ঢাকা ০৭:৩৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ অগাস্ট ২০২৫

৪০০ জয় ছোঁয়ার দিনে ইংল্যান্ডের ১৭ বছরের অপেক্ষার অবসান

  • আপডেট সময় : ০৫:০৭:২৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ৮ ডিসেম্বর ২০২৪
  • ৬৩ বার পড়া হয়েছে

ক্রীড়া ডেস্ক: মাইকেল ভন তখন অধিনায়ক। তার দলে খেলছেন তখনও ইয়ান বেল, পল কলিংউড, অ্যান্ড্রু স্ট্রাউসরা। সেই ২০০৮ সালের শুরুতে নিউ জিল্যান্ডে টেস্ট সিরিজ জিতেছিল ইংল্যান্ড। এরপর চার দফায় সেখানে গিয়েও সিরিজ জয়কে সঙ্গী করে ফিরতে পারেনি ইংলিশরা। অবশেষে সেই খরা এবার ঘুচিয়ে দিল বেন স্টোকসের দল। ওয়েলিংটন টেস্টে নিউ জিল্যান্ডকে তিন দিনেই হারিয়ে সিরিজ জয় নিশ্চিত করল ইংল্যান্ড। ৩২৩ রানের জয়ে তিন ম্যাচের সিরিজে এগিয়ে গেল তারা ২-০ ব্যবধানে। রানের হিসাবে কিউইদের বিপক্ষে ইংলিশদের সবচেয়ে বড় জয় এটিই। ইংল্যান্ডের জয় একরকম নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল আগের দিনই। রোববার সকালে জো রুট প্রত্যাশার পথ ধরে পৌঁছে যান তার ৩৬তম টেস্ট সেঞ্চুরিতে। নিউ জিল্যান্ড পায় ৫৮৩ রানের লক্ষ্য। ম্যাচের ভাগ্য অনুমিতই ছিল। বিশাল ব্যবধানে হারের আগে কিউইদের একমাত্র প্রাপ্তি টম ব্লান্ডেলের সেঞ্চুরি। চরম দুঃসময়ের চক্রে থাকা কিপার-ব্যাটসম্যান রানের পথে ফেরেন পাল্টা আক্রমণে সেঞ্চুরি করে। ৫ উইকেটে ৩৭৮ রান নিয়ে দিন শুরু করে ইংল্যান্ড, রুট শুরু করেন ৭৩ রান নিয়ে। এ দিন আর ৬.২ ওভার খেলে ৪৯ রান করে ইনিংস ঘোষণা করে দেয় তারা।
রুট শতরানে পৌঁছে যান দ্রুতই। উইল ও’রোককে রিভার্স র‌্যাম্প শটে চার মেরে তিন অঙ্ক স্পর্শ করেন তিনি ১২৭ বলে। ৩৬তম টেস্ট সেঞ্চুরিতে এখন রাহুল দ্রাবিড়ের পাশে রুট। যৌথভাবে টেস্ট ইতিহাসের পঞ্চম সর্বোচ্চ সেঞ্চুরিয়ান দুই যুগের দুই গ্রেট। সেঞ্চুরির পর আরেকটি চার মেরে আউট হয়ে যান রুট। নিজেকে ৪৯ রানে রেখে তখনই ইনিংস ঘোষণা করে দেন অধিনায়ক বেন স্টোকস। নিউ জিল্যান্ডের সামনে তখন অসম্ভব লক্ষ্য। লড়াই তারা কতটা করতে পারে, সেটিই ছিল দেখার। কিন্তু ইংলিশ পেসারদের সামনে আবার উড়ে যায় কিউই টপ অর্ডার। ডেভন কনওয়ে (০) ও কেন উইলিয়ামসনকে (৪) দাঁড়াতেই দেননি ক্রিস ওকস। ভালো শুরু করা টম ল্যাথামকে দারুণ এক ফিরতি ক্যাচ নিয়ে ফেরান ব্রাইডন কার্স। একটু পরে যখন কার্সের অনেক বাইরের বলে ব্যাট চালিয়ে যখন বিদায় নেন রাচিন রাভিন্দ্রা, নিউ জিল্যান্ড তখন ধুঁকছে ৪ উইকেটে ৫৯ রান নিয়ে। ব্লান্ডেল ক্রিজে যাওয়ার পরপরই মনোভাব বুঝিয়ে দেন। কার্সের বলে ব্যাটের কানায় লেগে চার পাওয়ার পর ছক্কা মারেন তিনি পুল করে। এরপর ইতিবাচক ব্যাটিংয়েই এগিয়ে যেতে থাকেন। তাকে কিছুটা সময় সঙ্গ দেন ড্যারিল মিচেল ও গ্লেন ফিলিপস, তবে ইনিংস বড় করতে পারেননি কেউই।
