ঢাকা ০১:১৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২২ অগাস্ট ২০২৫

ওলামা-মাশায়েখদের ইসলামি মহাসম্মেলন সাদপন্থিদের নিষিদ্ধসহ ৯ দাবি

  • আপডেট সময় : ০৮:২৩:১৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ নভেম্বর ২০২৪
  • ৭৩ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সমাবেশ থেকে তাবলীগ জামাতের একাংশের তরফে সাদপন্থিদের নিষিদ্ধ করাসহ ৯ দফা দাবি জানানো হয়েছে।
মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) ‘ওলামা-মাশায়েখদের ইসলামি মহাসম্মেলন’ থেকে এসব দাবি তুলে ধরেছেন শায়খুল হাদিস পরিষদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও বেফাক মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক। এই সম্মেলনে জমায়েত হন তাবলীগের অপর পক্ষ জুবায়েরপন্থিরা, যারা নিজেদের ‘শুরায়ে নিজাম’ পরিচয় দিয়ে থাকেন। চলতি সপ্তাহের শুরুতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তাবলিগ জামায়াতের দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি সমাবেশের ঘোষণায় উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। পরে সরকারের ‘মধ্যস্থতায়’ সাদপন্থিরা তাদের কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেন। সোমবার দুই পক্ষকে নিয়েই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সভার উদ্যোগ নেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। সেখানে সাদপন্থিরা এলেও অন্যরা আসেননি। ওই বৈঠকে এবারও দুই পর্বে বিশ্ব ইজতেমা আয়োজনের সিদ্ধান্ত হয়। আগে এক মঞ্চ থেকে একবারই বিশ্ব ইজতেমার আয়োজন হত। কিন্তু দিল্লির মাওলানা সাদ কান্ধলভি এবং বাংলাদেশের কাকরাইল মারকাজের মাওলানা জুবায়ের আহমদের অনুসারীরা নিজেদের মধ্যে বিভেদে জড়িয়ে পড়েন ২০১৯ সালে। এক পর্যায়ে দুই পক্ষ বিশ্ব ইজতেমা দুইবারে করার সিদ্ধান্ত নেন। মাঝে কোভিড মহামারীর কারণে ইজতেমা দুই বছর বন্ধও রাখা হয়। পরে ২০২২ সাল থেকে ফের ইজতেমা হচ্ছে দুই পর্বের আয়োজনে। এর মধ্যেই মঙ্গলবারের সমাবেশ থেকে এক পক্ষকে নিষেধাজ্ঞার দাবি জানাল অপর পক্ষ। সোহরাওয়ার্দীর সমাবেশের শেষভাগে শায়খুল হাদিস পরিষদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও বেফাক মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক ৯ দফা দাবি তুলে ধরেন-
১. কওমি শিক্ষাকে দারুল উলুম দেওবন্দের আওতায় পরিচালনা করতে হবে এবং তাবলিগ নিয়ে বিচ্ছিন্ন মহলের সব ষড়যন্ত্র বন্ধ করতে হবে। ২. সাধারণ শিক্ষা সিলেবাসে ধর্মশিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করতে হবে। ৩. আলেমদের বিরুদ্ধে বিগত সরকারের যাবতীয় মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। ৪. শাপলা চত্বরের গণহত্যায় জড়িত আসামিদের দেশে এনে শাস্তি নিশ্চিত এবং সারাদেশে দায়ের করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। ৫. ২০১৮ সালে টঙ্গী ময়দানে সাদপন্থিদের নৃশংস আক্রমণের বিচার করতে হবে। ৬. সাদপন্থিরা নবী করিম (স.)-সহ সাহাবীদের সমালোচনা করে আসছে। সাদ তাবলিগের নীতিমালা উপেক্ষা করে আসছে। সেই কারণেই মাওলানা সাদকে দেশে আসতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। কোনো অবস্থাতেই তাকে আসতে দেওয়া হবে না। ৭. ‘আলেমপন্থিদেরই’ সরকার ঘোষিত দুই পর্বে বিশ্ব ইজতেমা করতে দিতে হবে। ৮. কাকরাইল মসজিদ সাদপন্থিদের কোনো কার্যক্রম চালাতে দেওয়া হবে না। কাকরাইল থেকে কেবল ‘শুরায়ে নিজাম’ পরিচালিত হবে। ৯. ‘অভিশপ্ত’ কাদিয়ানিদের অবিলম্বে অমুসলিম ঘোষণা করতে হবে।
