ঢাকা ০২:১৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৫

১০ মিনিটের বেশি টয়লেটে বসা ঠিক না

  • আপডেট সময় : ০৪:৪৭:৪৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪
  • ৯৩ বার পড়া হয়েছে

স্বাস্থ্য ও পরিচর্যা ডেস্ক: ‘বড়’ কাজ করতে গিয়ে টয়লেটের কমোডে বেশি সময় বসতেই হয়। তবে তিন-চার মিনিটের কাজ সহজেই ১০ থেকে ১৫ মিনিট পেরিয়ে যায় যদি হাতে থাকে মোবাইল ফোন। বর্তমান সময়ে টয়লেটে ফোন ব্যবহার করা সাধারণ বিষয়। ‘দুই নম্বর’ কাজটি করার সময় নানান কিছু দেখে সময়টা পার করা স্বাভাবিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে এই অযথা সময় বসে থাকাটাই স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে, জানাচ্ছেন চিকিৎসকরা। সিএনএন ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্রের ডালাসে অবস্থিত ‘ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাস সাউথওয়েস্টার্ন মেডিকেল সেন্টার’য়ের ‘কোলোরেক্টাল সার্জেন’ ডা. লাই ঝু বলেন, “টয়লেটে দীর্ঘসময় বসে থাকার ফলে অর্শ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। পাশাপাশি শ্রোণীদেশের পেশি দুর্বল হয়।” নিজের অভিজ্ঞতা থেকে এই চিকিৎসক আরও বলেন, “যখন রোগীরা এসব সমস্যা নিয়ে আমার কাছে আসেন, দেখতে পাই এদের বেশির ভাগেরই টয়লেটে বেশি সময় বসে থাকার ইতিহাস রয়েছে।”
‘ত্যাগ’ করার সমস্যায় বেশিক্ষণ বসে থাকার
নিউ ইয়র্ক’য়ের ‘স্টোন ব্রুক মেডিসিন’য়ের ‘ইনফ্লামাটোরি বাওয়েল ডিজিজ সেন্টার’য়ের সহকারী অধ্যাপক ডা. ফারাহ মঞ্জুর একই প্রতিবেদনে বলেন, “সাধারণত গড়ে পাঁচ থেকে ১০ মিনিট টয়লেটে কাটানো উচিত।” বেশিক্ষণ বসে থাকলে সমস্যাটা হল, পৃথিবীর মধ্যাকর্ষণ শক্তি যেমন আমাদের মাটিতে ধরে রাখে তেমনি একই কারণে দেহের নিচের অংশ থেকে রক্ত টেনে ওপরে তুলতে হৃদপিণ্ডকে বেশি কাজ করতে হয়। কমোডের ডিম্বাকৃতি বসার জায়গায়, দেহের নিম্নাংশ অনেকখানি ঢুকে থাকে। ফলে মলনালি নিম্নগামী হয়ে থাকে এই অবস্থায়। যা সাধারণভাবে বসে থাকার ক্ষেত্রে হয় না। আর মধ্যাকর্ষণ শক্তি যখন দেহের নিম্নাংশ এভাবে নিচের দিকে টেনে ধরে রাখে, তখন রক্তচাপেও প্রভাব পড়ে। ঝু বলেন, “এই অবস্থায় রক্ত নিচের দিকে বেশি সঞ্চালিত হয় তবে ওপরে দিকে উঠতে বেগ পেতে হয়।” ফলে মলদ্বার ও মলনালীর আশপাশে থাকা রক্তের শিরা উপশিরা ধমনি রক্তচাপে স্ফিত হয়ে থাকে। যা অর্শরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
জোর করাও ঠিক না
জোরে চাপ দিয়ে মলত্যাগ করলেও অর্শরোগ হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। মঞ্জুর বলেন, “টয়লেটে ফোন নিয়ে থাকার ফলে সময়ের হিসাব রাখতে ভুলে যায় মানুষ। বসে থাকা আর চাপ দেওয়ার বিষয়টা তখন মনের অজান্তেই চলতে থাকে।” এটা অস্বাস্থ্যকর আর মল নিঃসরণের সাথে জড়িত অঙ্গ প্রত্যঙ্গ এবং শ্রোণীদেশের জন্য ক্ষতিকর। এছাড়া মলদ্বারের পেশিও দুর্বল করে দেয়, বেশি চাপ দেওয়ার কারণে। এর থেকে ‘রেক্টাল প্রোল্যাপ্স’ হয়। অর্থাৎ বৃহদান্ত্রের কিছু অংশ পিছলিয়ে মলদ্বার থেকে বের হয়ে ঝুলে পড়ে। এছাড়া টয়লেটে দীর্ঘক্ষণ বসে থাকলে শ্রোণীদেশের পেশিও দ্র্বুল হয়। এই পেশিগুলো অন্ত্রের ও পাকস্থলীর নড়াচাড়া এবং দেহের নিম্নাংশের কার্যক্রম ও মল ভালোমতো নিঃসরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
টয়লেটে সময় কাটানোতে সচেতন হওয়া
শৌচাগারে বেশি সময় কাটানো এড়াতে- মোবাইল ফোন, ম্যাগাজিন বা বই না নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন- ক্যালিফোর্নিয়া’র আর্ভিন’য়ের ‘হোপ অরেঞ্জ কাউন্টি’র ‘ইন্টার্ভেনশনাল গ্যাস্ট্রোএন্টেরলজিস্ট’ ডা. ল্যান্স ইয়ারেডামো। “টয়েলেটে বসে থাকার বিষয়টা আনন্দদায়ক করার দরকার নেই”- বলেন ডা. ঝু। তিনি পরামর্শ দেন, “যদি কোনো কারণে ১০ মিনিটের মধ্যে মলত্যাগ না হয়, তবে বের হয়ে আসুন। হাঁটাহাঁটি করে অন্ত্রের পেশিগুলোকে জাগিয়ে তুলুন, যাতে মলের চাপ তৈরি হয়।” পাশাপাশি পর্যাপ্ত পানি পান করে দেহ আর্দ্র রাখা, আঁশযুক্ত খাবার বেশি গ্রহণ যেমন- ওটস এবং মটর- খাওয়ার মাধ্যমে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করা সম্ভব। আঁশ ও পানি মল নরম করে বের হয়ে যেতে সাহায্য করে।
শৌচাগারে বেশিক্ষণ থাকা এবং মলদ্বারের ক্যান্সার
দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা বা অস্বস্তি যদি মল নিঃসরণে ক্ষেত্রে থাকে তবে সেটা নানান ধরনের হজমতন্ত্র বিষয়ক জটিলতার লক্ষণ হতে পারে। যেমন- ‘ইরিটেবল বাওল সিন্ড্রম’ এবং ‘ক্রন’স রোগ। ডা. ইয়ারেডামো বলেন, “অতিরিক্ত কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থাকাটা পায়ুপথের ক্যান্সার হওয়াকে নির্দেশ করে। যদি মলাশয়ের ভেতরে কোনো কিছু বেড়ে ওঠে স্ফিত হয়, তবে মল প্রবাহের গতি বাধা প্রাপ্ত হয়। যে কারণে কোষ্ঠকাঠিন্যের পাশাপাশি পায়ুপথ দিয়ে রক্তপাতও হয়।” তাই অস্বাভাবিক সময় টয়লেটে বসে থাকতে হলে বা অসম্ভব ধরনের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দীর্ঘদিন থাকলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে রোগ নির্ণয় করে সঠিক চিকিৎসার ব্যবস্থা নিতে হবে।

