ঢাকা ০১:৩৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

সেতুতে সংযোগ সড়ক না থাকায় ভোগান্তিতে ১৫ গ্রামের মানুষ

  • আপডেট সময় : ০৭:৩৫:৪০ অপরাহ্ন, রবিবার, ১ ডিসেম্বর ২০২৪
  • ৫০ বার পড়া হয়েছে

গাজীপুর সংবাদদাতা: গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন ও কালিয়াকৈর উপজেলা বিভক্ত করে রেখেছে তুরাগ নদ। ওই নদের ওপর সোয়া চার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছে ১৪০ মিটার দীর্ঘ সেতু। কিন্তু সেতু নির্মাণের ছয় বছর হয়ে গেলেও হয়নি সংযোগ সড়ক। এতে ভোগান্তিতে রয়েছে আশপাশের ১০ গ্রামের মানুষ।
জানা গেছে, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ২০১৭ সালের জানুয়ারির শেষ দিকে সেতুটির নির্মাণকাজ শুরু করে। ব্রিজের নির্মাণ কাজ শেষ হয় ২০১৮ সালের জুলাই মাসে। এতে ব্যয় হয় ৪ কোটি ২৬ লাখ টাকা। প্রায় ৮০০ মিটার সংযোগ সড়ক ছাড়াই সেতুটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এবং যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল। এক সময় সংযোগ সড়কের জন্য দরপত্র অনুমোদন হলেও প্রশাসনের অবহেলা ও দায়িত্বহীনতায় কাজটি আটকে যায়। তবে সেতুটি দিয়ে পারাপার হওয়ার জন্য স্থানীয় বাসিন্দারা ভারি বস্তা ফেলে হাঁটার ব্যবস্থা করে নিয়েছেন। কিন্তু এই পথ দিয়ে সেতুতে উঠতে বেশ বেগ পেতে হয়। ঝুঁকি নিয়ে সেতুর এক পাশ দিয়ে কয়েক কিলোমিটার হেঁটে এসব গ্রামের বাসিন্দাদের চলাচল করতে হচ্ছে। তবে সংযোগ সড়ক না থাকায় কোনো যানবাহন চলে না এ সেতুতে।
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা হলে জানান, ১০ মিনিটের রাস্তা অথচ সংযোগ সড়ক না থাকায় সময় লাগছে এক ঘণ্টার বেশি। সংযোগ সড়কটি হলে সাধারণ মানুষ গাড়ি, ভ্যান–রিকশা নিয়ে ওই সেতু দিয়ে চলাচল করতে পারত। এতে ঝুঁকির পাশাপাশি সময় অপচয়ও এড়ানো যেত। সেতুর পশ্চিম পাশে তুরাগ নদের কোলঘেঁষা বহু পুরোনো সাকাশ্বর বাজার। আশপাশের ১০-১৫টি গ্রামের মানুষ এখানে হাটবাজার করতে আসেন প্রতিদিন। যখন সেতুটি ছিল না, তখন নদী পারাপারের জন্য নৌকা ছিল। কিন্তু সেতু হওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে সেই নৌকা। এখন আর নৌকায় পারাপারের কোনো সুযোগ নেই। অনেক সময় স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থী ও বয়স্করা ব্রিজে উঠতে গিয়ে পড়ে আহত হচ্ছেন।
স্থানীয়রা জানায়, মাস্টারবাড়ি-খালিশাবর্তা-সাকাশ্বর সড়কে তুরাগ নদের ওপর নির্মিত সেতুর নাম দেওয়া হয়েছে মন্ত্রী সামসুল হক ব্রিজ। খালিশাবর্তা মৌজার পুরো অংশজুড়ে ফসলি জমি। সেতু নির্মাণের পূর্বে মানুষের যাতায়াতের একমাত্র অবলম্বন ছিল নৌকা। সেতু হওয়ায় নৌকা চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এখন কৃষক ও আশপাশের কয়েক গ্রামের মানুষ ঝুঁকি নিয়ে সেতুর ওপর দিয়ে চলাচল করছে। সেতুতে ওঠার রাস্তা ভাঙাচোরা, উঁচু ও ঝুঁকিপূর্ণ। বয়স্ক, নারী ও শিশুদের অন্যের সহযোগিতায় সেতুতে উঠতে হয়। এতে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। বর্ষা মৌসুমে থাকে অথৈ জল। ব্রিজ না থাকলে আশপাশের গ্রামের লোকজন সাকাশ্বর বাজারে নৌকা নিয়ে যেতেন। এখন সেটি সম্ভব হয় না, ফলে চরম ভোগান্তি হচ্ছে।
স্থানীয় আকরাম হোসেন বলেন, ৬ বছর আগে সেতু হয়েছে, অথচ সড়ক নির্মাণ করা হয়নি। সেতু নির্মাণকালে এলাকাবাসী যেমন আনন্দিত হয়েছিল এখন ততোটাই দুঃখবোধ ঘিরে ধরেছে। এই সেতু এখন আশপাশের মানুষের গলার কাঁটা হয়ে উঠেছে। সেতুটিতে উঠতে পাহাড়ের মতো মনে হয়। কৃষকরা তাদের কাজ করতে পারে না, মালামাল উঠানামা করতে পারে না। আমরা এই ভোগান্তি থেকে মুক্তি চাই।
সাকাশ্বর এলাকার গৃহবধূ আসমা আক্তার বলেন, সেতুর সঙ্গে সংযোগ সড়ক না থাকায় ১০-১২টি গ্রামের হাজারো মানুষকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি সমস্যা কৃষক ও স্কুলপড়ুয়া নারী শিক্ষার্থীদের। বেশ কয়েকবার রাস্তা হওয়ার গুঞ্জন উঠলেও আবার অজানা কারণে সড়ক নির্মাণ হয় না। এলাকাবাসী মেয়র-কাউন্সিলরের কাছে বহুবার গিয়েও কোনো সুনির্দিষ্ট আশ্বাস পায়নি।
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ২১ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন বলেন, একবার রাস্তার দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল, কিন্তু এলাকার মানুষ জমি দেয়নি। এজন্য দরপত্রের প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। এরপর আবারও একটি প্রজেক্ট দেওয়া হয়। কিন্তু সেটাতেও মাটি কাটতে বাধা তৈরি হয়। পরে মেয়রও চলে গেল। তবে রাস্তাটা হওয়া খুবই প্রয়োজন। এতে আমাদের কালিয়াকৈরসহ এলাকাগুলোতে যাতায়াত ব্যবস্থা সহজ হবে।
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের জোন ৫-এর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী একেএম হারুনুর রশীদ বলেন, সংযোগ সড়কের জন্য আমাদের প্রকল্প তৈরি করা হয়েছে। সবকিছু স্বাভাবিক হলে ফের দরপত্র আহ্বান করা হবে।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

