ঢাকা ০৯:৩৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ০৯ জুন ২০২৫

টেনশন থেকে প্রশান্তি দেয় প্রার্থনা

  • আপডেট সময় : ০৫:৫৬:০৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ৪ নভেম্বর ২০২৪
  • ৫৭ বার পড়া হয়েছে

লাইফস্টাইল ডেস্ক: রাজনৈতিক পরিস্থিতি, নিত্যপ্রয়োজনী জিনিসের দামের ওঠানামা, অস্থির পরিবেশÑ সবকিছু মিলিয়ে চাপা উত্তেজনায় ভোগা অস্বাভাবিক কিছু নয়। আর স্নায়বিক চাপে যখন দাঁত দিয়ে নখ কামড়াতে কামড়াতে আঙুল খেয়ে ফেলার দশা, তখন কিছু পন্থা অবলম্বন করে মানসিক শঙ্কা কমানোর চেষ্টা করতে দোষ কী!
সিএনএন ডটকমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে মার্কিন স্নায়ুবিজ্ঞানী ডা. রিচার্ড ডেভিডসন বলেন, সারা বিশ্বেই চলছে অস্থিরতা। এখান থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে শান্ত রাখার কৌশল জানা জরুরি। ইউনিভার্সিটি অব উইসকনসিন-ম্যাডিসনের ‘সেন্টার ফর হেলদি মাইনডস’-এর এই প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক প্রাতিষ্ঠানিকভাবে তিব্বতের বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের ওপর গবেষণার চালিয়ে দেখেছেন, ধ্যান আক্ষরিক অর্থেই মস্তিষ্কে পরিবর্তন আনতে পারে। তাই উদ্বেগ, উত্তেজনা ও মানসিক চাপ কমাতে বেশি কয়েকটি পদ্ধতির কথা জানিয়েছেন তিনি। তা হলোÑ
নড়াচড়ার মধ্যে থাকা: বিশেষজ্ঞরা বলেন, ব্যায়াম কিংবা কিছু কাজের মধ্যে থাকলে মানসিক চাপ কমে। এন্ডোরফির নামক হরমোন নিঃসরণ ঘটে কর্মচঞ্চল থাকলে যা মন-মেজাজের উন্নতি ঘটায়, শরীরের টানটান-ভাব কমায়। ‘ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হসপিটাল’ ও ‘হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুল’-এর করা গবেষণা বলে, মস্তিষ্কের চাপ বিষয়ক সংকেত কমানোর সাথে ব্যায়ামের সম্পর্ক রয়েছে। ডেনভারে অবস্থিত ন্যাশনাল জিউইশ হেলথের কার্ডিওভাস্কুলার প্রিভেনশন অ্যান্ড ওয়েলনেসের পরিচালক ডা. অ্যান্ড্রু ফ্রিম্যান বলেন, এর মানে হলো মানুষ তৈরি হয়েছে প্রচুর নড়াচাড়া করার জন্য। আর যখন এই নড়াচড়া হাঁটাচলা আমরা প্রকৃতির মাঝে করি, গবেষণায় দেখা গেছে তখন উল্লেখযোগ্য হারে মানসিক চাপ কমে।