বেলা দেড়টার দিকে মোনাজাতের মধ্যে দিয়ে শেষ হয় এই মহাসম্মেলন। মোনাজাত পরিচালনা করেন শাহ মোহাম্মদ মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী। এর আগে বাংলাদেশ নেজামে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব আজিজুল হক বলেন, আসন্ন বিশ্ব ইজতেমা ঘিরেও সাদন্থিদের ‘ষড়যন্ত্র’ চলছে। “বিশ্ব ইজতেমাকে কেন্দ্র করে স্বঘোষিত আমির সাদ ও তার অনুসারীরা বিশৃঙ্খলা করার পরিকল্পনা নিয়েছে। আমরা কোনোভাবেই সেটি হতে দেব না। তাদের সমস্ত ষড়যন্ত্র যেকোনো মূল্যে আমরা ব্যর্থ করে দেব। বিশ্ব ইজতেমা নিয়ে আজকের সম্মেলন থেকে ওলামায় কেরামের পক্ষ থেকে যে ঘোষণা দেওয়া হবে, সরকারকে সেই নির্দেশনা মানতে হবে। এর বাইরে কারও সিদ্ধান্ত তৌহিদী জনতা মানবে না।”
অনুষ্ঠানে মাওলানা আব্দুল হামিদ বলেন, “বিশ্ব ইজতেমা নিয়ে সরকার দুই পক্ষের সঙ্গে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নিতে চাইছে। আমি বলব- কীসের পরামর্শ; এই সম্মেলন থেকে যে সিদ্ধান্ত আসবে, সরকারকে এটাই বাস্তবায়ন করতে হবে। ভিন্ন কোনো চিন্তা করলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে।” হেফাজতে ইসলামী বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব জুনায়েদ আল হাবিব বলেন, “আমরা ১৫ বছর ধরে ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে লড়াই করে এ সরকারকে বসিয়েছি। কেউ যদি রক্ত চক্ষু দেখায়, তবে আমরা তাদের চক্ষু উপড়ে ফেলব। “জাতির পথপ্রদর্শক হবে আলেমরা। তাবলিগের রাহবারও আলেমদের থেকেই হবে, অন্য কেউ নয়।”
কাকরাইল মারকাজের ইমাম মুহাম্মাদ আযীমুদ্দীন বলেন, “সম্মানিত উলামায়ে কেরামের কোনো বক্তব্যে আমরা সামান্যতমও বিচলিত নই। তারা এর আগেও এমন বক্তব্য দিয়েছিলেন। কিন্তু আল্লাহ আপন মেহেরবাণীতে হকের উপর থাকার কারণে বাংলাদেশে আমাদেরকে টিকিয়ে রেখেছেন।” সাদপন্থি এই মুফতি বলেন, “আগামীতেও আল্লাহ আমাদেরকে টিকিয়ে রাখবেন- এই বিশ্বাস নিয়ে আমরা আমাদের দাওয়াতের ময়দানে অবিচল থাকব। কারো কোন বক্তব্যের আমরা পরোয়া করি না, প্রতিবাদও করব না।” এদিন সকাল থেকেই ঢাকার বিভিন্ন জায়গা থেকে বাস ও ট্রাকে ভরে মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকসহ লোকজন সম্মেলনস্থলের দিকে যেতে শুরু করে। সকাল ১০টার দিকেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানমুখী রাস্তাগুলো বন্ধ হয়ে যায়। শাহবাগ মোড়ে ব্যারিকেড দিয়ে দেয় পুলিশ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর দিয়ে সব ধরণের যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয় বলে জানান শাহবাগ মোড়ে কর্তব্যরত ট্রাফিক সার্জেন্ট আব্দুল বাতেন। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ঘিরে লাখো মানুষের জমায়েতের চাপ পড়ে বাইরের সড়কগুলোতেও। প্রেস ক্লাব, মৎস্যভবন থেকে শাহবাগ হয়ে সায়েন্সল্যাব এবং শাহবাগ থেকে বাংলামোটর দিকের সড়কের পেরিয়ে এই বাড়তি জটলার প্রভাব পড়েছে সারা ঢাকাজুড়ে।
ইজতেমার তারিখ ঘোষণা: মহাসম্মেলন থেকে বিশ্ব ইজতেমার তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। ঘোষণা পাঠ করেন কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড বেফাকের মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক। তিনি জানান, বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব আগামী বছরের ৩১ জানুয়ারি এবং ১, ২ ফেব্রুয়ারি এবং দ্বিতীয় পর্ব ৭, ৮ ও ৯ ফেব্রুয়ারি করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে মহাসম্মেলন থেকে। এ সময় মাহফুজুল হক ২০১৮ সালে ইজতেমার ময়দানে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিচার ও কাকরাইল মসজিদ আলেমদের নিয়ন্ত্রণে রাখাসহ ৯ দফা দাবি ঘোষণা করেন। এ বিষয়ে সম্মেলনের পক্ষ থেকে সরকারের প্রতি দাবিগুলো মানতে একান্ত সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