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : prottashasmf@yahoo.com
আপলোডকারীর তথ্য

চলতি বছর ডেঙ্গুতে ২২০ জনের মৃত্যু

১০ মিনিটের বেশি টয়লেটে বসা ঠিক না

আপডেট সময় : ০৪:৪৭:৪৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪

স্বাস্থ্য ও পরিচর্যা ডেস্ক: ‘বড়’ কাজ করতে গিয়ে টয়লেটের কমোডে বেশি সময় বসতেই হয়। তবে তিন-চার মিনিটের কাজ সহজেই ১০ থেকে ১৫ মিনিট পেরিয়ে যায় যদি হাতে থাকে মোবাইল ফোন। বর্তমান সময়ে টয়লেটে ফোন ব্যবহার করা সাধারণ বিষয়। ‘দুই নম্বর’ কাজটি করার সময় নানান কিছু দেখে সময়টা পার করা স্বাভাবিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে এই অযথা সময় বসে থাকাটাই স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে, জানাচ্ছেন চিকিৎসকরা। সিএনএন ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্রের ডালাসে অবস্থিত ‘ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাস সাউথওয়েস্টার্ন মেডিকেল সেন্টার’য়ের ‘কোলোরেক্টাল সার্জেন’ ডা. লাই ঝু বলেন, “টয়লেটে দীর্ঘসময় বসে থাকার ফলে অর্শ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। পাশাপাশি শ্রোণীদেশের পেশি দুর্বল হয়।” নিজের অভিজ্ঞতা থেকে এই চিকিৎসক আরও বলেন, “যখন রোগীরা এসব সমস্যা নিয়ে আমার কাছে আসেন, দেখতে পাই এদের বেশির ভাগেরই টয়লেটে বেশি সময় বসে থাকার ইতিহাস রয়েছে।”
‘ত্যাগ’ করার সমস্যায় বেশিক্ষণ বসে থাকার
নিউ ইয়র্ক’য়ের ‘স্টোন ব্রুক মেডিসিন’য়ের ‘ইনফ্লামাটোরি বাওয়েল ডিজিজ সেন্টার’য়ের সহকারী অধ্যাপক ডা. ফারাহ মঞ্জুর একই প্রতিবেদনে বলেন, “সাধারণত গড়ে পাঁচ থেকে ১০ মিনিট টয়লেটে কাটানো উচিত।” বেশিক্ষণ বসে থাকলে সমস্যাটা হল, পৃথিবীর মধ্যাকর্ষণ শক্তি যেমন আমাদের মাটিতে ধরে রাখে তেমনি একই কারণে দেহের নিচের অংশ থেকে রক্ত টেনে ওপরে তুলতে হৃদপিণ্ডকে বেশি কাজ করতে হয়। কমোডের ডিম্বাকৃতি বসার জায়গায়, দেহের নিম্নাংশ অনেকখানি ঢুকে থাকে। ফলে মলনালি নিম্নগামী হয়ে থাকে এই অবস্থায়। যা সাধারণভাবে বসে থাকার ক্ষেত্রে হয় না। আর মধ্যাকর্ষণ শক্তি যখন দেহের নিম্নাংশ এভাবে নিচের দিকে টেনে ধরে রাখে, তখন রক্তচাপেও প্রভাব পড়ে। ঝু বলেন, “এই অবস্থায় রক্ত নিচের দিকে বেশি সঞ্চালিত হয় তবে ওপরে দিকে উঠতে বেগ পেতে হয়।” ফলে মলদ্বার ও মলনালীর আশপাশে থাকা রক্তের শিরা উপশিরা ধমনি রক্তচাপে স্ফিত হয়ে থাকে। যা অর্শরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
জোর করাও ঠিক না
