নিজস্ব প্রতিবেদক : বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার যে টাকা লুটপাট করেছে, সে টাকা এখন গুজব ছড়াতে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করছে বলে জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেছেন, দেশে এবং দেশের বাইরে এই সরকারের (অন্তর্বর্তী সরকার) বিরুদ্ধে নানা ধরনের ষড়যন্ত্র প্রতিদিনই আছে। ফ্যাসিস্ট সরকার যে টাকা লুটপাট করেছে, সে টাকা এখন ব্যাপকভাবে ব্যবহার করছে।
মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) দুপুরে সচিবালয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। সোমবার (২৫ নভেম্বর) কয়েকটি কলেজের ছাত্রদের সংঘর্ষে হতাহত নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, ফেসবুক অ্যানালাইসিস করেন তাহলে দেখবেন, গতকাল (সোমবার) সোহরাওয়ার্দী কলেজের ছাত্ররা যে নিহত হয়েছেন, সেটা কিন্তু বিগত সরকারের দলীয় কর্মীরা ব্যাপকভাবে প্রচার করেছে। মূলত তারা যেকোনোভাবে একটা অস্থিরতা তৈরি করতে চায়, উত্তেজনা তৈরি করতে চায়। সেই ষড়যন্ত্র বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে আছে। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার যে টাকা লুটপাট করেছে, সে টাকা এখন ব্যাপকভাবে ব্যবহার করছে গুজব ছড়াতে।
সেই জায়গায় সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যমের ভূমিকা অনেক বেশি উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারা যদি দায়িত্বশীল ভূমিকা নিতে পারে তাহলে বাংলাদেশের জনগণ মনে রাখবে। আমাদের এই পরিবর্তিত সময়ে সরকারের পাশাপাশি গণমাধ্যম একটা বড় জায়গা। ষড়যন্ত্র আছে সেই ষড়যন্ত্র আমরা উড়িয়ে দিতে চাই না। আমরা আমাদের যে দায়িত্ব ও করণীয় সেটা করছি। আমরা আপনাদের সমালোচনা নিচ্ছি ও সবার সহযোগিতা কামনা করছি। দেশের আইন-শৃঙ্খলার পরিস্থিতি কি এ রকমই থাকবে নাকি আরো কঠোর অবস্থানে যাবেন এমন প্রশ্নের জবাবে নাহিদ ইসলাম বলেন, পরিস্থিতি তো পরিবর্তন হবে। আমরা পুলিশ ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আনতে চাইছি। পুলিশ সংস্কার কমিশন আছে তারা সুপারিশ করছে। সবাইকে বুঝতে হবে আমরা বিপ্লব পরবর্তী অবস্থার মধ্যে আছি। বিপ্লবের মধ্যেই ল অ্যান্ড অর্ডারের পরিবর্তন হয়। তবে সেটা তৈরি করতে কিছুদিন সময় লাগবে। তিনি বলেন, যেকোনো দেশে বিপ্লব পরবর্তী ও গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে জনগণের ভেতরে যে নানা ধরনের শক্তির অংশ থাকে তাদের অনেক ভূমিকা রাখতে হয়। যেমন সামাজিক বিভিন্ন সংগঠন, রাজনৈতিক দলগুলো থেকে সহায়তা দরকার, সেটা আমরা বরাবর চাইছি। পুলিশ অবশ্যই কঠোর হবে। তবে নিপীড়কের ভূমিকায় না যায় বা আমরা একটা পুলিশি রাষ্ট্র যেভাবে দেখেছি সেটা আমরা প্রত্যাশা করি না। আমরা উভয় সংকটের মধ্যে আছি। আমরা আশা করছি সে জায়গা থেকে উত্তরণ ঘটাতে পারব। কখনোই চাই না পুলিশ জনগণের বিপক্ষে, ছাত্রদের বিপক্ষে দাঁড়াক, আন্দোলনে গুলি চালাক। অবশ্যই পুলিশ জনগণকে নিরাপত্তা দেবে সে জায়গায় পুলিশ কঠোর হবে।
গঠনমূলক সমালোচনা প্রত্যাশা করি: গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের থেকে গঠনমূলক সমালোচনা প্রত্যাশা করেন বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। নাহিদ ইসলাম বলেন, আমরা সরকারের পক্ষ থেকে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন করেছি। গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন স্বাধীনভাবেই কাজ করবে। তারা সব অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করে একটা রূপরেখা উপস্থাপন করবেন। আমরা সরকারের পক্ষ থেকে আবার বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করে সেটা বাস্তবায়নের চেষ্টা করব। তথ্য উপদেষ্টা বলেন, সাংবাদিকতা কিংবা সংবাদমাধ্যম এমন একটি প্ল্যাটফর্ম, যেখানে বিভিন্ন অংশীজন একসঙ্গে ক্রিয়াশীল। এখানে