সোমবার (৪ নভেম্বর) ‘তাবলীগ জামাতের দুই গ্রুপকে (জোবায়ের ও সাদ) নিয়ে আসন্ন বিশ্ব ইজতেমার তারিখ নির্ধারণ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, ইজতেমার সার্বিক নিরাপত্তা ও অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিষয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সভাপতিত্বে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সভা অনুষ্ঠিত হয়। তবে সেখানে তাবলীগের জুবায়েরপন্থি (হেফাজত, কওমি আলেমদের অনুসারী) আলেমরা উপস্থিত হননি। বিগত কয়েক বছর ধরে সরকারের পক্ষে আলোচনা সাপেক্ষে ইজতেমার দিনক্ষণ ঠিক করা হলেও এবার জুবায়েরপন্থিরা নিজেরাই দিনক্ষণ জানালো।
মহাসম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন হেফাজতের আমির মাওলানা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী। মুফতি কেফায়েতুল্লাহ আজহারীর সঞ্চালনায় মহাসম্মেলনে বক্তব্য রাখেন– মাওলানা খলিল আহমাদ কাসেমী, মাওলানা রশিদুর রহমান, জিয়াউদ্দিন, সাজিদুর রহমান, আব্দুল কুদ্দুস, নূরুল ইসলাম ওলিপুরী, মাওলানা আবু তাহের নদভী, মাওলানা সালাহউদ্দীন নানুপুরী, মাওলানা মুস্তাক আহমদ, মাওলানা আনোয়ারুল করীম, মাওলানা মুফতি মোহাম্মদ আলী, মাওলানা মুফতি মনসুরুল হক, মাওলানা মুফতি দেলাওয়ার হোসাইন, মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব, মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দি, মাওলানা বাহাউদ্দীন জাকারিয়া, মাওলানা আব্দুল আউয়াল, মাওলানা মুফতি মোহাম্মদ ফয়জুল্লাহ (মুহতামিম, মাদানীনগর মাদ্রাসা), মাওলানা খালিদ সাইফুল্লাহ আইয়ুবী, মুফতি নুরুল আমীন (পীর সাহেব খুলনা), জামিয়া ইমদাদিয়া কিশোরগঞ্জ মাদ্রাসার শাইখুল হাদিস মাওলানা ইমদাদুল্লাহ।
সম্মেলনে আসা লোকজনের ভিড় ঢাবিতে, বিরক্ত-ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা: সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘ইসলামি মহাসম্মেলনে’ অংশ নিতে আসা মানুষদের মধ্যে অনেকের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যথেচ্ছ আনাগোনায় রীতিমত বিরক্ত এবং ক্ষুব্ধ হয়েছেন শিক্ষার্থীরা। বহিরাগত কিছু মানুষের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের নিজ ক্যাম্পাসে প্রবেশে বাধা এবং আবাসিক হলে প্রবেশের অভিযোগ উঠেছে। মেয়েদের উত্যক্ত করার মতো গুরুতর অভিযোগও করেছেন কেউ কেউ। এছাড়া নারী শিক্ষার্থীদের ‘ওয়াশরুমে প্রবেশ’ ও বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় যত্রতত্র ‘মূত্র বিসর্জনেরও’ মতো বিব্রতকর অভিযোগ নিয়ে প্রক্টরের অফিসে ভিড় করেন শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার সোহরাওয়ার্দীতে ‘ওলামা-মাশায়েখদের ইসলামি মহাসম্মেলনে’ সকাল থেকেই ঢাকার বিভিন্ন জায়গা থেকে বাস ও ট্রাক ভরে মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকসহ লোকজন সম্মেলনস্থলে জড়ো হতে থাকেন। সকাল ১০টার মধ্যে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানমুখী রাস্তাগুলো বন্ধ হয়ে যায়। সম্মেলনে আসা মানুষের ঢলের কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর দিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ঘিরে লাখো মানুষের জমায়েতের চাপ পড়ে বাইরের সড়কগুলোতেও। প্রেস ক্লাব, মৎস্যভবন থেকে শাহবাগ হয়ে সায়েন্সল্যাব এবং শাহবাগ থেকে বাংলামোটর দিকের সড়কের পেরিয়ে এই বাড়তি জটলার প্রভাব পড়ে সারা ঢাকাজুড়ে। সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত সম্মেলন চলার পুরোটা সময়ই ক্যাম্পাস এলাকায় সমাবেশের মানুষদের ভিড় দেখা গেছে। এই পুরোটা সময়ে সম্মেলনে যোগ দিতে আসা লোকজনকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যত্রতত্র ঘুরে বেড়াতে, জায়গায় জায়গায় জটলা করতে এমনকি ক্যাম্পাসের ভেতরে বিভিন্ন দেয়ালের পাশে ‘মুত্রত্যাগ’ করতে গেছে। রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে বসে আতর-টুপি বেচাকেনার দৃশ্যও দেখা গেছে। বহিরাগতদের এসব কর্মকাণ্ডের ছবি ফেসবুকে শেয়ার