জোরে চাপ দিয়ে মলত্যাগ করলেও অর্শরোগ হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। মঞ্জুর বলেন, “টয়লেটে ফোন নিয়ে থাকার ফলে সময়ের হিসাব রাখতে ভুলে যায় মানুষ। বসে থাকা আর চাপ দেওয়ার বিষয়টা তখন মনের অজান্তেই চলতে থাকে।” এটা অস্বাস্থ্যকর আর মল নিঃসরণের সাথে জড়িত অঙ্গ প্রত্যঙ্গ এবং শ্রোণীদেশের জন্য ক্ষতিকর। এছাড়া মলদ্বারের পেশিও দুর্বল করে দেয়, বেশি চাপ দেওয়ার কারণে। এর থেকে ‘রেক্টাল প্রোল্যাপ্স’ হয়। অর্থাৎ বৃহদান্ত্রের কিছু অংশ পিছলিয়ে মলদ্বার থেকে বের হয়ে ঝুলে পড়ে। এছাড়া টয়লেটে দীর্ঘক্ষণ বসে থাকলে শ্রোণীদেশের পেশিও দ্র্বুল হয়। এই পেশিগুলো অন্ত্রের ও পাকস্থলীর নড়াচাড়া এবং দেহের নিম্নাংশের কার্যক্রম ও মল ভালোমতো নিঃসরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
টয়লেটে সময় কাটানোতে সচেতন হওয়া
শৌচাগারে বেশি সময় কাটানো এড়াতে- মোবাইল ফোন, ম্যাগাজিন বা বই না নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন- ক্যালিফোর্নিয়া’র আর্ভিন’য়ের ‘হোপ অরেঞ্জ কাউন্টি’র ‘ইন্টার্ভেনশনাল গ্যাস্ট্রোএন্টেরলজিস্ট’ ডা. ল্যান্স ইয়ারেডামো। “টয়েলেটে বসে থাকার বিষয়টা আনন্দদায়ক করার দরকার নেই”- বলেন ডা. ঝু। তিনি পরামর্শ দেন, “যদি কোনো কারণে ১০ মিনিটের মধ্যে মলত্যাগ না হয়, তবে বের হয়ে আসুন। হাঁটাহাঁটি করে অন্ত্রের পেশিগুলোকে জাগিয়ে তুলুন, যাতে মলের চাপ তৈরি হয়।” পাশাপাশি পর্যাপ্ত পানি পান করে দেহ আর্দ্র রাখা, আঁশযুক্ত খাবার বেশি গ্রহণ যেমন- ওটস এবং মটর- খাওয়ার মাধ্যমে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করা সম্ভব। আঁশ ও পানি মল নরম করে বের হয়ে যেতে সাহায্য করে।
শৌচাগারে বেশিক্ষণ থাকা এবং মলদ্বারের ক্যান্সার
দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা বা অস্বস্তি যদি মল নিঃসরণে ক্ষেত্রে থাকে তবে সেটা নানান ধরনের হজমতন্ত্র বিষয়ক জটিলতার লক্ষণ হতে পারে। যেমন- ‘ইরিটেবল বাওল সিন্ড্রম’ এবং ‘ক্রন’স রোগ। ডা. ইয়ারেডামো বলেন, “অতিরিক্ত কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থাকাটা পায়ুপথের ক্যান্সার হওয়াকে নির্দেশ করে। যদি মলাশয়ের ভেতরে কোনো কিছু বেড়ে ওঠে স্ফিত হয়, তবে মল প্রবাহের গতি বাধা প্রাপ্ত হয়। যে কারণে কোষ্ঠকাঠিন্যের পাশাপাশি পায়ুপথ দিয়ে রক্তপাতও হয়।” তাই অস্বাভাবিক সময় টয়লেটে বসে থাকতে হলে বা অসম্ভব ধরনের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দীর্ঘদিন থাকলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে রোগ নির্ণয় করে সঠিক চিকিৎসার ব্যবস্থা নিতে হবে।