ঢাকা ০৪:৫৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

নবাব সিরাজউদ্দৌলা পার্ক দখল করে রেস্টুরেন্ট, টয়লেটে স্টোর রুম

  • আপডেট সময় : ০৭:৪৯:০০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪
  • ৩৫ বার পড়া হয়েছে

CREATOR: gd-jpeg v1.0 (using IJG JPEG v80), quality = 85

নিজস্ব প্রতিবেদক : পুরান ঢাকার নয়াবাজার এলাকায় অবস্থিত নবাব সিরাজউদ্দৌলা পার্ক। কাগজে-কলমে নবাব সিরাজউদ্দৌলা পার্ক হলেও স্থানীয়দের কাছে এটি জিন্দাবাহার পার্ক নামে পরিচিত। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৩২ নম্বর ওয়ার্ডে এই পার্কের অবস্থান। সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্য কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন আঙ্গিকে নির্মিত ঐতিহ্যবাহী পার্কটি এখন ময়লার ভাগাড়। শুধু ময়লায় পার্কের বেহাল দশা নয়, নতুন করে দখলদারদের থাবা পড়েছে এখানে। পার্কের জায়গা দখল করে নির্মাণ করা হচ্ছে রেস্টুরেন্ট। এমনকি পার্কের একমাত্র পাবলিক টয়লেটটিও ব্যবহৃত হচ্ছে স্টোর রুম হিসেবে।
একটি সংবাদসংস্থা সরেজমিন দেখে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, পার্কের একপাশে কফি শপের জন্য রাখা নির্দিষ্ট সীমানা ছাড়িয়ে ভেতরে নির্মাণ করা হচ্ছে রেস্টুরেন্ট। সেই রেস্টুরেন্টের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে পার্কের একমাত্র পাবলিক টয়লেটটি। পার্কের ভেতরে টিনের ঘর নির্মাণ করে থাকছে শ্রমিকরা। এছাড়াও দায়িত্বশীলদের অব্যবস্থাপনার কারণে পুরো পার্কের বেহাল অবস্থা। নষ্ট ফোয়ারা, ভাঙা সীমানা প্রাচীর, আলোকসজ্জার সব লাইট চুরি হয়ে গেছে বহু আগে। সাধারণ মানুষের হাত-মুখ ধোয়ার জন্য নির্মিত বেসিনে ধনিয়া পাতার গাছ। কোনোটিতে পানির কল অবশিষ্ট নেই। চারপাশে অর্ধশতাধিক ফুটপাতের দোকান। ভেতরে নির্মাণ করা হয়েছে শ্রমিকদের আবাসন।
জানা যায়, পার্কে দখলদারত্ব শুরু হয়েছে মূলত ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর থেকে। তবে আগে থেকেই পার্কের অবস্থা শোচনীয় ছিল। পুরান ঢাকার নয়াবাজারের স্থানীয় বাসিন্দা শওকত আলী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, হাসিনা চলে যাওয়ার পর শুধু পার্ক না, এই এলাকায় বিভিন্ন জায়গা নতুন করে দখল হয়েছে। ফুটপাত থেকে শুরু করে বেশিরভাগ খালি জায়গা এখন দখলে চলে গেছে। এলাকার মানুষের হাঁটাহাঁটির একমাত্র জায়গা