করে ক্ষোভও জানিয়েছেন অনেকে। তাদের এমন কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদেরকে সকাল থেকেই অভিযোগ নিয়ে আসতে দেখা গেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর কার্যালয়ে। সেখানে অভিযোগ নিয়ে আসা সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের চতুর্থ বর্ষের এক নারী শিক্ষার্থী একটি অনলাইন সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “আমি ক্লাস করতে যাচ্ছিলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে থেকে আসা একদল লোক আমাকে আপত্তিকর মন্তব্য করেছে। তাই আমি অভিযোগ নিয়ে প্রক্টর স্যারের কাছে এসেছি।” হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের ফটকে দায়িত্বরত কর্মচারী আলতাফ হোসেন নুরু বলেন, “সকাল থেকে অনেকেই ওয়াশরুম ব্যাবহার করেছে। মসজিদে প্রবেশের উদ্দেশে হলে ঢুকলেও ছাত্রদের আপত্তিতে বহিরাগতদেরকে অন্য ব্যবস্থা দেখিয়ে হলে পরে আর ঢুকতে দেওয়া হয়নি।” কবি সুফিয়া কামাল হলের ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মেহজাবিন লিয়া নিজ হলের সামনেই ‘মন্দ স্পর্শের’ শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেন, “এসব নিয়ে কথা বলতে গেলেও ভয় পেতে হয়, ইসলামের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয় কি না। অনেকে ‘শাহবাগী’ বলে খোঁচা দিতে পারে। তবে শুধু আমার সাথেই এমন হয়নি। অনেকের সাথেই আজ এমনটি হয়েছে বলে জেনেছি।” তিনি বলেন, “আমি টিউশনি করতে হলের বাইরে বেরিয়ে ছিলাম। সেখানে একদল লোক সমাবেশে যেতে আমাদের হলের সামনে উপস্থিত ছিল। একজন দ্রুত এসে আমাকে বাম পাশ থেকে ধাক্কা দিয়ে চলে যান। তিনি ইচ্ছাকৃতভাবেই এমনটা করেছে বলে আমার মনে হয়েছে।” বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি সুফিয়া কামাল হলের দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী জিকরা জিকু ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, “ঢাবিকে হিসুখানা না বানাইলেও পারতেন!”
‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সংসদ-২’ নামের একটি ফেসবুক পেইজে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রবিউল ইসলাম ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে সমাবেশে আসা লোকজনের মূত্রত্যাগের ছবি দিয়ে লিখেছেন “বাদ গেল না নজরুলের সমাধির মসজিদের পাশ, না সেন্ট্রাল লাইব্রেরি, না মেয়েদের হলের দেয়াল, না থিয়েটার ডিপার্টমেন্ট-এর সাইডটা, না গেল টিএসসির সাইড।”

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ প্রসঙ্গে প্রক্টর অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, “শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে এসেছে। নারী শিক্ষার্থীরা ইভটিজিংয়ের শিকার হয়েছে, ছেলেরাও সামাজিক বিজ্ঞান ভবনের দিকে আসা-যাওয়া করতে সমস্যায় পড়েছে।” ক্যাম্পাসে আসা বহিরাগতদের নিয়ে প্রক্টরের ভাষ্য, “তারা খুবই খারাপ কাজ করেছে।” মাইকিং করে ক্যাম্পাস থেকে বহিরাগতদের সরানোর চেষ্টা করা হয়েছে জানিয়ে প্রক্টর বলেছেন, ডিএমপির সঙ্গে কথা বলে তাদেরকে সরানোর চেষ্টা করা হয়েছে। সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, “মহাসমাবেশ আয়োজনকারীদের কয়েকজন আমাকে জানিয়েছিলেন তারা বিশ হাজার মানুষ নিয়ে সমাবেশ করবেন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। তারা ক্যাম্পাসে গাড়ি রাখতে চেয়েছিলেন, তবে আমি অনুমতি দেইনি। “সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মানুষজন আমাদের ক্যাম্পাসে এসেছে। তাদের ওপর বল প্রয়োগ করার মতো ম্যাকানিজম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নেই। উপাচার্য দেশে আসলে আমি ডিএমপি কমিশনারকে চিঠি দেব, বলব এরপর থেকে কোনো সমাবেশের অনুমতি আপনি একা দেবেন না। আমাদের সাথে আলোচনা করে দিতে হবে।”

