ঢাকা ০৪:০৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ অগাস্ট ২০২৫

খুব প্রয়োজনীয় কিছু সংস্কার শেষে সম্ভবপর দ্রুতসময়ে নির্বাচন: আইন উপদেষ্টা

  • আপডেট সময় : ০৫:৫০:২৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪
  • ৯৯ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছেন, অতি প্রয়োজনীয় কিছু সংস্কার করে যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন দেওয়া হবে। মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা এ কথা বলেন।
‘অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিন: আইন মন্ত্রণালয়ের কৈফিয়ত’ শীর্ষক এই সংবাদ সম্মেলনে আইন মন্ত্রণালয়ের বিগত ১০০ দিনের কর্মকাণ্ড তুলে ধরেন আইন উপদেষ্টা। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হয়। এরপর গত ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেন। সংবাদ সম্মেলনে একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের বিষয়ে সর্বত্রই একটি প্রশ্ন শোনা যায়, সেটি হলো তারা কত দিন থাকবে, তাদের মেয়াদ কত দিন হবে, নির্বাচন কবে হবে?’ এ বিষয়ে জবাব দিতে গিয়ে আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন ‘এটি আইন মন্ত্রণালয়ের বিষয় নয়। তবে আপনাকে একটি বিষয় বলি, আমরা মোস্ট এসেনশিয়াল কিছু সংস্কার করে যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন দেব। আমরা জাস্ট এই জিনিসটা চাই না যে আগের মতো কোনো ভুয়া নির্বাচন হোক। আর এটা চাই না-নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে কেউ আবার ভুয়া নির্বাচন করার সুযোগ পাক। এটা ছাড়া আর কোনো স্বার্থ নাই। ‘এ বিষয়ে আসিফ নজরুল আরও বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারে যাঁরা আছেন, তাঁদের অধিকাংশই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নিজের পেশায় ফিরে যাওয়ার জন্য আগ্রহী।
রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করতে পারবে ট্রাইব্যুনাল: কোনো রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ থাকলে ও আদালত মনে করলে প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সুপারিশ করতে পারবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে এই সুপারিশ করা যাবে। এমন বিধান রেখে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) অধ্যাদেশের সংশোধনী প্রস্তাবের খসড়া তৈরি করা হয়েছে। খসড়াটি অনুমোদনের জন্য বুধবার (২০ নভেম্বর) উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে।
সচিবালয়ের সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল এই তথ্য জানিয়েছেন। ‘অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিন: আইন মন্ত্রণালয়ের কৈফিয়ত’ শীর্ষক এই সংবাদ সম্মেলনে আইন মন্ত্রণালয়ের বিগত ১০০ দিনের কর্মকাণ্ড তুলে ধরেন আইন উপদেষ্টা। কিছু আইনগত সংস্কার কাজ করার কথা বলতে গিয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩’- এ কিছু মারাত্মক বিচ্যুতির কথা দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংগঠন বলেছিল। সুশীল সমাজও বিভিন্ন সময় বলেছিল। সরকার যখন এটিকে সংস্কারের উদ্যোগ নিল তখন সরকার চেয়েছে বিচারটি যেন দেশীয় ও বৈশ্বিক পর্যায়ে গ্রহণযোগ্য হয়। একই সঙ্গে এর মাধ্যমে যেন সুবিচার সুনিশ্চিত করা হয়। এ জন্য ব্যাপক পরামর্শ করা হয়েছে। একটি অসাধারণ সংশোধনী করার জন্য চেষ্টা হয়েছে; যেটি এর বিচারের গুরুত্ব, যৌক্তিকতা এবং গ্রহণযোগ্যতা অনেক বাড়িয়ে দেবে। আইন উপদেষ্টা আরও বলেন, বুধবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সেই সংশোধনীর খসড়া তোলা হবে। উপদেষ্টা পরিষদ এটি গ্রহণ করলে বৃহস্পতিবারের মধ্যেই এটি আইনে পরিণত হবে। তারপর প্রক্রিয়াগত কারণে যত দিন লাগে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) অধ্যাদেশের সংশোধনী প্রস্তাবের খসড়ায় রাজনৈতিক দলের বিচারের ধারা যুক্ত হচ্ছে কি না- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, ‘এ বিষয়ে একটি দিন অপেক্ষা করেন, দেখবেন।’ তখন এ বিষয়ে সাংবাদিকেরা আবার প্রশ্ন করলে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘সংশোধনী তো উপদেষ্টা পরিষদকে গ্রহণ করতে হবে।’
তখন সাংবাদিকেরা আবারও জানতে চান, খসড়ায় কী আছে সেটি যদি বলেন। তখন আসিফ নজরুল বলেন, প্রস্তাবে যেটি আছে, সেখানে আদালতকে সেভাবে সরাসরি ক্ষমতা দেওয়া হয়নি। বলা হয়েছে আদালত যদি মনে করেন তাহলে প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য তারা সুপারিশ করতে পারবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করবে। এ বিষয়ে আইন উপদেষ্টা ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে আরও বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট যেসব কর্তৃপক্ষ রাজনৈতিক দলের বিষয়ে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার অনুমোদন রয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আছে, নির্বাচন কমিশন আছে…, এগুলোর কথা খসড়ায় উল্লেখ করা নেই। কিন্তু যদি মনে করে তাহলে করতে পারে। এটা এমন নয় যে আদালত শাস্তি দেবেই। আদালত যদি মনে করে শাস্তি দেওয়ার সুপারিশ করবে শুধু। এটা খসড়ায় রাখা হয়েছে। তবে এটি উপদেষ্টা পরিষদের ওপর নির্ভর করে, পরিষদ এটি রাখবে কি না বা কি ফর্মে রাখবে।’ তখন স্পষ্ট হওয়ার জন্য সাংবাদিকেরা আবারও জানতে চান, ‘এটি তো রাজনৈতিক দলের বিচারের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে?’ জবাবে আইন উপদেষ্টা বলেন ‘হ্যাঁ’।
শেখ হাসিনাকে নেতাকর্মীদের প্রশ্ন করা উচিত, পালিয়ে গেলেন কেন? ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের শেখ হাসিনাকে প্রশ্ন করা উচিত যে, আপনি (শেখ হাসিনা) সবাইকে বিপদে ফেলে পালিয়ে গেলেন কেন? সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে রেড এলার্ট বিষয়ক এক প্রশ্নের উত্তরে ড. আসিফ নজরুল বলেন, রেড অ্যালার্ট তো অন্য মেকানিজম। রেড অ্যালার্ট হচ্ছে আন্তর্জাতিক যে পুলিশি সংস্থার সদস্য, আমার দেশে আমি যদি কাউকে না পাই, তাহলে রেড অ্যালার্ট জারি করতে পারি। রেড অ্যালার্ট জারি করতে পারি, উনি হয়তো অন্য কোনো দেশে, অন্য কোথাও যেতে পারে। এটা দিয়ে সবাইকে সজাগ করে রাখলাম। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কল রেকর্ড ফাঁস প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এসব যদি সত্যিই উনার (শেখ হাসিনা) কনভারসেশন হয়ে থাকে, এগুলো দেশকে অস্থিতিশীল করা, মানুষকে প্ররোচিত, উত্তেজিত করা, বিভ্রান্ত করার উদ্দেশ্যে করা হয়। আইন উপদেষ্টা বলেন, সততার সাথে কোনোরকম চালাকি নয়, কোনো উপদেষ্টা নয়, একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে আমার মনে হয়, আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের জিজ্ঞেস করা উচিত, আপনি আপনার বৃহত্তর পরিবারকে নিয়ে, কাউকে না জানিয়ে এভাবে যে পালিয়ে গেলেন এবং আমাদেরকে প্রতিনিয়ত এভাবে যে উস্কানি দেন, বিক্ষোভ করার জন্য, সন্ত্রাস এবং উস্কানিমূলক কাজ করার জন্য, এই বিষয়ে আপনার ব্যাখ্যা কী? আইন উপদেষ্টা বলেন, উনি ওনার ভাগ্নে, পরিবারের লোকজনদের সরকার পতনের ২-৩ দিন আগে নিরাপদে কেন বিদেশে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন? আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উচিত, উনার