আশপাশের পরিস্থিতি নিজের আয়ত্তে রাখা: প্রথমে চিহ্নিত করতে হবে তারপর তালিকা বানিয়ে ফেলতে হবে, কোন বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন আর কোনগুলোতে প্রভাব খাটাতে পারবেনÑ একই প্রতিবেদনে মন্তব্য করেন আমেরিকান ইনস্টিটিউট অব স্ট্রেসের কনটেন্টমেন্ট ম্যাগাজিনের প্রাক্তন সম্পাদক ও মানসিক চাপ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ ডা. সিনথিয়া অ্যাক্রিল। তিনি বলেন, কোনো বিষয় ভালো না লাগলে আমি বলি, এখন আমি এই বিষয় নিয়ে কথা বলতে চাচ্ছি না। এর পাশাপাশি যেসব খবর আমাকে উত্তেজিত করতে পারে সেগুলো দেখা কমাই বা দেখি না। এছাড়া সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমও নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। যেসব ভিডিও বা লেখা উত্তেজনার খোরাক জোগাবে সেগুলো না দেখে বরং হাঁটতে যান, প্রিয় গান শুনুন, প্রার্থনা করতে পারেন বা ফোনে এমন কারও সঙ্গে আলাপ করতে পারেন যাকে নিরাপদ মনে হয়।
ইতিবাচক মনোভাব তৈরি করা: ‘নিজেকে নিরাপদ রাখতে মস্তিষ্ক নেতিবাচক বিষয়ে যুক্ত হয় বেশি। তাই জোর করে হলেও ইতিবাচকতার চর্চা করতে হবে’Ñ মন্তব্য করেন অ্যাক্রিল। এর মানে হলো ঘন ঘন উন্নত চিন্তার চেষ্টা চালাতে হবে। ডেভিডসন বলেন, গবেষণায় দেখা গেছেÑ আশাবদী হওয়ার বিষয়টি শতকরা ২৫ শতাংশ জিনগত। বাকিটা নিজেই আয়ত্তে আনা যায়। দিনে ৩০ মিনিট ধ্যান করলে, দুই সপ্তাহের মানসিক জঞ্জাল দূর হয়ে যায়। আশাবাদী হওয়ার ক্ষেত্রে দৈনিক ডায়রি লেখা ভালো অভ্যাস। যেগুলোর জন্য মনে হয় ‘থ্যাংকফুল’ বা কৃতজ্ঞ, সেগুলো লিখতে হবে। গবেষণায় দেখা গেছে, কৃতজ্ঞতার অনুশীলন করলে ইতিবাচক মনোভাব বেড়ে গিয়ে নেতিবাচকতা ভেঙে পড়ে।
নিদ্রা: ঘুমের মধ্যেও মস্তিষ্ক ব্যস্ত থাকে। এই সময়ে পরের দিনের জন্য প্রস্তুত করে দেহকে। অভিজ্ঞতাগুলোকে যাচাই বাছাই করে নতুন শিক্ষার পথ দেখায়। তাই সুস্থ মানসিকতার জন্য পর্যাপ্ত ঘুম দরকার, যাতে মস্তিষ্ক ভালোমতো কাজ করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংস্থার তথ্য অনুসারে প্রাপ্তবয়স্ক যে কারো প্রতি রাতে অন্তত ৭ থেকে ৯ ঘণ্টার ঘুমের প্রয়োজন। ক্যালিফোর্নিয়ার হান্টিংটন হেলথের ক্লিনিকাল অ্যান্ড সিøপ মেডিসিন অ্যান্ড পালমোনারি ক্রিটিকাল কেয়ারের সহযোগী অধ্যাপক ডা. রাজ দাসগুপ্তা বলেন, দু’তিন রাত অপর্যাপ্ত ঘুম হলেই দেখবেন মনোযোগের মাত্রা কমে, নতুনক কিছু শেখার যায় না, সৃজনশীল কাজ, সঠিক সিদ্ধান্ত বা সমস্যা সমাধান করতে অসুবিধা হয়। তাই ঘুম ভালো না হলে নানা উপায়ে সেটি সারাতে হবে। প্রয়োজন পড়লে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত হবে বলে মনে করেন।