থিতু হয়ে যাওয়া মিচেলকে ৩২ রানে থামান গাস অ্যাটকিনসন। শোয়েব বাশিরের জোরের ওপর করা ডেলিভারিতে বোল্ড ফিলিপস। ব্লান্ডেল ফিফটি করেন ৫৬ বলে। আগের ২৬ ইনিংসে তার ফিফটি ছিল মোটে একটি। এই সময়ের ১৪ টেস্টে তার গড় ছিল ১৩.৫২। ফিফটিতেই না থেমে আক্রমণের পথ ধরেই শতরানে ছুটে যান ৩৪ বছর বয়সী কিপার-ব্যাটসম্যান। তাকে আরেকপ্রান্ত থেকে ভরসা জোগান ন্যাথান স্মিথ। চা বিরতির পর সেঞ্চুরিতে পা রাখেন ব্লান্ডেল ৯৬ বল খেলে। অভিষেক টেস্টে সেঞ্চুরি করা ক্রিকেটারের শতরান এখন ৩৯ টেস্টে ৫টি। তার ইনিংসটি শেষ হয় নাটকীয়ভাবে। অফ স্পিনার শোয়েব বাশিরকে স্কুপ খেলার জন্য আগেভাগেই পজিশনে যান তিনি। তার মনোভাব বুঝতে পেরে শট খেলার আগেই স্লিপ থেকে লেগ সাইডে সরে যান বেন ডাকেট। দ্বিতীয়বারের চেষ্টায় বল মুঠোয় জমিয়ে ফেলেন তিনি। ১৩ চার ও ৫ ছক্কায় ১০২ বলে ১১৫ রান করে থামেন ব্লান্ডেল। এরপর শেষ তিন উইকেট দ্রুতই তুলে নিয়ে ম্যাচ শেষ করেন দেন বেন স্টোকস। ৫ রানে ৩ উইকেট নেন ইংল্যান্ড অধিনায়ক, গত আড়াই বছরে যা তার সেরা বোলিং। যে টেস্টের প্রথম দিনে ৪৩ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে কাঁপছিল ইংল্যান্ড, সেই ম্যাচ তারা বড় ব্যবধানে জিতে নিল তিন দিনেই। ওই বিপর্যয় থেকে দলকে উদ্ধার করা সেঞ্চুরির পর দ্বিতীয় ইনিংসেও ফিফটি করা হ্যারি ব্রুক পান ম্যাচ সেরার স্বীকৃতি।
সিরিজের শেষ টেস্ট হ্যামিল্টনে শুরু শনিবার।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস: ২৮০
নিউ জিল্যান্ড ১ম ইনিংস: ১২৫
ইংল্যান্ড ২য় ইনিংস: ৮২.৩ ওভারে ৪২৭/৬ (ডিক্লে, আগের দিন ৩৭৮/৫) (রুট ১০৬, স্টোকস ৪৯*; সাউদি ১৪-০-৭২-২, হেনরি ১৮-০-১০০-২, স্মিথ ১৬-০-৭৪-০, ও’রোক ১৮.৩-০-১০৪-১, ফিলিপস ১৬-০-৭৫-১)।
নিউ জিল্যান্ড ২য় ইনিংস: (লক্ষ্য ৫৮৩) ৫৪.২ ওভারে ২৫৯ (ল্যাথাম ২৪, কনওয়ে ০, উইলিয়ামসন ৪, রাভিন্দ্রা ৬, মিচেল ৩২, ব্লান্ডেল ১১৫, ফিলিপস ১৬, স্মিথ ৪২, হেনরি ৪, সাউদি ৮, ও’রোক ১*; ওকস ১০-৪-২০-২, অ্যাটকিনসন ১২-০-৬৮-১, কার্স ১১-০-৫৩-২, বাশির ১৯-২-১১০-২, স্টোকস ২.২-০-৫-৩)।
ফল: ইংল্যান্ড ৩২৩ রানে জয়ী।
সিরিজ: তিন ম্যাচ সিরিজে ইংল্যান্ড ২-০তে এগিয়ে।
ম্যান অব দা ম্যাচ: হ্যারি ব্রুক।

