ঢাকা ০৩:৪৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫

আইনজীবী সনদ: পরীক্ষার হলে কৌশলটাই জরুরি

  • আপডেট সময় : ০৩:১৫:২৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ১০ নভেম্বর ২০২৪
  • ৪৬ বার পড়া হয়েছে

আমিনুল ইসলাম মল্লিক : সেবার ৫৫ হাজার পরীক্ষার্থী অংশ নিয়েছিলাম। এমসিকিউ, রিটেন (লিখিত) ও মৌখিক (ভাইবা ভোসি) পরীক্ষা শেষে মাত্র ৫ হাজর ৩ শত আইনজীবী হিসেবে সনদ পাই। ২০২৩ সালের কথা বলছি। ৫৫ হাজার পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস হলো ৫৩০০ জন শিক্ষার্থী। অর্থাৎ পাসের হার ৯ দশমিক ৬৪ জন। তাহলে বলতে দ্বিধা নেই যে এটি অবশ্যই একটি কঠিন ও জটিল পরীক্ষা।
বার কাউন্সিলের এমন পরীক্ষায় নিশ্চিয় মেধাবীরা অংশ নিয়ে থাকেন। মেধাবীরা অংশ নিলে অকৃতকার্য হওয়ার সংখ্যাটা এতো বেশি কেন? এখানে মেধার সঙ্গে কৌশলটা রপ্ত করা জরুরি। আমরা জানি আইনজীবী হওয়ার জন্য বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের অধীনে তিনটি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে সনদ পাওয়া যায়। এজন্য প্রথমে দিতে এমসিকিউ। আর এমসিকিউ পরীক্ষার সময় হচ্ছে ১ ঘণ্টা বা ৬০ মিনিট। এই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ১০০ নম্বরের মধ্যে পেতে হবে ৫০ নম্বর। এখানে ৫০ নম্বরেই পাস। এমসিকিউ পাস মানে পরবর্তী দুটি পরীক্ষায় এগিয়ে যাওয়ার সুবর্ণ সুযোগ। এযেন সোনার হরিণ।
এখন প্রায় প্রতিবারই এমসিকিউ পরীক্ষা নিচ্ছে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল। যাই হোক পরীক্ষা প্রতিবছরই হোক আর দুই বছর পর পর হোক সেটি সমস্যা না৷ লক্ষ হচ্ছে আপনাকে পাস করতে হবে। এবং সারা দেশের মেধাবী আইন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যুদ্ধ করেই এ মাঠে টিকে থাকতে হবে। তাহলে এখানেই সফলতা। আমি যেহেতু এ পরীক্ষায় অংশ নিয়েছি। ধাপে ধাপে তিনটি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে আইনজীবী সনদ হাতে পেয়েছি। তাই আমার অভিজ্ঞতা শেয়ার করছি। পরীক্ষার হলে পাস করার জন্য আমি আপনাদের কিছু কৌশলের কথা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই৷ হয়তো আমার এমন পরামর্শ আপনাদের জন্য কাজে লাগবে।
বার কাউন্সিলের এমসিকিউ পরীক্ষার একটা স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য হলো ৫০ পেলেই পাস। এখানে যে শিক্ষার্থী ৯০ পাবেন তিনিও পাস আবার যিনি ৮০ নম্বর পাবেন তিনিও পাস। এই পরীক্ষায় প্রথম বা দ্বিতীয় বা তৃতীয় শ্রেণি বলতে কিছু নেই। ৫০ পেলেই খুশির খবর। আর ৪৯ পেলে অকৃতকার্য। তা স্যাড নিউজ। এ জন্য আপনাকে চিন্তা করতে হবে যে, করেই হোক আমি পাস করব।
পরীক্ষার হলে গিয়ে ওএমআর শিট সতর্কতার সঙ্গে পূরণ করুণ। রোল রেজিস্ট্রেশন নম্বর কোনোমতেই ভুল করা যাবে না। ভুল করে ৯০ নম্বর পেলেও পরীক্ষায় পাস আসবে না। সো এগুলো পূরণে বি কেয়ারফুল। এখানে সতর্কতার সঙ্গে ফেস করাই মুল। এরপর আপনি প্রশ্নটি পড়বেন আর সঠিক উত্তর জানা থাকলে বৃত্ত ভরাট করবেন। কনফিউশান নিয়ে কখনোই বৃত্ত ভরাট করবেন না। প্রশ্নের উত্তর ভাসাভাসা জেনে উত্তর দেওয়ার চেয়ে না দেওয়াই ভালো। মনে রাখবেন, একটা উত্তর ভুল হলে নম্বর কাটা যাবে সোয়া ১। অর্থাৎ নেগেটিভ মার্ক। তাহলে আপনি ভুল উত্তর দেবেন কেন? ভুল খেলবেন কেন? ভুল খেলার চেয়ে না খেলাই ভালো। এভাবেই ৬০ মিনিটে ১০০টা প্রশ্নে পড়ে উত্তর দিতে হবে আপনাকে। আপনি সঠিক উত্তর ৬০ টা জানেন তাহলে ৬০ টি বৃত্তই ভরাট করুন। ৫০ বা ৫৫ টি সঠিক উত্তর দিলেই আপনি পাস। কেন আরও বেশি প্রশ্নের উত্তর দিতে যাবেন। কোনো প্রয়োজন নেই।
এভাবে ঠান্ডা মাথায় ১ ঘণ্টা বা ৬০ মিনিটের মধ্যে সবগুলো প্রশ্ন পড়ে সঠিক উত্তরটি সিলেক্ট করুন। পাস হবেই ইনশাআল্লাহ। এক ঘণ্টা সময় শেষ হওয়ার কয়েক মিনিট আগেই উত্তর দেওয়া বাদ দিন। যেসব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন সেগুলো ভালো করে মিলিয়ে নিন। আর হ্যাঁ পরীক্ষার হলে কখনোই পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের সঙ্গে খারাপ আচরণ করবেন না। কারণ বার কাউন্সিল পরীক্ষায় সাইলেন্ট এক্সফেল করার সুযোগ রয়েছে তাদের হাতে। এমসিকিউ পাস করলে রিটেনে পাস করা অনেকটাই সহজ হয়ে। এ জন্য প্রয়োজন মনের সাহস আর বেশি বেশি লেখার অভ্যাস।
আমি ২০২৩ লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার আগে রীতিমতো লিখেছি। কোচিং ও বাসায় কমপক্ষে ৫০টি পরীক্ষা দিয়েছি। হাতের লেখার গতি বাড়ানোর চেষ্টা করেছি। আর এজন্য বেশি বেশি কাগজ কলম কিনতে কার্পণ্যবোধ করিনি। চার ঘণ্টা ঘড়ি ধরে লিখেছি। একদম টাইম মেইটেইন করেছি। মূল পরীক্ষা দেওয়ার আগে বাসা ও কোচিং মিলে ৫০টি লিখিত পরীক্ষায় অংশ নিয়েছি। এতে করে আমার হাতের জড়তা কেটে গেছে। পরীক্ষার হলে গিয়ে ইজিলি লিখতে পেরেছি। আজকে এ পর্যন্তই থাকুক। পরে অন্য একদিন রিটেন ও ভাইবা ভোসি নিয়ে আলোচনা করব।

