ঢাকা ০৭:২২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চোখে গুলিবিদ্ধ রাশেদের ভবিষ্যত নিয়ে শঙ্কা

  • আপডেট সময় : ০৭:৫৮:৫৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪
  • ৬ বার পড়া হয়েছে

সাতক্ষীরা সংবাদদাতা : বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনকালে রাশেদের চোখ গুলিবিদ্ধ হয়। তার পরিবার হতদরিদ্র। এখন এ পরিবারে নেমে এসেছে হতাশার কালো ছায়া। গত ৫ আগস্ট পুলিশের টিয়ার শেলে আহত বন্ধুর এক বোনকে দেখতে যাওয়ার সময় সাতক্ষীরা শহরের পাকাপোলের মোড়ে সদর থানার ছাদের উপর থেকে পুলিশের ছোঁড়া ছররা গুলিতে আহত হন পান-সিগারেটের দোকানদার রাশেদুল ইসলাম রাশেদ। তার বাম চোখের ভিতরে গুলি ঢোকে। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে ওই দিনই ভর্তি করেন সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখান থেকে পাঠানো হয় ঢাকার জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইন্সস্টিটিউটে। রাশেদুল ইসলাম রাশেদ (২৬) সাতক্ষীরা শহরের পলাশপোল নিউমার্কেট এলাকার মৃত শহিদুল ইসলাম (৬০) ও রাশিদা বেগম (৪০) দম্পতির পুত্র। তাদের গ্রামের বাড়ি কালিগঞ্জ উপজেলার সোনাতলা গ্রামে। দুই ভাই বোনের মধ্যে রাশেদ বড়। তার বোন ফাহিমা খাতুন (২৪) ছোট। বিবাহিতা বোন থাকেন তার শ্বশুর বাড়িতে। ছোট বেলাতেই রাশেদের বাবা মারা যান। এরপর তার মা শহরের বিভিন্ন হোটেলে রাঁধুনির কাজ করে দুই ছেলে মেয়েকে বড় করেছেন। কিন্তু দরিদ্র পরিবারটির একমাত্র উপার্জনশীল মা সংসারের খরচ চালিয়ে তাদের আর লেখাপড়া শেখাতে পারেননি। মেয়েকে বিয়ে দেয়ার পর ছেলে রাশেদকে শহরের নিউমার্কেট এলাকায় অল্প পুঁজি দিয়ে একটি ছোট পান-সিগারেটের দোকান করে দেন। মা ও ছেলে দুই জনের উপার্জনে তাদের সংসার চলছিল ভালোই। কিন্তু বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে চোখের জ্যোতি হারিয়ে বর্তমানে মানবেতর জীবন যাপন করছে রাশেদের পরিবার। এদিকে রাশেদের ভবিষ্যত নিয়েও তার মা ভীষণ উদ্বিগ্ন। গুলিবিদ্ধ রাশেদ বলেন, গত ৫ আগস্ট স্বৈরাচার শেখ হাসিনা দেশত্যাগের পর ওই দিন টিয়ার শেলের গুলিতে আহত এক বন্ধুর বোনকে দেখতে যাওয়ার সময় সাতক্ষীরা শহরের পাকাপোলের মোড়ে উঠার পর পরই সদর থানার ছাদের উপর থেকে পুলিশের ছোঁড়া একটি ছররা গুলি আমার বাম চোখে লাগে এবং অপর একটি গুলি মুখে লাগে। এরপর স্থানীয়রা আমাকে উদ্ধার করে ওই দিনই ভর্তি করেন সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে কয়েকদিন চিকিৎসা নেয়ার পর আমাকে পাঠানো হয় ঢাকার জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইন্সস্টিটিউটে। সেখানে দেখানোর পর আমার চোখে অপারেশন করে গুলি বের করার জন্য তারা এক থেকে দেড় মাস পরে যেতে বলেন। কিন্তু আমি চোখের অসহ্য যন্ত্রণা সহ্য করতে পরছিলাম না বলে ঢাকার বেসরকারি ভিশন আই হাসপাতালে নিয়ে যান আমার মা। সেখানে প্রায় একলাখ টাকা খরচ করে দুইবার অপারেশন করেও আমার চোখ থেকে গুলি বের করতে পারেননি চিকিৎসকরা। রাশেদ আরো জানান, বর্তমানে এই চোখ নিয়ে আমি ঠিকমত দোকানদারীও করতে পারছি না। রোদের দিকে তাকালে চোখে যন্ত্রনা বেশী হয়। টাকার অভাবে আমার চোখে বর্তমানে চিকিৎসা করানো সম্ভব হচ্ছে না। রাশেদের মা রাশিদা বেগম জানান, আমার স্বামী মারা যাওয়ার সময় আমার দুটি সন্তান খুবই ছোট ছিল। তখন থেকে ভীষণ কষ্ট করে লোকের হোটেলে কাজ করে তাদের মানুষ করেছি। মেয়েটিকে বিয়ে দিয়েছি। আর ছেলেটিকে অল্প পুঁজি দিয়ে একটি পান সিগারেটের দোকান করে দিয়েছিলাম। কিন্তু বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় ছেলে আমার চোখে গুলিবিদ্ধ হয়ে খুবই অসুস্থ এখন। তাকে নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তায় রয়েছি। ইতিমধ্যে বিভিন্ন জায়গা থেকে ঋণ করে অনেক টাকা খরচ করে ছেলের চিকিৎসা করেছি। কিন্তু এতে তার চোখ এখনও ভালো হলো না। ঢাকায় নিয়ে চিকিৎসা করাবো সে টাকাও এখন নাই। তিনি এসময় আক্ষেপ করে বলেন, আজ পর্যন্ত ছেলের চিকিৎসার জন্য কেউ কোন অনুদান দেয়নি। একটি টাকাও সাহায্য করেনি। কি করবেন এখন তিনি তা ভেবে পাচ্ছেন না। তিনি এসময় সরকারের কাছে তার ছেলের চিকিৎসার জন্য সাহায্যের আবেদন জানান। সাতক্ষীরা সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসার শোয়াইব আহমাদ জানান, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে যারা আহত ও নিহত হয়েছে তাদের সবারই তালিকা তৈরী হচ্ছে। ইতোমধ্যে আমরা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঢাকার সমন্বয়ক আরাফাত ও মুজাহিদকে নিয়ে আহত ও শহিদের নাম কালেক্ট করে সিভিল সার্জন অফিসে পাঠিয়েছি। সেখান থেকে একটি ফাইনাল রিপোর্ট প্রদান করা হবে। তালিকা প্রস্তুত হলে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী তাদের ব্যাপারে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।