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

ওলামা-মাশায়েখদের ইসলামি মহাসম্মেলন সাদপন্থিদের নিষিদ্ধসহ ৯ দাবি

আপডেট সময় : ০৮:২৩:১৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ নভেম্বর ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সমাবেশ থেকে তাবলীগ জামাতের একাংশের তরফে সাদপন্থিদের নিষিদ্ধ করাসহ ৯ দফা দাবি জানানো হয়েছে।
মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) ‘ওলামা-মাশায়েখদের ইসলামি মহাসম্মেলন’ থেকে এসব দাবি তুলে ধরেছেন শায়খুল হাদিস পরিষদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও বেফাক মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক। এই সম্মেলনে জমায়েত হন তাবলীগের অপর পক্ষ জুবায়েরপন্থিরা, যারা নিজেদের ‘শুরায়ে নিজাম’ পরিচয় দিয়ে থাকেন। চলতি সপ্তাহের শুরুতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তাবলিগ জামায়াতের দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি সমাবেশের ঘোষণায় উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। পরে সরকারের ‘মধ্যস্থতায়’ সাদপন্থিরা তাদের কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেন। সোমবার দুই পক্ষকে নিয়েই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সভার উদ্যোগ নেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। সেখানে সাদপন্থিরা এলেও অন্যরা আসেননি। ওই বৈঠকে এবারও দুই পর্বে বিশ্ব ইজতেমা আয়োজনের সিদ্ধান্ত হয়। আগে এক মঞ্চ থেকে একবারই বিশ্ব ইজতেমার আয়োজন হত। কিন্তু দিল্লির মাওলানা সাদ কান্ধলভি এবং বাংলাদেশের কাকরাইল মারকাজের মাওলানা জুবায়ের আহমদের অনুসারীরা নিজেদের মধ্যে বিভেদে জড়িয়ে পড়েন ২০১৯ সালে। এক পর্যায়ে দুই পক্ষ বিশ্ব ইজতেমা দুইবারে করার সিদ্ধান্ত নেন। মাঝে কোভিড মহামারীর কারণে ইজতেমা দুই বছর বন্ধও রাখা হয়। পরে ২০২২ সাল থেকে ফের ইজতেমা হচ্ছে দুই পর্বের আয়োজনে। এর মধ্যেই মঙ্গলবারের সমাবেশ থেকে এক পক্ষকে নিষেধাজ্ঞার দাবি জানাল অপর পক্ষ। সোহরাওয়ার্দীর সমাবেশের শেষভাগে শায়খুল হাদিস পরিষদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও বেফাক মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক ৯ দফা দাবি তুলে ধরেন-
১. কওমি শিক্ষাকে দারুল উলুম দেওবন্দের আওতায় পরিচালনা করতে হবে এবং তাবলিগ নিয়ে বিচ্ছিন্ন মহলের সব ষড়যন্ত্র বন্ধ করতে হবে। ২. সাধারণ শিক্ষা সিলেবাসে ধর্মশিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করতে হবে। ৩. আলেমদের বিরুদ্ধে বিগত সরকারের যাবতীয় মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। ৪. শাপলা চত্বরের গণহত্যায় জড়িত আসামিদের দেশে এনে শাস্তি নিশ্চিত এবং সারাদেশে দায়ের করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। ৫. ২০১৮ সালে টঙ্গী ময়দানে সাদপন্থিদের নৃশংস আক্রমণের বিচার করতে হবে। ৬. সাদপন্থিরা নবী করিম (স.)-সহ সাহাবীদের সমালোচনা করে আসছে। সাদ তাবলিগের নীতিমালা উপেক্ষা করে আসছে। সেই কারণেই মাওলানা সাদকে দেশে আসতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। কোনো অবস্থাতেই তাকে আসতে দেওয়া হবে না। ৭. ‘আলেমপন্থিদেরই’ সরকার ঘোষিত দুই পর্বে বিশ্ব ইজতেমা করতে দিতে হবে। ৮. কাকরাইল মসজিদ সাদপন্থিদের কোনো কার্যক্রম চালাতে দেওয়া হবে না। কাকরাইল থেকে কেবল ‘শুরায়ে নিজাম’ পরিচালিত হবে। ৯. ‘অভিশপ্ত’ কাদিয়ানিদের অবিলম্বে অমুসলিম ঘোষণা করতে হবে।