ঢাকায় কাউন্টার থেকে চলবে ২১ কোম্পানির গোলাপী বাস

সেতুতে সংযোগ সড়ক না থাকায় ভোগান্তিতে ১৫ গ্রামের মানুষ

আপডেট সময় : ০৭:৩৫:৪০ অপরাহ্ন, রবিবার, ১ ডিসেম্বর ২০২৪

গাজীপুর সংবাদদাতা: গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন ও কালিয়াকৈর উপজেলা বিভক্ত করে রেখেছে তুরাগ নদ। ওই নদের ওপর সোয়া চার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছে ১৪০ মিটার দীর্ঘ সেতু। কিন্তু সেতু নির্মাণের ছয় বছর হয়ে গেলেও হয়নি সংযোগ সড়ক। এতে ভোগান্তিতে রয়েছে আশপাশের ১০ গ্রামের মানুষ।
জানা গেছে, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ২০১৭ সালের জানুয়ারির শেষ দিকে সেতুটির নির্মাণকাজ শুরু করে। ব্রিজের নির্মাণ কাজ শেষ হয় ২০১৮ সালের জুলাই মাসে। এতে ব্যয় হয় ৪ কোটি ২৬ লাখ টাকা। প্রায় ৮০০ মিটার সংযোগ সড়ক ছাড়াই সেতুটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এবং যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল। এক সময় সংযোগ সড়কের জন্য দরপত্র অনুমোদন হলেও প্রশাসনের অবহেলা ও দায়িত্বহীনতায় কাজটি আটকে যায়। তবে সেতুটি দিয়ে পারাপার হওয়ার জন্য স্থানীয় বাসিন্দারা ভারি বস্তা ফেলে হাঁটার ব্যবস্থা করে নিয়েছেন। কিন্তু এই পথ দিয়ে সেতুতে উঠতে বেশ বেগ পেতে হয়। ঝুঁকি নিয়ে সেতুর এক পাশ দিয়ে কয়েক কিলোমিটার হেঁটে এসব গ্রামের বাসিন্দাদের চলাচল করতে হচ্ছে। তবে সংযোগ সড়ক না থাকায় কোনো যানবাহন চলে না এ সেতুতে।
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা হলে জানান, ১০ মিনিটের রাস্তা অথচ সংযোগ সড়ক না থাকায় সময় লাগছে এক ঘণ্টার বেশি। সংযোগ সড়কটি হলে সাধারণ মানুষ গাড়ি, ভ্যান–রিকশা নিয়ে ওই সেতু দিয়ে চলাচল করতে পারত। এতে ঝুঁকির পাশাপাশি সময় অপচয়ও এড়ানো যেত। সেতুর পশ্চিম পাশে তুরাগ নদের কোলঘেঁষা বহু পুরোনো সাকাশ্বর বাজার। আশপাশের ১০-১৫টি গ্রামের মানুষ এখানে হাটবাজার করতে আসেন প্রতিদিন। যখন সেতুটি ছিল না, তখন নদী পারাপারের জন্য নৌকা ছিল। কিন্তু সেতু হওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে সেই নৌকা। এখন আর নৌকায় পারাপারের কোনো সুযোগ নেই। অনেক সময় স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থী ও বয়স্করা ব্রিজে উঠতে গিয়ে পড়ে আহত হচ্ছেন।
