ঢাকা ১১:১৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৪ জুন ২০২৫

স্মার্টফোনে আসক্তি কাটাতে সতর্কবার্তা লেখার প্রস্তাব

  • আপডেট সময় : ০৪:২৬:২০ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪
  • ৫৮ বার পড়া হয়েছে

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক: স্মার্টফোন আসক্তি তরুণ ও শিশু-কিশোরদের মধ্যে বেড়েই চলেছে। ফোন আসক্তি বর্তমান জীবনের এক নীরব চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে। এটি আমাদের কাজ, যোগাযোগ এবং বিনোদনের পদ্ধতিকে বদলে দিলেও অতিরিক্ত স্মার্টফোন ব্যবহারের প্রভাব ঘুম, মানসিক স্বাস্থ্য ও ব্যক্তিগত সম্পর্কেও পড়ছে। বিশেষত কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে। এই পরিস্থিতিকে ‘জনস্বাস্থ্যের সংকট’ বলে বর্ণনা করে স্পেন সরকার একটি নতুন প্রস্তাব এনেছে। সেখানে বলা হয়েছে, বাজারে বিক্রি হওয়া প্রতিটি স্মার্টফোনে সিগারেটের প্যাকেটের মতোই স্বাস্থ্য সতর্কতা দেওয়া হবে।
স্পেন সরকারের নিয়োজিত একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি সম্প্রতি একটি ২৫০ পৃষ্ঠার রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। এই রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে যে স্মার্টফোন আসক্তির বিপদ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য ডিভাইসগুলোয় বাধ্যতামূলক স্বাস্থ্য সতর্কতা প্রয়োজন।
প্রস্তাবে বলা হয়েছে, সিগারেটের প্যাকেটের মতোই স্মার্টফোন এবং ডিজিটাল পরিষেবাগুলোয় সতর্কবার্তা থাকবে। যা অতিরিক্ত ব্যবহারের ঝুঁকি এবং ক্ষতিকর কন্টেন্ট সম্পর্কে সতর্ক করবে। এর পাশাপাশি নির্দিষ্ট অ্যাপ বা প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করার সময় স্ক্রিনে সতর্কতামূলক বার্তা দেখানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এটি ব্যবহারকারীদের সচেতনভাবে স্মার্টফোন ব্যবহারে উৎসাহিত করবে।
শিশুদের জন্য কড়া নিয়ম: প্রস্তাবে শিশুদের উপর স্মার্টফোন এবং ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহারের ক্ষেত্রে কড়া বিধি-নিষেধের কথা বলা হয়েছে। ৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা। ৩ থেকে ৬ বছর বয়সীদের ক্ষেত্রে শুধু নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে সীমিত ব্যবহারের অনুমতি। ১২ বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা। ১৬ বছরের কম বয়সীদের জন্য সীমিত কার্যকারিতা সম্পন্ন ‘ডাম্বফোন’ ব্যবহারের পরামর্শ।
শিক্ষা ক্ষত্রে পরিবর্তন: রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, শিক্ষার ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক আনন্দ প্রদানকারী অ্যাপসগুলো শিশুদের শিক্ষার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। এজন্য স্কুলগুলোকে এই ধরনের অ্যাপ অপসারণের এবং ছোট শিশুদের জন্য প্রযুক্তি-নির্ভর শিক্ষার পরিবর্তে ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতির ওপর জোর দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।
মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্ব: মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর স্মার্টফোন আসক্তির প্রভাবকে একটি গুরুত্বপূর্ণ জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে রিপোর্টে। প্রযুক্তি-সম্পর্কিত আসক্তি এবং উদ্বেগ মোকাবিলায় নিয়মমাফিক মেডিকেল চেকআপে অতিরিক্ত ডিজিটাল ব্যবহার স্ক্রিনিং অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ায় সিদ্ধান্তের প্রভাব: স্পেনের এই প্রস্তাবের আগে অস্ট্রেলিয়াও ১৬ বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা এনেছে। এই নতুন আইন অনুযায়ী ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টিকটক এবং স্ন্যাপচ্যাটের মতো প্রধান প্ল্যাটফর্মগুলিতে ১৬ বছরের কম বয়সীদের অ্যাকাউন্ট তৈরি বা অ্যাক্সেস করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কঠোর বয়স যাচাই প্রক্রিয়া নিশ্চিত করার জন্য আইনটি ২০২৫ সালের শুরুর দিকে কার্যকর হবে।
স্পেনের এই প্রস্তাব ডিজিটাল ব্যবহারের সুবিধা এবং এর নেতিবাচক প্রভাবের মধ্যে ভারসাম্য আনতে সাহায্য করবে। প্রযুক্তির অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে মানসিক স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং সামগ্রিক সুস্থতায় যে প্রভাব পড়ছে। তা মোকাবিলায় এই ধরনের পদক্ষেপ বিশ্বব্যাপী একটি নতুন মানদণ্ড স্থাপন করতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ।

