কক্সবাজার সংবাদদাতা : কক্সবাজারের টেকনাফের আলোচিত-সমালোচিত পুলিশ কর্মকর্তা এএসআই মোশাররফ হোসেন। আওয়ামী আমলে টেকনাফে পুলিশিংয়ে বাইরে গিয়ে রীতিমতো তাণ্ডব চালান তিনি। এএসআই মোশাররফ ছিলেন টেকনাফ থানায় এক আতঙ্কের নাম। এমনটাই সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রচলিত আছে। জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় আওয়ামী লীগের একজন ক্যাডারের মতো ভূমিকা পালন করেন এএসআই মোশাররফ। এমনকি আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতাকে বেধড়ক পেটানোসহ আটক করে থানায় নিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করতেন বলেও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। বিশেষ করে টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের যেখানে দেখতেন পেটাতে কসুর করতেন না। এমন গুরুতর অভিযোগের ভিত্তিতে সম্প্রতি সংবাদ প্রকাশিত হলে এএসআই মোশাররফকে কুতুবদিয়া থানায় বদলির আদেশ দেয়া হয়। এ তথ্য তখন নিশ্চিত করেছিলেন ওসি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন। কিন্তু প্রায় এক মাস পেরিয়ে গেলেও টেকনাফ থানায় বহাল তবিয়তে রয়েছেন মোশাররফ। এতে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন সচেতন মহল। অভিযোগ উঠেছে, টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিনের আশীর্বাদে এখনো টেকনাফ থানায় বহাল আছেন এএসআই মোশাররফ। ২৪-এর আন্দোলনকারী ছাত্রদের পেটানো এবং আটক করে টাকা আদায় করার মতো গুরুতর অভিযোগে অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তা এতদিন কীভাবে টেকনাফ থানায় বহাল থাকে? তাকে দ্রুত চাকরিচ্যুত করে গ্রেপ্তারের দাবি জানান টেকনাফের স্থানীয় ভুক্তভোগী ছাত্র-জনতা। মোশাররফের হাতে নির্যাতিত বিএনপির এক নেতা অভিযোগ করে বলেন, ‘মোশাররফ মূলত আওয়ামী লীগের একজন ক্যাডার। ৫ আগস্টের পরও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও বিভিন্ন মামলার আসামিদের ফোন করে অভিযানের খবর জানিয়ে দেন তিনি। ফলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান ব্যর্থ হচ্ছে।’ কোন শক্তির বদৌলতে মোশাররফ টেকনাফ থানায় এখনো বহাল রয়েছেন, এমন প্রশ্ন বিএনপির এই নেতার। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের পুনর্বহাল করতে এএসআই মোশাররফ টেকনাফে কাজ করছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। আওয়ামী লীগকে সুবিধা দিতেই টেকনাফে অবস্থান করছেন তিনি। দ্রুত তাকে টেকনাফ থানা থেকে সরানো না হলে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলা হবে বলে হুঁশিয়ার করেন বিএনপির ভূক্তভোগী ওই নেতা। এএসআই মোশাররফকে আইনের আওতায় আনার দাবিও জানান তিনি। জানতে চাইলে টেকনাফ মডেল থানার ওসি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের কাজের কিছু সিস্টেম আছে। এই সপ্তাহের মধ্যে টেকনাফ থানা থেকে চলে যাবে এএসআই মোশাররফ।’ এদিকে পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এএসআই মোশাররফের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছিল টেকনাফের সাধারণ মানুষ। তার ভয়ে বিএনপি-জামায়াতের অনেক নেতাকর্মী বাড়িছাড়া হয়ে পথেঘাটে নির্ঘুম রাত কাটান বলে অনেকে জানান। টেকনাফের স্থানীয় বাসিন্দা শিক্ষার্থী জিয়াউল ইলহাম জানান, ছাত্র আন্দোলনে যোগ দেয়ার কারণে তাকে আটক করে নিয়ে যান মোশাররফ। সারা রাত আটকে রেখে ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে ফজরের আগে আগে তাকে ছাড়া হয়। একই সঙ্গে হুমকি দেন আবার আন্দোলনে গেলে তার মা-বাবাকে গ্রেপ্তার করবেন। এখন তিনি ভিন্ন রূপ ধারণ করে এখনো টেকনাফ থানায় বহাল। এএসআই মোশাররফ এভাবে অনেক আন্দোলনকারী এবং বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করতেন মামলার হুমকি দিয়ে। ওসামা নামে স্থানীয় এক দোকানদার বলেন, ‘প্রতিনিয়ত মোশাররফ দোকানে এসে হুমকি দিতেন- বিএনপির কোনো নেতাকর্মীকে দোকানে বসতে দিলে দোকান বন্ধ করে দেবেন।’ টেকনাফ উপজেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক নুরুল হুদা ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে লিখেন, ‘কন্ট্রাকে মানুষের দোকান দখলসহ বাজারের এক চায়ের দোকানে ওপেন ঘুষ-বাণিজ্যের হাট বসাতেন এএসআই মোশাররফ। কায়েম করেছিলেন ত্রাসের রাজত্ব। এমনকি ৩ আগস্টেও তিনি আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতার ওপর হামলার চেষ্টা চালান। তিনি কীভাবে এখনো বহাল থাকেন?’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভুক্তভোগী নারী বলেন, ‘প্রতিবেশী কিছু দুর্বৃত্তের হাতে মারধরের শিকার হয়ে টেকনাফ মডেল থানায় একটি অভিযোগ করেছিলাম গত ২১ সেপ্টেম্বর। সেই অভিযোগের তদন্তের দায়িত্ব পান এএসআই মোশাররফ। তিনি কিছু খরচ নিয়েছেন। এক মাস পেরিয়ে গেলেও কোনো ব্যবস্থা নেননি তিনি।’
বদলি আদেশের পরও বহাল এএসআই, জানিয়ে দেন অভিযানের খবর!
জনপ্রিয় সংবাদ