 

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

চাল আমদানির গতি মন্থর,এসেছে মাত্র সাড়ে ৯ হাজার টন

চোখে গুলিবিদ্ধ রাশেদের ভবিষ্যত নিয়ে শঙ্কা

আপডেট সময় : ০৭:৫৮:৫৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪

সাতক্ষীরা সংবাদদাতা : বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনকালে রাশেদের চোখ গুলিবিদ্ধ হয়। তার পরিবার হতদরিদ্র। এখন এ পরিবারে নেমে এসেছে হতাশার কালো ছায়া। গত ৫ আগস্ট পুলিশের টিয়ার শেলে আহত বন্ধুর এক বোনকে দেখতে যাওয়ার সময় সাতক্ষীরা শহরের পাকাপোলের মোড়ে সদর থানার ছাদের উপর থেকে পুলিশের ছোঁড়া ছররা গুলিতে আহত হন পান-সিগারেটের দোকানদার রাশেদুল ইসলাম রাশেদ। তার বাম চোখের ভিতরে গুলি ঢোকে। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে ওই দিনই ভর্তি করেন সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখান থেকে পাঠানো হয় ঢাকার জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইন্সস্টিটিউটে। রাশেদুল ইসলাম রাশেদ (২৬) সাতক্ষীরা শহরের পলাশপোল নিউমার্কেট এলাকার মৃত শহিদুল ইসলাম (৬০) ও রাশিদা বেগম (৪০) দম্পতির পুত্র। তাদের গ্রামের বাড়ি কালিগঞ্জ উপজেলার সোনাতলা গ্রামে। দুই ভাই বোনের মধ্যে রাশেদ বড়। তার বোন ফাহিমা খাতুন (২৪) ছোট। বিবাহিতা বোন থাকেন তার শ্বশুর বাড়িতে। ছোট বেলাতেই রাশেদের বাবা মারা যান। এরপর তার মা শহরের বিভিন্ন হোটেলে রাঁধুনির কাজ করে দুই ছেলে মেয়েকে বড় করেছেন। কিন্তু দরিদ্র পরিবারটির একমাত্র উপার্জনশীল মা সংসারের খরচ চালিয়ে তাদের আর লেখাপড়া শেখাতে পারেননি। মেয়েকে বিয়ে দেয়ার পর ছেলে রাশেদকে শহরের নিউমার্কেট এলাকায় অল্প পুঁজি দিয়ে একটি ছোট পান-সিগারেটের দোকান করে দেন। মা ও ছেলে দুই জনের উপার্জনে তাদের সংসার চলছিল ভালোই। কিন্তু বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে চোখের জ্যোতি হারিয়ে বর্তমানে মানবেতর জীবন যাপন করছে রাশেদের পরিবার। এদিকে রাশেদের ভবিষ্যত নিয়েও তার মা ভীষণ উদ্বিগ্ন। গুলিবিদ্ধ রাশেদ বলেন, গত ৫ আগস্ট স্বৈরাচার শেখ হাসিনা দেশত্যাগের পর ওই দিন টিয়ার শেলের গুলিতে আহত এক বন্ধুর বোনকে দেখতে যাওয়ার সময় সাতক্ষীরা শহরের পাকাপোলের মোড়ে উঠার পর পরই সদর থানার ছাদের উপর থেকে পুলিশের ছোঁড়া একটি ছররা গুলি আমার বাম চোখে লাগে এবং অপর একটি গুলি মুখে লাগে। এরপর স্থানীয়রা আমাকে উদ্ধার করে ওই দিনই