বেলা দেড়টার দিকে মোনাজাতের মধ্যে দিয়ে শেষ হয় এই মহাসম্মেলন। মোনাজাত পরিচালনা করেন শাহ মোহাম্মদ মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী। এর আগে বাংলাদেশ নেজামে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব আজিজুল হক বলেন, আসন্ন বিশ্ব ইজতেমা ঘিরেও সাদন্থিদের ‘ষড়যন্ত্র’ চলছে। “বিশ্ব ইজতেমাকে কেন্দ্র করে স্বঘোষিত আমির সাদ ও তার অনুসারীরা বিশৃঙ্খলা করার পরিকল্পনা নিয়েছে। আমরা কোনোভাবেই সেটি হতে দেব না। তাদের সমস্ত ষড়যন্ত্র যেকোনো মূল্যে আমরা ব্যর্থ করে দেব। বিশ্ব ইজতেমা নিয়ে আজকের সম্মেলন থেকে ওলামায় কেরামের পক্ষ থেকে যে ঘোষণা দেওয়া হবে, সরকারকে সেই নির্দেশনা মানতে হবে। এর বাইরে কারও সিদ্ধান্ত তৌহিদী জনতা মানবে না।”
অনুষ্ঠানে মাওলানা আব্দুল হামিদ বলেন, “বিশ্ব ইজতেমা নিয়ে সরকার দুই পক্ষের সঙ্গে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নিতে চাইছে। আমি বলব- কীসের পরামর্শ; এই সম্মেলন থেকে যে সিদ্ধান্ত আসবে, সরকারকে এটাই বাস্তবায়ন করতে হবে। ভিন্ন কোনো চিন্তা করলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে।” হেফাজতে ইসলামী বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব জুনায়েদ আল হাবিব বলেন, “আমরা ১৫ বছর ধরে ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে লড়াই করে এ সরকারকে বসিয়েছি। কেউ যদি রক্ত চক্ষু দেখায়, তবে আমরা তাদের চক্ষু উপড়ে ফেলব। “জাতির পথপ্রদর্শক হবে আলেমরা। তাবলিগের রাহবারও আলেমদের থেকেই হবে, অন্য কেউ নয়।”
কাকরাইল মারকাজের ইমাম মুহাম্মাদ আযীমুদ্দীন বলেন, “সম্মানিত উলামায়ে কেরামের কোনো বক্তব্যে আমরা সামান্যতমও বিচলিত নই। তারা এর আগেও এমন বক্তব্য দিয়েছিলেন। কিন্তু আল্লাহ আপন মেহেরবাণীতে হকের উপর থাকার কারণে বাংলাদেশে আমাদেরকে টিকিয়ে রেখেছেন।” সাদপন্থি এই মুফতি বলেন, “আগামীতেও আল্লাহ আমাদেরকে টিকিয়ে রাখবেন- এই বিশ্বাস নিয়ে আমরা আমাদের দাওয়াতের ময়দানে অবিচল থাকব। কারো কোন বক্তব্যের আমরা পরোয়া করি না, প্রতিবাদও করব না।” এদিন সকাল থেকেই ঢাকার বিভিন্ন জায়গা থেকে বাস ও ট্রাকে ভরে মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকসহ লোকজন সম্মেলনস্থলের দিকে যেতে শুরু করে। সকাল ১০টার দিকেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানমুখী রাস্তাগুলো বন্ধ হয়ে যায়। শাহবাগ মোড়ে ব্যারিকেড দিয়ে দেয় পুলিশ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর দিয়ে সব ধরণের যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয় বলে জানান শাহবাগ মোড়ে কর্তব্যরত ট্রাফিক সার্জেন্ট আব্দুল বাতেন। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ঘিরে লাখো মানুষের জমায়েতের চাপ পড়ে বাইরের সড়কগুলোতেও। প্রেস ক্লাব, মৎস্যভবন থেকে শাহবাগ হয়ে সায়েন্সল্যাব এবং শাহবাগ থেকে বাংলামোটর দিকের সড়কের পেরিয়ে এই বাড়তি জটলার প্রভাব পড়েছে সারা ঢাকাজুড়ে।
ইজতেমার তারিখ ঘোষণা: মহাসম্মেলন থেকে বিশ্ব ইজতেমার তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। ঘোষণা পাঠ করেন কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড বেফাকের মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক। তিনি জানান, বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব আগামী বছরের ৩১ জানুয়ারি এবং ১, ২ ফেব্রুয়ারি এবং দ্বিতীয় পর্ব ৭, ৮ ও ৯ ফেব্রুয়ারি করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে মহাসম্মেলন থেকে। এ সময় মাহফুজুল হক ২০১৮ সালে ইজতেমার ময়দানে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিচার ও কাকরাইল মসজিদ আলেমদের নিয়ন্ত্রণে রাখাসহ ৯ দফা দাবি ঘোষণা করেন। এ বিষয়ে সম্মেলনের পক্ষ থেকে সরকারের প্রতি দাবিগুলো মানতে একান্ত সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