লেখক: আইনজীবী সদস্য ঢাকা ও সিরাজগঞ্জ বার

 

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

আইনজীবী সনদ: পরীক্ষার হলে কৌশলটাই জরুরি

আপডেট সময় : ০৩:১৫:২৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ১০ নভেম্বর ২০২৪

আমিনুল ইসলাম মল্লিক : সেবার ৫৫ হাজার পরীক্ষার্থী অংশ নিয়েছিলাম। এমসিকিউ, রিটেন (লিখিত) ও মৌখিক (ভাইবা ভোসি) পরীক্ষা শেষে মাত্র ৫ হাজর ৩ শত আইনজীবী হিসেবে সনদ পাই। ২০২৩ সালের কথা বলছি। ৫৫ হাজার পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস হলো ৫৩০০ জন শিক্ষার্থী। অর্থাৎ পাসের হার ৯ দশমিক ৬৪ জন। তাহলে বলতে দ্বিধা নেই যে এটি অবশ্যই একটি কঠিন ও জটিল পরীক্ষা।
বার কাউন্সিলের এমন পরীক্ষায় নিশ্চিয় মেধাবীরা অংশ নিয়ে থাকেন। মেধাবীরা অংশ নিলে অকৃতকার্য হওয়ার সংখ্যাটা এতো বেশি কেন? এখানে মেধার সঙ্গে কৌশলটা রপ্ত করা জরুরি। আমরা জানি আইনজীবী হওয়ার জন্য বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের অধীনে তিনটি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে সনদ পাওয়া যায়। এজন্য প্রথমে দিতে এমসিকিউ। আর এমসিকিউ পরীক্ষার সময় হচ্ছে ১ ঘণ্টা বা ৬০ মিনিট। এই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ১০০ নম্বরের মধ্যে পেতে হবে ৫০ নম্বর। এখানে ৫০ নম্বরেই পাস। এমসিকিউ পাস মানে পরবর্তী দুটি পরীক্ষায় এগিয়ে যাওয়ার সুবর্ণ সুযোগ। এযেন সোনার হরিণ।
এখন প্রায় প্রতিবারই এমসিকিউ পরীক্ষা নিচ্ছে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল। যাই হোক পরীক্ষা প্রতিবছরই হোক আর দুই বছর পর পর হোক সেটি সমস্যা না৷ লক্ষ হচ্ছে আপনাকে পাস করতে হবে। এবং সারা দেশের মেধাবী আইন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যুদ্ধ করেই এ মাঠে টিকে থাকতে হবে। তাহলে এখানেই সফলতা। আমি যেহেতু এ পরীক্ষায় অংশ নিয়েছি। ধাপে ধাপে তিনটি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে আইনজীবী সনদ হাতে পেয়েছি। তাই আমার অভিজ্ঞতা শেয়ার করছি। পরীক্ষার হলে পাস করার জন্য আমি আপনাদের কিছু কৌশলের কথা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই৷ হয়তো আমার এমন পরামর্শ আপনাদের জন্য কাজে লাগবে।
