নারী উদ্যোক্তাদের উৎসাহ দিতে এবং তাদের উৎপাদিত পণ্যের বাজার সম্প্রসারণের লক্ষ্যে আয়োজন করা হয়েছে দু’দিনের ‘সিজনস ফেস্টিভ ফেয়ার’। সম্প্রতি গুলশানের লেকশোর হোটেলের লা ভিটা হলে শুরু হয় নারীর প্রয়োজনীয় নানা পণ্যের এই মেলা। সেখানে দেখা যায়, নারী উদ্যোক্তাদের পণ্যের প্রতি নারীরাই বেশি আগ্রহী।
নানা বয়সী নারীর পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে ‘সিজনস ফেস্টিভ ফেয়ার’। শাড়ি-কামিজ, ব্যাগ, গয়নাসহ সাজসজ্জা ও গৃহসজ্জার বৈচিত্র্যপূর্ণ সব পণ্যের পসরা নিয়ে এই মেলায় হাজির হয়েছিলেন ঢাকার নারী উদ্যোক্তারা। আয়োজনের খবর পেয়ে সেখানে হাজির হন নানা বয়সী নারী ও পুরুষেরাও।
মেলায় আসা দর্শনার্থী তাসনুভা রহমান বলেন, ‘বান্ধবীর সঙ্গে দেখা করতে বের হয়েছিলাম। দুজনে মিলে এখানে চলে এসেছি। দুটো ড্রেস পছন্দ হয়েছে, কিনে ফেললাম। যদিও একদমই প্ল্যান ছিল না। তাদের কালেকশন দারুণ, মেলা উপলক্ষ্যে দামেও একটু ছাড় দিচ্ছে।’
সিজনস ফেস্টিভ ফেয়ারের প্রথম দিনই বিক্রি নিয়ে বেশ আশাবাদী ক্রেতারা। অনলাইন বুটিক হাউজের কর্ণধার সিলভিয়া বললেন, ‘সেল বেশ ভালো। তবে আরও ভালো হতো যদি আতিফ আসলামের কনসার্টটা আজ না হতো। আশা করি কাল আরও বেশি সেল হবে।’
মেলায় স্টল দিয়েছেন এফ কমার্সভিত্তিক উদ্যোক্তা লামিয়া। বেগম লাইফস্টাইল ও বেগম অ্যাকসেসরিস নামে দুটি ফেসবুক পেজ থেকে মেয়েদের নানান রকম নজরকাড়া পণ্য বিক্রি করেন তিনি। জানালেন থাইল্যান্ড ও চীন থেকে মেয়েদের ব্যবহারের দৃষ্টিনন্দন সব গয়না নিয়ে আসছেন তিনি। সেসবের দামও শিক্ষার্থীদের হাতের নাগালে। নিজের ব্যাগের সংগ্রহ দেখিয়ে তিনি বলেন, ‘এসব ব্যাগ ভেগান লেদারে তৈরি। রাফ ইউজ করলেও দুই বছরে কিচ্ছু হবে না।’ লামিয়ার ব্যাগগুলোর দাম এক হাজার। তবে মেলা উপলক্ষে ৮০০ টাকায় দিচ্ছেন তিনি। এ রকম বিভিন্ন দামের ব্যাগ রয়েছে তার কাছে। তবে কামিজের ক্ষেত্রে দেশি কাপড়কে গুরুত্ব দেন তিনি।
সিজনস ফেস্টিভ ফেয়ারে অংশ নেওয়া সবচেয়ে কমবয়সী উদ্যোক্তা সামি। অক্সফোর্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের ষষ্ট শ্রেণির শিক্ষার্থী সে। তার স্টলের নাম সামিউন। ক্রেতাদের জন্য প্লাস্টিক ও পুঁথি দিয়ে চমৎকাল কিছু ব্রেসলেট বানিয়েছে সে।
তৃতীয় লিঙ্গের উদ্যোক্তাদের বানানো পোশাক নিয়ে এসেছেন উদ্যোক্তা সাজু । তাদের উদ্যোগের নাম ‘সমান্তরাল’। তিনি বলেন, ‘আমাদের কমিউনিটির মানুষকে উৎসাহ দিতে আমরা সমান্তরাল নামে এই প্রচেষ্টা চালু করেছি।’
এই আয়োজন প্রসঙ্গে বারিধারা থেকে সিজনস ফেয়ারে আসা দর্শনার্থী অথৈ বলেন, ‘ক্রেতাদের জন্য একছাদের নিচে বিভিন্ন ধরনের পণ্য এনে ডিসপ্লে ও বিক্রির ব্যবস্থা করেছে, ভালোই লাগছে। আমি এখনও কিছু নিইনি। তবে কিছু জিনিসি ভালো লেগেছে, কিনবো।’
দু’দিনের ‘সিজনস ফেস্টিভ ফেয়ার’ আয়োজন করেছিল অঙ্গশ্রী। সংস্থাটির প্রতিষ্ঠাতা আলিয়াহ ফেরদৌসী বলেন, ‘আমরা খুব করে চেয়েছিলাম মানুষ আমাদের নারী উদ্যোক্তাদের পণ্যগুলো দেখুক, কিনুক, তাদের উৎসাহ দিক। এই আয়োজন মূলত নারী উদ্যোক্তাদের একটা প্ল্যাটফর্ম করে দেওয়ার জন্য। আশা করি আমরা সফল হয়েছি।’
সন্ধ্যায় একটি কেক কেটে এ আয়োজনের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেন আয়োজকেরা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন খ্যাতিমান ডিজাইনার লিপি খন্দকার, রূপসজ্জা শিল্পী আফরোজা পারভীন, উদ্যোক্তা নাজমা মাসুদ, শারমিন সেলিম তুলি, মডেল বুলবুল টুম্পা, অঙ্গশ্রীর প্রতিষ্ঠাতা আলিয়াহ ফেরদৌসী, সহপ্রতিষ্ঠাতা মাহি মৌ প্রমুখ।