এই জিন্দাবাহার পার্ক। সেটির একাংশ দখল করে তৈরি হচ্ছে রেস্টুরেন্ট। ডিএসসিসির ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ফাহমিদা খাতুন জানান, পার্কটি নতুন করে সংস্কার করার পর আলোকসজ্জা করা হয়েছিল। পুরো পার্কে রঙবেরঙের বাতি জ্বালানো হতো। এখন এর কিছুই নেই। জনসাধারণের পানি খাওয়া এবং হাত-মুখ ধোয়ার জন্য বেসিনের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। সেটিও এখন নেই। সেখানে এখন ধনিয়া পাতা রোপণ করা হয়েছে। পার্কের ফোয়ারাটা নষ্ট, সেখানকার কোনও কল ঠিক নেই। টোকাইরা সব ভেঙেচুরে নিয়ে গেছে নেশার টাকা জোগাড় করতে। এই বাসিন্দা আরও বলেন, সবচেয়ে বড় কথা এই পার্ক রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কেউ যদি দায়িত্বে থাকতো তাহলে পার্কের এই দশা হতো না। সিটি করপোরেশন থেকে শুনেছি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য লোক দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাদের চেহারা কখনও দেখা যায়নি। দায়িত্বপ্রাপ্তরা যদি পার্কের দেখভাল করতো তাহলে এই দশা হতো না। পার্কের অভ্যন্তরে জায়গা দখল করে রেস্টুরেন্ট নির্মাণের বিষয়ে কেউ কথা বলতে রাজি না হলেও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাব্বির নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে এই কাজ করছেন। পার্কে রেস্টুরেন্ট নির্মাণের সঙ্গে জড়িত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বলেন, আমরা অনুমতি নিয়েই করছি। এখানে আমরা রেস্টুরেন্ট এবং পাবলিক টয়লেটের ইজারা নিয়েছি। তাই এসব কাজ আমরাই করছি। টয়লেটকে স্টোর রুম হিসেবে ব্যবহার করার বিষয়ে এই কর্মচারী বলেন, আমরা যেহেতু ইজারা নিয়েছি সেক্ষেত্রে এখানে কী করবো না করবো সেটা আমাদের বিষয়। আপনার সমস্যা থাকলে আপনি সিটি করপোরেশনে জানান। পার্কের রক্ষণাবেক্ষণ এবং জায়গা দখল করে রেস্টুরেন্ট নির্মাণের বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. ফজলে শামসুল কবির বলেন, পার্কের রক্ষণাবেক্ষণ এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দায়িত্বে লোকবল আছে। কেউ যদি তাদের দায়িত্বে অবহেলা করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দখলদারত্বের বিষয়ে তিনি বলেন, সব ধরনের দখলদার উচ্ছেদ করা হবে। পার্কের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে, শিগগিরই এ নিয়ে আমরা আমাদের পরিকল্পনা জানাবো।

 

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

নবাব সিরাজউদ্দৌলা পার্ক দখল করে রেস্টুরেন্ট, টয়লেটে স্টোর রুম

আপডেট সময় : ০৭:৪৯:০০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক : পুরান ঢাকার নয়াবাজার এলাকায় অবস্থিত নবাব সিরাজউদ্দৌলা পার্ক। কাগজে-কলমে নবাব সিরাজউদ্দৌলা পার্ক হলেও স্থানীয়দের কাছে এটি জিন্দাবাহার পার্ক নামে পরিচিত। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৩২ নম্বর ওয়ার্ডে এই পার্কের অবস্থান। সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্য কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন আঙ্গিকে নির্মিত ঐতিহ্যবাহী পার্কটি এখন ময়লার ভাগাড়। শুধু ময়লায় পার্কের বেহাল দশা নয়, নতুন করে দখলদারদের থাবা পড়েছে এখানে। পার্কের জায়গা দখল করে নির্মাণ করা হচ্ছে রেস্টুরেন্ট। এমনকি পার্কের একমাত্র পাবলিক টয়লেটটিও ব্যবহৃত হচ্ছে স্টোর রুম হিসেবে।
একটি সংবাদসংস্থা সরেজমিন দেখে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, পার্কের একপাশে কফি শপের জন্য রাখা নির্দিষ্ট সীমানা ছাড়িয়ে ভেতরে নির্মাণ করা হচ্ছে রেস্টুরেন্ট। সেই রেস্টুরেন্টের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে পার্কের একমাত্র পাবলিক টয়লেটটি। পার্কের ভেতরে টিনের ঘর নির্মাণ করে থাকছে শ্রমিকরা। এছাড়াও দায়িত্বশীলদের অব্যবস্থাপনার কারণে পুরো পার্কের বেহাল অবস্থা। নষ্ট ফোয়ারা, ভাঙা সীমানা প্রাচীর, আলোকসজ্জার সব লাইট চুরি হয়ে গেছে বহু আগে। সাধারণ মানুষের হাত-মুখ ধোয়ার জন্য নির্মিত বেসিনে ধনিয়া পাতার গাছ। কোনোটিতে পানির কল অবশিষ্ট নেই। চারপাশে অর্ধশতাধিক ফুটপাতের দোকান। ভেতরে নির্মাণ করা হয়েছে শ্রমিকদের আবাসন।
জানা যায়, পার্কে দখলদারত্ব শুরু হয়েছে মূলত ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর থেকে। তবে আগে থেকেই পার্কের অবস্থা শোচনীয় ছিল। পুরান ঢাকার নয়াবাজারের স্থানীয় বাসিন্দা শওকত আলী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, হাসিনা চলে যাওয়ার পর শুধু পার্ক না, এই এলাকায় বিভিন্ন জায়গা নতুন করে দখল হয়েছে। ফুটপাত থেকে শুরু করে বেশিরভাগ খালি জায়গা এখন দখলে চলে গেছে। এলাকার মানুষের হাঁটাহাঁটির একমাত্র জায়গা এই জিন্দাবাহার পার্ক। সেটির একাংশ দখল করে তৈরি হচ্ছে রেস্টুরেন্ট। ডিএসসিসির ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ফাহমিদা খাতুন জানান, পার্কটি নতুন করে সংস্কার করার পর আলোকসজ্জা করা হয়েছিল। পুরো পার্কে রঙবেরঙের বাতি জ্বালানো হতো। এখন এর কিছুই নেই। জনসাধারণের পানি খাওয়া এবং হাত-মুখ ধোয়ার জন্য বেসিনের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। সেটিও এখন নেই। সেখানে এখন ধনিয়া পাতা রোপণ করা হয়েছে। পার্কের ফোয়ারাটা নষ্ট, সেখানকার কোনও কল ঠিক নেই। টোকাইরা সব ভেঙেচুরে নিয়ে গেছে নেশার টাকা জোগাড় করতে। এই বাসিন্দা আরও বলেন, সবচেয়ে বড় কথা এই পার্ক রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কেউ যদি দায়িত্বে থাকতো তাহলে পার্কের এই দশা হতো না। সিটি করপোরেশন থেকে শুনেছি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য লোক দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাদের চেহারা কখনও দেখা যায়নি। দায়িত্বপ্রাপ্তরা যদি পার্কের দেখভাল করতো তাহলে এই দশা হতো না। পার্কের অভ্যন্তরে জায়গা দখল করে রেস্টুরেন্ট নির্মাণের বিষয়ে কেউ কথা বলতে রাজি না হলেও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাব্বির নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে এই কাজ করছেন। পার্কে রেস্টুরেন্ট নির্মাণের সঙ্গে জড়িত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বলেন, আমরা অনুমতি নিয়েই করছি। এখানে আমরা রেস্টুরেন্ট এবং পাবলিক টয়লেটের ইজারা নিয়েছি। তাই এসব কাজ আমরাই করছি। টয়লেটকে স্টোর রুম হিসেবে ব্যবহার করার বিষয়ে এই কর্মচারী বলেন, আমরা যেহেতু ইজারা নিয়েছি সেক্ষেত্রে এখানে কী করবো না করবো সেটা আমাদের বিষয়। আপনার সমস্যা থাকলে আপনি সিটি করপোরেশনে জানান। পার্কের রক্ষণাবেক্ষণ এবং জায়গা দখল করে রেস্টুরেন্ট নির্মাণের বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. ফজলে শামসুল কবির বলেন, পার্কের রক্ষণাবেক্ষণ এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দায়িত্বে লোকবল আছে। কেউ যদি তাদের দায়িত্বে অবহেলা করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দখলদারত্বের বিষয়ে তিনি বলেন, সব ধরনের দখলদার উচ্ছেদ করা হবে। পার্কের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে, শিগগিরই এ নিয়ে আমরা আমাদের পরিকল্পনা জানাবো।