বার কাউন্সিলের এমসিকিউ পরীক্ষার একটা স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য হলো ৫০ পেলেই পাস। এখানে যে শিক্ষার্থী ৯০ পাবেন তিনিও পাস আবার যিনি ৮০ নম্বর পাবেন তিনিও পাস। এই পরীক্ষায় প্রথম বা দ্বিতীয় বা তৃতীয় শ্রেণি বলতে কিছু নেই। ৫০ পেলেই খুশির খবর। আর ৪৯ পেলে অকৃতকার্য। তা স্যাড নিউজ। এ জন্য আপনাকে চিন্তা করতে হবে যে, করেই হোক আমি পাস করব।
পরীক্ষার হলে গিয়ে ওএমআর শিট সতর্কতার সঙ্গে পূরণ করুণ। রোল রেজিস্ট্রেশন নম্বর কোনোমতেই ভুল করা যাবে না। ভুল করে ৯০ নম্বর পেলেও পরীক্ষায় পাস আসবে না। সো এগুলো পূরণে বি কেয়ারফুল। এখানে সতর্কতার সঙ্গে ফেস করাই মুল। এরপর আপনি প্রশ্নটি পড়বেন আর সঠিক উত্তর জানা থাকলে বৃত্ত ভরাট করবেন। কনফিউশান নিয়ে কখনোই বৃত্ত ভরাট করবেন না। প্রশ্নের উত্তর ভাসাভাসা জেনে উত্তর দেওয়ার চেয়ে না দেওয়াই ভালো। মনে রাখবেন, একটা উত্তর ভুল হলে নম্বর কাটা যাবে সোয়া ১। অর্থাৎ নেগেটিভ মার্ক। তাহলে আপনি ভুল উত্তর দেবেন কেন? ভুল খেলবেন কেন? ভুল খেলার চেয়ে না খেলাই ভালো। এভাবেই ৬০ মিনিটে ১০০টা প্রশ্নে পড়ে উত্তর দিতে হবে আপনাকে। আপনি সঠিক উত্তর ৬০ টা জানেন তাহলে ৬০ টি বৃত্তই ভরাট করুন। ৫০ বা ৫৫ টি সঠিক উত্তর দিলেই আপনি পাস। কেন আরও বেশি প্রশ্নের উত্তর দিতে যাবেন। কোনো প্রয়োজন নেই।
এভাবে ঠান্ডা মাথায় ১ ঘণ্টা বা ৬০ মিনিটের মধ্যে সবগুলো প্রশ্ন পড়ে সঠিক উত্তরটি সিলেক্ট করুন। পাস হবেই ইনশাআল্লাহ। এক ঘণ্টা সময় শেষ হওয়ার কয়েক মিনিট আগেই উত্তর দেওয়া বাদ দিন। যেসব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন সেগুলো ভালো করে মিলিয়ে নিন। আর হ্যাঁ পরীক্ষার হলে কখনোই পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের সঙ্গে খারাপ আচরণ করবেন না। কারণ বার কাউন্সিল পরীক্ষায় সাইলেন্ট এক্সফেল করার সুযোগ রয়েছে তাদের হাতে। এমসিকিউ পাস করলে রিটেনে পাস করা অনেকটাই সহজ হয়ে। এ জন্য প্রয়োজন মনের সাহস আর বেশি বেশি লেখার অভ্যাস।
আমি ২০২৩ লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার আগে রীতিমতো লিখেছি। কোচিং ও বাসায় কমপক্ষে ৫০টি পরীক্ষা দিয়েছি। হাতের লেখার গতি বাড়ানোর চেষ্টা করেছি। আর এজন্য বেশি বেশি কাগজ কলম কিনতে কার্পণ্যবোধ করিনি। চার ঘণ্টা ঘড়ি ধরে লিখেছি। একদম টাইম মেইটেইন করেছি। মূল পরীক্ষা দেওয়ার আগে বাসা ও কোচিং মিলে ৫০টি লিখিত পরীক্ষায় অংশ নিয়েছি। এতে করে আমার হাতের জড়তা কেটে গেছে। পরীক্ষার হলে গিয়ে ইজিলি লিখতে পেরেছি। আজকে এ পর্যন্তই থাকুক। পরে অন্য একদিন রিটেন ও ভাইবা ভোসি নিয়ে আলোচনা করব।

লেখক: আইনজীবী সদস্য ঢাকা ও সিরাজগঞ্জ বার