ঢাকা ১২:৪৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সরকারি ঘর পেয়েও পরিত্যাগ

  • আপডেট সময় : ০৬:৩৬:১৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ২ ডিসেম্বর ২০২৪
  • ৬ বার পড়া হয়েছে

জয়পুরহাট সংবাদদাতা :  জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার পুনট ইউনিয়নের নান্দাইল আদর্শ গ্রামে সরকারি উদ্যোগে পুর্নবাসনের ঘর পেয়েও ছেড়ে গেছেন অধিকাংশ পরিবার। বর্তমানে আদর্শ গ্রাম থেকে ছেড়ে গিয়ে ৯টি পরিবার দীঘির পাড়ে একটি কলেজের পেছনে নতুন করে ঘর নির্মাণ করে বসবাস করছেন। ছেড়ে যাওয়া পরিবারগুলোর অভিযোগ, গত ৬ বছর ধরে বিদ্যুৎসহ নানা সমস্যা নিয়ে তারা ওই ঘরগুলোতে বসবাস করে আসছিলেন। সমস্যাগুলো সমাধান না হওয়ায় বর্তমানে ১৪টি পরিবারের মধ্যে ৯টি পরিবার তাদের ঘর ছেড়ে অন্যত্র বসবাস করছেন। ১৪টি ঘরের মধ্যে বর্তমানে ৯টি ঘর ফাঁকা পড়ে রয়েছে। ২০১৮ সালে নির্মিত ঘরগুলো এলাকার গরিব, অসহায় ও বাস্তুভিটা হারা বাসিন্দাদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও বাস্তবে তা বাসযোগ্য ছিল না বলে অভিযোগ উঠেছে। ফলে আদর্শ গ্রামের অধিকাংশ পরিবার ঘরগুলো ছেড়ে দিয়ে চলে গেছেন। নান্দাইল আদর্শ গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ১৪টি ঘরের মধ্যে ৫টি ঘরে আদর্শ গ্রামের বাসিন্দাদের বসবাস করতে দেখা গেছে। সরকারিভাবে দেখভাল না করায় এত অল্প সময়ের মধ্যে সব ঘরগুলো বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। নেই কোনো ড্রেনেজ ব্যবস্থা। বর্ষা মৌসুমে ঘরের ভেতরেই আটকে থাকতে হয় দিনের পর দিন। যাতায়াতের কোনো পাকা বা ইট বিছানো রাস্তা নেই সেখানে। ফলে বর্ষাকালে কাদা ও পানি জমে রাস্তায় চলাচল করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। তাছাড়া শুরু থেকে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করার কথা থাকলেও আজ পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন হয়নি। আদর্শ গ্রামের অবকাঠামোর বেহাল দশা তাদের দুর্দশাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। বাধ্য হয়ে তারা ঘর ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন।

বর্তমানে আদর্শ গ্রামে বসবাসরত পাঁচটি পরিবারের মধ্যে একটির বাসিন্দা রবিদাস নামে এক ব্যাক্তি বলেন, ‘আমরা যারা এখনও এই ঘরগুলোতে বসবাস করছি তারা চরম দুর্ভোগে দিন কাটাচ্ছি। শুধু একটি টিনের ঘর দিয়েই সকল সমস্যার সমাধান হয় না। এখানে নেই কোনো ড্রেনেজ ব্যবস্থা। যার কারণে বর্ষা এলেই ঘরের চারদিকে পানি জমে ভেতরে ঢুকে পড়ে। তখন চলাচল করতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়। আর বলেন, ‘শুরু থেকে বিদ্যুৎ না থাকায় আমাদের জীবনযাত্রা আরও দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। এত সমস্যা নিয়ে কেউ এখানে বসবাস করতে পারে না। যে অবস্থা তাতে যাযাবর আর আমাদের মধ্যে কোনো পাথর্ক্য নেই। কোনো সড়কের পাশে একটু মাথা গোজার ঠাঁই পেলে আমরাও চলে যাবো।’ আদর্শ গ্রামে আরেক বাসিন্দা বৃদ্ধ নূরমোহাম্মদ বলেন, সাধে কেউ ঘর পেয়েও ছেড়ে যায় না। ১৮ সালে আমাদের পুনর্বাসিত করার পর আজ পর্যন্ত আর কোনো উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। রাস্তা, ড্রেনেজ ব্যবস্থা এমনকি বিদ্যুৎও নেই এখানে। যাদের বয়স কম তারা চলে গেছে, আমি আর যেতে পারছি না। শেষ পর্যন্ত হয়তো আমাকে একাই থাকতে হবে এখানে। আবুল কাসেম, জয়নাব ও পূর্ণিমারাও চলে যাবে।’

