ঢাকা ০৯:১৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ২১ মে ২০২৫

যে আমলের প্রতিদান থাকে অব্যাহত

  • আপডেট সময় : ০৬:৪৬:৪৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪
  • ৩৩ বার পড়া হয়েছে

মাহমুদ আহমদ

 

এই পৃথিবীতে কেউ স্থায়ী নন। প্রকৃতিতে প্রত্যেক প্রাণীর জন্য মৃত্যুর চাইতে সুনিশ্চিত বিষয় আর কিছুই নেই। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন, ‘তোমার আগেও কোনো মানুষকে আমি অনন্ত জীবন দান করিনি। সুতরাং তোমার মৃত্যু হলে তারা কি চিরঞ্জীব হবে? প্রত্যেককে মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করতে হবে। আমি তোমাদের মন্দ ও ভালো দ্বারা পরীক্ষা করে থাকি এবং তোমরা আমার কাছেই প্রত্যাবর্তিত হবে’ (সুরা আম্বিয়া: আয়াত ৩৪-৩৫)।
প্রাকৃতিক নিয়মের মধ্যে মৃত্যু একটি অবশ্যম্ভাবী সত্য তা এই আয়াতে আল্লাহতায়ালা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন। এ পৃথিবী বাহ্যত অত্যন্ত মধুময় ও আকর্ষণীয় বলে মনে হয় কিন্তু দুনিয়াটা আসলেই ছলনায় পূর্ণ। অল্প ক’দিনের এ দুনিয়ায় আমরা মেহমান মাত্র। তাই আমাদের উচিত হবে মৃত্যুর কথা স্মরণ করে পুণ্য কাজ করা।
মৃত ব্যক্তিদের জন্য আমাদের করণীয় হলো, আমরা যেন তাদের জন্য দোয়া করি। মৃতদের জন্য পবিত্র কোরআনের এ দোয়াটি আমরা করবÑ ‘রাব্বানাগফিরলানা ওয়া লি ইখওয়ানিনাল্লাযিনা ছাবকুনা বিল ইমানি ওয়ালা তাজআল ফি কুলুবিনা গিল্লাল লিল্লাযিনা আমানু রাব্বানা ইন্নাকা রাউফুর রাহিম’ (সুরা হাশর : আয়াত ১০)। অর্থ: ‘হে আমাদের প্রভু প্রতিপালক! আমাদের ক্ষমা করো এবং আমাদের সেসব ভাইকেও ক্ষমা করোÑ যারা আমাদের আগে ইমান এনেছে আর মুমিনদের প্রতি আমাদের হৃদয়ে কোনো বিদ্বেষ রেখো না। হে আমাদের পালনকর্তা! নিশ্চয় তুমি অতি স্নেহশীল ও বারবার কৃপাকারী।’
আমাদের আপনজন কেউ মারা গেলে তাদের আত্মার মাগফেরাত ও শান্তি কামনায় নিকটাত্মীয় জীবিতরা যে কাজগুলো অব্যাহত রাখতে পারেন এ বিষয়ে হাদিসে এসেছে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, মহানবি (সা.) বর্ণনা করেছেন, ‘মানুষ যখন মারা যায়, তখন তার সমস্ত আমলের দরজা বন্ধ হয়ে যায়। তবে তিনটি আমলের দরজা বন্ধ হয় না। ক. সদকায়ে জারিয়া, খ. যদি কেউ এমন সন্তান রেখে যায়, যে সন্তান ম-বাবার জন্য দোয়া করবে, গ. এমন দিনি শিক্ষা রেখে যায়, যার দ্বারা মানুষ উপকৃত হতে থাকে’ (মুসলিম)।
হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে মানুষকে কোনো ইলম শিক্ষা দেবে, সে ওই ইলম অনুযায়ী আমলকারীর সমতুল্য প্রতিদান পাবে; অথচ আমলকারীর প্রতিদানে কোনো কমতি হবে না’ (ইবনে মাজাহ)। রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেছেন, ‘যে আল্লাহর কিতাব থেকে একটি আয়াত শিক্ষা দেবে, যত তেলাওয়াত হবে তার সওয়াব সে পাবে’ (সহিহ কুনুজুস সুন্নাহ আননবুবিয়্যা)।
হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, এক সাহাবি মহানবির (সা.) কাছে এসে জিজ্ঞেস করেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমার মা হঠাৎ মারা যান। মৃত্যুকালে তিনি কোনো অসিয়ত করে যেতে পারেননি। আমার ধারণা, তিনি যদি কথা বলার সুযোগ পেতেন তাহলে দান-সদকা করতেন। আমি তার পক্ষ থেকে দান-সদকা করলে কি তিনি এর সওয়াব পাবেন? তিনি (সা.) বলেনÑ হ্যাঁ, অবশ্যই পাবেন’ (বুখারি ও মুসলিম)।
মানুষের দৈহিক মৃত্যু হয়। কিন্তু তার জীবনের সৎকর্ম তাকে পৃথিবীতে অমরত্ব দান করে। তাই আমরা যেন এমন কাজ করি যাতে আল্লাহ আমাদের প্রতি সন্তুষ্ট থাকেন। এ ছাড়া আমাদেরকে এমন আমল করতে হবে যার ফলে মৃত্যুর পরও আমরা সেসব নেক আমলের প্রতিদান ভোগ করতে থাকবো।
হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, হজরত মহানবি (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করল এই অবস্থায় যে, তার ওপর রোজা ফরজ ছিল তবে তার পক্ষ থেকে তার ওয়ারিশগণ রোজা রাখবে।’ (বুখারি ও মুসলিম) তবে কারো মৃত্যুর পর তার জন্য বিলাপ করে কান্না করা, মাতম করা, পকেট ছেঁড়া, গালে বা পিঠে আঘাত করা ইসলামের নিষেধ। যে ব্যক্তি এমন করে তাকে রাসুলুল্লাহ (সা.) উম্মতের বাইরের লোক হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি গালে থাপ্পড় মারে, পকেট ছিঁড়ে ফেলে ও জাহিলিয়াতের রীতিনীতির প্রতি আহ্বান করে সে আমাদের দলভুক্ত নয়’ (বুখারি)। আমাদের উচিত মৃত ব্যক্তির ভালো কাজকে স্মরণ ও প্রকাশ করা।
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা তোমাদের মৃতদের ভালো কাজগুলোর আলোচনা করো এবং মন্দ কাজের আলোচনা থেকে বিরত থাকো।’ (আবু দাউদ) কেউ মারা গেলে কুলখানি ও চল্লিশা করার কোনো শিক্ষা ইসলামে নেই, বরং মৃতের শোকাহত পরিবারের জন্য খাবার আয়োজন করার নির্দেশ করেছে ইসলাম (আবু দাউদ)। আল্লাহপাক আমাদের সেই তৌফিক দান করুন, আমিন।
লেখক: প্রাবন্ধিক, ইসলামি চিন্তাবিদ।
সধংঁসড়হ৮৩@ুধযড়ড়.পড়স

আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

যে আমলের প্রতিদান থাকে অব্যাহত

আপডেট সময় : ০৬:৪৬:৪৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

মাহমুদ আহমদ

 

এই পৃথিবীতে কেউ স্থায়ী নন। প্রকৃতিতে প্রত্যেক প্রাণীর জন্য মৃত্যুর চাইতে সুনিশ্চিত বিষয় আর কিছুই নেই। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন, ‘তোমার আগেও কোনো মানুষকে আমি অনন্ত জীবন দান করিনি। সুতরাং তোমার মৃত্যু হলে তারা কি চিরঞ্জীব হবে? প্রত্যেককে মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করতে হবে। আমি তোমাদের মন্দ ও ভালো দ্বারা পরীক্ষা করে থাকি এবং তোমরা আমার কাছেই প্রত্যাবর্তিত হবে’ (সুরা আম্বিয়া: আয়াত ৩৪-৩৫)।
প্রাকৃতিক নিয়মের মধ্যে মৃত্যু একটি অবশ্যম্ভাবী সত্য তা এই আয়াতে আল্লাহতায়ালা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন। এ পৃথিবী বাহ্যত অত্যন্ত মধুময় ও আকর্ষণীয় বলে মনে হয় কিন্তু দুনিয়াটা আসলেই ছলনায় পূর্ণ। অল্প ক’দিনের এ দুনিয়ায় আমরা মেহমান মাত্র। তাই আমাদের উচিত হবে মৃত্যুর কথা স্মরণ করে পুণ্য কাজ করা।
মৃত ব্যক্তিদের জন্য আমাদের করণীয় হলো, আমরা যেন তাদের জন্য দোয়া করি। মৃতদের জন্য পবিত্র কোরআনের এ দোয়াটি আমরা করবÑ ‘রাব্বানাগফিরলানা ওয়া লি ইখওয়ানিনাল্লাযিনা ছাবকুনা বিল ইমানি ওয়ালা তাজআল ফি কুলুবিনা গিল্লাল লিল্লাযিনা আমানু রাব্বানা ইন্নাকা রাউফুর রাহিম’ (সুরা হাশর : আয়াত ১০)। অর্থ: ‘হে আমাদের প্রভু প্রতিপালক! আমাদের ক্ষমা করো এবং আমাদের সেসব ভাইকেও ক্ষমা করোÑ যারা আমাদের আগে ইমান এনেছে আর মুমিনদের প্রতি আমাদের হৃদয়ে কোনো বিদ্বেষ রেখো না। হে আমাদের পালনকর্তা! নিশ্চয় তুমি অতি স্নেহশীল ও বারবার কৃপাকারী।’
আমাদের আপনজন কেউ মারা গেলে তাদের আত্মার মাগফেরাত ও শান্তি কামনায় নিকটাত্মীয় জীবিতরা যে কাজগুলো অব্যাহত রাখতে পারেন এ বিষয়ে হাদিসে এসেছে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, মহানবি (সা.) বর্ণনা করেছেন, ‘মানুষ যখন মারা যায়, তখন তার সমস্ত আমলের দরজা বন্ধ হয়ে যায়। তবে তিনটি আমলের দরজা বন্ধ হয় না। ক. সদকায়ে জারিয়া, খ. যদি কেউ এমন সন্তান রেখে যায়, যে সন্তান ম-বাবার জন্য দোয়া করবে, গ. এমন দিনি শিক্ষা রেখে যায়, যার দ্বারা মানুষ উপকৃত হতে থাকে’ (মুসলিম)।
হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে মানুষকে কোনো ইলম শিক্ষা দেবে, সে ওই ইলম অনুযায়ী আমলকারীর সমতুল্য প্রতিদান পাবে; অথচ আমলকারীর প্রতিদানে কোনো কমতি হবে না’ (ইবনে মাজাহ)। রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেছেন, ‘যে আল্লাহর কিতাব থেকে একটি আয়াত শিক্ষা দেবে, যত তেলাওয়াত হবে তার সওয়াব সে পাবে’ (সহিহ কুনুজুস সুন্নাহ আননবুবিয়্যা)।
হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, এক সাহাবি মহানবির (সা.) কাছে এসে জিজ্ঞেস করেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমার মা হঠাৎ মারা যান। মৃত্যুকালে তিনি কোনো অসিয়ত করে যেতে পারেননি। আমার ধারণা, তিনি যদি কথা বলার সুযোগ পেতেন তাহলে দান-সদকা করতেন। আমি তার পক্ষ থেকে দান-সদকা করলে কি তিনি এর সওয়াব পাবেন? তিনি (সা.) বলেনÑ হ্যাঁ, অবশ্যই পাবেন’ (বুখারি ও মুসলিম)।
মানুষের দৈহিক মৃত্যু হয়। কিন্তু তার জীবনের সৎকর্ম তাকে পৃথিবীতে অমরত্ব দান করে। তাই আমরা যেন এমন কাজ করি যাতে আল্লাহ আমাদের প্রতি সন্তুষ্ট থাকেন। এ ছাড়া আমাদেরকে এমন আমল করতে হবে যার ফলে মৃত্যুর পরও আমরা সেসব নেক আমলের প্রতিদান ভোগ করতে থাকবো।
হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, হজরত মহানবি (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করল এই অবস্থায় যে, তার ওপর রোজা ফরজ ছিল তবে তার পক্ষ থেকে তার ওয়ারিশগণ রোজা রাখবে।’ (বুখারি ও মুসলিম) তবে কারো মৃত্যুর পর তার জন্য বিলাপ করে কান্না করা, মাতম করা, পকেট ছেঁড়া, গালে বা পিঠে আঘাত করা ইসলামের নিষেধ। যে ব্যক্তি এমন করে তাকে রাসুলুল্লাহ (সা.) উম্মতের বাইরের লোক হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি গালে থাপ্পড় মারে, পকেট ছিঁড়ে ফেলে ও জাহিলিয়াতের রীতিনীতির প্রতি আহ্বান করে সে আমাদের দলভুক্ত নয়’ (বুখারি)। আমাদের উচিত মৃত ব্যক্তির ভালো কাজকে স্মরণ ও প্রকাশ করা।
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা তোমাদের মৃতদের ভালো কাজগুলোর আলোচনা করো এবং মন্দ কাজের আলোচনা থেকে বিরত থাকো।’ (আবু দাউদ) কেউ মারা গেলে কুলখানি ও চল্লিশা করার কোনো শিক্ষা ইসলামে নেই, বরং মৃতের শোকাহত পরিবারের জন্য খাবার আয়োজন করার নির্দেশ করেছে ইসলাম (আবু দাউদ)। আল্লাহপাক আমাদের সেই তৌফিক দান করুন, আমিন।
লেখক: প্রাবন্ধিক, ইসলামি চিন্তাবিদ।
সধংঁসড়হ৮৩@ুধযড়ড়.পড়স

আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