ঢাকা ১২:৪৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রোহিঙ্গা নিপীড়নের অভিযোগ,মিয়ানমার জান্তা প্রধানের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানার আবেদন

  • আপডেট সময় : ০৮:২৪:৩৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪
  • ৪ বার পড়া হয়েছে

বিদেশের খবর ডেস্ক : রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে নিপীড়নের অভিযোগে মিয়ানমারের সামরিক শাসক মিন অং হ্লাইংয়ের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক গ্রেফতারি পরোয়ানা চেয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) প্রসিকিউটর করিম খান। তিনি গতকাল বুধবার (২৭ নভেম্বর) জানিয়েছেন, ২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলকারী এই নেতা রোহিঙ্গা নিপীড়নের জন্য মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এ খবর জানিয়েছে। আইসিসির প্রসিকিউটর কার্যালয় জানিয়েছে, ২০১৬-১৭ সালে রাখাইন রাজ্যে সহিংসতার সময় সংঘটিত অপরাধ তদন্তে পাঁচ বছর ধরে কাজ চলছে। ওই সময় মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর ভয়াবহ অভিযান চালায়। হত্যাকাণ্ড, ধর্ষণ, নির্যাতন ও অগ্নিসংযোগের ফলে অন্তত ৭ লাখ রোহিঙ্গা প্রতিবেশী বাংলাদেশে পালাতে বাধ্য হয়। প্রসিকিউটরের বক্তব্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনী, জাতীয় পুলিশ, সীমান্তরক্ষী বাহিনী এবং কিছু স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সহযোগিতায় এই মানবতাবিরোধী অপরাধ সংগঠিত হয়েছে।
আইসিসি প্রসিকিউটরের বক্তব্য
করিম খান বলেন, এই অপরাধগুলো মিয়ানমার ও আংশিকভাবে বাংলাদেশে সংঘটিত হয়েছে। মিন অং হ্লাইং রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে নিপীড়ন ও দেশান্তরিত করার দায়ে অপরাধী। তিনি আরও বলেন, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর দৃঢ়তা এবং তাদের আইনের প্রতি আস্থার প্রতীক হিসেবে আইসিসি কাজ করে যাচ্ছে। দশ লাখের বেশি রোহিঙ্গা সামরিক অভিযানে বাস্তুচ্যুত হয়েছে। আইসিসির বিচারকরা এখন এই আবেদনটি পর্যালোচনা করে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হবে কিনা তা নির্ধারণ করবেন। পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে কয়েক মাস লাগতে পারে।
মিয়ানমারের পরিস্থিতি ও চীনের ভূমিকা
সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে মিয়ানমারে অস্থিরতা ক্রমেই বেড়েছে। বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠী সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করে কিছু অঞ্চলে বিজয় অর্জন করেছে। বিশেষ করে চীন সীমান্তবর্তী এলাকায় এই লড়াই তীব্র হয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর প্রধান অস্ত্র সরবরাহকারী এবং বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার হলেও সীমান্ত এলাকায় অস্থিরতা ও অপরাধ নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছে চীন। চলতি মাসের শুরুতে ক্ষমতা দখলের পর চীনে প্রথম সফর করেন মিন অং হ্লাইং।
রোহিঙ্গা নিপীড়ন ও জাতিসংঘের তদন্ত
জাতিসংঘের তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, গণহত্যার উদ্দেশ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালানো হয়েছে। মিয়ানমার অবশ্য এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। ২০২২ সালে জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালত আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গাম্বিয়ার দায়ের করা গণহত্যার মামলাটি শুরু হয়। এর পাশাপাশি কানাডা ও পাঁচটি ইউরোপীয় দেশ এই মামলায় অংশগ্রহণ করেছে।
প্রসিকিউটরের প্রতিশ্রুতি
বাংলাদেশের শরণার্থী শিবির থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে করিম খান বলেন, রোহিঙ্গাদের ভুলে যাওয়া হয়নি। আইনের সুরক্ষার অধিকার তাদেরও রয়েছে। তিনি আরও জানান, মিন অং হ্লাইংয়ের বিরুদ্ধে এই প্রথম গ্রেফতারি পরোয়ানার আবেদন করা হলেও ভবিষ্যতে আরও আবেদন করা হবে। মিয়ানমারের সামরিক সরকারের কোনও কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আইসিসির প্রথম পদক্ষেপ। কয়েক মাস আগেই ইসরায়েলি ও হামাস নেতাদের বিরুদ্ধে একই ধরনের গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছিল।