পার্সোনাল জবাবদিহিতা চাওয়া। তিনি বলেন, আজকে আওয়ামী লীগের মধ্যে যদি কোনো নিরীহ নেতাকর্মীও থেকে থাকেন, প্রত্যেকেই বিপদে পড়ছেন, শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী শাসনামল, বাংলাদেশের মানুষের ওপর নির্যাতন নিপীড়ন করার কারণে। শেখ হাসিনার সাথে টেলিফোনে একজন না একজনের প্রশ্নটা করা উচিত, আপনি আমাদেরকে না জানিয়ে এভাবে বিপদের মধ্যে ফেলে পালিয়ে গেলেন কেন? শেখ হাসিনার ফোন আলাপ বন্ধে কোনো প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন কিনা একজন সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের উত্তরে আসিফ নজরুল ওই সাংবাদিকইকে পাল্টা প্রশ্ন করেন আপনারা কি বন্ধ চান? আপনি যেহেতু প্রশ্ন তুলেছেন এটা আমার মন্ত্রণালয়ের বিষয় না তবুও আমরা এটা আলোচনা করব।
জিম্মি করা আন্দোলনের বিপক্ষে জনমত শক্তিশালী হচ্ছে: সড়ক অবরোধ করে আন্দোলনের বিষয়ে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছেন, এখন আমরা কঠোর পদক্ষেপ নিলে সবাই সমালোচনা শুরু করবেন। পুলিশ কেন ব্যবস্থা নিল, আগের পুলিশ কিনা। এধরনের বিষয় ম্যানেজ করা খুবই টাফ। তবে আমার মনে হয় এধরনের হয়রানিমূলক, জিম্মি করা আন্দোলনের বিপক্ষে সাধারণ জনমত অত্যন্ত শক্তিশালী হচ্ছে। দেশে বিভিন্ন ইস্যুতে আন্দোলন চলছে, এগুলো নিয়ন্ত্রণে আপনাদের কি উদ্যোগ আছে-এমন প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা বলেন, যে কেউ ভিন্ন মত পোষণ করতে পারে। কিন্তু এভাবে রাস্তা ব্লক করে সাধারণ মানুষকে ভোগান্তিতে ফেলা, জিম্মি করা, অসহনীয় ট্রাফিক জ্যাম সৃষ্টি করা আন্দোলনকারীরা যদি এসব অব্যাহত রাখে, তাহলে আমি মনে করি সাধারণ মানুষের প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়ে তোলা উচিত। তিনি বলেন, আপনারা আন্দোলন করবেন করেন কিন্তু সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে নয়। গতকাল (সোমবার) আমি শুনেছি ট্রেনে ঢিল মেরে নারী, শিশুদের আহত করা হয়েছে। এটা কি ধরনের আন্দোলন? কোথাও দাঁড়িয়ে বলে দেবেন একটি কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় বানিয়ে দেবে, মন চাইলে এইচএসসি পরীক্ষা দেবেন না, আমার রেজাল্ট বদলায় দিতে হবে; এটা কি ধরনের আন্দোলন? আসিফ নজরুল বলেন, এখন আমরা কঠোর পদক্ষেপ নিলে সবাই সমালোচনা শুরু করবেন। পুলিশ কেন ব্যবস্থা নিল, আগের পুলিশ কিনা। এধরনের বিষয় ম্যানেজ করা খুবই টাফ। তবে আমার মনে হয় এধরনের হয়রানিমূলক, জিম্মি করা আন্দোলনের বিপক্ষে সাধারণ জনমত অত্যন্ত শক্তিশালী হচ্ছে। অন্যায্য আন্দোলনের বিপক্ষে রাষ্ট্র কেন শক্ত অবস্থানে যাচ্ছে না এমন প্রশ্নের জবাবে আসিফ নজরুল বলেন, রাষ্ট্র যদি শক্ত হয়, দুই-একজন যদি আহত হয়, গ্রেপ্তার হয় তাহলে সাধারণ মানুষের মধ্যে এক ধরনের কষ্ট তৈরি হবে। যে আপনারা বিগত সরকারের মতো দমন নীতিতে যাচ্ছেন কিনা? সে বিষয়টি আমাদের মাথায় রাখতে হয়। আমরা যেহেতু গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা নিয়েছি, এখানে অনেক চিন্তা করতে হয়। সাধারণ মানুষের কষ্ট হবে কিনা সেটা দেখতে হয়। এতে সরকারের দুর্বলতা প্রকাশ পাচ্ছে কিনা, পেয়ে বসছে কিনা, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও অসহায়ত্ব বোধ করছে, এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেবেন কিনা-এমন প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা বলেন, কিছুটা তো পেয়ে বসছে, আপনারা যে এধরনের প্রশ্ন করছেন, যখন সবার মধ্যে এই বোধ জাগ্রত হবে আমরা বেশি ভালোবাসা দিচ্ছি। তখন আমাদের শক্ত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হবে। আমরা শক্ত হলে ভালোভাবেই হবো।

 