 

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

৪০০ জয় ছোঁয়ার দিনে ইংল্যান্ডের ১৭ বছরের অপেক্ষার অবসান

আপডেট সময় : ০৫:০৭:২৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ৮ ডিসেম্বর ২০২৪

ক্রীড়া ডেস্ক: মাইকেল ভন তখন অধিনায়ক। তার দলে খেলছেন তখনও ইয়ান বেল, পল কলিংউড, অ্যান্ড্রু স্ট্রাউসরা। সেই ২০০৮ সালের শুরুতে নিউ জিল্যান্ডে টেস্ট সিরিজ জিতেছিল ইংল্যান্ড। এরপর চার দফায় সেখানে গিয়েও সিরিজ জয়কে সঙ্গী করে ফিরতে পারেনি ইংলিশরা। অবশেষে সেই খরা এবার ঘুচিয়ে দিল বেন স্টোকসের দল। ওয়েলিংটন টেস্টে নিউ জিল্যান্ডকে তিন দিনেই হারিয়ে সিরিজ জয় নিশ্চিত করল ইংল্যান্ড। ৩২৩ রানের জয়ে তিন ম্যাচের সিরিজে এগিয়ে গেল তারা ২-০ ব্যবধানে। রানের হিসাবে কিউইদের বিপক্ষে ইংলিশদের সবচেয়ে বড় জয় এটিই। ইংল্যান্ডের জয় একরকম নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল আগের দিনই। রোববার সকালে জো রুট প্রত্যাশার পথ ধরে পৌঁছে যান তার ৩৬তম টেস্ট সেঞ্চুরিতে। নিউ জিল্যান্ড পায় ৫৮৩ রানের লক্ষ্য। ম্যাচের ভাগ্য অনুমিতই ছিল। বিশাল ব্যবধানে হারের আগে কিউইদের একমাত্র প্রাপ্তি টম ব্লান্ডেলের সেঞ্চুরি। চরম দুঃসময়ের চক্রে থাকা কিপার-ব্যাটসম্যান রানের পথে ফেরেন পাল্টা আক্রমণে সেঞ্চুরি করে। ৫ উইকেটে ৩৭৮ রান নিয়ে দিন শুরু করে ইংল্যান্ড, রুট শুরু করেন ৭৩ রান নিয়ে। এ দিন আর ৬.২ ওভার খেলে ৪৯ রান করে ইনিংস ঘোষণা করে দেয় তারা।
রুট শতরানে পৌঁছে যান দ্রুতই। উইল ও’রোককে রিভার্স র‌্যাম্প শটে চার মেরে তিন অঙ্ক স্পর্শ করেন তিনি ১২৭ বলে। ৩৬তম টেস্ট সেঞ্চুরিতে এখন রাহুল দ্রাবিড়ের পাশে রুট। যৌথভাবে টেস্ট ইতিহাসের পঞ্চম সর্বোচ্চ সেঞ্চুরিয়ান দুই যুগের দুই গ্রেট। সেঞ্চুরির পর আরেকটি চার মেরে আউট হয়ে যান রুট। নিজেকে ৪৯ রানে রেখে তখনই ইনিংস ঘোষণা করে দেন অধিনায়ক বেন স্টোকস। নিউ জিল্যান্ডের সামনে তখন অসম্ভব লক্ষ্য। লড়াই তারা কতটা করতে পারে, সেটিই ছিল দেখার। কিন্তু ইংলিশ পেসারদের সামনে আবার উড়ে যায় কিউই টপ অর্ডার। ডেভন কনওয়ে (০) ও কেন উইলিয়ামসনকে (৪) দাঁড়াতেই দেননি ক্রিস ওকস। ভালো শুরু করা টম ল্যাথামকে দারুণ এক ফিরতি ক্যাচ নিয়ে ফেরান ব্রাইডন কার্স। একটু পরে যখন কার্সের অনেক বাইরের বলে ব্যাট চালিয়ে যখন বিদায় নেন রাচিন রাভিন্দ্রা, নিউ জিল্যান্ড তখন ধুঁকছে ৪ উইকেটে ৫৯ রান নিয়ে। ব্লান্ডেল ক্রিজে যাওয়ার পরপরই মনোভাব বুঝিয়ে দেন। কার্সের বলে ব্যাটের কানায় লেগে চার পাওয়ার পর ছক্কা মারেন তিনি পুল করে। এরপর ইতিবাচক ব্যাটিংয়েই এগিয়ে যেতে থাকেন। তাকে কিছুটা সময় সঙ্গ দেন ড্যারিল মিচেল ও গ্লেন ফিলিপস, তবে ইনিংস বড় করতে পারেননি কেউই।
