নিজস্ব প্রতিবেদক: ইজতেমার মাঠ দখলকে কেন্দ্র করে টঙ্গীর তুরাগ তীরে যা ঘটেছে, তারপর আর দিল্লির মাওলানা সাদ কান্ধলভির অনুসারীদের সেখানে ইজতেমা করার সুযোগ না দেওয়ার দাবি তুলেছেন কাকরাইলের মাওলানা জুবায়ের আহমদের অনুসারীদের অন্যতম নেতা মামুনুল হক।
বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর সঙ্গে এক বৈঠকে তার উপস্থিতিতেই এ দাবি তোলেন তিনি।
হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক বলেন, সাদপন্থিদের ইজতেমা হওয়ার আর কোনো অবকাশ এখন নেই।
তুরাগ তীরে বিশ্ব ইজতেমা মাঠ দখলকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) রাত ৩টার দিকে সংঘর্ষে জড়ায় তাবলিগ জামাতের মাওলানা জুবায়ের আহমদ ও দিল্লির মাওলানা সাদ কান্ধলভির অনুসারীরা।
তাতে অন্তত তিনজন নিহত হয়েছেন এবং অনেকে আহত হয়েছেন বলে গাজীপুরের পুলিশ কমিশনার মো. নাজমুল করিম খান জানিয়েছেন।
টঙ্গী পশ্চিম থানার ওসি হাবিব ইস্কান্দার বলেন, মঙ্গলবার ইজতেমা ময়দানে অবস্থান করছিলেন মাওলানা জুবায়ের আহমদের অনুসারিরা। পরে মাওলানা সাদ কান্ধলভির অনুসারিরা তুরাগ নদীর পশ্চিম তীর থেকে কামারপাড়া ব্রিজসহ বিভিন্ন রাস্তা দিয়ে ইজতেমা ময়দানে প্রবেশ করতে থাকেন।
সে সময় মাঠের ভেতর থেকে জুবায়ের অনুসারীরা ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে শুরু করে। জবাবে সাদের অনুসারীরাও পাল্টা হামলা চালায়।
এক পর্যায়ে সাদপন্থিরা মাঠে প্রবেশ করলে উভয় পক্ষের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ শুরু হয়। খবর পেয়ে পুলিশ, সেনাসদস্যসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। দুপুরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তাবলিগের দুই পক্ষের সঙ্গে আলাদাভাবে বৈঠক করেন উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। দুই পক্ষকেই টঙ্গীর ইজতেমা মাঠ খালি করে দিতে বলা হয়।
প্রথম দফায় সাদপন্থিদের সঙ্গে বৈঠকের পর এ অংশের মুরুব্বি রেজা আরিফ বলেন, সরকারি সিদ্ধান্ত আমরা মেনে নিয়েছি, উনারাও (জুবায়েরপন্থিরা) যেন ইসলামের স্বার্থে, দেশের স্বার্থে কোনো রকম সমস্যার চেষ্টা না করেন। উনারা যেন রাস্তায় নেমে না আসেন, উসকানিমূলক বক্তব্য প্রচার না করেন। পরে জুবায়েরপন্থিদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। মামুনুল হক সেখানে দাবি করেন, ইজতেমা মাঠে সাদপন্থিদের হামলায় চারজন নিহত হয়েছেন। তিনি বলেন, এই ধরনের ঘটনার পর ইজতেমা তো পরের কথা তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আমরা আশা করছি। এরপরে আর এই প্রশ্ন আসে না যে তারা ইজতেমা করবে কি না।
আগে টঙ্গীতে এক মঞ্চ থেকে একবারই বিশ্ব ইজতেমা হত। মতভেদের কারণে দুই পক্ষ পরে আলাদাভাবে দুই বারে বিশ্ব ইজতেমা করা শুরু করে।
ঠিক হয়েছিল, আগামী বছর ৩১ জানুয়ারি থেকে ২ ফেব্রুয়ারি প্রথম পর্বের ইজতেমায় অংশ নেবে জুবায়েরপন্থিরা। আর দ্বিতীয় পর্বে ৭ থেকে ৯ ফেব্রুয়ারি অংশ নেবেন সাদপন্থিরা।
কিন্তু এখন সাদপন্থিদের ইজতেমা করার বিষয়ে সরকার সহযোগিতা করলে সরকারকে বোঝানোর চেষ্টা করা হবে মন্তব্য করেন মামুনুল। তিনি বলেন, আমরা আশা করি সরকার এ ধরনের ভুল করবে না।
সাদপন্থিরা ইজতেমা করতে পারবে কিনা- সাংবাদিকরা এ প্রশ্ন করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে। জবাবে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, তাদের ভেতরে আলোচনা হচ্ছে, পন্থিগুলো যাতে এক হয়। সবাই চাইছে। তারা যদি আলোচনা করে সমাধানে আসতে পারে। এ ব্যাপারে সরকারের অবস্থান জানতে চাইলে উপদেষ্টা আবারও দুই পক্ষের আলোচনার কথা বলেন। সঙ্গে এও বলেন, দুই পক্ষের আলাদা ইজতেমার তারিখ পরিবর্তন হয়নি।