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

খুব প্রয়োজনীয় কিছু সংস্কার শেষে সম্ভবপর দ্রুতসময়ে নির্বাচন: আইন উপদেষ্টা

আপডেট সময় : ০৫:৫০:২৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক : অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছেন, অতি প্রয়োজনীয় কিছু সংস্কার করে যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন দেওয়া হবে। মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা এ কথা বলেন।
‘অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিন: আইন মন্ত্রণালয়ের কৈফিয়ত’ শীর্ষক এই সংবাদ সম্মেলনে আইন মন্ত্রণালয়ের বিগত ১০০ দিনের কর্মকাণ্ড তুলে ধরেন আইন উপদেষ্টা। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হয়। এরপর গত ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেন। সংবাদ সম্মেলনে একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের বিষয়ে সর্বত্রই একটি প্রশ্ন শোনা যায়, সেটি হলো তারা কত দিন থাকবে, তাদের মেয়াদ কত দিন হবে, নির্বাচন কবে হবে?’ এ বিষয়ে জবাব দিতে গিয়ে আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন ‘এটি আইন মন্ত্রণালয়ের বিষয় নয়। তবে আপনাকে একটি বিষয় বলি, আমরা মোস্ট এসেনশিয়াল কিছু সংস্কার করে যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন দেব। আমরা জাস্ট এই জিনিসটা চাই না যে আগের মতো কোনো ভুয়া নির্বাচন হোক। আর এটা চাই না-নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে কেউ আবার ভুয়া নির্বাচন করার সুযোগ পাক। এটা ছাড়া আর কোনো স্বার্থ নাই। ‘এ বিষয়ে আসিফ নজরুল আরও বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারে যাঁরা আছেন, তাঁদের অধিকাংশই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নিজের পেশায় ফিরে যাওয়ার জন্য আগ্রহী।
রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করতে পারবে ট্রাইব্যুনাল: কোনো রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ থাকলে ও আদালত মনে করলে প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সুপারিশ করতে পারবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে এই সুপারিশ করা যাবে। এমন বিধান রেখে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) অধ্যাদেশের সংশোধনী প্রস্তাবের খসড়া তৈরি করা হয়েছে। খসড়াটি অনুমোদনের জন্য বুধবার (২০ নভেম্বর) উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে।
সচিবালয়ের সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল এই তথ্য জানিয়েছেন। ‘অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিন: আইন মন্ত্রণালয়ের কৈফিয়ত’ শীর্ষক এই সংবাদ সম্মেলনে আইন মন্ত্রণালয়ের বিগত ১০০ দিনের কর্মকাণ্ড তুলে ধরেন আইন উপদেষ্টা। কিছু আইনগত সংস্কার কাজ করার কথা বলতে গিয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩’- এ কিছু মারাত্মক বিচ্যুতির কথা দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংগঠন বলেছিল। সুশীল সমাজও বিভিন্ন সময় বলেছিল। সরকার যখন এটিকে সংস্কারের উদ্যোগ নিল তখন সরকার চেয়েছে বিচারটি যেন দেশীয় ও বৈশ্বিক পর্যায়ে গ্রহণযোগ্য হয়। একই সঙ্গে এর মাধ্যমে যেন সুবিচার সুনিশ্চিত করা হয়। এ জন্য ব্যাপক পরামর্শ করা হয়েছে। একটি অসাধারণ সংশোধনী করার জন্য চেষ্টা হয়েছে; যেটি এর বিচারের গুরুত্ব, যৌক্তিকতা এবং গ্রহণযোগ্যতা অনেক বাড়িয়ে দেবে। আইন উপদেষ্টা আরও বলেন, বুধবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সেই সংশোধনীর খসড়া তোলা হবে। উপদেষ্টা পরিষদ এটি গ্রহণ করলে বৃহস্পতিবারের মধ্যেই এটি আইনে পরিণত হবে। তারপর প্রক্রিয়াগত কারণে যত দিন লাগে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) অধ্যাদেশের সংশোধনী প্রস্তাবের খসড়ায় রাজনৈতিক দলের বিচারের ধারা যুক্ত হচ্ছে কি না- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, ‘এ বিষয়ে একটি দিন অপেক্ষা করেন, দেখবেন।’ তখন এ বিষয়ে সাংবাদিকেরা আবার প্রশ্ন করলে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘সংশোধনী তো উপদেষ্টা পরিষদকে গ্রহণ করতে হবে।’
তখন সাংবাদিকেরা আবারও জানতে চান, খসড়ায় কী আছে সেটি যদি বলেন। তখন আসিফ নজরুল বলেন, প্রস্তাবে যেটি আছে, সেখানে আদালতকে সেভাবে সরাসরি ক্ষমতা দেওয়া হয়নি। বলা হয়েছে আদালত যদি মনে করেন তাহলে প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য তারা সুপারিশ করতে পারবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করবে। এ বিষয়ে আইন উপদেষ্টা ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে আরও বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট যেসব কর্তৃপক্ষ রাজনৈতিক দলের বিষয়ে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার অনুমোদন রয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আছে, নির্বাচন কমিশন আছে…, এগুলোর কথা খসড়ায় উল্লেখ করা নেই। কিন্তু যদি মনে করে তাহলে করতে পারে। এটা এমন নয় যে আদালত শাস্তি দেবেই। আদালত যদি মনে করে শাস্তি দেওয়ার সুপারিশ করবে শুধু। এটা খসড়ায় রাখা হয়েছে। তবে এটি উপদেষ্টা পরিষদের ওপর নির্ভর করে, পরিষদ এটি রাখবে কি না বা কি ফর্মে রাখবে।’ তখন স্পষ্ট হওয়ার জন্য সাংবাদিকেরা আবারও জানতে চান, ‘এটি তো রাজনৈতিক দলের বিচারের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে?’ জবাবে আইন উপদেষ্টা বলেন ‘হ্যাঁ’।
শেখ হাসিনাকে নেতাকর্মীদের প্রশ্ন করা উচিত, পালিয়ে গেলেন কেন? ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের শেখ হাসিনাকে প্রশ্ন করা উচিত যে, আপনি (শেখ হাসিনা) সবাইকে বিপদে ফেলে পালিয়ে গেলেন কেন? সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে রেড এলার্ট বিষয়ক এক প্রশ্নের উত্তরে ড. আসিফ নজরুল বলেন, রেড অ্যালার্ট তো অন্য মেকানিজম। রেড অ্যালার্ট হচ্ছে আন্তর্জাতিক যে পুলিশি সংস্থার সদস্য, আমার দেশে আমি যদি কাউকে না পাই, তাহলে রেড অ্যালার্ট জারি করতে পারি। রেড অ্যালার্ট জারি করতে পারি, উনি হয়তো অন্য কোনো দেশে, অন্য কোথাও যেতে পারে। এটা দিয়ে সবাইকে সজাগ করে রাখলাম। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কল রেকর্ড ফাঁস প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এসব যদি সত্যিই উনার (শেখ হাসিনা) কনভারসেশন হয়ে থাকে, এগুলো দেশকে অস্থিতিশীল করা, মানুষকে প্ররোচিত, উত্তেজিত করা, বিভ্রান্ত করার উদ্দেশ্যে করা হয়। আইন উপদেষ্টা বলেন, সততার সাথে কোনোরকম চালাকি নয়, কোনো উপদেষ্টা নয়, একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে আমার মনে হয়, আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের জিজ্ঞেস করা উচিত, আপনি আপনার বৃহত্তর পরিবারকে নিয়ে, কাউকে না জানিয়ে এভাবে যে পালিয়ে গেলেন এবং আমাদেরকে প্রতিনিয়ত এভাবে যে উস্কানি দেন, বিক্ষোভ করার জন্য, সন্ত্রাস এবং উস্কানিমূলক কাজ করার জন্য, এই বিষয়ে আপনার ব্যাখ্যা কী? আইন উপদেষ্টা বলেন, উনি ওনার ভাগ্নে, পরিবারের লোকজনদের সরকার পতনের ২-৩ দিন আগে নিরাপদে কেন বিদেশে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন? আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উচিত, উনার