 

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

টেনশন থেকে প্রশান্তি দেয় প্রার্থনা

আপডেট সময় : ০৫:৫৬:০৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ৪ নভেম্বর ২০২৪

লাইফস্টাইল ডেস্ক: রাজনৈতিক পরিস্থিতি, নিত্যপ্রয়োজনী জিনিসের দামের ওঠানামা, অস্থির পরিবেশÑ সবকিছু মিলিয়ে চাপা উত্তেজনায় ভোগা অস্বাভাবিক কিছু নয়। আর স্নায়বিক চাপে যখন দাঁত দিয়ে নখ কামড়াতে কামড়াতে আঙুল খেয়ে ফেলার দশা, তখন কিছু পন্থা অবলম্বন করে মানসিক শঙ্কা কমানোর চেষ্টা করতে দোষ কী!
সিএনএন ডটকমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে মার্কিন স্নায়ুবিজ্ঞানী ডা. রিচার্ড ডেভিডসন বলেন, সারা বিশ্বেই চলছে অস্থিরতা। এখান থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে শান্ত রাখার কৌশল জানা জরুরি। ইউনিভার্সিটি অব উইসকনসিন-ম্যাডিসনের ‘সেন্টার ফর হেলদি মাইনডস’-এর এই প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক প্রাতিষ্ঠানিকভাবে তিব্বতের বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের ওপর গবেষণার চালিয়ে দেখেছেন, ধ্যান আক্ষরিক অর্থেই মস্তিষ্কে পরিবর্তন আনতে পারে। তাই উদ্বেগ, উত্তেজনা ও মানসিক চাপ কমাতে বেশি কয়েকটি পদ্ধতির কথা জানিয়েছেন তিনি। তা হলোÑ
নড়াচড়ার মধ্যে থাকা: বিশেষজ্ঞরা বলেন, ব্যায়াম কিংবা কিছু কাজের মধ্যে থাকলে মানসিক চাপ কমে। এন্ডোরফির নামক হরমোন নিঃসরণ ঘটে কর্মচঞ্চল থাকলে যা মন-মেজাজের উন্নতি ঘটায়, শরীরের টানটান-ভাব কমায়। ‘ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হসপিটাল’ ও ‘হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুল’-এর করা গবেষণা বলে, মস্তিষ্কের চাপ বিষয়ক সংকেত কমানোর সাথে ব্যায়ামের সম্পর্ক রয়েছে। ডেনভারে অবস্থিত ন্যাশনাল জিউইশ হেলথের কার্ডিওভাস্কুলার প্রিভেনশন অ্যান্ড ওয়েলনেসের পরিচালক ডা. অ্যান্ড্রু ফ্রিম্যান বলেন, এর মানে হলো মানুষ তৈরি হয়েছে প্রচুর নড়াচাড়া করার জন্য। আর যখন এই নড়াচড়া হাঁটাচলা আমরা প্রকৃতির মাঝে করি, গবেষণায় দেখা গেছে তখন উল্লেখযোগ্য হারে মানসিক চাপ কমে।
আশপাশের পরিস্থিতি নিজের আয়ত্তে রাখা: প্রথমে চিহ্নিত করতে হবে তারপর তালিকা বানিয়ে ফেলতে হবে, কোন বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন আর কোনগুলোতে প্রভাব খাটাতে পারবেনÑ একই প্রতিবেদনে মন্তব্য করেন আমেরিকান ইনস্টিটিউট অব স্ট্রেসের কনটেন্টমেন্ট ম্যাগাজিনের প্রাক্তন সম্পাদক ও মানসিক চাপ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ ডা. সিনথিয়া অ্যাক্রিল। তিনি বলেন, কোনো বিষয় ভালো না লাগলে আমি বলি, এখন আমি এই বিষয় নিয়ে কথা বলতে চাচ্ছি না। এর পাশাপাশি যেসব খবর আমাকে উত্তেজিত করতে পারে সেগুলো দেখা কমাই বা দেখি না। এছাড়া সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমও নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। যেসব ভিডিও বা লেখা উত্তেজনার খোরাক জোগাবে সেগুলো না দেখে বরং হাঁটতে যান, প্রিয় গান শুনুন, প্রার্থনা করতে পারেন বা ফোনে এমন কারও সঙ্গে আলাপ করতে পারেন যাকে নিরাপদ মনে হয়।
ইতিবাচক মনোভাব তৈরি করা: ‘নিজেকে নিরাপদ রাখতে মস্তিষ্ক নেতিবাচক বিষয়ে যুক্ত হয় বেশি। তাই জোর করে হলেও ইতিবাচকতার চর্চা করতে হবে’Ñ মন্তব্য করেন অ্যাক্রিল। এর মানে হলো ঘন ঘন উন্নত চিন্তার চেষ্টা চালাতে হবে। ডেভিডসন বলেন, গবেষণায় দেখা গেছেÑ আশাবদী হওয়ার বিষয়টি শতকরা ২৫ শতাংশ জিনগত। বাকিটা নিজেই আয়ত্তে আনা যায়। দিনে ৩০ মিনিট ধ্যান করলে, দুই সপ্তাহের মানসিক জঞ্জাল দূর হয়ে যায়। আশাবাদী হওয়ার ক্ষেত্রে দৈনিক ডায়রি লেখা ভালো অভ্যাস। যেগুলোর জন্য মনে হয় ‘থ্যাংকফুল’ বা কৃতজ্ঞ, সেগুলো লিখতে হবে। গবেষণায় দেখা গেছে, কৃতজ্ঞতার অনুশীলন করলে ইতিবাচক মনোভাব বেড়ে গিয়ে নেতিবাচকতা ভেঙে পড়ে।
নিদ্রা: ঘুমের মধ্যেও মস্তিষ্ক ব্যস্ত থাকে। এই সময়ে পরের দিনের জন্য প্রস্তুত করে দেহকে। অভিজ্ঞতাগুলোকে যাচাই বাছাই করে নতুন শিক্ষার পথ দেখায়। তাই সুস্থ মানসিকতার জন্য পর্যাপ্ত ঘুম দরকার, যাতে মস্তিষ্ক ভালোমতো কাজ করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংস্থার তথ্য অনুসারে প্রাপ্তবয়স্ক যে কারো প্রতি রাতে অন্তত ৭ থেকে ৯ ঘণ্টার ঘুমের প্রয়োজন। ক্যালিফোর্নিয়ার হান্টিংটন হেলথের ক্লিনিকাল অ্যান্ড সিøপ মেডিসিন অ্যান্ড পালমোনারি ক্রিটিকাল কেয়ারের সহযোগী অধ্যাপক ডা. রাজ দাসগুপ্তা বলেন, দু’তিন রাত অপর্যাপ্ত ঘুম হলেই দেখবেন মনোযোগের মাত্রা কমে, নতুনক কিছু শেখার যায় না, সৃজনশীল কাজ, সঠিক সিদ্ধান্ত বা সমস্যা সমাধান করতে অসুবিধা হয়। তাই ঘুম ভালো না হলে নানা উপায়ে সেটি সারাতে হবে। প্রয়োজন পড়লে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত হবে বলে মনে করেন।