধরা গেল না। এদের হাতে যদি আল্লাহ না করুক, কেউ খুন হয় কিংবা আমার আপনার পরিবার বড় বিপদে পড়ে তবে এই দায়ভারটা নেবে কে।’
সবশেষে তাসরিফ লিখেছেন, ‘কী হবে জানি না। তবে নিজের ও নিজের পরিবারকে সাবধান করুন, সতর্ক করুন। রাতে একা চলাচল থেকে বিরত থাকুন। এই সব আজন্ম সাফারিংসগুলো বোধহয় আমরা কপালে করে লিখিয়ে নিয়েই এসেছিলাম; যেগুলা প্রতিনিয়ত আমাদের মেনে নিতে হয় কিংবা সামনেও আরও মেনে নিতে হবে।’