আদর্শ গ্রাম থেকে গিয়ে দীঘির পাড়ে বসবাস করছেন খয়বর আলি, লিয়াকত আলি, আজিজুলসহ অনেকেই। তারা জানান, সরকার তাদের ঘর দিয়েছিল বসবাস করতে, কিন্তু বসবাসের যোগ্য নয়। বর্ষাকালে ঘরে পানি ঢোকে, রাস্তা এত খারাপ যে বের হওয়া যায় না। পরিবারের সবাই কষ্ট পাচ্ছিল, তাই তারা ঘরগুলো ছেড়ে অন্যত্র গিয়ে নতুন করে ঘর নির্মাণ করে বসবাস করছেন। এতে তারা ভালোই আছেন। স্থানীয় বাসিন্দা আকবর আলী বলেন, সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সমাধান করলেই বসবাস যোগ্য হবে। যারা আগে বসবাস করেছে তারা না আসলে অন্যদের আনার উদ্যোগ নিতে হবে। কালাই উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা শামিমা আক্তার জাহান জানান, ‘অবকাঠামোগত সমস্যার বিষয়ে কেউ অবগত করেননি। চলে যাওয়ার ঘটনা অনাকাঙ্ক্ষিত। খোঁজ নিয়ে সমস্যাগুলো দ্রুত সমাধানের পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

 

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

সরকারি ঘর পেয়েও পরিত্যাগ

আপডেট সময় : ০৬:৩৬:১৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ২ ডিসেম্বর ২০২৪

জয়পুরহাট সংবাদদাতা :  জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার পুনট ইউনিয়নের নান্দাইল আদর্শ গ্রামে সরকারি উদ্যোগে পুর্নবাসনের ঘর পেয়েও ছেড়ে গেছেন অধিকাংশ পরিবার। বর্তমানে আদর্শ গ্রাম থেকে ছেড়ে গিয়ে ৯টি পরিবার দীঘির পাড়ে একটি কলেজের পেছনে নতুন করে ঘর নির্মাণ করে বসবাস করছেন। ছেড়ে যাওয়া পরিবারগুলোর অভিযোগ, গত ৬ বছর ধরে বিদ্যুৎসহ নানা সমস্যা নিয়ে তারা ওই ঘরগুলোতে বসবাস করে আসছিলেন। সমস্যাগুলো সমাধান না হওয়ায় বর্তমানে ১৪টি পরিবারের মধ্যে ৯টি পরিবার তাদের ঘর ছেড়ে অন্যত্র বসবাস করছেন। ১৪টি ঘরের মধ্যে বর্তমানে ৯টি ঘর ফাঁকা পড়ে রয়েছে। ২০১৮ সালে নির্মিত ঘরগুলো এলাকার গরিব, অসহায় ও বাস্তুভিটা হারা বাসিন্দাদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও বাস্তবে তা বাসযোগ্য ছিল না বলে অভিযোগ উঠেছে। ফলে আদর্শ গ্রামের অধিকাংশ পরিবার ঘরগুলো ছেড়ে দিয়ে চলে গেছেন। নান্দাইল আদর্শ গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ১৪টি ঘরের মধ্যে ৫টি ঘরে আদর্শ গ্রামের বাসিন্দাদের বসবাস করতে দেখা গেছে। সরকারিভাবে দেখভাল না করায় এত অল্প সময়ের মধ্যে সব ঘরগুলো বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। নেই কোনো ড্রেনেজ ব্যবস্থা। বর্ষা মৌসুমে ঘরের ভেতরেই আটকে থাকতে হয় দিনের পর দিন। যাতায়াতের কোনো পাকা বা ইট বিছানো রাস্তা নেই সেখানে। ফলে বর্ষাকালে কাদা ও পানি জমে রাস্তায় চলাচল করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। তাছাড়া শুরু থেকে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করার কথা থাকলেও আজ পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন হয়নি। আদর্শ গ্রামের অবকাঠামোর বেহাল দশা তাদের দুর্দশাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। বাধ্য হয়ে তারা ঘর ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন।