 

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

স্মার্টফোনে আসক্তি কাটাতে সতর্কবার্তা লেখার প্রস্তাব

আপডেট সময় : ০৪:২৬:২০ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক: স্মার্টফোন আসক্তি তরুণ ও শিশু-কিশোরদের মধ্যে বেড়েই চলেছে। ফোন আসক্তি বর্তমান জীবনের এক নীরব চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে। এটি আমাদের কাজ, যোগাযোগ এবং বিনোদনের পদ্ধতিকে বদলে দিলেও অতিরিক্ত স্মার্টফোন ব্যবহারের প্রভাব ঘুম, মানসিক স্বাস্থ্য ও ব্যক্তিগত সম্পর্কেও পড়ছে। বিশেষত কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে। এই পরিস্থিতিকে ‘জনস্বাস্থ্যের সংকট’ বলে বর্ণনা করে স্পেন সরকার একটি নতুন প্রস্তাব এনেছে। সেখানে বলা হয়েছে, বাজারে বিক্রি হওয়া প্রতিটি স্মার্টফোনে সিগারেটের প্যাকেটের মতোই স্বাস্থ্য সতর্কতা দেওয়া হবে।
স্পেন সরকারের নিয়োজিত একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি সম্প্রতি একটি ২৫০ পৃষ্ঠার রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। এই রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে যে স্মার্টফোন আসক্তির বিপদ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য ডিভাইসগুলোয় বাধ্যতামূলক স্বাস্থ্য সতর্কতা প্রয়োজন।
প্রস্তাবে বলা হয়েছে, সিগারেটের প্যাকেটের মতোই স্মার্টফোন এবং ডিজিটাল পরিষেবাগুলোয় সতর্কবার্তা থাকবে। যা অতিরিক্ত ব্যবহারের ঝুঁকি এবং ক্ষতিকর কন্টেন্ট সম্পর্কে সতর্ক করবে। এর পাশাপাশি নির্দিষ্ট অ্যাপ বা প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করার সময় স্ক্রিনে সতর্কতামূলক বার্তা দেখানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এটি ব্যবহারকারীদের সচেতনভাবে স্মার্টফোন ব্যবহারে উৎসাহিত করবে।
শিশুদের জন্য কড়া নিয়ম: প্রস্তাবে শিশুদের উপর স্মার্টফোন এবং ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহারের ক্ষেত্রে কড়া বিধি-নিষেধের কথা বলা হয়েছে। ৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা। ৩ থেকে ৬ বছর বয়সীদের ক্ষেত্রে শুধু নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে সীমিত ব্যবহারের অনুমতি। ১২ বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা। ১৬ বছরের কম বয়সীদের জন্য সীমিত কার্যকারিতা সম্পন্ন ‘ডাম্বফোন’ ব্যবহারের পরামর্শ।
শিক্ষা ক্ষত্রে পরিবর্তন: রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, শিক্ষার ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক আনন্দ প্রদানকারী অ্যাপসগুলো শিশুদের শিক্ষার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। এজন্য স্কুলগুলোকে এই ধরনের অ্যাপ অপসারণের এবং ছোট শিশুদের জন্য প্রযুক্তি-নির্ভর শিক্ষার পরিবর্তে ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতির ওপর জোর দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।
মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্ব: মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর স্মার্টফোন আসক্তির প্রভাবকে একটি গুরুত্বপূর্ণ জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে রিপোর্টে। প্রযুক্তি-সম্পর্কিত আসক্তি এবং উদ্বেগ মোকাবিলায় নিয়মমাফিক মেডিকেল চেকআপে অতিরিক্ত ডিজিটাল ব্যবহার স্ক্রিনিং অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ায় সিদ্ধান্তের প্রভাব: স্পেনের এই প্রস্তাবের আগে অস্ট্রেলিয়াও ১৬ বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা এনেছে। এই নতুন আইন অনুযায়ী ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টিকটক এবং স্ন্যাপচ্যাটের মতো প্রধান প্ল্যাটফর্মগুলিতে ১৬ বছরের কম বয়সীদের অ্যাকাউন্ট তৈরি বা অ্যাক্সেস করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কঠোর বয়স যাচাই প্রক্রিয়া নিশ্চিত করার জন্য আইনটি ২০২৫ সালের শুরুর দিকে কার্যকর হবে।
স্পেনের এই প্রস্তাব ডিজিটাল ব্যবহারের সুবিধা এবং এর নেতিবাচক প্রভাবের মধ্যে ভারসাম্য আনতে সাহায্য করবে। প্রযুক্তির অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে মানসিক স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং সামগ্রিক সুস্থতায় যে প্রভাব পড়ছে। তা মোকাবিলায় এই ধরনের পদক্ষেপ বিশ্বব্যাপী একটি নতুন মানদণ্ড স্থাপন করতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ।