ঢাকা ০৩:১৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন ২০২৫

নদীর পানি কমলেও বাড়ছে ভাঙন

  • আপডেট সময় : ১২:৪৪:০২ অপরাহ্ন, সোমবার, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২১
  • ১১৩ বার পড়া হয়েছে

টাঙ্গাইল সংবাদদাতা : টাঙ্গাইলের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির কোথাও উন্নতি হয়েছে আবার কোথাও স্থিতিশীল রয়েছে। তবে বেশিরভাগ এলাকাতেই দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির সংকট। এ বছরের বন্যায় জেলার প্রায় ৮০ কিলোমিটার এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। গতকাল সোমবার জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনা, ধলেশ^রী ও ঝিনাই নদীর পানি কমলেও বংশাইসহ অন্যান্য শাখা নদীর পানি বেড়েছে। যমুনা নদীর পানি ২৪ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ৩৩ সেন্টিমিটার, ঝিনাই নদীর পানি ১৫ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ৭২ সেন্টিমিটার এবং ধলেশ^রী নদীর পানি সাত সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ৭২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বংশাই নদীর পানি চার সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ২১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বংশাই নদীতে পানি বাড়ায় জেলার বাসাইল ও মির্জাপুর উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। জানা যায়, জেলার ভূঞাপুর উপজেলার চারটি ইউনিয়ন, কালিহাতী উপজেলার সাতটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা, টাঙ্গাইল সদর উপজেলার পশ্চিমাঞ্চলের সাতটি ইউনিয়ন, নাগরপুর উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন, বাসাইল পৌরসভাসহ ছয়টি ইউনিয়ন, মির্জাপুর উপজেলার চারটি ইউনয়ন ও দেলদুয়ার উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের মানুষ পানিবন্দি দিন কাটাচ্ছেন। চলতি বন্যায় জেলার প্রায় দুই শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বন্যার পানিতে নদী, খাল, বিল ও বাড়ির আঙিনা পানিতে থই থই করছে। প্রতিদিনই নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। জানা যায়, বন্যার পানি বাড়ার পাশাপাশি ২৭ কিলোমিটার দীর্ঘ টাঙ্গাইল শহর রক্ষা বাঁধের উত্তর-পূর্বাংশে ভাঙন দেখা দিয়েছে। পাছ বেথইর এলাকায় বাঁধের ১০০ মিটার ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। এছাড়াও ভূঞাপুর, কালিহাতী, বাসাইল, মির্জাপুর, টাঙ্গাইল সদর এবং নাগরপুর অংশে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। বন্যার পানিতে টাঙ্গাইল-পটলবাজার, টাঙ্গাইল-কাকুয়া, এলেঙ্গা-মগড়া, ভূঞাপুরের গোবিন্দাসী বাজার থেকে ভালকুটিয়া পর্যন্ত পাকা সড়ক, বাসাইল পৌরসভার একটি ব্রিজ ও কাঞ্চনপুরের গ্রোথ সেন্টার-কাজিরাপাড়া সড়কের কালভার্ট পানির প্রবল স্রোতে ভেঙে গেছে। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছেন এসব এলাকার মানুষ। ভূঞাপুর উপজেলার গোবিন্দাসী ইউনিয়নের কষ্টাপাড়া এলাকার অভিজিৎ ঘোষ বলেন, ‘আমাদের এলাকার শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। বিশুদ্ধ পানিসহ শুকনা খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে।’ কালিহাতী উপজেলার মগড়া গ্রামের আশিকুর রহমান বলেন, ‘দুই সপ্তাহ আগে বন্যার পানি আমাদের বাড়িতে প্রবেশ করেছে। এতে যাতায়াতসহ যাবতীয় কাজ করতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।’ সদর উপজেলার সুরুজ গ্রামের আব্দুল্লাহ বলেন, ‘আমাদের বাড়িসহ এলাকার পাকা রাস্তা তলিয়ে গেছে। কয়েক দিন ধরে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।’ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় এবার ৮৯ হাজার হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধানের চাষ করা হয়। এরমধ্যে ৭৯০ হেক্টর জমির ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। টাঙ্গাইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আহসানুল বাশার জানান, চলতি বন্যার পানি এক সপ্তাহের মধ্যে নেমে গেলে ক্ষতিগ্রস্ত ৭৯০ হেক্টর জমির আবাদকৃত রোপা আমনের ৫০-৬০ ভাগ ধান রক্ষা পেতে পারে। পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত জমিতে নাভি জাতের আমন রোপনের জন্য কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছেন তারা। টাঙ্গাইল সদর উপজেলার হুগড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেন খান তোফা বলেন, ‘আমার ইউনিয়নের প্রায় ৮টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে চার হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।’ জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, বন্যা দুর্গতদের জন্য চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বন্যার ক্ষয়ক্ষতি নিরূপনের জন্য প্রতিটি উপজেলায় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তালিকা পেলে যথাস্থানে প্রয়োজনীয় সহায়তা পাঠানো হবে। এছাড়াও কালিহাতী উপজেলায় ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত ১১৮টি পরিবারের মাঝে নগদ ৫ হাজার টাকা ও ঢেউটিন দেয়া হয়েছে। ৯০টি পরিবারকে দেওয়া হয়েছে ১০ হাজার করে টাকা।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

নদীর পানি কমলেও বাড়ছে ভাঙন

আপডেট সময় : ১২:৪৪:০২ অপরাহ্ন, সোমবার, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২১

টাঙ্গাইল সংবাদদাতা : টাঙ্গাইলের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির কোথাও উন্নতি হয়েছে আবার কোথাও স্থিতিশীল রয়েছে। তবে বেশিরভাগ এলাকাতেই দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির সংকট। এ বছরের বন্যায় জেলার প্রায় ৮০ কিলোমিটার এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। গতকাল সোমবার জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনা, ধলেশ^রী ও ঝিনাই নদীর পানি কমলেও বংশাইসহ অন্যান্য শাখা নদীর পানি বেড়েছে। যমুনা নদীর পানি ২৪ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ৩৩ সেন্টিমিটার, ঝিনাই নদীর পানি ১৫ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ৭২ সেন্টিমিটার এবং ধলেশ^রী নদীর পানি সাত সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ৭২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বংশাই নদীর পানি চার সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ২১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বংশাই নদীতে পানি বাড়ায় জেলার বাসাইল ও মির্জাপুর উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। জানা যায়, জেলার ভূঞাপুর উপজেলার চারটি ইউনিয়ন, কালিহাতী উপজেলার সাতটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা, টাঙ্গাইল সদর উপজেলার পশ্চিমাঞ্চলের সাতটি ইউনিয়ন, নাগরপুর উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন, বাসাইল পৌরসভাসহ ছয়টি ইউনিয়ন, মির্জাপুর উপজেলার চারটি ইউনয়ন ও দেলদুয়ার উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের মানুষ পানিবন্দি দিন কাটাচ্ছেন। চলতি বন্যায় জেলার প্রায় দুই শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বন্যার পানিতে নদী, খাল, বিল ও বাড়ির আঙিনা পানিতে থই থই করছে। প্রতিদিনই নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। জানা যায়, বন্যার পানি বাড়ার পাশাপাশি ২৭ কিলোমিটার দীর্ঘ টাঙ্গাইল শহর রক্ষা বাঁধের উত্তর-পূর্বাংশে ভাঙন দেখা দিয়েছে। পাছ বেথইর এলাকায় বাঁধের ১০০ মিটার ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। এছাড়াও ভূঞাপুর, কালিহাতী, বাসাইল, মির্জাপুর, টাঙ্গাইল সদর এবং নাগরপুর অংশে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। বন্যার পানিতে টাঙ্গাইল-পটলবাজার, টাঙ্গাইল-কাকুয়া, এলেঙ্গা-মগড়া, ভূঞাপুরের গোবিন্দাসী বাজার থেকে ভালকুটিয়া পর্যন্ত পাকা সড়ক, বাসাইল পৌরসভার একটি ব্রিজ ও কাঞ্চনপুরের গ্রোথ সেন্টার-কাজিরাপাড়া সড়কের কালভার্ট পানির প্রবল স্রোতে ভেঙে গেছে। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছেন এসব এলাকার মানুষ। ভূঞাপুর উপজেলার গোবিন্দাসী ইউনিয়নের কষ্টাপাড়া এলাকার অভিজিৎ ঘোষ বলেন, ‘আমাদের এলাকার শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। বিশুদ্ধ পানিসহ শুকনা খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে।’ কালিহাতী উপজেলার মগড়া গ্রামের আশিকুর রহমান বলেন, ‘দুই সপ্তাহ আগে বন্যার পানি আমাদের বাড়িতে প্রবেশ করেছে। এতে যাতায়াতসহ যাবতীয় কাজ করতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।’ সদর উপজেলার সুরুজ গ্রামের আব্দুল্লাহ বলেন, ‘আমাদের বাড়িসহ এলাকার পাকা রাস্তা তলিয়ে গেছে। কয়েক দিন ধরে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।’ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় এবার ৮৯ হাজার হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধানের চাষ করা হয়। এরমধ্যে ৭৯০ হেক্টর জমির ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। টাঙ্গাইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আহসানুল বাশার জানান, চলতি বন্যার পানি এক সপ্তাহের মধ্যে নেমে গেলে ক্ষতিগ্রস্ত ৭৯০ হেক্টর জমির আবাদকৃত রোপা আমনের ৫০-৬০ ভাগ ধান রক্ষা পেতে পারে। পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত জমিতে নাভি জাতের আমন রোপনের জন্য কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছেন তারা। টাঙ্গাইল সদর উপজেলার হুগড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেন খান তোফা বলেন, ‘আমার ইউনিয়নের প্রায় ৮টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে চার হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।’ জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, বন্যা দুর্গতদের জন্য চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বন্যার ক্ষয়ক্ষতি নিরূপনের জন্য প্রতিটি উপজেলায় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তালিকা পেলে যথাস্থানে প্রয়োজনীয় সহায়তা পাঠানো হবে। এছাড়াও কালিহাতী উপজেলায় ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত ১১৮টি পরিবারের মাঝে নগদ ৫ হাজার টাকা ও ঢেউটিন দেয়া হয়েছে। ৯০টি পরিবারকে দেওয়া হয়েছে ১০ হাজার করে টাকা।