স্থানীয়রা জানায়, মাস্টারবাড়ি-খালিশাবর্তা-সাকাশ্বর সড়কে তুরাগ নদের ওপর নির্মিত সেতুর নাম দেওয়া হয়েছে মন্ত্রী সামসুল হক ব্রিজ। খালিশাবর্তা মৌজার পুরো অংশজুড়ে ফসলি জমি। সেতু নির্মাণের পূর্বে মানুষের যাতায়াতের একমাত্র অবলম্বন ছিল নৌকা। সেতু হওয়ায় নৌকা চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এখন কৃষক ও আশপাশের কয়েক গ্রামের মানুষ ঝুঁকি নিয়ে সেতুর ওপর দিয়ে চলাচল করছে। সেতুতে ওঠার রাস্তা ভাঙাচোরা, উঁচু ও ঝুঁকিপূর্ণ। বয়স্ক, নারী ও শিশুদের অন্যের সহযোগিতায় সেতুতে উঠতে হয়। এতে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। বর্ষা মৌসুমে থাকে অথৈ জল। ব্রিজ না থাকলে আশপাশের গ্রামের লোকজন সাকাশ্বর বাজারে নৌকা নিয়ে যেতেন। এখন সেটি সম্ভব হয় না, ফলে চরম ভোগান্তি হচ্ছে।
স্থানীয় আকরাম হোসেন বলেন, ৬ বছর আগে সেতু হয়েছে, অথচ সড়ক নির্মাণ করা হয়নি। সেতু নির্মাণকালে এলাকাবাসী যেমন আনন্দিত হয়েছিল এখন ততোটাই দুঃখবোধ ঘিরে ধরেছে। এই সেতু এখন আশপাশের মানুষের গলার কাঁটা হয়ে উঠেছে। সেতুটিতে উঠতে পাহাড়ের মতো মনে হয়। কৃষকরা তাদের কাজ করতে পারে না, মালামাল উঠানামা করতে পারে না। আমরা এই ভোগান্তি থেকে মুক্তি চাই।
সাকাশ্বর এলাকার গৃহবধূ আসমা আক্তার বলেন, সেতুর সঙ্গে সংযোগ সড়ক না থাকায় ১০-১২টি গ্রামের হাজারো মানুষকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি সমস্যা কৃষক ও স্কুলপড়ুয়া নারী শিক্ষার্থীদের। বেশ কয়েকবার রাস্তা হওয়ার গুঞ্জন উঠলেও আবার অজানা কারণে সড়ক নির্মাণ হয় না। এলাকাবাসী মেয়র-কাউন্সিলরের কাছে বহুবার গিয়েও কোনো সুনির্দিষ্ট আশ্বাস পায়নি।
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ২১ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন বলেন, একবার রাস্তার দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল, কিন্তু এলাকার মানুষ জমি দেয়নি। এজন্য দরপত্রের প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। এরপর আবারও একটি প্রজেক্ট দেওয়া হয়। কিন্তু সেটাতেও মাটি কাটতে বাধা তৈরি হয়। পরে মেয়রও চলে গেল। তবে রাস্তাটা হওয়া খুবই প্রয়োজন। এতে আমাদের কালিয়াকৈরসহ এলাকাগুলোতে যাতায়াত ব্যবস্থা সহজ হবে।
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের জোন ৫-এর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী একেএম হারুনুর রশীদ বলেন, সংযোগ সড়কের জন্য আমাদের প্রকল্প তৈরি করা হয়েছে। সবকিছু স্বাভাবিক হলে ফের দরপত্র আহ্বান করা হবে।