থিতু হয়ে যাওয়া মিচেলকে ৩২ রানে থামান গাস অ্যাটকিনসন। শোয়েব বাশিরের জোরের ওপর করা ডেলিভারিতে বোল্ড ফিলিপস। ব্লান্ডেল ফিফটি করেন ৫৬ বলে। আগের ২৬ ইনিংসে তার ফিফটি ছিল মোটে একটি। এই সময়ের ১৪ টেস্টে তার গড় ছিল ১৩.৫২। ফিফটিতেই না থেমে আক্রমণের পথ ধরেই শতরানে ছুটে যান ৩৪ বছর বয়সী কিপার-ব্যাটসম্যান। তাকে আরেকপ্রান্ত থেকে ভরসা জোগান ন্যাথান স্মিথ। চা বিরতির পর সেঞ্চুরিতে পা রাখেন ব্লান্ডেল ৯৬ বল খেলে। অভিষেক টেস্টে সেঞ্চুরি করা ক্রিকেটারের শতরান এখন ৩৯ টেস্টে ৫টি। তার ইনিংসটি শেষ হয় নাটকীয়ভাবে। অফ স্পিনার শোয়েব বাশিরকে স্কুপ খেলার জন্য আগেভাগেই পজিশনে যান তিনি। তার মনোভাব বুঝতে পেরে শট খেলার আগেই স্লিপ থেকে লেগ সাইডে সরে যান বেন ডাকেট। দ্বিতীয়বারের চেষ্টায় বল মুঠোয় জমিয়ে ফেলেন তিনি। ১৩ চার ও ৫ ছক্কায় ১০২ বলে ১১৫ রান করে থামেন ব্লান্ডেল। এরপর শেষ তিন উইকেট দ্রুতই তুলে নিয়ে ম্যাচ শেষ করেন দেন বেন স্টোকস। ৫ রানে ৩ উইকেট নেন ইংল্যান্ড অধিনায়ক, গত আড়াই বছরে যা তার সেরা বোলিং। যে টেস্টের প্রথম দিনে ৪৩ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে কাঁপছিল ইংল্যান্ড, সেই ম্যাচ তারা বড় ব্যবধানে জিতে নিল তিন দিনেই। ওই বিপর্যয় থেকে দলকে উদ্ধার করা সেঞ্চুরির পর দ্বিতীয় ইনিংসেও ফিফটি করা হ্যারি ব্রুক পান ম্যাচ সেরার স্বীকৃতি।
সিরিজের শেষ টেস্ট হ্যামিল্টনে শুরু শনিবার।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস: ২৮০
নিউ জিল্যান্ড ১ম ইনিংস: ১২৫
ইংল্যান্ড ২য় ইনিংস: ৮২.৩ ওভারে ৪২৭/৬ (ডিক্লে, আগের দিন ৩৭৮/৫) (রুট ১০৬, স্টোকস ৪৯*; সাউদি ১৪-০-৭২-২, হেনরি ১৮-০-১০০-২, স্মিথ ১৬-০-৭৪-০, ও’রোক ১৮.৩-০-১০৪-১, ফিলিপস ১৬-০-৭৫-১)।
নিউ জিল্যান্ড ২য় ইনিংস: (লক্ষ্য ৫৮৩) ৫৪.২ ওভারে ২৫৯ (ল্যাথাম ২৪, কনওয়ে ০, উইলিয়ামসন ৪, রাভিন্দ্রা ৬, মিচেল ৩২, ব্লান্ডেল ১১৫, ফিলিপস ১৬, স্মিথ ৪২, হেনরি ৪, সাউদি ৮, ও’রোক ১*; ওকস ১০-৪-২০-২, অ্যাটকিনসন ১২-০-৬৮-১, কার্স ১১-০-৫৩-২, বাশির ১৯-২-১১০-২, স্টোকস ২.২-০-৫-৩)।
ফল: ইংল্যান্ড ৩২৩ রানে জয়ী।
সিরিজ: তিন ম্যাচ সিরিজে ইংল্যান্ড ২-০তে এগিয়ে।
ম্যান অব দা ম্যাচ: হ্যারি ব্রুক।