অনেক পরস্পরবিরোধী অংশীজন থাকেন। ওয়েজ বোর্ডের কথাই যদি বলি, তাহলে সম্পাদক, মালিক এবং রিপোর্টাররা একেকজন একেকটা পক্ষ নেবে। সবাই মিলে এক জায়গায় আসতে হবে। তিনি বলেন, সাইবার সিকিউরিটি আইন নিয়ে আমরা ইতোমধ্যে একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। অন্য আইনগুলো আমাদের পর্যালোচনার মধ্যে আছে। সংস্কার কমিটিরও প্রধান কাজ হবে আইনগুলোর বিষয়ে পর্যালোচনা করা। যত কম সংখ্যক আইন এবং কম বাধা তৈরি করা যায়, ততই স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য ভালো। নাহিদ ইসলাম বলেন, বিগত ১৬ বছরে গণমাধ্যমের ভূমিকা আসলে কি ছিল, কারা জনগণের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিল, এটা সুস্পষ্ট থাকা উচিত। যদি কেউ ভুল করে থাকে কিংবা পরিস্থিতির শিকার হয় তাহলে তাকে ভুল স্বীকার করে মানুষের কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করতে হবে। ৫ আগস্টের পর কেউ যদি ভোল্ট পাল্টে ফেলেন, এটা তো হওয়া উচিত নয়। তাকে সত্যটা স্বীকার করা উচিত। সত্যের মধ্য দিয়ে এলেই রিকনসিলেশন সম্ভব। উপদেষ্টা বলেন, বর্তমান সরকার আসলে একটি ভিন্ন ধর্মী সরকার। সেই জায়গায় আমাদের অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। আমাদের হয়ত অনেক ভুল থাকবে। আপনারা আমাদেরকে সহযোগিতা করলে সেটা আন্তরিকভাবেই নেব। যেকোনো ধরনের সমালোচনাকে আমরা ইতিবাচকভাবেই নিচ্ছি। আমাদের প্রধান উপদেষ্টাও সেই কথা বলেছেন। গঠনমূলক সমালোচনা হলে সেটি আমাদের জন্য উপকারী হবে, এতে আমরা নিজেদের কাজের প্রতিফলন দেখতে পাই, শুধরে নিতে পারি। সেই জায়গা থেকে গণমাধ্যম ও সাংবাদিকতা থেকে আমরা গঠনমূলক সমালোচনা প্রত্যাশা করি।
পত্রিকা অফিসে ভাঙচুর হলে অবশ্যই আইনগতভাবে দেখা হবে: তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম বলেছেন, যদি পত্রিকা অফিসে ভাঙচুর ও চাপ প্রয়োগ করা হয়, তাহলে সেটা মেনে নেবেন না। আইনশৃঙ্খলাবিষয়ক পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে সরকার তার ভূমিকা পালন করবে। পত্রিকা অফিসে ভাঙচুর হলে, সেটা অবশ্যই আইনগতভাবে দেখা হবে। সচিবালয়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তথ্য উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। এর আগে গত সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক সংবাদ ব্রিফিংয়েও এমন কথা বলেছিলেন তথ্য উপদেষ্টা। ডেইলি স্টার ও প্রথম আলোর অফিসের সামনে বিক্ষোভের প্রসঙ্গ টেনে একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, এটা গণমাধ্যমের জন্য হুমকি কি না। জবাবে তথ্য উপদেষ্টা বলেন, তিনি গতকালও (সোমবার) বলেছেন, এখানে একটি ল অ্যান্ড অর্ডার সিচুয়েশন (আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিষয়) তৈরি হয়েছে। সে জায়গা থেকে সরকার ভূমিকা পালন করবে। পত্রিকা অফিসে ভাঙচুর হলে, সেটা অবশ্যই আইনগতভাবে দেখা হবে। কিন্তু এটা কেবল আইনি বিষয় নয়, বিগত সময়ে নানা গণমাধ্যমের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমের ওপর মানুষের ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। তথ্য উপদেষ্টা বলেন, সেটি স্পষ্ট করা গণমাধ্যমের দায়িত্ব–কেন ক্ষোভ? সংলাপে বসে তাদের কর্মকাণ্ড স্পষ্ট করা উচিত। তবে ল অ্যান্ড অর্ডারের জায়গায় গেলে সরকার তার ভূমিকা যেটা আছে, সেটা পালন করবে। যদি পত্রিকা অফিস ভাঙচুর ও চাপ প্রয়োগ করা হয়, তাহলে মেনে নেওয়া হবে না। পাশাপাশি জনগণের মধ্যে ক্ষোভ থাকলে শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করবে। পুলিশ যাতে শান্তিপূর্ণভাবে জনগণকে সমাবেশ করতে দেয়, সেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এই ক্ষোভ-বিক্ষোভ ষড়যন্ত্রের একটা অংশ কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তথ্য উপদেষ্টা বলেন, এটা যাঁরা আন্দোলন করছেন, তাঁরাই ভালো বলতে পারবেন।