সোমবার (৪ নভেম্বর) ‘তাবলীগ জামাতের দুই গ্রুপকে (জোবায়ের ও সাদ) নিয়ে আসন্ন বিশ্ব ইজতেমার তারিখ নির্ধারণ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, ইজতেমার সার্বিক নিরাপত্তা ও অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিষয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সভাপতিত্বে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সভা অনুষ্ঠিত হয়। তবে সেখানে তাবলীগের জুবায়েরপন্থি (হেফাজত, কওমি আলেমদের অনুসারী) আলেমরা উপস্থিত হননি। বিগত কয়েক বছর ধরে সরকারের পক্ষে আলোচনা সাপেক্ষে ইজতেমার দিনক্ষণ ঠিক করা হলেও এবার জুবায়েরপন্থিরা নিজেরাই দিনক্ষণ জানালো।
মহাসম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন হেফাজতের আমির মাওলানা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী। মুফতি কেফায়েতুল্লাহ আজহারীর সঞ্চালনায় মহাসম্মেলনে বক্তব্য রাখেন– মাওলানা খলিল আহমাদ কাসেমী, মাওলানা রশিদুর রহমান, জিয়াউদ্দিন, সাজিদুর রহমান, আব্দুল কুদ্দুস, নূরুল ইসলাম ওলিপুরী, মাওলানা আবু তাহের নদভী, মাওলানা সালাহউদ্দীন নানুপুরী, মাওলানা মুস্তাক আহমদ, মাওলানা আনোয়ারুল করীম, মাওলানা মুফতি মোহাম্মদ আলী, মাওলানা মুফতি মনসুরুল হক, মাওলানা মুফতি দেলাওয়ার হোসাইন, মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব, মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দি, মাওলানা বাহাউদ্দীন জাকারিয়া, মাওলানা আব্দুল আউয়াল, মাওলানা মুফতি মোহাম্মদ ফয়জুল্লাহ (মুহতামিম, মাদানীনগর মাদ্রাসা), মাওলানা খালিদ সাইফুল্লাহ আইয়ুবী, মুফতি নুরুল আমীন (পীর সাহেব খুলনা), জামিয়া ইমদাদিয়া কিশোরগঞ্জ মাদ্রাসার শাইখুল হাদিস মাওলানা ইমদাদুল্লাহ।
সম্মেলনে আসা লোকজনের ভিড় ঢাবিতে, বিরক্ত-ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা: সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘ইসলামি মহাসম্মেলনে’ অংশ নিতে আসা মানুষদের মধ্যে অনেকের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যথেচ্ছ আনাগোনায় রীতিমত বিরক্ত এবং ক্ষুব্ধ হয়েছেন শিক্ষার্থীরা। বহিরাগত কিছু মানুষের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের নিজ ক্যাম্পাসে প্রবেশে বাধা এবং আবাসিক হলে প্রবেশের অভিযোগ উঠেছে। মেয়েদের উত্যক্ত করার মতো গুরুতর অভিযোগও করেছেন কেউ কেউ। এছাড়া নারী শিক্ষার্থীদের ‘ওয়াশরুমে প্রবেশ’ ও বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় যত্রতত্র ‘মূত্র বিসর্জনেরও’ মতো বিব্রতকর অভিযোগ নিয়ে প্রক্টরের অফিসে ভিড় করেন শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার সোহরাওয়ার্দীতে ‘ওলামা-মাশায়েখদের ইসলামি মহাসম্মেলনে’ সকাল থেকেই ঢাকার বিভিন্ন জায়গা থেকে বাস ও ট্রাক ভরে মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকসহ লোকজন সম্মেলনস্থলে জড়ো হতে থাকেন। সকাল ১০টার মধ্যে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানমুখী রাস্তাগুলো বন্ধ হয়ে যায়। সম্মেলনে আসা মানুষের ঢলের কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর দিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ঘিরে লাখো মানুষের জমায়েতের চাপ পড়ে বাইরের সড়কগুলোতেও। প্রেস ক্লাব, মৎস্যভবন থেকে শাহবাগ হয়ে সায়েন্সল্যাব এবং শাহবাগ থেকে বাংলামোটর দিকের সড়কের পেরিয়ে এই বাড়তি জটলার প্রভাব পড়ে সারা ঢাকাজুড়ে। সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত সম্মেলন চলার পুরোটা সময়ই ক্যাম্পাস এলাকায় সমাবেশের মানুষদের ভিড় দেখা গেছে। এই পুরোটা সময়ে সম্মেলনে যোগ দিতে আসা লোকজনকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যত্রতত্র ঘুরে বেড়াতে, জায়গায় জায়গায় জটলা করতে এমনকি ক্যাম্পাসের ভেতরে বিভিন্ন দেয়ালের পাশে ‘মুত্রত্যাগ’ করতে গেছে। রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে বসে আতর-টুপি বেচাকেনার দৃশ্যও দেখা গেছে। বহিরাগতদের এসব কর্মকাণ্ডের ছবি ফেসবুকে শেয়ার করে ক্ষোভও