পার্সোনাল জবাবদিহিতা চাওয়া। তিনি বলেন, আজকে আওয়ামী লীগের মধ্যে যদি কোনো নিরীহ নেতাকর্মীও থেকে থাকেন, প্রত্যেকেই বিপদে পড়ছেন, শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী শাসনামল, বাংলাদেশের মানুষের ওপর নির্যাতন নিপীড়ন করার কারণে। শেখ হাসিনার সাথে টেলিফোনে একজন না একজনের প্রশ্নটা করা উচিত, আপনি আমাদেরকে না জানিয়ে এভাবে বিপদের মধ্যে ফেলে পালিয়ে গেলেন কেন? শেখ হাসিনার ফোন আলাপ বন্ধে কোনো প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন কিনা একজন সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের উত্তরে আসিফ নজরুল ওই সাংবাদিকইকে পাল্টা প্রশ্ন করেন আপনারা কি বন্ধ চান? আপনি যেহেতু প্রশ্ন তুলেছেন এটা আমার মন্ত্রণালয়ের বিষয় না তবুও আমরা এটা আলোচনা করব।
জিম্মি করা আন্দোলনের বিপক্ষে জনমত শক্তিশালী হচ্ছে: সড়ক অবরোধ করে আন্দোলনের বিষয়ে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছেন, এখন আমরা কঠোর পদক্ষেপ নিলে সবাই সমালোচনা শুরু করবেন। পুলিশ কেন ব্যবস্থা নিল, আগের পুলিশ কিনা। এধরনের বিষয় ম্যানেজ করা খুবই টাফ। তবে আমার মনে হয় এধরনের হয়রানিমূলক, জিম্মি করা আন্দোলনের বিপক্ষে সাধারণ জনমত অত্যন্ত শক্তিশালী হচ্ছে। দেশে বিভিন্ন ইস্যুতে আন্দোলন চলছে, এগুলো নিয়ন্ত্রণে আপনাদের কি উদ্যোগ আছে-এমন প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা বলেন, যে কেউ ভিন্ন মত পোষণ করতে পারে। কিন্তু এভাবে রাস্তা ব্লক করে সাধারণ মানুষকে ভোগান্তিতে ফেলা, জিম্মি করা, অসহনীয় ট্রাফিক জ্যাম সৃষ্টি করা আন্দোলনকারীরা যদি এসব অব্যাহত রাখে, তাহলে আমি মনে করি সাধারণ মানুষের প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়ে তোলা উচিত। তিনি বলেন, আপনারা আন্দোলন করবেন করেন কিন্তু সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে নয়। গতকাল (সোমবার) আমি শুনেছি ট্রেনে ঢিল মেরে নারী, শিশুদের আহত করা হয়েছে। এটা কি ধরনের আন্দোলন? কোথাও দাঁড়িয়ে বলে দেবেন একটি কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় বানিয়ে দেবে, মন চাইলে এইচএসসি পরীক্ষা দেবেন না, আমার রেজাল্ট বদলায় দিতে হবে; এটা কি ধরনের আন্দোলন? আসিফ নজরুল বলেন, এখন আমরা কঠোর পদক্ষেপ নিলে সবাই সমালোচনা শুরু করবেন। পুলিশ কেন ব্যবস্থা নিল, আগের পুলিশ কিনা। এধরনের বিষয় ম্যানেজ করা খুবই টাফ। তবে আমার মনে হয় এধরনের হয়রানিমূলক, জিম্মি করা আন্দোলনের বিপক্ষে সাধারণ জনমত অত্যন্ত শক্তিশালী হচ্ছে। অন্যায্য আন্দোলনের বিপক্ষে রাষ্ট্র কেন শক্ত অবস্থানে যাচ্ছে না এমন প্রশ্নের জবাবে আসিফ নজরুল বলেন, রাষ্ট্র যদি শক্ত হয়, দুই-একজন যদি আহত হয়, গ্রেপ্তার হয় তাহলে সাধারণ মানুষের মধ্যে এক ধরনের কষ্ট তৈরি হবে। যে আপনারা বিগত সরকারের মতো দমন নীতিতে যাচ্ছেন কিনা? সে বিষয়টি আমাদের মাথায় রাখতে হয়। আমরা যেহেতু গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা নিয়েছি, এখানে অনেক চিন্তা করতে হয়। সাধারণ মানুষের কষ্ট হবে কিনা সেটা দেখতে হয়। এতে সরকারের দুর্বলতা প্রকাশ পাচ্ছে কিনা, পেয়ে বসছে কিনা, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও অসহায়ত্ব বোধ করছে, এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেবেন কিনা-এমন প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা বলেন, কিছুটা তো পেয়ে বসছে, আপনারা যে এধরনের প্রশ্ন করছেন, যখন সবার মধ্যে এই বোধ জাগ্রত হবে আমরা বেশি ভালোবাসা দিচ্ছি। তখন আমাদের শক্ত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হবে। আমরা শক্ত হলে ভালোভাবেই হবো।