ভর্তি করেন সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে কয়েকদিন চিকিৎসা নেয়ার পর আমাকে পাঠানো হয় ঢাকার জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইন্সস্টিটিউটে। সেখানে দেখানোর পর আমার চোখে অপারেশন করে গুলি বের করার জন্য তারা এক থেকে দেড় মাস পরে যেতে বলেন। কিন্তু আমি চোখের অসহ্য যন্ত্রণা সহ্য করতে পরছিলাম না বলে ঢাকার বেসরকারি ভিশন আই হাসপাতালে নিয়ে যান আমার মা। সেখানে প্রায় একলাখ টাকা খরচ করে দুইবার অপারেশন করেও আমার চোখ থেকে গুলি বের করতে পারেননি চিকিৎসকরা। রাশেদ আরো জানান, বর্তমানে এই চোখ নিয়ে আমি ঠিকমত দোকানদারীও করতে পারছি না। রোদের দিকে তাকালে চোখে যন্ত্রনা বেশী হয়। টাকার অভাবে আমার চোখে বর্তমানে চিকিৎসা করানো সম্ভব হচ্ছে না। রাশেদের মা রাশিদা বেগম জানান, আমার স্বামী মারা যাওয়ার সময় আমার দুটি সন্তান খুবই ছোট ছিল। তখন থেকে ভীষণ কষ্ট করে লোকের হোটেলে কাজ করে তাদের মানুষ করেছি। মেয়েটিকে বিয়ে দিয়েছি। আর ছেলেটিকে অল্প পুঁজি দিয়ে একটি পান সিগারেটের দোকান করে দিয়েছিলাম। কিন্তু বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় ছেলে আমার চোখে গুলিবিদ্ধ হয়ে খুবই অসুস্থ এখন। তাকে নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তায় রয়েছি। ইতিমধ্যে বিভিন্ন জায়গা থেকে ঋণ করে অনেক টাকা খরচ করে ছেলের চিকিৎসা করেছি। কিন্তু এতে তার চোখ এখনও ভালো হলো না। ঢাকায় নিয়ে চিকিৎসা করাবো সে টাকাও এখন নাই। তিনি এসময় আক্ষেপ করে বলেন, আজ পর্যন্ত ছেলের চিকিৎসার জন্য কেউ কোন অনুদান দেয়নি। একটি টাকাও সাহায্য করেনি। কি করবেন এখন তিনি তা ভেবে পাচ্ছেন না। তিনি এসময় সরকারের কাছে তার ছেলের চিকিৎসার জন্য সাহায্যের আবেদন জানান। সাতক্ষীরা সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসার শোয়াইব আহমাদ জানান, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে যারা আহত ও নিহত হয়েছে তাদের সবারই তালিকা তৈরী হচ্ছে। ইতোমধ্যে আমরা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঢাকার সমন্বয়ক আরাফাত ও মুজাহিদকে নিয়ে আহত ও শহিদের নাম কালেক্ট করে সিভিল সার্জন অফিসে পাঠিয়েছি। সেখান থেকে একটি ফাইনাল রিপোর্ট প্রদান করা হবে। তালিকা প্রস্তুত হলে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী তাদের ব্যাপারে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।