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

ঋণ পরিশোধে ৮ বছর সময় পাবেন আমদানিকারকরা

রোহিঙ্গা নিপীড়নের অভিযোগ,মিয়ানমার জান্তা প্রধানের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানার আবেদন

আপডেট সময় : ০৮:২৪:৩৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪

বিদেশের খবর ডেস্ক : রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে নিপীড়নের অভিযোগে মিয়ানমারের সামরিক শাসক মিন অং হ্লাইংয়ের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক গ্রেফতারি পরোয়ানা চেয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) প্রসিকিউটর করিম খান। তিনি গতকাল বুধবার (২৭ নভেম্বর) জানিয়েছেন, ২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলকারী এই নেতা রোহিঙ্গা নিপীড়নের জন্য মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এ খবর জানিয়েছে। আইসিসির প্রসিকিউটর কার্যালয় জানিয়েছে, ২০১৬-১৭ সালে রাখাইন রাজ্যে সহিংসতার সময় সংঘটিত অপরাধ তদন্তে পাঁচ বছর ধরে কাজ চলছে। ওই সময় মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর ভয়াবহ অভিযান চালায়। হত্যাকাণ্ড, ধর্ষণ, নির্যাতন ও অগ্নিসংযোগের ফলে অন্তত ৭ লাখ রোহিঙ্গা প্রতিবেশী বাংলাদেশে পালাতে বাধ্য হয়। প্রসিকিউটরের বক্তব্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনী, জাতীয় পুলিশ, সীমান্তরক্ষী বাহিনী এবং কিছু স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সহযোগিতায় এই মানবতাবিরোধী অপরাধ সংগঠিত হয়েছে।
আইসিসি প্রসিকিউটরের বক্তব্য
করিম খান বলেন, এই অপরাধগুলো মিয়ানমার ও আংশিকভাবে বাংলাদেশে সংঘটিত হয়েছে। মিন অং হ্লাইং রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে নিপীড়ন ও দেশান্তরিত করার দায়ে অপরাধী। তিনি আরও বলেন, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর দৃঢ়তা এবং তাদের আইনের প্রতি আস্থার প্রতীক হিসেবে আইসিসি কাজ করে যাচ্ছে। দশ লাখের বেশি রোহিঙ্গা সামরিক অভিযানে বাস্তুচ্যুত হয়েছে। আইসিসির বিচারকরা এখন এই আবেদনটি পর্যালোচনা করে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হবে কিনা তা নির্ধারণ করবেন। পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে কয়েক মাস লাগতে পারে।
মিয়ানমারের পরিস্থিতি ও চীনের ভূমিকা
সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে মিয়ানমারে অস্থিরতা ক্রমেই বেড়েছে। বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠী সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করে কিছু অঞ্চলে বিজয় অর্জন করেছে। বিশেষ করে চীন সীমান্তবর্তী এলাকায় এই লড়াই তীব্র হয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর প্রধান অস্ত্র সরবরাহকারী এবং বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার হলেও সীমান্ত এলাকায় অস্থিরতা ও অপরাধ নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছে চীন। চলতি মাসের শুরুতে ক্ষমতা দখলের পর চীনে প্রথম সফর করেন মিন অং হ্লাইং।
রোহিঙ্গা নিপীড়ন ও জাতিসংঘের তদন্ত
জাতিসংঘের তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, গণহত্যার উদ্দেশ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালানো হয়েছে। মিয়ানমার অবশ্য এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। ২০২২ সালে জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালত আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গাম্বিয়ার দায়ের করা গণহত্যার মামলাটি শুরু হয়। এর পাশাপাশি কানাডা ও পাঁচটি ইউরোপীয় দেশ এই মামলায় অংশগ্রহণ করেছে।
প্রসিকিউটরের প্রতিশ্রুতি
বাংলাদেশের শরণার্থী শিবির থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে করিম খান বলেন, রোহিঙ্গাদের ভুলে যাওয়া হয়নি। আইনের সুরক্ষার অধিকার তাদেরও রয়েছে। তিনি আরও জানান, মিন অং হ্লাইংয়ের বিরুদ্ধে এই প্রথম গ্রেফতারি পরোয়ানার আবেদন করা হলেও ভবিষ্যতে আরও আবেদন করা হবে। মিয়ানমারের সামরিক সরকারের কোনও কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আইসিসির প্রথম পদক্ষেপ। কয়েক মাস আগেই ইসরায়েলি ও হামাস নেতাদের বিরুদ্ধে একই ধরনের গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছিল।