নিজস্ব প্রতিবেদক : উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদ থাকবে না, এমন সুপারিশ করবেন বলে জানিয়েছেন নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য ড. তোফায়েল আহমেদ।
বুধবার (২৭ নভেম্বর) জাতীয় সংসদ ভবনের কেবিনেট কক্ষে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী, দলিত ও প্রতিবন্ধীসহ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এ তথ্য জানান তিনি। ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, আমাদের সুপারিশ এমন, উপজেলা পরিষদে নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদ থাকছে না। সব উপজেলায় ওয়ার্ড হবে। একটা উপজেলায় ১০টি ইউনিয়ন থাকলে ৩০টি আসন (উপজেলা ওয়ার্ড) হবে। ৩০ জন নির্বাচিত হয়ে একজন চেয়ারম্যান (নির্বাচন) করবেন, ভাইস চেয়ারম্যান করবেন। সরাসরি এটা হবে না। জেলা পরিষদেরও কিন্তু ওয়ার্ড থাকবে আরও বেশি। তখন কিন্তু দাঁড়ানো (প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার) ও নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ বাড়বে। তবে আদিবাসীদের জন্য কতটুকু বাড়বে তা দেখার বিষয়। না বাড়লে তাদের স্থায়ী কমিটিতে নিতে হবে। তিনি বলেন, আমরা যদি সুপারিশ ঠিক মতো দিতে পারি, আর সরকার যদি সেটা গ্রহণ করে, তাহলে স্থানীয় সরকারে একটা বৈপ্লবিক পরিবর্তন হতে পারে। উপজেলায় কোনো ওয়ার্ড নেই। আমরা চিন্তা করছি এখানেও ওয়ার্ড হবে। একজন নারী, দুইজন পুরুষের সাধারণ আসন থাকবে। স্থানীয় সরকারে নারীদের সরাসরি নির্বাচন করতে বাধা নেই। এখন কোনো ইউনিয়নের ১৩ ওয়ার্ডেই যদি নারী প্রার্থী আসেন কেউ বাধা দিতে পারবে না। তোফায়েল আহমেদ আরও বলেন, গত তিন নির্বাচনে যে ভয়াবহতা হয়েছে, সেটা কি সামনেও হবে? এজন্য রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন হতে হবে আদিবাসীদের মধ্যে। ছাত্র-জনতার মুভমেন্ট হয়েছে, তাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার দরকার আছে। আমি আদিবাসী থাকবো, কারও সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকবো না- এই চিন্তা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
বিচারহীনতার সংস্কৃতির অবসান হওয়া দরকার: নির্বাচন সংস্কার কমিশনের প্রধান ও সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, আমাদের বিচারহীনতা সংস্কৃতির অবসান হওয়া দরকার। জাতি-ধর্ম নির্বিশেষ আমরা এক পরিবারের সদস্য। এর মধ্যে বিভাজন হওয়া উচিত নয়। বুধবার (২৭ নভেম্বর) জাতীয় সংসদ ভবনের কেবিনেট কক্ষে ‘ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী, দলিত ও প্রতিবন্ধীসহ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে মতবিনিময়ে এসব কথা বলেন সংস্কার কমিশন প্রধান। ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, রোটেশন পদ্ধতিতে স্থানীয় সরকারে নারীদের জন্য ভোট হতে পারে। এতে পর্যায়ক্রমে নারীরা সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হয়ে আসতে পারবে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গে যেমন ঘূর্ণায়মান পদ্ধতিতে ভোট হয়। বাস্তবে সেখানে নারীর প্রতিনিধিত্ব অনেক বেশি হয়। কোনো কোনো জায়গায় পুরুষের চেয়েও বেশি হয়। সুজন সম্পাদক বলেন, আমাদের সুপারিশ এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে একটা কথা নিশ্চিত। আদিবাসী, দলিত বা পিছিয়ে পড়া কোনো গোষ্ঠী কোনোরকম যেন বৈষম্যের শিকার না হয়। ভোটাধিকার থেকে শুরু করে আইনি অধিকার এগুলো যেন প্রতিষ্ঠিত হয়। আমাদের যে অনেকগুলো অসংগতি আছে, যা আমরা চিহ্নিত করেছি যেমন-দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট সংসদ, প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করা, উচ্চকক্ষ কীভাবে নির্বাচিত হবে, নারীর জন্য সংরক্ষণ পদ্ধতি, ঘূর্ণায়মান পদ্ধতিতে নারীদের জন্য আসন সংরক্ষণ যা অতীতের সংলাপে জোরালোভাবে এসেছে; আমরা এগুলো সততার সঙ্গে নোট নিয়েছি। তিনি বলেন, ভোটার তালিকা নিয়ে আদিবাসী সম্প্রদায় ও অন্য বিভিন্ন সম্প্রদায়ের সমস্যা আছে। আমার পরিবারের সদস্যদের নামেও ভুল আছে। এই ব্যাপারে আমরা সুপারিশ করব। আমাদের জন্য অপূর্ব সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। অতীতে যত অন্যায়, বৈষম্য করা হয়েছে, তা দূর করার সুযোগ এসেছে। এমন একটা দেশ গড়তে চাই যেখানে সবার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি হবে। যেই চেতনা থেকে আন্দোলন হয়েছে, সেই চেতনার ভিত্তিতেই আমরা পরিচালিত হতে চাই।
উপজেলা নির্বাচনে বাদ যেতে পারে নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদ
জনপ্রিয় সংবাদ