নিজস্ব প্রতিবেদক : সুচিকিৎসা ও পুনর্বাসনের দাবিতে সড়ক অবরোধের পরদিন জুলাই-অগাস্টের আন্দোলনে আহতরা সচিবালয়ে আলোচনার জন্য গেলেও সেখানে নিজেদের মধ্যে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ২টার কিছু সময় পর সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যান ঢাকার পঙ্গু হাসপাতাল ও চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন আহতরা। এর বাইরে অন্য হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া আহতরাও চলে আসায় তাতে বাদ সাধেন আগের রাতের বিক্ষুব্ধরা। বিকাল ৪টার দিকে দেখা যায়, একপক্ষ বিক্ষুব্ধ হয়ে হলরুম ত্যাগ করেন। সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সারজিস আলম বারবার চেষ্টা করেও তাদের শান্ত করতে পারছিলেন না। হাসনাত তখন বলেন, “আহতদের নিয়ে বিভাজনের রাজনীতি আমরা সন্দেহের চোখে দেখি। আপনারা আলোচনা করে দাবিগুলো ঠিক করেন। আমরা আপনাদের চাওয়াগুলো পূরণ করি কি না দেখেন। সব আহতই আমাদের চোখে আহত। এখানে ভেদাভেদ করার সুযোগ নেই।”
আলোচনার কক্ষ ছেড়ে বারান্দায় দাঁড়ানো আহত এক ব্যক্তি বলেন, “এখানে এমন লোক দেখতে পাচ্ছি যারা গতকালের আন্দোলনে ছিল না। এখন তারা নিজেদের মধ্যে পাঁচজন প্রতিনিধি ঠিক করে আলোচনা করতে চাচ্ছে।”
এদিকে আহত যোদ্ধাদের ইউনিক আইডি কার্ড দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্বাহী দায়িত্ব পাওয়া প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. সায়েদুর রহমান। একই সঙ্গে ডিসেম্বরের মধ্যে সব প্রক্রিয়া শেষ করা হবে। এছাড়া আগামী পাঁচদিনের মধ্যে লিখিত রূপরেখা দেওয়া হবে। রূপরেখায় দেওয়ার টাইমলাইন অনুযায়ী সেগুলো বাস্তবায়ন করা হবে বলেও জানান তিনি। গতকাল বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) সন্ধ্যায় সচিবালয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আহত ছাত্র-জনতার সঙ্গে ৬ উপদেষ্টার বৈঠক শেষে তিনি এ কথা বলেন। এ সময় ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি এবং তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম, যুব ও ক্রীড়া এবং স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া উপস্থিত ছিলেন। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. সায়েদুর রহমান বলেন, আহত যোদ্ধাদের ইউনিক আইডি কার্ড থাকবে। সব সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে তারা সারাজীবন বিনামূল্যে সেবা পাবেন। যেসব বেসরকারি হাসপাতালের সঙ্গে সরকারি চুক্তি থাকবে সেখানেও বিনামূল্যে সেবা পাবেন তারা। ১৭ নভেম্বরের পর সাপোর্ট সেন্টার থাকবে। সেখান থেকে সব ধরনের সমাধান দেওয়ার চেষ্টা করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, আহতদের চিকিৎসায় সব সরকারি হাসপাতালে বেড ডেডিকেটেড থাকবে। ঢাকার সব হাসপাতালকে একটি নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হবে। ডিসেম্বরের মধ্যে সব প্রক্রিয়া শেষ করা হবে। এ বিষয়ে গাফিলতি কোনোভাবেই সহ্য করা হবে না। এরআগে বৈঠকে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম, সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আক্তার, উপদেষ্টা মাহফুজ আলম, ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি এবং তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম, যুব ও ক্রীড়া এবং স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ, জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম, আন্দোলনে শহীদ মুগ্ধর জমজ ভাই ও জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ অংশ নিয়েছেন। আর শতাধিক আহত ছাত্র-জনতা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে দুপুর ২টায় বৈঠক শুরু হওয়ার কথা থাকলেও নিজেদের মধ্যে সমন্বয়হীনতার কারণে প্রায় আড়াই ঘণ্টা দেরি হয়। এদিকে বুধবার (১৩ নভেম্বর) আহতদের দেখতে গিয়ে আগারগাঁওয়ে পঙ্গু হাসপাতালে তোপের মুখে পড়েন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা। পরে তারা দুপুর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত সড়ক অবরোধ করে রাখেন। এরপরে চার উপদেষ্টা গিয়ে তাদের সবাইকে নিয়ে মন্ত্রণালয়ে সভা করে তাদের দাবিগুলো সমাধানের আশ্বাস দিলে তারা রাস্তা ছেড়ে দেন।