বর্তমানে আদর্শ গ্রামে বসবাসরত পাঁচটি পরিবারের মধ্যে একটির বাসিন্দা রবিদাস নামে এক ব্যাক্তি বলেন, ‘আমরা যারা এখনও এই ঘরগুলোতে বসবাস করছি তারা চরম দুর্ভোগে দিন কাটাচ্ছি। শুধু একটি টিনের ঘর দিয়েই সকল সমস্যার সমাধান হয় না। এখানে নেই কোনো ড্রেনেজ ব্যবস্থা। যার কারণে বর্ষা এলেই ঘরের চারদিকে পানি জমে ভেতরে ঢুকে পড়ে। তখন চলাচল করতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়। আর বলেন, ‘শুরু থেকে বিদ্যুৎ না থাকায় আমাদের জীবনযাত্রা আরও দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। এত সমস্যা নিয়ে কেউ এখানে বসবাস করতে পারে না। যে অবস্থা তাতে যাযাবর আর আমাদের মধ্যে কোনো পাথর্ক্য নেই। কোনো সড়কের পাশে একটু মাথা গোজার ঠাঁই পেলে আমরাও চলে যাবো।’ আদর্শ গ্রামে আরেক বাসিন্দা বৃদ্ধ নূরমোহাম্মদ বলেন, সাধে কেউ ঘর পেয়েও ছেড়ে যায় না। ১৮ সালে আমাদের পুনর্বাসিত করার পর আজ পর্যন্ত আর কোনো উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। রাস্তা, ড্রেনেজ ব্যবস্থা এমনকি বিদ্যুৎও নেই এখানে। যাদের বয়স কম তারা চলে গেছে, আমি আর যেতে পারছি না। শেষ পর্যন্ত হয়তো আমাকে একাই থাকতে হবে এখানে। আবুল কাসেম, জয়নাব ও পূর্ণিমারাও চলে যাবে।’

আদর্শ গ্রাম থেকে গিয়ে দীঘির পাড়ে বসবাস করছেন খয়বর আলি, লিয়াকত আলি, আজিজুলসহ অনেকেই। তারা জানান, সরকার তাদের ঘর দিয়েছিল বসবাস করতে, কিন্তু বসবাসের যোগ্য নয়। বর্ষাকালে ঘরে পানি ঢোকে, রাস্তা এত খারাপ যে বের হওয়া যায় না। পরিবারের সবাই কষ্ট পাচ্ছিল, তাই তারা ঘরগুলো ছেড়ে অন্যত্র গিয়ে নতুন করে ঘর নির্মাণ করে বসবাস করছেন। এতে তারা ভালোই আছেন। স্থানীয় বাসিন্দা আকবর আলী বলেন, সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সমাধান করলেই বসবাস যোগ্য হবে। যারা আগে বসবাস করেছে তারা না আসলে অন্যদের আনার উদ্যোগ নিতে হবে। কালাই উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা শামিমা আক্তার জাহান জানান, ‘অবকাঠামোগত সমস্যার বিষয়ে কেউ অবগত করেননি। চলে যাওয়ার ঘটনা অনাকাঙ্ক্ষিত। খোঁজ নিয়ে সমস্যাগুলো দ্রুত সমাধানের পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’