জানিয়েছেন অনেকে। তাদের এমন কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদেরকে সকাল থেকেই অভিযোগ নিয়ে আসতে দেখা গেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর কার্যালয়ে। সেখানে অভিযোগ নিয়ে আসা সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের চতুর্থ বর্ষের এক নারী শিক্ষার্থী একটি অনলাইন সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “আমি ক্লাস করতে যাচ্ছিলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে থেকে আসা একদল লোক আমাকে আপত্তিকর মন্তব্য করেছে। তাই আমি অভিযোগ নিয়ে প্রক্টর স্যারের কাছে এসেছি।” হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের ফটকে দায়িত্বরত কর্মচারী আলতাফ হোসেন নুরু বলেন, “সকাল থেকে অনেকেই ওয়াশরুম ব্যাবহার করেছে। মসজিদে প্রবেশের উদ্দেশে হলে ঢুকলেও ছাত্রদের আপত্তিতে বহিরাগতদেরকে অন্য ব্যবস্থা দেখিয়ে হলে পরে আর ঢুকতে দেওয়া হয়নি।” কবি সুফিয়া কামাল হলের ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মেহজাবিন লিয়া নিজ হলের সামনেই ‘মন্দ স্পর্শের’ শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেন, “এসব নিয়ে কথা বলতে গেলেও ভয় পেতে হয়, ইসলামের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয় কি না। অনেকে ‘শাহবাগী’ বলে খোঁচা দিতে পারে। তবে শুধু আমার সাথেই এমন হয়নি। অনেকের সাথেই আজ এমনটি হয়েছে বলে জেনেছি।” তিনি বলেন, “আমি টিউশনি করতে হলের বাইরে বেরিয়ে ছিলাম। সেখানে একদল লোক সমাবেশে যেতে আমাদের হলের সামনে উপস্থিত ছিল। একজন দ্রুত এসে আমাকে বাম পাশ থেকে ধাক্কা দিয়ে চলে যান। তিনি ইচ্ছাকৃতভাবেই এমনটা করেছে বলে আমার মনে হয়েছে।” বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি সুফিয়া কামাল হলের দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী জিকরা জিকু ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, “ঢাবিকে হিসুখানা না বানাইলেও পারতেন!”
‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সংসদ-২’ নামের একটি ফেসবুক পেইজে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রবিউল ইসলাম ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে সমাবেশে আসা লোকজনের মূত্রত্যাগের ছবি দিয়ে লিখেছেন “বাদ গেল না নজরুলের সমাধির মসজিদের পাশ, না সেন্ট্রাল লাইব্রেরি, না মেয়েদের হলের দেয়াল, না থিয়েটার ডিপার্টমেন্ট-এর সাইডটা, না গেল টিএসসির সাইড।”

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ প্রসঙ্গে প্রক্টর অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, “শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে এসেছে। নারী শিক্ষার্থীরা ইভটিজিংয়ের শিকার হয়েছে, ছেলেরাও সামাজিক বিজ্ঞান ভবনের দিকে আসা-যাওয়া করতে সমস্যায় পড়েছে।” ক্যাম্পাসে আসা বহিরাগতদের নিয়ে প্রক্টরের ভাষ্য, “তারা খুবই খারাপ কাজ করেছে।” মাইকিং করে ক্যাম্পাস থেকে বহিরাগতদের সরানোর চেষ্টা করা হয়েছে জানিয়ে প্রক্টর বলেছেন, ডিএমপির সঙ্গে কথা বলে তাদেরকে সরানোর চেষ্টা করা হয়েছে। সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, “মহাসমাবেশ আয়োজনকারীদের কয়েকজন আমাকে জানিয়েছিলেন তারা বিশ হাজার মানুষ নিয়ে সমাবেশ করবেন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। তারা ক্যাম্পাসে গাড়ি রাখতে চেয়েছিলেন, তবে আমি অনুমতি দেইনি। “সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মানুষজন আমাদের ক্যাম্পাসে এসেছে। তাদের ওপর বল প্রয়োগ করার মতো ম্যাকানিজম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নেই। উপাচার্য দেশে আসলে আমি ডিএমপি কমিশনারকে চিঠি দেব, বলব এরপর থেকে কোনো সমাবেশের অনুমতি আপনি একা দেবেন না। আমাদের সাথে আলোচনা করে দিতে হবে।”